Alapon

একটি উত্তম ভবিষ্যতের প্রত্যাশায়। (২য় পর্ব )



আর এখানে আসলেই খুব চমৎকার ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। "ইল্লা আন ইয়াশা আল্লাহ, ওয়াযকুরহু ইজা নাসিইৎ - তাঁর কথা মনে করো যখন ভুলে যাও।" আল্লাহ এটা বলেননি। তিনি বলেছেন - "তোমার রবের কথা স্মরণ করো।" দেখুন, একবার যখন আয়াতে আল্লাহর নাম ব্যবহার করা হয়েছে "ইল্লা আন ইয়াশা আল্লাহ " বলে। আল্লাহর নাম যখন একবার উল্লেখ করা হয়েছে....আমরা জানি, একবার কারো নাম উল্লেখ করা হলে, পরেরবার উল্লেখ করার সময় আমরা প্রনাউন বা সর্বনাম ব্যবহার করি। উদাহরণস্বরূপ, বিষয়টা সহজে বোঝার জন্য বলছি - বল, যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন আর ভুলে গেলে তাঁর নাম স্মরণ করো। তাঁর কথা স্মরণ করো যখন ভুলে যাও। 'তাঁর' শব্দটি আল্লাহর প্রতি নির্দেশ করবে।

কিন্তু আল্লাহ "তাঁর" শব্দটি উল্লেখ করেননি। তিনি প্রনাউন ব্যবহার করেননি। তিনি বলেছেন - রাব্বাকা (তোমার রব)। এখানে আসলে এই বিষয়টার প্রতি আবারো জোর দেয়া হচ্ছে যে, আপনি যেন আবারো নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন, আল্লাহ আপনার প্রভু। আল্লাহ আপনার ভবিষ্যতের নিয়ন্ত্রক, তিনি আপনার রব, তিনি আপনার চূড়ান্ত মালিক। আর এই কথা কখনোই ভুলে যেতে পারবেন না। এটা আপনার উপর আল্লাহর কর্তৃত্বের অংশ যে, আপনার ভবিষ্যৎ তাঁর হাতে। আর তাই, আল্লাহ সাধারণ নিয়মের বাহিরে গিয়ে বললেন, রাব্বাক ইজা নাসিত। যখন আমরা আমাদের ভবিষ্যতের কোনো ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিবো, তখন মনে রাখবো যে, এটা আসলে মূলত আল্লাহর হাতে।

এখন পর্যন্ত এটা আসলে ভারসাম্য রক্ষা করার এক অসাধারণ আয়াত। একদিকে, আপনি সম্ভাব্য সবচেয়ে শক্ত প্রতিজ্ঞা করছেন, 'ইন্নি ফাইলুন জালিকা গাদা', এমনকি 'ইন্নি সায়া ফায়াল-ও নয়। আপনাদের মাঝে যারা আরবি ব্যাকরণের সাথে পরিচিত, এটা এমনকি ক্রিয়াপদ নয়, এখানে প্রতিশ্রুতির জন্য বিশেষ্য তথা ইস্মে ফায়েল ব্যবহার করা হয়েছে। "আমি অবশ্যই এটা করবো আগামীকাল।" আবার পক্ষান্তরে, আপনি সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। তাই, সামনে এগিয়ে যাবার পূর্বে এই ভারসাম্য নিয়ে কিছু কথা বলা যাক।
এই দুনিয়ায় এমন অনেক মানুষের সন্ধান পাবেন যারা মনে করে, নিজেদের যোগ্যতার কারণে তারা সবকিছু করতে পারবে। "আমি আসলেই বুদ্ধিমান, আমার খুবই নির্ভরযোগ্য একটা গাড়ি আছে, আমি আসলেই ভালো ড্রাইভার, আমি সেখানে যাওয়ার সেরা পথটা চিনি - দেরি হওয়ার প্রশ্নই আসে না " আমি আমি আমি...সকল নির্ভরতা আমার নিজের উপর। আমার সফল একটি ব্যবসা আছে কারণ আমার ব্যবসার পরিকল্পনাটা খুবই ভালো। আমি ভালো চাকরি করি - কারণ, আমি সেরা স্কুলে পড়েছি, ভালো জিপিএ পেয়েছি, আমার ভালো রেজিউমি আছে। তো, সকল নির্ভরতা নিজের প্রতি।

শত শত মিলিয়ন ডলারের একটা ইন্ডাস্ট্রি আছে। আর তা হলো - আত্মনির্ভরতা, আত্মপ্রেরণা ইন্ডাস্ট্রি। যার শুরু এবং শেষ হলো, তোমার দ্বারা যেকোনো কিছু করা সম্ভব। তুমি অসাধারণ। তুমি যে আসলে কতটা ক্ষমতাবান তা তুমি নিজেও জানো না। তোমার সম্ভাবনা সম্পর্কেও তুমি জানো না। মানুষ হাজার হাজার টাকা দেয় এসব কথা শোনার জন্য - 'তোমার নিজের দাঁত তুমি নিজেই মাঝতে পারো, তোমার নিজের ভ্রমণ তুমি নিজেই করতে পারো।' যেটাই হোক। এসব শোনে তারা বেশ অনুপ্রাণিত হয়ে উঠে। কারণ, তারা আত্মশক্তির উপর জোর দেয়। যার কিছুটা বৈধতা আছে।

আবার অন্য আরেক প্রান্তের মানুষেরা বলে, আমার দ্বারা কিছুই করা সম্ভব নয়। আমি শুধু একজন মিসকিন। আমি শুধু আল্লাহর একজন বান্দা। আমার কিই-ব মূল্য আছে? আমার দাম তো অমুকের জুতার ধুলোর সমানও নয়। আমি কিছুই না। আমি 'তুরাবের' তৈরি। আমাকে 'নুতফা' থেকে বানানো হয়েছে, আল্লাহ যেমন বলেছেন - অধম, নগণ্য এক সৃষ্টি। তাই, আমি আসলে কিছুই করার সামর্থ্য রাখি না। এদের আত্মবিশ্বাস বলতে কিছুই নেই। এরা বলে, আল্লাহ সব করেন, আমি কিছুই করি না। এদের শেষ পরিণতি কী হয় জানেন? এরা জীবনে কিছুই করে না। জীবনে ভালো কিছু যখন হয় না, তখন বলে, "আল্লাহ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আমার কী করার আছে।" তারা সবকিছুর জন্য আল্লাহকে দোষ দেয়। (সুবহানাল্লাহ)

তাহলে দেখা যাচ্ছে, একদিকে এমন ধরণের মানুষ রয়েছে যারা কোনোকিছুর জন্যই আল্লাহর উপর নির্ভর করে না, সম্পূর্ণরূপে নিজেদের উপর নির্ভয় করে। আবার অন্য চরম প্রান্তের মানুষেরা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর উপর নির্ভর করে, নিজেরা কোনো চেষ্টাই করে না।
কুরআনের অন্য অনেক আয়াতের মত এই আয়াতটি হলো, ভারসাম্যের আয়াত। তোমার নিজেকে প্রতিজ্ঞা করতে হবে। তোমাকে পদক্ষেপ নিতে হবে। "ইন্নি ফাইলুন জালিকা গাদা।" আবার একই সঙ্গে আপনাকে বুঝতে হবে যে, আপনার প্রতিজ্ঞা, আপনার কাজ এবং আপনার সামর্থ্য - সবই আপনার মালিকের হাতে। আর তিনি আপনাকে এটা তখনি দান করবেন, যখন আপনি এটা পূরণের চেষ্টা করবেন। যখন আপনি আপনার প্রচেষ্টার শতভাগ ঢেলে দিবেন।

- নোমান আলী খান

পঠিত : ৩৫২ বার

মন্তব্য: ০