Alapon

সামাজিক অবক্ষয় ও পর্নোগ্রাফি আসক্তি থেকে মুক্তি লাভের একমাত্র উপায় বিবাহ নয়!



দিন কয়েক আগে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আড্ডা দিচ্ছিলাম। প্রসঙ্গক্রমে আড্ডার আলোচনায় সামাজিক অবক্ষয় ও পর্নোগ্রাফির বিস্তার নিয়ে কথা হচ্ছিল। আলোচনার এক পর্যায়ে একজন বললেন, এই সমস্যাগুলোর একমাত্র সমাধান বিবাহ! যতো দ্রুত সম্ভব ছেলে-মেয়েদের বিবাহ দিয়ে দিলেই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এজন্য আমাদের উচিত ‘আরলি ম্যারেজ ক্যাম্পেইন’-এর জোরদার প্রচারণা চালানো।

আমি বললাম, আপনার এই কথার সাথে আমি একমত হতে পারলাম না। ঢালাও ভাবে আরলি ম্যারেজ ক্যাম্পেইনের প্রচারণা চালালে সমাধান তো হবেই না, উল্টা নতুন সমস্যা দেখা দিবে। তখন একজন প্রশ্ন করলেন, নতুন সমস্যা বলতে আপনি কী বুঝাতে চাচ্ছেন?

তখন বললাম, তাহলে আপনাদের একটা ঘটনা বলি। এই ঘটনা শুনলে বুঝতে পারবেন, নতুন সমস্যাটা কী!

ঘটনাটা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষার্থীর। অনার্স ফাস্ট ইয়ারে থাকতে তাদের মধ্যে পরিচয় ঘটে এবং এক পর্যায়ে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এর মাঝে তারা আরলি ম্যারেজ ক্যাম্পেইন দেখে ভীষণ উৎসাহি হয়। তারা সিদ্ধান্ত নেয়, এভাবে আর হারাম রিলেশন না রেখে একবারে বিবাহ করে ফেলবে। কিন্তু এই অবস্থায় বাসায় বিয়ের কথা বললে, দুজনের কারোরই পরিবার রাজি হবে না। আবার তারা আলাদাও হতে পারছে না। অন্যদিকে আরলি ম্যারেজ ক্যাম্পেইনের জোরদার প্রচারণায় তারা বিয়ের ব্যাপারে ভীষণ উৎসাহি উঠছে। এরপর এক পর্যায়ে ‘আরলি ম্যারেজ ক্যাম্পেইন’-এর আহব্বানে সাড়া দিয়ে তারা পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলে।

বিয়ের পর তাদের সংসার জীবন ভালোই কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু বিপত্তি বাঁধল তখন, যখন সেই মেয়ে বাচ্চা কনসিভ করলো। এখন বাচ্চা যদি জন্ম হয়, তাহলে তাদের বিয়ের কথা আর গোপন থাকবে না। আর যদি পরিবারে জানাজানি হয়, তাহলে পরিণাম যে খুব সুখকর হবে না, তা তারা দুজনই অনুমান করতে পারছিলো। এমতাবস্থায় তারা সিদ্ধান্ত নিল, তারা বাচ্চাটাকে জন্ম দিবে না; অ্যাবরশন করাবে। এবং শেষ পর্যন্ত তারা অ্যাবরশন করে বাচ্চাটাকে হত্যা করে ফেলে।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, তারা একটি হারাম থেকে বাঁচতে গিয়ে আস্তো একটা মানুষকেই হত্যা করে ফেলল! ফলে, আরলি ম্যারেজ ক্যাম্পেইনে সাড়া দিয়ে বিবাহ করার পর সামাজিক অবক্ষয় তো কমলোই না, বরং ‘ভ্রুণ হত্যার’- মতো ভয়ানক পাপে জড়িয়ে পড়লো।

এতো গেল ‘আরলি ম্যারেজ ক্যাম্পেইন’-এর কথা। এবার আসা যাক পর্নোগ্রাফি আসক্তি থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হিসেবে ‘বিবাহ’ কতটা যুক্তিযুক্ত!

বছর দুয়েক আগে এক পরিচিত ভাই আমাকে ফেসবুকে ইনবক্সে করেন। কথাবার্তার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, যে ভাবেই হোক তিনি পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। পর্নোগ্রাফি না দেখলে তার ঘুম আসে না। ফলে তার কাছে জীবনটা দিন দিন বিষাদময় হয়ে উঠছে। এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার জন্য তিনি একজন আলিমের পরামর্শ চাইতে গিয়েছিলেন। সেই আলিম তাকে বিবাহের পরামর্শ দিয়েছেন। পরামর্শনুযায়ী তিনি বিবাহও করেছেন। কিন্তু বিবাহ করার পরও তিনি পর্নোগ্রাফির আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না। আর পর্নোগ্রাফির আসক্তির কারণে তিনি দাম্পত্য জীবনেও সুখি হতে পারছেন না। এখন উপায় কী?

আমি সেই ভাইকে বলেছিলাম, ‘বিবাহ করার পরামর্শটা সঠিক ছিল না। কারণ, যে পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত, সে বিবাহের পরও পর্নোগ্রাফি দেখবে। কিন্তু আসক্তি কাটিয়ে ওঠার পরপরই বিবাহ করতে হবে।’

সেই ভাইয়ের বর্তমান পরিস্থিতি হলো, তিনি একজন সাইক্রিয়াটিস্ট-এর কাছে নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর তার সংসারটা শেষ পর্যন্ত ভেঙ্গে গেছে। আর বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়াটাও একটা সামাজিক অবক্ষয়। একজন মানুষের সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে এখন পুরো দুটো পরিবার সমস্যাগ্রস্থ হয়ে পড়ল!

আমি বলব, সামাজিক অবক্ষয় ও পর্নোগ্রাফি আসক্তি থেকে মুক্তি লাভের একমাত্র উপায় বিবাহ নয়। তবে, বিবাহ সমাধানের একটা উপায় মাত্র! তাই এসব সমস্যার একমাত্র সমাধান ‘বিবাহ’ বলা থেকে বিরত থাকাই উত্তম! তাতে নতুন করে আর অবক্ষয় দেখা দিবে না।

পঠিত : ২৮৪ বার

মন্তব্য: ০