Alapon

কবি আল মাহমুদ এবং কিছু কথা...




আল মাহমুদ যে রাতে মারা যান সে রাতে আমি নরসিংদীতে। নাশিদ প্রোগ্রামে। শুনলাম কবির কফিন শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হবে। সকালে একবার দেখবার আশায় তড়িঘড়ি করে ছুটলাম। নীলক্ষেত এসে খবর পেলাম কবির মরদেহ কে শহীদ মিনারে রাখতে দেয়া হয় নি। দীর্ঘ একটা দৌড় বিফলে গেলো। কিন্তু এ নিয়ে তেমন কোনো কথা হয় নি। দু'চার কলম বড় করে লেখা হয় নি। মৃত্যুর পরে আমি কমপক্ষে চারটি স্মরণসভা ও শোকানুষ্ঠানে গিয়েছি। কোথাও দেশের প্রথিতযশা কবি-লেখক, তথাকথিত গুণীজনরা এ নিয়ে সামান্য একটা শব্দ উচ্চারণ করে নি। ঢাকাই কবি-লেখকদের অধিকাংশ যে পা চাটা সেটা আরো একবার প্রমাণ হলো। এদের এই রোগ স্বাধীনতার আগ থেকে শুরু হয়ে এখনো বহাল তবিয়তে আছে।

২.
কবি মারা যাবার একদিন বা দুইদিন পরে গেস্টরুমে একজন সিনিয়র জিজ্ঞেস করলেন—''এই কে আল মাহমুদের যে কোনো একটা কবিতার চার লাইন বলতে পারবি? দাঁড়া।" গেস্টরুমে প্রথম বর্ষের অর্ধ শতাধিক জনের মত আমরা। কেউ দাঁড়াচ্ছে না দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেলাম। আল মাহমুদের কবিতার দু'চার লাইন তো সবারই পারা উচিত। নিদেনপক্ষে আমাদের মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ে যা ছিলো সেগুলো সবাই ছড়ার মত মুখস্থ করেছি।

"ফেব্রুয়ারীর একুশ তারিখ
দুপুর বেলার অক্ত,
বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায়?
বরকতেরই রক্ত।
.........
প্রভাতফেরি প্রভাতফেরি,
আমায় নেবে সঙ্গে?
বাংলা আমার বচন,
আমি জন্মেছি এই বঙ্গে।"
অথবা

"আমার চেতনা যেন এক শাদা সত্যিকারের পাখি,
বসে আছে সবুজ অরণ্যে৷"
অথবা

গত দু'দিন ধরে ফেসবুকে ঘুরে বেড়ানো নিচের ক'টা লাইন তো দেখতে দেখতে মুখস্থ হয়ে যাবার কথা।

"কোনো এক ভোরবেলা, রাত্রি শেষে শুভ শুক্রবারে, মৃত্যুর ফেরেস্তা এসে যদি দেয় যাওয়ার তাগিদ, অপ্রস্তুত এলোমেলো এ গৃহের আলো অন্ধকারে, ভালোমন্দ যা ঘটুক মেনে নেবো এ আমার ঈদ।"

কিন্তু কেউ কিছু বলছে না। আমি তো খুশি। কেউ পারে নাই। আমি টপাটপ বলে দিয়ে হিরো সাজবো। দাঁড়াইতে গেলাম। এক বন্ধু হাত টান দিয়ে বসিয়ে দিলো। আমি ক্ষেপে গেলে আস্তে আস্তে বললো—"আল মাহমুদের কবিতা বলিস না, শিবির ভাববে।" মাথা নাড়ালাম।
গেস্টরুম শেষে আরেকজন সিনিয়র (যিনি আমায় আগলে রাখেন) একই সতর্কবাণী দিলেন। বেঁচে আসছি বলে আল্লাহ'র কাছে শোকর আদায় করলাম।

Zahid Ahsan

পঠিত : ৬২৪ বার

মন্তব্য: ০