Alapon

একজন হুমায়ূন আহমেদ!

হুমায়ূন আহমেদ পিএইচডি কম্লিট করে দেশে ফিরে আসলেন। একটা দুই রুমের বাসা ভাড়া নিলেন। সেই বাসারা পাশের বাসার মালিকের ছিল রঙ্গিন টিভি। হুমায়ূন আহমেদ এর মেয়েরা তাদের বাসাতে প্রায়ই টিভি দেখতে যেতো।


একদিন তারা হৈহৈ করে টিভি দেখতে গেল। কিন্তু খানিকক্ষন পরেই মুখ গোমড়া করে বাসায় ফিরে এল। মুখ গোমড়ার কারণ জানতে চাইলে তারা বলল, ‘ঐ বাসায় মেহমান এসেছে। তাই আজ আর টিভি দেখা হবে না।’
এই কথা বলেই বাচ্চারা ভ্যা করে কান্না শুরু করে দিল।
তাদের কান্না দেখে মেয়ের মাও কান্না শুরু করে দিল। কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘এই দেশ ছেড়ে সবাই বিদেশে যায়। আর তুমি কিনা এই দেশেই ফিরে আসলে। এখানে কিচ্ছু নেই, একটা টিভিও নেই।’



ঠিক সেই সময় বিটিভি থেকে হুমায়ূন আহমেদকে নাটক রচনার অফার দেওয়া হল। হুমায়ূন আহমেদ তাঁর জীবনের প্রথম নাটক ‘এই সব দিনরাত্রি’ রচনা শুরু করলেন। তিনি ঠিক ততোটাই লিখলেন, যতোটা লিখলে একটা রঙ্গিন টিভি কেনা যাবে। 
নাটকটি প্রচার হবার সাথে সাথে সারাদেশে হুমায়ূন আহমেদ এর নাম ছড়িয়ে পড়ল। পত্রিকার লোক হুমায়ূন আহমেদ এর বাসায় ভিড় করতে লাগল। একজন সাংবাদিক বললেন, ‘নাটকটি আপনি কি উদ্দেশ্যে লিখেছেন?’
হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘একটি রঙ্গিন টিভি কেনার উদ্দেশ্যেই নাটকটি লিখেছি। এছাড়া আর কোন উদ্দেশ্য ছিল না।’


আমি হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে কোন ফ্যান্টাসিতে ভুগি না। কিন্তু তাঁর সততাকে শ্রদ্ধা করি। এই যে অবলিলায় সত্যটা বলে দিলেন। ঠিক সেকারণেই আমি তাঁকে শ্রদ্ধা করি।


আমি তাঁর কৃতজ্ঞতাবোধকে শ্রদ্ধা করি। তাঁর হুমায়ূন আহমেদ হয়ে ওঠার পিছনে ‘হন্টন পীর’ আহমদ ছফার বিরাট অবদান রয়েছে। এই আহমদ ছফাই জোর করে হুমায়ূন আহমেদ এর প্রথম উপন্যাস ছাপিয়েছিলেন। আর সেকারণে হুমায়ূন আহমেদ সারাটি জীবন আহমদ ছফার প্রতি শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন।


সম্ভবত, তাঁর এই অকৃত্রিত সততা এবং কৃতজ্ঞতাবোধই তাঁকে অসাধারণ সাহিত্যিক হিসেবে গড়ে উঠতে সহযোগিতা করেছে। আর সেকারণেই, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে থাকবে হুমায়ূন আহমেদ নামটি। হাজার বছর বেঁচে থাকুক, বাংলা সাহিত্য। বেঁচে থাকুক, হুমায়ূন সাহিত্য।


পঠিত : ১১৬৮ বার

মন্তব্য: ০