Alapon

নারী দিবসের মতো প্রতিটা দিন হোক সম্মানের...


ফজরের নামাজের কিছুক্ষন পর দেখলাম শাশুড়ি মা রান্নাঘরের দিকে ঢুকছেন। এতো সকাল সকাল মা রান্না ঘরে কি করছেন! দেখার জন্য রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছিলাম এমন সময় ইফতি এসে বলল, এই শুনো একটু এদিকে আসো কথা আছে।
এতো ডাকাডাকি করছিলো যে আর রান্নাঘরে যাওয়া হলো না। রুমে গিয়ে বললাম, কি হয়েছে? কি কথা বলবা?

ইফতি আমতা আমতা করে বলল, আসলে কি জানি বলতাম! ভুলে গেছি। আচ্ছা শুনো না তুমি তো মাঝেমধ্যে একটু সাজুগুজু করতে পারো না কি! সবসময় নিজেকে একদম কাজের মধ্যে ডুবিয়ে রাখো। আজকে একটু সেজো।

ইফতির এই আচরণ গুলো আমাকে অবাক করে না। মানুষটা মাঝেমাঝেই এরকম যায়না করে বসে থাকে। কিন্তু সংসারের কাজ তার সাথে অফিস সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় আমাকে। এরপর আবার নিজের সাজগোজের হুশ থাকে না কি!

ইফতিকে বললাম, সাজার সময় কই বলো! অফিস যেতে হবে তার আগে খাবারও বানাতে হবে। তোমার টিফিন আমার টিফিন বাবা-মার জন্য ব্রেকফাস্ট বানিয়ে রেখে যেতে হবে। আর কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে নিজেকে আয়নার সামনে বসিয়ে রাখতে ইচ্ছে করে না। বিছানাটাই তখন আমাকে ডাকে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার জন্য।

ইফতি মৃদু হেসে বলল, তাও আজকে একটু খানি সেজো। একটু সাজলেই তোমাকে অসম্ভব সুন্দর দেখায়। যদিও আমার বউ না সাজলেও সে আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী নারী।

ইফতির কথা শুনে আমি লজ্জা পেয়ে বললাম, হয়েছে এবার রান্নাঘরে যাই। কখন খাবার বানাবো কখন অফিস যাবো! সময় কি বসে থাকবে!

রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছি এমন সময় শাশুড়ি মা ডেকে বললেন, কই যাও বউ মা? খাবার তো রেডি হয়ে গেছে। টেবিলে চলে এসো। ডাইনিং এ এসে আমার চোখ ছানাবড়া। ব্রেকফাস্ট রেডি! কে করলো? মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, ও এসব আপনারই কাজ তাই না! তখন রান্নাঘরে ঢুকে আপনি এই কাজই করছিলেন। ইশ আমি যে কেনো তখন ইফতির কথা শুনতে গেলাম! ইফতির দিকে তাকাতেই বুঝলাম ও ইচ্ছে করেই তখন আমাকে ডেকে নিয়ে গেছে।

আপনাকে বলেছিনা মা এই বয়সে আপনি রান্নাঘরে ঢুকবেন না। কে শোনে কার কথা! মাঝমাঝেই আপনি এই পাগলামি গুলো করেন।

শাশুড়ি মা মৃদু হেসে বললেন, যে নারী ঘরে বাইরে এক হাতে সামলিয়েও শ্বশুর-শাশুড়ির যত্ন নিতে ভুলে না সেই নারীকে মাসের ঐ কয়েকটা দিন আর আজ নারী দিবসের মতো এমন সুন্দর একটা দিনে সম্মান না জানালে বড্ড বেশি অন্যায় হয়ে যেতো।

ছলছল চোখে এই মানুষ গুলোর দিকে তাকিয়ে ভাবলাম, বছরে এমন দিন বারবার আসুক। আমার মতো নারীরা সংসার জীবনে কি এমন চায়! শুধু একটু খানি সম্মান। যা পেলে একজন নারী তার সমস্ত দুঃখ, কষ্ট গুলো একনিমিষেই ভুলে যেতে পারে।

Zannatul Eva

পঠিত : ৩০০ বার

মন্তব্য: ০