জীবন যুদ্ধে একজন মু'মিনের কোনো পরাজয় নেই।
তারিখঃ ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ০০:০০
জীবন যুদ্ধে একজন মু'মিনের কোনো পরাজয় নেই।
কিয়ামতে বিশ্বাস আমাদেরকে বেঁচে থাকার প্রেরণা যোগায়, জীবনে কিছু অর্জন করার প্রেরণা যোগায়। এটা আমাদেরকে জীবনের একটি লক্ষ্য থাকার প্রেরণা যোগায়, জীবনের একটি অর্থ থাকার প্রেরণা যোগায়। যদি কিয়ামতে বিশ্বাস না করেন, জীবন হয়ে পড়ে অর্থহীন। সত্যিই। বেঁচে থাকার অর্থ কী? এই সমস্ত কিছুর উদ্দেশ্য কী? এই দ্বন্দ্বটি নীটশে নামক একজন দার্শনিক সর্বপ্রথম তুলে ধরেন। বলা হয়, সে নিজেও একজন নাস্তিক ছিল। বিখ্যাত জার্মান দার্শনিক, সে জীবনের শেষ দিকে পাগল হয়ে যায়। প্রকাশ্যে নিজেকে নাস্তিক দাবি করা দার্শনিকদের মাঝে সে ছিল প্রথম দিকের একজন।
প্রসঙ্গতঃ নাস্তিকতা খুবই আধুনিক একটি ব্যাপার। মানব সভ্যতার ইতিহাসে ২০০ বছর আগেও আপনি নাস্তিকতার সন্ধান পাবেন না। এটি খুবই সাম্প্রতিক একটি ধারণা। বর্তমানে আমরা যেভাবে বুঝি। এমনকি দুইশ বছর আগেও সামান্য কিছু মানুষ নাস্তিকতায় বিশ্বাস করতো। শুধু গত শতকে, বিশেষ করে গত ৫০ বছরে নাস্তিকতা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। এটি আরেকটি ইন্টারেস্টিং বিষয়।
আক্ষরিক অর্থেই, সর্বপ্রথম যে দার্শনিক সরাসরি সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করে সে হল, নীটশে। তার একটি কুখ্যাত প্যাসেজ রয়েছে যার নাম হল, "ডেথ অফ গড", আউজুবিল্লাহ। এমনকি সেই প্যাসেজেও, যদি প্যাসেজটি পড়েন, সে ঐ প্যাসেজে একটি উপমা দিয়েছে। সেখানে একদল লোক বিশ্বাস করে যে তারা গডকে হত্যা করে ফেলেছে। নীটশে তখন তাদেরকে বলল, "তোমরা কি উপলব্ধি করতে পারছ না যে গডকে হত্যা করার মাধ্যমে তোমরা আসলে নিজেদের হত্যা করে ফেলেছ?" নীটশে নিজেই এটা লিখল। মানে, তোমরা গডের ধারণাকে হত্যা করে ফেলেছ, গডের কোন ধারণা আর তোমাদের মাঝে অবশিষ্ট নেই। নীটশে তাদেরকে বলছে, তোমরা গডের ধারণাকে বিলুপ্ত করার মাধ্যমে তোমাদের নিজেদের অস্তিত্বকেই বিলুপ্ত করে ফেলেছ।
এখন, জীবন হয়ে পড়েছে অর্থহীন। তারপর সে তার নিজস্ব দার্শনিক ভঙ্গিতে লিখল - "এখন উপর হয়ে গেল নিচ, নিচ হয়ে গেল উপর। অন্ধকার হয়ে গেল আলো আর আলো হয়ে গেল অন্ধকার।" অর্থাৎ, সবকিছুই এখন বিলুপ্ত হয়ে পড়ল। এখন, তোমাদের আর কোন শিকড় অবশিষ্ট রইল না। নৈতিকতা হারিয়ে গেল, যা বর্তমানে আমরা প্রত্যক্ষ করছি। গতকাল যা খবিস ছিল আজ তাকেই খাঁটি হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছে। আপনি যখন গডের ধারণাকে দৃশ্যপট থেকে দূর করে দেন, তখন শুধু নৈতিকতা নয়, আপনার অস্তিত্বই দূর হয়ে যায়।
আমাকে আরেকটি কথা বলতে হচ্ছে - বিষয়টা কিছুটা স্পর্শকাতর। আমি ভদ্রভাবে বিষয়টা উপস্থাপনের চেষ্টা করবো। বর্তমানে আমরা মানসিক অশান্তি এবং ডিপ্রেশনের এমন এক প্রবল জোয়ার প্রত্যক্ষ করছি, মানব সভ্যতার ইতিহাসে যার আর কোন নজির পাওয়া যায় না। এমনকি আমার বেড়ে উঠার কালেও কিশোর কিশোরীদের এভাবে ডিপ্রেশনে ভুগতে দেখা যায়নি। তরুণ ছেলে মেয়েরা যাদের সামনে সমস্ত জীবন পড়ে আছে তারাই ডিপ্রেশনে ভুগছে! একটু খোঁজ নিলে জানবেন সাইক্রিয়াটিস্ট এবং সাংবাদিকরা 'জীবনে অর্থহীনতার উত্থান' নিয়ে কথা বলছেন।
তরুণ তরুণীদের মানসিক বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হচ্ছে, ঔষধ খেতে হচ্ছে। আমি বলছি না যে, ডাক্তারের কাছে যাওয়া খারাপ। কিন্তু আমাদের নিজেদের প্রশ্ন করা উচিত - কেন? কেন আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে? খুবই স্পর্শকাতর একটি সাবজেক্ট। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রক্ষা করুন। এই প্রজন্মের তরুণ তরুণীরা যে হারে আত্মহত্যা করছে মানব ইতিহাসের কোনো কালে এমনটি দেখা যায়নি। আর সবকিছু যেভাবে এগোচ্ছে এর মাত্রা আরো খারাপ হবে। আমরা আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আমরা আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
এখন প্রশ্ন হলো কেন? কেন এই হারে মানুষের মাঝে হতাশা দেখা যাচ্ছে? আমাদের কাছে ব্যাপারটা সুস্পষ্ট। যখন আপনি জীবন থেকে সৃষ্টিকর্তাকে দূর করে দেন, ধর্মকে দূর করে দেন, আখিরাতকে দূর করে দেন - তখন জীবন হয়ে পড়ে অর্থহীন। জীবনে এভাবে বেঁচে থাকার অর্থ কী? যখন আপনাকে শুধু একটার পর একটা লড়াই অতিক্রম করতে হয়, কষ্ট পেতে হয়, প্রত্যাখ্যানের সম্মুখীন হতে হয় - এইসব কিছুর মানে কী? সবশেষে তো আপনি এমনিতেই চিরতরে হারিয়ে যাবেন। তাই জীবনের সকল ধকল ভোগ করার চাইতে তারা এখনই নিজেকে শেষ করে দেয়। কিন্তু, আপনি যদি কিয়ামত দিবসে বিশ্বাস করেন এটা আপনার ভেতরটা আবার জীবিত করে তোলে। আপনার জীবনকে বাঁচার যোগ্য এবং অর্থপূর্ণ করে তোলে। এটা ছিল দ্বিতীয় পয়েন্ট।
তৃতীয় পয়েন্ট হল - এই পয়েন্টটি দ্বিতীয় পয়েন্টের সাথে সম্বন্ধযুক্ত - এটা যে শুধু আপনার জীবনকে বাঁচার যোগ্য করে তোলে তাই নয়, এটা আপনাকে ভবিষ্যতের ব্যাপারে প্রবলভাবে আশান্বিত করে তোলে এই অর্থে যে, ভবিষ্যৎ অতীতের চেয়ে উত্তম হবে। আর এই কথাটি একেবারে পরিষ্কারকরে দ্বিতীয় মতান্তরে তৃতীয় ওহীতে বলা হয়েছে - "ওয়া লাল আখিরাতু খাইরুল লাকা মিনাল উলা।" এটা একেবারে স্পষ্ট ভাষায় কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। এই দুনিয়াতে যাই ঘটুক না কেন, পরকালে আপনার জন্য উত্তম কিছু অপেক্ষা করছে।
এটা আমাদের প্রকৃতিতেই আছে, আমরা ভবিষ্যতের ব্যাপারে আশাবাদী হতে চাই। কর্পোরেট সেন্সে বলতে গেলে - চাকরিতে যদি কঠিন কোন সময় পার করতে হয়, মাস শেষে মোটা অঙ্কের চেকের কথা ভেবে আপনি আশাবাদী হয়ে উঠেন। যত কষ্টই হউক না কেন আমি চাকরি করে যাবো। কারণ, মাস শেষে আমি বোনাস পাবো। এটা আপনার মাঝে আশা জাগিয়ে তোলে, উৎসাহ জাগিয়ে তোলে।
আল্লাহ আমাদেরকে বলছেন এই দুনিয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হইও না, "ওয়া লাল আখিরাতু খাইরুল লাকা মিনাল উলা" - “আপনার জন্যে পরকাল ইহকাল অপেক্ষা শ্রেয়।”
সত্যি বলতে, জীবন আসলেই কঠিন। কখনো কখনো খুবই হতাশাজনক হতে পারে। জীবনে এমন অনেক কিছুই ঘটে যা আমাদের ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। কিন্তু একজন বিশ্বাসীর জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। একজন বিশ্বাসী যখন কিয়ামতে বিশ্বাস করে তখন তা এক ধরণের প্রশান্তি নিয়ে আসে, এখন যাই হউক না কেন, আখিরাত আমার জন্য উত্তম হবে। এটা একজন মানুষকে আশাবাদী করে তোলে। আর তাইতো আমাদের রাসূল (স) বলেছেন - "আজাবাল লি আম্রিল মুমিন ফা ইন্না আম্রাহু কুল্লাহু খাইর।" "মুমিনের বিষয়টি কতইনা আশ্চর্য জনক! তার প্রত্যেকটি বিষয় কল্যাণকর।" তার কোন পরাজয় নেই। কীভাবে একজন মু'মিনের কোন পরাজয় নেই? কারণ, সে আখিরাতে বিশ্বাস করে। যদি কোন আখিরাত না থাকত তাহলে সত্যি সত্যিই পার্থিব এই জীবন যুদ্ধকে সবসময়ের পরাজিত যুদ্ধ হিসেবে আখ্যায়িত করা যেত।
-- ডঃ ইয়াসির কাদি
আল্লাহ আমাদের জন্য কেমন জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন?
“জান্নাতের মাটি আর জমীন হচ্ছে জাফরান আর কস্তুরীর।
এর ছাদ হচ্ছে আল্লাহর আসন।
শিলাখণ্ডগুলো মণিমুক্তোর।
দালানগুলো সোনারূপায় তৈরি।
গাছের শাখা-প্রশাখাগুলো সোনারূপার।
ফলগুলো মাখনের চেয়ে নরম, মধুর চেয়ে মধুর।
পাতাগুলো সবচেয়ে কোমল কাপড়ের চেয়েও কোমল।
কিছু নদী দুধের। যার স্বাদ কখনো বদলায় না। কিছু শরাবের। যারা পান করবে তাদের তৃপ্তি মিটবে। কিছু নদী পবিত্র মধুর। কিছু নদী সতেজ পানির।
যে-ফলমূল তারা চাইবে তা-ই তাদের খাবার। যে-পাখির গোশত তারা খেতে চাইবে তা-ই পাবে।
তাদের পানীয় হচ্ছে তাসনীম, সজীবতা উদ্দীপক ও কাাফূর।
তাদের পেয়ালাগুলো স্বচ্ছ, সোনারূপার তৈরি।
এর ছায়া এত বড় যে, দ্রুতগতির কোনো অশ্বারোহী এক শ বছর ধরে চললেও সেই ছায়া থেকে বের হতে পারবে না।
এর বিশালতা এত বেশি যে, জান্নাতের সবচেয়ে নিচু অবস্থানে যে থাকবে তার রাজত্বে যেসব দেওয়াল, ভবন আর বাগান থাকবে সেগুলো পার করতে হাজার বছর লেগে যাবে।
এর তাঁবু আর শিবিরগুলো যেন লুকোনো মুক্তো। একেকটা প্রায় ষাট মাইল লম্বা।
এর ভবনগুলোতে রুমের উপর রুম। তাদের নিচ দিয়ে নদী বয়ে যায়।
এগুলোর উচ্চতা যদি জানতে চান তাহলে আকাশের যেসব উজ্জ্বল তারা দেখা যায় সেগুলোর দিকে তাকান। দৃষ্টি যেসব তারার নাগাল পায় না সেগুলোও দেখার চেষ্টা করুন।
জান্নাতবাসীর পোশাক হচ্ছে রেশম আর স্বর্ণ।
তাদের বিছানায় যেসব কাঁথা থাকবে সেগুলো হবে সবচেয়ে উঁচু মাপের রেশমি কাপড়ের।
তাদের চেহারা হবে চাঁদের মতো।
তাদের বয়স হবে ৩৩। মানবজাতির পিতা আদামের অবয়বে।
সেখানে তারা শুনবে তাদের পবিত্র স্ত্রীদের গান। তার চেয়েও ভালো হচ্ছে সেখানে তারা ফেরেশতা আর নাবিদের কণ্ঠ শুনতে পাবে। এর চেয়েও ভালো হচ্ছে সেখানে তারা নিখিল বিশ্বজগতের প্রভুর কথা শুনতে পাবে।
তাদের খেদমতে থাকবে চিরতরুণ বালকেরা। তাদের নমুনা হচ্ছে ছড়ানো-ছিটানো মুক্তোদানার মতো।
তাদের স্ত্রীরা হবে পূর্ণ-যৌবনা। তাদের অঙ্গ-প্রতঙ্গে যৌবনের উন্মাদনা ছড়াতে থাকবে। সে যদি তার সৌন্দর্য দেখায় তাহলে মনে হবে চেহারায় যেন সূর্য খেলে গেল। তার হাসিতে আলো চমকে উঠবে। তাদের ভালোবাসা হবে দুই আলোর মিলন। কোনো স্বামী যখন তার স্ত্রীর দিকে তাকাবে তার গালে নিজের চেহারার প্রতিচ্ছবি দেখবে। যেন কোনো উজ্জ্বল আয়নায় তাকিয়ে আছে। তার পেশি আর হাড়ের পেছন থেকে দ্যুতি ঠিকরে পড়বে।
সেই স্ত্রী যদি দুনিয়াতে তার সৌন্দর্য অবারিত করত, তাহলে পৃথিবী ও মহাবিশ্বের মাঝে যা কিছু আছে সবকিছু সুন্দর বায়ু দিয়ে পূর্ণ হয়ে যেত। সব সৃষ্টি তার প্রশংসা করত, গুণকীর্তন করত। পূর্ব-পশ্চিম সব তার সৌন্দর্যে অলংকিত হতো। সব চোখ কেবল তারই দিকে ফিরে থাকত। সূর্যের আলোয় যেমন তারার আলো হারিয়ে যায়, তার সৌন্দর্যে সূর্য সেভাবে হারিয়ে যেত। পৃথিবীর বুকে সবাই তখন চিরঞ্জীব সেই মহান সত্ত্বা এক আল্লাহয় বিশ্বাসী হতো।
তার মাথার অবগুণ্ঠন পৃথিবী ও এর মাঝে যা কিছু আছে তার সবকিছুর চাইতে ভালো। সময়ের সাথে সাথে কেবল তার সৌন্দর্য বাড়তেই থাকবে। নাভির নাড়, সন্তানজন্ম, মাসিক এগুলো থেকে সে হবে মুক্ত। থুথু, মূত্র, শ্লেষ্মা ও অন্যান্য নোংরা জিনিস থেকে পবিত্র। তার যৌবন কখনো মিইয়ে যাবে না। পোশাক কখনো জীর্ণ হবে না। তার সৌন্দর্যের ধারেকাছে যায় এমন কোনো পোশাক হবে না। তার স্বামী কখনো তার কাছ থেকে বিরক্ত হবে না। স্ত্রীর মনোযোগ কেবল তার স্বামীর দিকেই থাকবে। সে তাকে ছাড়া আর কাউকে চাইবে না। স্বামীর চাওয়া-পাওয়াও কেবল তাকে ঘিরেই হবে। দুজন দুজনকে নিয়ে থাকবে সর্বোচ্চ স্বস্তি ও নিরাপত্তায়। মানুষ কিংবা জিনদের মধ্যে থেকে কেউ তাকে কখনো ছুঁয়ে দেখেনি।
সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞানী আল্লাহর চেহারা—যিনি সবধরনের সাদৃশ্য থেকে মুক্ত—সেদিন এমনভাবে দেখা যাবে যেভাবে দুপুর বেলায় সূর্য দেখা যায়। কিংবা মেঘমুক্ত আকাশে যেভাবে চাঁদ দেখা যায়। এক আহ্বানকারী ডেকে বলবে, “জান্নাতবাসী! তোমাদের সুমহান আল্লাহ তাঁকে দেখার জন্য ডাকছেন। কাজেই তাঁকে দেখতে আসো!” তারা বলবে, “আমরা শুনলাম ও মানলাম!”
তারা সবাই যখন প্রশস্ত উপত্যকায় জড়ো হবে, মহামহিম আল্লাহ তাঁর চেয়ার আনতে বলবেন। আলোর মিম্বার আসবে। আরও আসবে মুক্তো, খনি, সোনা-রূপার মিম্বার। জান্নাতের সবচেয়ে নিচু মর্যাদার অধিকারী কস্তুরীর চাদরে বসবে। আর তার উঁচু মর্যাদায় যারা থাকবে তারা যা দেখবে সে তা দেখবে না। যখন তারা সবাই আয়েশ করবে বসবে, তখন আহ্বানকারী ডেকে বলবে, “জান্নাতবাসী! আজ তোমাদের সঙ্গে আল্লাহর এমন এক সাক্ষাত হবে যেখানে তিনি তোমাদের পুরস্কার দেবেন!” তারা বলবে, “আবার কী পুরস্কার? তিনি কি ইতোমধ্যেই আমাদের চেহারাকে উজ্জ্বল করেননি, আমাদের ভালো কাজের পাল্লাকে ভারী করেননি, জাহান্নাম থেকে বাঁচিয়ে জান্নাতে দেননি? [আর কী বাকি আছে!?]”
এমন অবস্থায় হঠাৎ করে পুরো জান্নাত জুড়ে আলোর রশনিতে ভরে যাবে। তারা তাদের মাথা উঁচু করে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইবে। মহান আল্লাহ বলবেন, “জান্নাতবাসী! আস-সালামু ‘আলাইকুম!” [এই লাইনটা অনুবাদ করার সময় কয়েক মুহূর্তের জন্য থমকে গিয়েছিলাম। মহান আল্লাহ জান্নাতবাসীদেরকে নিজের মুখে সালাম জানাচ্ছেন! আল্লাহু আকবার!!!] জান্নাতাবাসীরা উত্তরে বলবে, “আল্লাহ, আপনিই শান্তি! আপনার থেকেই শান্তি আসে! আপনি সুমহান। সব সম্মান আর মাহাত্ম্য আপনারই!” সুমাহন আল্লাহ তখন তাদের দিকে তাকিয়ে হাসবেন [এই জায়গাটা লেখার সময়ও গা শিউরে উঠছিল, ভাবা যায় স্রষ্টা নিজে তাঁর সৃষ্টির দিকে তাকিয়ে হাসছেন। আর সৃষ্টি তা দেখছে!]। বলবেন, “জান্নাতবাসী! তারা কোথায় যারা আমাকে না দেখে আনুগত্য করত? এটাই হচ্ছে ইয়াওমুল-মাযীদ (সর্বোচ্চ দিন)!”
তারা সবাই তখন উত্তর দেবে, “আমরা সন্তুষ্ট, আপনিও আমাদের উপর সন্তুষ্ট হয়ে যান!” তিনি বলবেন, “জান্নাতবাসী! আমি যদি তোমাদের উপর সন্তুষ্ট না হতাম, তাহলে আমার জান্নাতের অধিবাসী তোমাদের করতাম না!” তারা সবাই সমস্বরে বলবে, “আপনার চেহারা দেখান যাতে আমরা দেখতে পারি!” সুমহান আল্লাহ তখন তার আবরণ সরিয়ে দেবেন। তাদেরকে মহিমাময়িত করবেন। তার আলো দিয়ে মুড়ে দেবেন। আল্লাহ যদি ইচ্ছে না-করতেন তাহলে এটা তাদের পুড়িয়ে ফেলত।
জনে জনে আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন, “তোমার কি সেই দিনের কথা মনে আছে, যখন তুমি এটা করেছ, ওটা করেছ?” তিনি তখন তাদেরকে তাদের দুনিয়ার কিছু খারাপ কাজের কথা মনে করিয়ে দেবেন।” সে তখন বলবে, “প্রভু, আপনি কি আমাদের ক্ষমা করবেন না?” তিনি বলবেন, “অবশ্যই! আমার ক্ষমা ছাড়া তুমি জান্নাতের এই জায়গায় পৌঁছাতে পারতে না।”
কর্ণকুহরে এই ধ্বনি কতই না মধুর। পরকালে তাঁর মহিমান্বিত চেহারা দেখে ধার্মিকদের চোখ কতই-না শীতল হবে।”
[হাাদি আল-আরওয়াাহ ইলা বিলাাদিল-আফরাাহ, ইবনুল-ক়ায়্যিম, পৃষ্ঠা ১৯৩]
মন্তব্য: ০