Alapon

কোকাকোলা খাওয়ার ব্যাপারে আমাদের ধর্মবিশ্বাস কী বলে...?



কোকের উপাদান বিশ্লেষণ করে গবেষকরা আরো কিছু তথ্য খুঁজে পেয়েছেন। এতে রয়েছে এলকোহল, যা থিতানো হয় ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ১৯০৯ সালের দিকে ক্যালিফোর্নিয়ার সাদা মদও শতকরা ২০ ভাগ এলকোহল ফর্মুলাতেই তৈরি হতো। এছাড়াও বর্ণ গন্ধ ও স্বাদের জন্যে কোকে মেশানো হয় সাইট্রাস, চুনের রস ও অন্যান্য মশলা। শুধু তা-ই নয়, ১৯০৯ সাল অবধি এতে কোকেন পর্যন্ত মেশানো হতো!

২০০৭ সালে ব্রিটিশ সানডে টাইমস পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, কোকাকোলায় রয়েছে এলকোহল। কোকাকোলা কোম্পানি অবশ্য এর সত্যতা অস্বীকার করে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ কারণেই হয়তো কোকাকোলা কোম্পানি গত এক শতাব্দী ধরে তাদের পানীয়ের ফর্মুলা প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে এবং এ ব্যাপারে দুজন বিচারকের আদেশকেও অমান্য করেছে তারা। উল্লেখ্য, ১৯৭৭ সালে ভারত সরকার কোকের ফর্মুলা জানতে আগ্রহী হলে কোকাকোলা কোম্পানি দেশটি থেকে তখনকার মতো পাততাড়ি গুটিয়ে নেয়, তবু ফর্মুলা প্রকাশ করে নি। স্বাস্থ্য-গবেষকদের মতে, কোকে উপকারী কিছু তো নেই-ই, বরং এটি হাবিজাবি ক্ষতিকর মশলায় ভরা।

একালের প্রখ্যাত মার্কিন পণ্ডিত গবেষক বক্তা ও টিভি-ব্যক্তিত্ব মার্ক পেন্ডারগ্রাস্ট। ২০০০ সালে তার একটি বই প্রকাশিত হয়-‘ফর গড কান্ট্রি এন্ড কোকাকোলা’। শুরু থেকেই ব্যাপকভাবে আলোচিত হয় বইটি। আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস এটিকে সে বছরের উল্লেখযোগ্য বই হিসেবে আখ্যায়িত করে। ডিসকভার ম্যাগাজিন বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বইটির ওপর।

দীর্ঘ অনুসন্ধান ও গবেষণার ভিত্তিতে রচিত এ বইটিতে কোকাকোলাসহ অন্যান্য কোমল পানীয়ের অনেক অজানা দিক উন্মোচন করেন পেন্ডারগ্রাস্ট। তিনিই প্রথমবারের মতো বলেন, কোকাকোলার ফর্মুলায় এলকোহলের উপস্থিতি রয়েছে। তার ভাষায়-‘শিশুরাও মদ খাচ্ছে, কারণ মা-বাবারা তাদের হাতে কোকের গ্লাস তুলে দিচ্ছেন’।

এ তথ্য প্রকাশের সাথে সাথে নড়েচড়ে বসেছেন অনেকেই। বিশেষত মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোর সংশ্লিষ্ট মুখপাত্রেরা বলছেন, কোকাকোলার বোতলের গায়ে এলকোহলের উল্লেখ না থাকায় মুসলমানদের পক্ষে এর উপাদান সম্পর্কে জানা সম্ভব হচ্ছে আর এই কৌশলগত গোপনীয়তার ফলে মুসলমানরা না জেনে এলকোহল খাচ্ছেন! কিন্তু এলকোহল থাকার কারণে এটি স্পষ্টতই মুসলমানদের জন্যে হারাম হয়ে গেছে। পবিত্র কোরআন ও হাদীসে উল্লেখ রয়েছে-কোনো খাদ্য নিয়ে এমন সন্দেহের সম্মুখীন হলে তা অবশ্যই বর্জনীয়।

মালয়েশিয়াভিত্তিক ভোক্তাদের সংগঠন ‘উটুসান কনজ্যুমার’ থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘কোকে রয়েছে এলকোহল, তাই মুসলমানদের জন্যে এটি সম্পূর্ণ হারাম’। তারাও তাদের একটি বইতে প্রকাশ করেছে কোক তৈরির গোপন ফর্মুলা। এসব তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর সচেতন মুসলমানদের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলেছেন, এভাবে ফর্মুলা গোপন রেখে কোকাকোলা কোম্পানি মুসলমানদের বিভ্রান্ত করেছে ও না জেনে মদ্যপানে বাধ্য করছে। ক্রেতাদেরকে গোপনে হারাম খাওয়ানোকে তারা দেখছেন মানুষের দীর্ঘকালীন বিশ্বাসের প্রতি একটি বড় আঘাত হিসেবে।

এশিয়া-উইক সাময়িকীর একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এ প্রসঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার উলামা কাউন্সিল ঘোষণা করেছে-‘মুসলমানদের জন্যে এক ফোঁটা এলকোহলও হারাম।’ মালয়েশিয়ার মুসলমান সমাজকে 'Always CocaCola' জাতীয় চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে না পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন সে দেশের বিজ্ঞ সমাজ।

এখানেই শেষ নয়। মার্ক পেন্ডারগ্রাস্টের মতে, কোকাকোলার আরেকটি উপাদান গ্লিসারিন। কোকাকোলা কোম্পানিও তাদের পানীয়ে গ্লিসারিন থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে নি। গ্লিসারিন হচ্ছে তেল ও চর্বির উপজাত, যা ব্যবহৃত হয় সাবান তৈরিতে। অনেকেরই আশঙ্কা, মুসলমানদের জন্যে নিষিদ্ধ বা হারাম প্রাণী থেকেও এ চর্বি সংগৃহীত হতে পারে।

কোকে এলকোহল ও গ্লিসারিন-এর অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর এখন প্রশ্ন উঠেছে, আর কী কী সন্দেহজনক উপাদান রয়েছে এসব পানীয়ে? কিন্তু জানতে চাইলেই তো আর জানা যায় না, কারণ গত এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এ নিয়ে চলছে এক অবিশ্বাস্যরকম গোপনীয়তা। বলা হয়ে থাকে, সেই ১৮৯২ সাল থেকেই কোকাকোলার মূল ফর্মুলা আজও আমেরিকার একটি গোপন রহস্য। আর এর ফর্মুলা সংরক্ষিত আছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ব্যাংকের ভল্টে। শুধুমাত্র কোকাকোলা কোম্পানির চীফ কেমিস্ট এর প্রকৃত মাল-মশলা সম্বন্ধে জানেন এবং একজন চীফ কেমিস্ট-এর অবসর গ্রহণের সময় অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে তার উত্তরসূরির কাছে এ তথ্য হস্তান্তর করা হয়। কোকাকোলা কোম্পানিকে সে দেশের আদালত এ পর্যন্ত দুবার এই ফর্মুলা প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে। কোম্পানিটি এ নির্দেশ না মানার দরুন বিপুল অংকের ক্ষতিপূরণ দিয়েছে, কিন্তু ফর্মুলা প্রকাশ করে নি।

দীর্ঘ সমীক্ষার পর মালয়েশিয়াভিত্তিক পত্রিকাটি কোক এবং অন্যান্য কোমল পানীয়কে মুসলমানদের জন্য সম্পূর্ণ হারাম বলে আখ্যায়িত করে। কারণ বিশেষজ্ঞদের মতে, অন্যান্য পানীয়গুলোও কমবেশি একই পদ্ধতিতেই তৈরি হচ্ছে, তাই এগুলোতেও এলকোহল এবং অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান থাকাটা খুব স্বাভাবিক। এছাড়াও সব ধরনের কোমল পানীয়ে ব্যবহৃত ইথানলও সম্পূর্ণ হারাম। কারণ, এটি একটি মাদক।

নবীজী (স) বলেন, ‘যা বৈধ তা সুস্পষ্ট, যা অবৈধ সেটাও সুস্পষ্ট। কিন্তু এর মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে কিছু সন্দেহজনক জিনিস যা অনেক মানুষই জানে না, সেগুলো থেকে যে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখে, সে তার ধর্ম ও সম্মানকে নিষ্কলুষ রাখে’ (বোখারি ও মুসলিম)। মধু, ভুট্টা, বার্লি ইত্যাদিকে গাঁজিয়ে মাদক তৈরি করলে সেটা হালাল কি না, সে ব্যাপারে একবার নবীজী (স)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো। উত্তরে তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, প্রতিটি মাদকই হারাম।

আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ), থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে কোন নেশা উদ্রেককর জিনিস হারাম। আর যে জিনিসের অধিক পরিমাণ নেশা সৃষ্টি করে তার সামান্য পরিমাণও হারাম। [ইবনে মাজাহ-৩৩৯২]

অর্থাৎ মূলত মানবদেহের জন্যে ক্ষতিকর ও অপকারী বস্তুগুলোই ইসলামে হারাম হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।

বইয়ের নাম- সুস্থ দেহ প্রশান্ত মন

পঠিত : ৬৫২ বার

মন্তব্য: ০