Alapon

বন্ধু নির্বাচনে যে কারণে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন...



জীবনে চলার পথে মানুষ বন্ধু - বান্ধব ছাড়া চলতে পারে না। তাই তারা বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হবেই। সৎ বন্ধু মানুষের ইহকাল ও পরকালের জন্য কল্যাণকর হয়। আর বন্ধু যদি হয় অসৎ, তবে তার প্ররোচনায় পড়ে মানুষের বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই বন্ধু নির্বাচনে অত্যন্ত সতর্ক হওয়া উচিত। '

একজন ভালো বন্ধুর কারণে সে সোনার মানুষ হতে পারে। পক্ষান্তরে তার বন্ধু যদি দুশ্চরিত্রের অধিকারী হয় তবে সে পুরো পরিবার ও সমাজকে কলুষিত করতে পারে। যা তার দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতে অভিশাপ এর কারণ হতে পারে। আল্লাহ তা'আলা বলেন " হে মুমিনগণ তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সাথে থাকো।" ১
মানুষের কর্ম, চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয় বন্ধুত্বের কল্যাণে। এ কারণে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে হবে এবং কাদের বর্জন করতে হবে এ ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা আমাদের পথ দেখিয়েছেন।

পবিত্র কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর ঈমানদার পুরুষ এবং ঈমানদার একে অপরের বন্ধু। তারা ভালো কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। তারা নামাজ প্রতিষ্ঠিত করে, যাকাত আদায় করে এবং আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন-যাপন করে। তাদের ওপর আল্লাহতায়ালা অনুগ্রহ করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী সুকৌশলী।২

ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী ভালো বন্ধু সেই হতে পারে যে নৈতিক স্খলন থেকে দূরে থাকে। কেননা দুশ্চরিত্রবান আর মন্দ কাজে অভ্যস্ত বন্ধু শেষ পর্যন্ত মানুষকে অবৈধ, অশোভন আর অনৈতিক কাজের দিকে নিয়ে যায়। যেমন প্রবাদে আছে," সৎ সঙ্গে স্বর্গেবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ"।

বন্ধুত্বের মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ নীতি হলো সততা রক্ষা করা। বন্ধুকে সম্মান করা বন্ধুত্বের নীতিমালার বৈশিষ্ট্য। বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ শিষ্টাচার হচ্ছে অসুখ-বিসুখ, বিপদ-আপদেও বন্ধুত্ব অটুট রাখা। বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ব্যক্তিগত অহমিকা বা গর্ব পরিহার করা

যেহেতু আমরা বন্ধু ছাড়া চলতে পারি না; সেহেতু বন্ধু গ্রহণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে। আমাদের এমন ব্যক্তিকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে হবে, যারা ঈমানদার, ধর্মপ্রাণ, সত্যবাদী, সদাচারী, সৎকাজে অভ্যস্ত এবং নীতিবান।

ভালো বন্ধুর গুণাবলি কী, ইসলামের দৃষ্টিতে সেদিকে একবার নজর দেওয়া যাক। ইসলামের দৃষ্টিতে ভালো বন্ধুর বৈশিষ্ট্য হলো, বন্ধুটি বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন হওয়া এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ওই বুদ্ধি-বিবেককে কাজে লাগানো। এই বিবেকবান বন্ধু সদুপদেষ্টা হয় এবং তার ওপর সবসময় আস্থা রাখা যায়। কেননা এ ধরনের বন্ধু ভুল-ত্রুটি থেকে ফিরিয়ে রাখে।
এ পি জে আব্দুল কালাম বলেন, " একটি বই একশোটি বন্ধুর সমান, কিন্তু একজন ভালো বন্ধু পুরো একটি লাইব্রেরির সমান"।

নৈতিক উপযুক্ততা ভালো বন্ধুর আরেক বিশেষ গুণ। ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী ভালো বন্ধু সে-ই হতে পারে, যে নৈতিক স্খলন থেকে দূরে থাকে। কেননা দুশ্চরিত্রবান আর মন্দ কাজে অভ্যস্ত বন্ধু শেষ পর্যন্ত মানুষকে অবৈধ, অশোভন আর অনৈতিক কাজের দিকে নিয়ে যায়।
বিভিন্ন কারণে আমাদের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। কিন্তু আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের ভিত্তিতে যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে সে বন্ধুত্ব সবচেয়ে মজবুত হয়। অপরদিকে নিজের স্বার্থের জন্য উপকার লাভের আশায়, ক্লাব সদস্যের ভিত্তিতে, সামাজিক শ্রেণী ও জাতিগত পরিচিতির ভিত্তিতে যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তা বেশিদিন টিকে না। এ সকল ক্ষেত্রে কারো স্বার্থে কোনো রকম আঘাত লাগলেই নষ্ট হয়ে যায়।

বন্ধুত্ব রক্ষা করতে গিয়ে ইমানবিরোধী কাজ করা এবং আল্লাহর অবাধ্য হওয়া ইসলাম অনুমোদন করে না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘সীমালঙ্ঘনকারী সেদিন নিজের দুহাত দংশন করতে করতে বলবে, হায়, আমি যদি রাসুলের সঙ্গে সৎপথ গ্রহণ করতাম! হায়, আমার দুর্ভাগ্য, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম! আমার কাছে উপদেশ আসার পর সে আমাকে তা থেকে বিভ্রান্ত করেছিল। শয়তান মানুষকে বিপদকালে ধোঁকা দেয়।’ ৩

মনে করুন, আপনি নিজে খুবই ভালো। কিন্তু আপনি যদি কোন খারাপ বন্ধুর সাথে মেলামেশা করেন তার খারাপ আচার আচরণ, কাজকর্মের প্রভাব আপনার ওপর পড়বেই। ইরানের জগদ্বিখ্যাত মরমী কবি মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি এ সম্পর্কে লিখেছেনঃ
"অসৎ বন্ধু থেকে দূরে থাকো যতোটা পারো!
সে যে বিষধর সাপের চেয়েও ভয়ংকর আরো
দুষ্ট সাপ শুধু আঘাত করে তোমার প্রাণের পর
অসৎ বন্ধু ছোবল মারে প্রাণের সাথে ঈমানের পর।"

মোটকথা, সৎ চরিত্রবান পরহেজগার বন্ধুর গুনে অপর বন্ধু ভালো হতে বাধ্য। ঠিক তেমনি সমাজে মাদক, ইভটিজিং, নারী নির্যাতন, ব্যভিচার, ধর্ষন, চুরি, ডাকাতি ও খুনের মতো কত জঘন্যতম অপরাধ যাদের দ্বারা সংঘটিত হয় তাদের অধিকাংশই খারাপ বন্ধুর সাথে মেশার ফলে সংঘটিত হয়।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদের সকলকে বন্ধু নির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
তথ্যসূত্র
_________________
[১] ৯ নং সূরা তাওবা আয়াত ১১৯
[২] সূরা আত তওবা: ৭১
[৩] সুরা : ফুরকান, আয়াত : ২৭-২৯

- বিনতে মুহাম্মদ আলী

পঠিত : ১০৫১ বার

মন্তব্য: ০