Alapon

আমাদের দেশের সাংবাদিকতা এবং কিছু কথা....



আজ বাংলাদেশের সাংবাদিকতার দালালিপূর্ণ সাংবাদিকতার আরও একটি উদাহরণ পাওয়া গেল। একাডেমিক ভাষায়, সাংবাদিকরা হলো দেশের বিবেক। আর বিবেক যখন মরে যায়, তখন সেই দেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়। কারণ, তখন সেই দেশে অবাধে দুর্নীতি ও দেশের মানুষের উপর নির্যাতন চলতে থাকে। কিন্তু বিবেক মরে যাওয়ার দরুন, এসব কোনো কিছুই প্রকাশ পায় না। প্রকাশ পেলেও তা ভুলভাবে প্রকাশিত হয়।

যেমন, আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের খেতাব বাতিলের প্রতিবাদে এক প্রতিবাদ সভা ডাকা হয়। সেই প্রতিবাদ সভার একদম শেষ দিকে পুলিশ অতর্কিত হামলা চালায়। বিএনপির নেতাকর্মীদের এলোপাতাড়িভাবে পেটাতে থাকে। আর এই দৃশ্য দেশের মানুষ টেলিভিশনে লাইভ টেলিকাস্ট দেখছিল। কিন্তু যে সাংবাদিক এই ঘটনার ধারা বর্ণনা দিচ্ছিলেন, তিনি বলছেন, ‍দু-পক্ষের মধ্যে ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ি চলছে। কিন্তু স্ক্রিনে আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম, বিএনপির নেতাকর্মীরা কেবল মার খেয়েই যাচ্ছিল, আর কেউবা মাইর থেকে বাঁচতে জীবন হাতে নিয়ে দিকবেদিক ছুটে যাচ্ছিল।

পুলিশের কাজ আইন প্রয়োগ করা, আইন ভঙ্গ করা নয়। কিন্তু আমরা দেখছি,. পুলিশ সরকারের তাবেদারি করতে গিয়ে ক্রমাগতভাবে আইন ভঙ্গ করে যাচ্ছে। নিজেরা আইন ভঙ্গ করে আবার ভুক্তভোগিকে আইন ভাঙার জন্য দোষি করছে। আর সেই ঘটনার জাস্টিফাই করছে দেশের মিডিয়া ও সাংবাদিক সমাজ। প্রকৃতঅর্থে এটাকে সাংবাদিকতা না বলে, সরকারের সমস্ত অন্যায় কাজের প্রটেক্টর বলা উচিত।

আমরা এমন এক দেশে বসবাস করছি, যে দেশের সাংবাদিকরা অপর একটি সংবাদ মাধ্যমকে নিষিদ্ধ করার দাবি করে; কেবল সত্য প্রকাশের দায়ে। সম্প্রতি আন্তজাতিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা টেলিভিশন ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার ম্যান’ নামে একটি অনুসন্ধানমূলক অনুষ্ঠান প্রচার করে। সেই অনুষ্ঠানে সরকারের বিভিন্ন দুর্নীতির খবর প্রমাণসহ উপস্থাপন করে। কিন্তু আমাদের সরকার সেসব অভিযোগের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো যুক্তিযুক্ত জবাব দিতে পারেনি; আর প্রমাণ উপস্থাপন করা তো দূর কি বাত। সাধারণ ভদ্রতা হল, যখন আমার নামে কোনো অভিযোগ আরোপ করা হবে, তখন আমার দায়িত্ব হলো সেই অভিযোগকে ভুল প্রমাণ করা কিংবা চুপচাপ মেনে নেওয়া। কিন্তু আমি যদি সেই অভিযোগের ব্যাপারে কথা না বলে শুধু বলি, এসব চক্রান্ত, তখন বুঝতে বাকি থাকে না, আমার কাছে এই অভিযোগ ভুল প্রমাণ করার মত যথেষ্ট ‍উপাদান নেই। এর অর্থ আমি দোষি।

আল জাজিরার রিপোর্ট নিয়েও সরকার একই কাজ করেছে। উত্থাপিত অভিযোগসমূহ ভুল প্রমাণ করার জন্য সরকারকে এখন পর্যন্ত কোনো যুক্তিযুক্ত পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। উপরন্তু ঢালাওভাবে বলা হয়েছে, এসব চক্রান্ত। আর সরকারের এমন দায়িত্ব-জ্ঞানহীণ বক্তব্যের স্বপক্ষে যখন দেশের সাংবাদিক সমাজ দাঁড়িয়ে যায়, তখন বুঝতে হবে সেই দেশে সাংবাদিকতা বলতে আর কিছু অবশিষ্ট নেই। তারা সব তেলবাজ, অথবা দলান্ধ। অথচ সাংবাদিক হওয়ার প্রথম শর্তই হলো সত্য প্রকাশে আপোষহীণ হওয়া।

কিন্তু আমাদের দেশের সাংবাদিকরা সত্য প্রকাশে আপোষহীণ হওয়া তো পরের কথা, তারা এখন সত্যটাও সহ্য করতে পারছে না। আন্তজাতিক কোনো মিডিয়া যখন তাদের কাজটাই সম্পাদন করে দিচ্ছে, তখনও তারা সহ্য করতে পারছে না। আর সহ্য করতে না পেরে তারা সেই মিডিয়াকেই নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছে। এর চেয়ে নির্লজ্জ সাংবাদিকতা আর অন্য কোনো দেশে জারি আছে কিনা জানি না।

পঠিত : ৩৭১ বার

মন্তব্য: ০