Alapon

পশ্চিমে মুসলিম রাজনৈতিকদের উত্থান কি সুফল আনবে?



ভোটের দিনক্ষণ এখনো ঠিক হয়নি। তবে ময়দান চাঙা হয়ে আছে। বলছি পশ্চিম বাংলার কথা। এই নির্বাচনে বিজেপি, তৃণমূল ও কংগ্রেস-বামফ্রন্ট জোটের ত্রিমুখী লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে রাজ্যটির মুসলিম ভোট।

প্রতিবারের মতো এবারের বিধানসভাও নির্বাচনে ভাগ্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে মুসলিম ভোট। মুসলিমদের ভোটের সংখ্যা এখানে ৩০%। জেলাগুলোর মধ্যে উত্তর দিনাজপুর, মুর্শিদাবাদ ও মালদায় মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এর বাইরে অন্তত সাতটি জেলায় মুসলিমদের ভোটের সংখ্যা বেশি। সব মিলিয়ে প্রায় ১০টি জেলায় ১৫০টি আসনে মুসলিম ভোটাররা নির্বাচনের ফলে প্রভাব রাখবে।

২০১১ সালে বামফ্রন্টের পরাজয় ও তৃণমূলের ক্ষমতায় আসার ক্ষেত্রে মুসলিমদের ভোটব্যাংক অন্যতম ভূমিকা রেখেছিল। তবে এই এক দশকে মুসলিমদের মধ্যে মমতার তৃণমূলের জনপ্রিয়তা কমেছে। অন্যদিকে, বাংলায় উত্থান ঘটেছে দুই মুসলিম রাজনৈতিক নেতার। একজন আব্বাস সিদ্দিকী অন্যজন আসাদউদ্দিন ওয়াইসির। এবারের নির্বাচনে তারা অংশ নিচ্ছে।

কংগ্রেস-বামফ্রন্ট জোটে যোগ দিতে পারে পশ্চিমবঙ্গের ফুরফুরা শরীফের আব্বাস সিদ্দিকীর নবগঠিত রাজনৈতিক দল ‘ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট’। অন্যদিকে, ভারতের হায়দ্রাবাদভিত্তিক রাজনৈতিক দল সর্বভারতীয় মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) দলের প্রেসিডেন্ট আসাদউদ্দিন ওয়াইসি চাইছেন আব্বাস সিদ্দিকীর ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের সঙ্গে জোট করতে। গত বছর বিহারের নির্বাচনের পর থেকে কংগ্রেসের সঙ্গে বিরোধ বেড়েছে আসাদউদ্দিন ওয়াইসির।

আপাতদৃষ্টিতে এই মুসলিম নেতাদ্বয়ের প্রভাব বাড়া সুখকর সংবাদ মনে হলেও এটি বিপর্যয় এনে দিতে পারে। ওয়াইসির দল মুসলিম ভোট কেটেছে বলেই বিজেপি জোট বিহারে আবার ক্ষমতায় আসতে পারলো। আব্বাস ও ওয়াইসি আলাদা জোট করেও নির্বাচন করার কথা ভাবছেন।

বাংলায় আব্বাস সিদ্দিকী এবং ওয়াইসি কেউই ক্ষমতাসীন তৃণমূলের সাথে জোটে যাচ্ছে না। আব্বাস সিদ্দিকী বাংলাভাষী মুসলিমদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়। আদিবাসী অধিকার নিয়ে কথা বলায় অন্যান্য গোষ্ঠীর মধ্যেও তার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। অন্যদিকে, শহুরে উর্দুভাষী উচ্চবিত্ত মুসলিমদের মধ্যে জনপ্রিয় ওয়াইসি। তারা দুজনই বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে ফুরফুরা শরিফে বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে।

আব্বাস সিদ্দিকী কিংবা আসাদউদ্দিন ওয়াইসির পৃথক নির্বাচন মানেই তৃণমূলের অন্তত দুই ডজন আসন অনিশ্চয়তায় পড়া। আর এই আসনগুলো যদি কংগ্রেস ও মুসলিমরা পায় তবে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে বিজেপি। মুসলিম ও কংগ্রেসের মিলিত শক্তি এতটাই নাই যে, তারা জিততে পারবে। তবে তারা চাইলে মমতাকে হারিয়ে দিতে পারবে। মমতা হারা মানে কিন্তু মুসলিমরা ক্ষমতায় যাওয়া না। মমতা হারা মানে হলো বিজেপি ক্ষমতায় যাওয়া।

আর এটাই হলো ভয়ের বড় কারণ। তৃণমূলের কাছে মুসলিম ভোট গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একই কারণে হিন্দুদের মধ্যে দলটির জনপ্রিয়তা কমেছে। এরই সুবিধা নিচ্ছে বিজেপি। ২০১৪ সালে লোকসভায় বিজেপি হিন্দু ভোটের ২১ ভাগ পায়, ২০১৯ সালে পেয়েছে ৫৭ ভাগ। মমতার অভিযোগ, বিজেপিকে নির্বাচনে জেতাতেই বিজেপি বিরোধীদের ভোট কাটার জন্য মাঠে নেমেছেন মুসলিম দুই নেতা। এর জবাবে আব্বাস সিদ্দিকী বলেছেন, তৃণমূল তাদের জন্য কিছুই করেনি তাই মুসলিমদের রাজনৈতিক শক্তি দরকার।

আব্বাস সিদ্দিকী সাহেব তৃণমূল ও মমতার বিরুদ্ধে যত কথাই বলুন না কেন ভারতের মুসলমানদের মধ্যে সবচেয়ে নিরাপত্তা ও ভালো আবস্থানে আছে বাংলার মুসলমানরা। আর এটা মমতার জন্যই। যদি কোনোভাবে এখানে বিজেপি জিতে যায় তবে আফসোসের শেষ থাকবে না।

সারা ভারতে বিজেপির সামনে এখনও পর্যন্ত শক্তিশালী বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন মমতাই। তাকে হারিয়ে দেওয়া বাংলার মুসলিমদের কোনোভাবেই উচিত হবে না। আল্লাহ এই মজলুম জনপদের মুসলিমদের রক্ষা করুন ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার তাওফিক দান করুন।

পশ্চিমের বিপদ শুধু পশ্চিম বাংলার নয়, আমাদের ওপরও বর্তাবে। রোহিঙ্গাদের মতো ঢল কলকাতা থেকেও শুরু হতে পারে। আল্লাহ না করুন। আল্লাহ হিফাযত করুন।

পঠিত : ৪৫৭ বার

মন্তব্য: ০