Alapon

||ইমাম হাসান আল বান্না (রহ.)||




আজ ১২-ই ফেব্রুয়ারি। মিশরের অধিবাসী ইমাম হাসান আল বান্না (রহ.)-এর শাহাদাত বার্ষিকী। হাসান আল বান্না জন্মগ্রহণ করেন ১৯০৬ সালের ১৪ অক্টোবর। তিনি ইসলামকে বাস্তবে মানুষের একমাত্র জীবনব্যবস্থা ও কুরআনকে এই ব্যবস্থার একমাত্র সংবিধান বলে মনে করতেন। তিনি পাশ্চাত্যের বস্তুবাদ, ব্রিটিশদের সাম্রাজ্যবাদ এবং মিশরের কিছু প্রথাগত আলেমদের সমালোচনা করেন।

বস্তুবাদ, সাম্রাজ্যবাদের অসারতার বিরুদ্ধে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধানকে প্রতিষ্ঠা করার মহান উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি ইখওয়ানুল মুসলিমিন নামক একটা সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সংগঠনের মানহাজ বা কর্ম্পদ্ধতি সম্পর্কে পীস টিভির জনপ্রিয় আলোচক শাইখ ডাক্টর আব্দুস সালাম আজাদী বলেন ;
"সালাফিয়্যাতের দাওয়াত, সুন্নিদের পথ, সুফীদের বাস্তবতা, রাজনৈতিক মঞ্চ, শারীরিক ভাবে ফিট থাকার একটা দল, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সভ্যতা সংস্কৃতি চর্চার একটা লীগ, এটা একটা অর্থনৈতিক কোম্পানি এবং একটা সমাজ দর্শন।"
ইমাম হাসান আল বান্না ( রহ.) তার দলের বৈশিষ্ট উল্লেখ করে বলেছেনঃ
১। সকল ধরণের মত পার্থক্যের ক্ষেত্র গুলো থেকে দূরে থাকা।
২। সমাজ নেতা ও বিত্তশালী বড়দের থেকে সরে থাকা।
৩। নানা রকমের দল ও সংস্থা থেকে বেঁচে থাকা।
৪। নতূনত্ব আনা এবং প্লান তৈরি ও নানা পদক্ষেপে ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যাওয়া।
৫। উৎপাদন ও কাজের দিকটাকে প্রচার ও বাগড়ম্বরতার চেয়ে প্রাধান্য দেয়া।
৬। যুবকদের ই প্রাধান্য দিয়ে তাদেরকে কাছে রাখা।
তাকে এবং তার দলকে যখন জালিমশাহীর তরফ থেকে ক্ষমতালোভী বা এই সংক্রান্ত অপবাদ আরোপ করা হচ্ছে যখন , তখন তিনি সরল-সাবলীল একটা কথা বলেন। তা আজো দ্বীনপ্রতিষ্ঠাকামি মু'মিনের মনে অনুরণ তোলে। তা হলো—
আমি তোমাকে ডাকছি আল্লাহ ও রাসূলের দিকে, ডাকছি কুরআনের দিকে, যদি এটাকে তোমরা রাজনীতি বলো, তাহলে হ্যাঁ এটাই আমাদের রাজনীতি !
ওনার এমন অসংখ্য ঈমান জাগানিয়া বিখ্যাত উক্তি আছে। তারমধ্যে আরো একটা হোলো —
"যখন তুমি দেখবে জেলের কুঠুরিগুলো তোমার জন্য তৈরি , ফাঁসির মঞ্চগুলো তোমার জন্য প্রস্তুত , তখন তুমি জানবে— তোমার দেয়া দাওয়াত ফলপ্রসূ হচ্ছে। "
আর এই দাওয়াতি কাজ ছিলো তার নেশার মতো। কী জন্যে তিনি দ্বীনের প্রচার-প্রসারের জন্যে ব্যাকুল ছিলেন, তা তার একটা কথা থেকেই ফুটে ওঠে। তার সেই প্রবল আকাঙ্ক্ষা হোলো :
"ইসলামের প্রতিটি বিধিনিষেধ এমন কঠিন বলয় সৃষ্টি করেছে , যা মানবজাতিকে সবধরনের ধংসাত্বক বিপদাপদ থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু মানবজাতী কি সমাজে (পূণরায়) আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করবে? "
১৯৪৯ সালের এইদিনই দাওয়াতি কাজ শেষে ইমাম হাসান আল বান্না বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে ত্বাগুতের দল ওনার ওপর গুলি চালান। বুলেটের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়া হয় ওনার বুককে । বাতিলের সেই বুলেটের নির্মম আঘাতেই শাহাদাতের কোলে ঢলে পড়েন তিনি। শাদাতের অমিয় সুধাপানে ধন্য হয়ে তিনি পৌঁছে গেলেন রব্বে কারিমের দরবারে। তার লাশের প্রতিও ছিলো সাম্রাজ্যবাদীদের প্রবল ভয়। মানুষজনকে ঠিকমতো জানাযায়ও অংশগ্রহণ করতে দেয়া হোলো না।
তরুণ-যুবকদের প্রতিও ছিলেন তিনি যথেষ্ট সতর্ক-সচেতন। বিশ্ব-ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম এই সিপাহসালার যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেন -
"হে যুবকেরা প্রস্তুত হও ! তৈরী হও !! আজ যদি প্রচেষ্টা না চালাও, তবে ভবিষ্যতে কাজ করার জন্য কর্মশক্তি পর্যাপ্ত হবে না।"
ইমাম হাসান আলবান্নার দ্বারা প্রভাবিত বিশ্ব ইসলামি ব্যক্তিত্বদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ;
হাসান আলহুদায়বী, সাইয়িদ কুতুব, মুহাম্মাদ কুতুব, মুস্তাফা মাশহুর, ইউসুফ আলক্বারাদাওয়ী, সাইয়েদ সাবেক্ব, মুহাম্মাদ আহমাদ আররাশেদ, মুহাম্মাদ আলগাযালী, যায়নাব আলগাযালী, যাগলুল আলনাজ্জার, লেবাননের ফাতহী ইয়াকান, ফেলাস্তীনের আহমাদ ইয়াসিন, কুয়েতের আব্দুল্লাহ আলমুত্তাওয়াহ, সিরিয়ার ডঃ মুস্তাফা আসসিবাঈ, সাঈদ হাওয়া, ইরাকের মুহাম্মাদ মাহমূদ আসসাওয়াফ, আলজিরিয়ার মাহফূয নাহনাহ, সুদানের হাসান আলতুরাবী, পাকিস্তানের মাওলানা মাওদূদী, ভারতের আবুল হাসান নাদাওয়ী, মালায়েশিয়ার নিক আব্দুল আযীয প্রমুখ।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা ইমাম হাসান আল বান্নার প্রতি রহম করুন। তাঁর ভুলচুকগুলো ক্ষমা করে দিন ।তাঁর কবরকে ফিরদৌসের সবুজ-শীতল বাগান হিসেবে কবুল করুন, এবং আমাদেরকেও ইমামের মতো একজন মুখলিস দা'ঈ ইলাল্লাহ হিসেবে কবুল করুন। আ-মী-ন !

||ইমাম হাসান আল বান্না (রহ.)||
-রেদওয়ান রাওয়াহা
১২-০২-২১

পঠিত : ৬৯৩ বার

মন্তব্য: ০