Alapon

একটি সংগ্রামের নাম, কবি মল্লিক।

৭০ দশকের কথা! সংগঠন একটি পরিকল্পনা হাতে নিল। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পরিকল্পনা। আর এই পরিকল্পনার আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ছিল একটি নাম। অতি সেই প্রিয় নামটি আর কেউ নয় তিনি মতিউর রহমান মল্লিক।


সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মল্লিক ভাইকে বাগেরহাটের সেই নিভৃত পল্লী থেকে ঢাকা শহরে নিয়ে আসা হল। মল্লিক ভাইকে বলা হল, একটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠি গড়ে তুলতে হবে। কথাটা যতোটা সহজ ছিল, তা বাস্তবায়ন করা ঠিক ততোটাই কঠিন ছিল। কারণ, বাংলা ভূখন্ডে তখন এমন একজনও ছিল না যিনি ইসলামি সংস্কৃতি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখেন।


তারপরও মল্লিক ভাই নিজ প্রচেষ্ঠায় একটি শিল্পী গোষ্ঠি তৈরী করলেন। সেই শিল্পী গোষ্ঠি তৈরী হলেও মল্লিক ভাই ছাড়া তাদের মধ্যে আর কেউই দক্ষ ছিলেন না। এর মাঝে একদিন নারায়নগঞ্জের কাঁচপুর থেকে প্রোগ্রামের দাওয়াত এলো। সম্ভবত এটাই ছিল সাইমুমের প্রথম অুনষ্ঠান। আর এই অনুষ্ঠানের প্রাককালেই সাইমুম নামকরণ করা হয়।


তখনো কাঁচপুর ব্রীজটি হয় নি। শিল্পীগোষ্ঠির শিল্পীদের নিয়ে নৌকায় করে নদী পার হচ্ছিলেন, মল্লিক ভাইরা। শিল্পীগোষ্ঠি যেখানে সেখানেই আড্ডা। নৌকার মাঝেই জমে উঠে আড্ডা। এই আড্ডার ফাঁকে শিল্পীদের একজন বলেন, ‘আমাদের তো একটা নাম দেওয়া উচিত। আমাদের শিল্পীগোষ্ঠির নাম সাইমুম দিলে কেমন হয়?’
মল্লিক ভাইসহ সকলের সম্মতিতে সেইদিনই শিল্পী গোষ্ঠির নাম নির্ধারিত হয় ‘সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠি’।


শিল্পীগোষ্ঠিসহ মল্লিকভাই কাঁচপুর কলেজে পৌঁছালেন। সেখানে গিয়ে দেখেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। এইবার পারফর্ম করার পালা। সিনেমা হলে হয়তো বিশাল এক সফলতার গল্প শুনতাম। কিন্তু এটা বাস্তবতা। মল্লিক ভাই এর সহশিল্পীরা আশানরূপ পারফর্ম করতে পারলেন না। যার ফলশ্রুতিতে সাধারণ মানুষ তির্ষক মন্তব্য করতে ছাড় দিলেন না। তাদের তির্যক বাক্য বিদ্ধ হয়ে মল্লিক ভাই এক দৌড়ে নদীর কিনারায় পৌঁছে গেলেন। নদীর তীরে গড়িয়ে পড়ল, প্রিয় কবি মল্লিক ভাই এর কয়েক ফোঁটা অশ্রু।


কবি নিজেকে শান্তনা দিতে গিয়ে লিখেন,


‘হতাশ হয় না, জিহাদের জঙ্গিরা
হতাশ হয় না, কোন খাঁটি বিপ্লবী
হতাশ হয় না, শহীদের সঙ্গিরা
বুকে নিয়ে ফেরে, ঈমানের দুন্দভী’


যে সাইমুমের ব্যর্থতায় ব্যথিত হয়ে কবি মল্লিক অশ্রুশিক্ত হয়েছিলেন, সেই সাইমুম আজ দেশের ইসলামী সংস্কৃতির বিকাশে রাহবারের ভূমিকা পালন করছে। সাইমুমের দেখানো পথ ধরে উঠে এসেছে ‘কলরবের’ মত ইসলামী সাংস্কৃতিক গোষ্ঠি। স্বাধীনতা পরবর্তি সময়ে বাংলার মুসলিমরা জানতোই না, ইসলামি সংস্কৃতি বলতে কোন সংস্কৃতি আছে। ইসলামি সংস্কৃতির পরিচয় আজ বাংলা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবার নেতৃত্বে ছিলেন প্রিয় মল্লিক ভাই।


আল্লাহপাক প্রিয় কবি মরহুম মতিউর রহমান মল্লিক ভাই এর প্রচেষ্ঠাগুলোকে কবুল করুন। 

পঠিত : ৭১৬ বার

মন্তব্য: ০