Alapon

আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টি ও পরকালীন বাস্তবতা

আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টি ও পরকালীন বাস্তবতা



আল্লাহ তায়ালা সূরা ইয়াসিনের ৩৬ নাম্বার আয়াতে বলেন - سُبْحٰنَ الَّذِى خَلَقَ الْأَزْوٰجَ كُلَّهَا مِمَّا تُنۢبِتُ الْأَرْضُ وَمِنْ أَنفُسِهِمْ وَمِمَّا لَا يَعْلَمُونَ - "পবিত্র ও মহান সে সত্তা যিনি সকল কিছু জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছেন, যমীন যা উৎপন্ন করেছে তা থেকে, মানুষের নিজদের মধ্য থেকে এবং সে সব কিছু থেকেও যা তারা জানে না ।"

এখানে 'আজওয়াজ' বলতে শুধু জোড়া বুঝায় না। আজওয়াজ বলতে আরো অধিক কিছু বোঝায় - এমন শ্রেণী বা গ্রূপ যারা একে অপরকে পূর্ণ করে। এই অর্থে কুরআনের কয়েক জায়গায় আজওয়াজ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন - সূরা ত্বহার ১৩১ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে - مَا مَتَّعْنَا بِهِ أَزْوَاجًا مِنْهُمْ - "যা আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে উপভোগের উপকরণ হিসেবে দিয়েছি।" সূরা ওয়াকিয়ার ৭ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে - وَكُنتُمْ أَزْوَاجًا ثَلَاثَةً - "এবং তোমরা তিনভাবে বিভক্ত হয়ে পড়বে।"

সূরা ইয়াসিন বলছে যে আল্লাহ বিভিন্ন জিনিসকে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে তৈরী করেছেন। সম্পূর্ণ ইকো সিস্টেম (বাস্তুসংস্থান) একে অপরের পরিপূরক। একটা গ্রহ আরেকটাকে পূর্ণ করে। গ্যালাক্সি একে অপরকে পূর্ণ করে। মানুষের শরীরের একটা অংশ অপর অংশকে পূর্ণ করে। স্বামী স্ত্রী একে অপরকে পূর্ণ করে। এক পরিবার অপর পরিবারকে পূর্ণ করে। প্রতিবেশীরা একে অপরকে পূর্ণ করে। একটি দেশ আরেকটি দেশকে পূর্ণ করে। যেমন আল্লাহ বলেন - وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا - "তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও।"

এই সবকিছু الْأَزْوٰجَ كُلَّهَا পরিকল্পনার অংশ। এমন অনেক উদ্ভিদকে দেখা যায় যারা শুধু নির্দিষ্ট কিছু উদ্ভিদকে কেন্দ্র করে বেড়ে উঠে। তারা একা একা বেড়ে উঠতে পারে না। তারা ছায়া বা আদ্রতা পায় অন্য গাছ থেকে। আবার কিছু কিছু ছোট গাছ শুধু নির্দিষ্ট কিছু বড় গাছের বাকলেই জন্মে। কিছু কিছু পাখি নির্দিষ্ট কিছু গাছেই কেবল বাসা বাঁধে। তারা ঐ গাছের জাওজ (পরিপূরক)। আল্লাহ এভাবেই বিশ্ব ব্যবস্থাপনা তৈরি করেছেন যেখানে প্রত্যেকে একে অন্যের উপর নির্ভরশীল।

আর আল্লাহ হলেন নিখুঁত। তিনি সবকিছুকে নির্ভরশীল করে তৈরী করেছেন কিন্তু তিনি নিজে কারো উপর নির্ভরশীল নন। তাঁর কাউকে প্রয়োজন নেই।

তোমাদের চারপাশে তাকিয়ে দেখো। দেখো, সবকিছুর কেমন অন্য সবকিছুকে প্রয়োজন। দেখো, পৃথিবীর কেমন মেঘের প্রয়োজন আবার মেঘের কেমন বাতাসের প্রয়োজন। দেখো পৃথিবীর যেমন চাঁদ সূর্যের প্রয়োজন, আবার চাঁদ-সূর্যেরও একে অপরকে প্রয়োজন। সুবহানাল্লাহ! وَمِنْ أَنفُسِهِمْ - “আর তাদের নিজেদের ভিতরেও”

স্পষ্টত মানুষ বলে যে, এখানে যে জোড়ার কথা বলা হয়েছে তা হলো - নারী-পুরুষের জোড়া। কিন্তু এটা শুধু নর-নারীর জোড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। فَأَلْهَمَهَا فُجُورَهَا وَتَقْوَاهَا - "অতঃপর তাকে তার অসৎকর্ম ও সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন।"

তিনি আমার ভেতর যা ইচ্ছা তাই করার আকাঙ্খা যেমন দিয়েছেন, আবার নিজেকে দমন করার ইচ্ছাশক্তিও দান করছেন। যা আমাকে বলে - থাম! বেশি করতে যেও না। তিনি আমার ভেতরে যেমন উদ্যম দিয়েছেন, তেমনি আবার নিয়ন্ত্রণ শক্তিও দিয়েছেন।

তিনি আমাকে শরীর দিয়েছেন, আবার রুহও দিয়েছেন। আমি নিজেই একটি জোড়ার সমষ্টি। আমি শুধু শরীর নই আবার আমি শুধু রুহও নই। আমি উভয়টার সমষ্টি। তিনি আমাকে অন্তর দিয়েছেন; যেখানে তাকওয়া থাকে, ঈমান থাকে, আল্লাহর ভয় থাকে। তিনি আবার আমাকে বুদ্ধিও দিয়েছেন। তিনি আমার বুকের ভেতর আবেগ যেমন দিয়েছেন, তেমনি আবার মাথায় বুদ্ধিও দিয়েছেন। এখানেও একটি জোড়া রয়েছে। এই জন্যই যেকোনো বার্তাকে আবেগের দিক থেকে যেমন আবেদনময়ী হতে হবে, তেমনি বুদ্ধির দিক থেকেও পরিষ্কার থাকতে হবে। কারণ আমি নিজেও একটি জোড়ার সমষ্টি।

তিনি যেমন কিতাব দিয়েছেন তেমনি আবার রাসূলও পাঠিয়েছেন। তিনি মেসেজ এবং মেসেঞ্জারের জোড়া তৈরী করে দিয়েছেন। তিনি রাত-দিন বানিয়েছেন। তিনি এই পৃথিবীর জীবনকে, এই পৃথিবীর গাছ-পালাকে জান্নাতের গাছপালার সাথে যুগল করে দিয়েছেন।
একমাত্র যার কোনো জোড়ার প্রয়োজন নেই তিনি হলেন আল্লাহ। এই জন্য আয়াতের শুরুতে তিনি বলেছেন - سُبْحَانَ الَّذِي .... "পবিত্র ও মহান সে সত্তা...." তিনি সবকিছুকে নির্ভরশীল করে তৈরী করেছেন কিন্তু তিনি নিজে কারো উপর নির্ভরশীল নন। কারণ তাঁর কাউকে প্রয়োজন নেই।

আপনি যখন উপলব্দি করবেন এই পৃথিবীর জীবনটি পরকালের জীবনের সাথে জোড়ার বন্ধনে আবদ্ধ, তখন এই সবকিছু আপনার কাছে অনেক বেশি পরিষ্কার হয়ে উঠবে।

- উস্তাদ নোমান আলী খান

পঠিত : ৫১৯ বার

মন্তব্য: ০