Alapon

||সত্য খোঁজে যে —সত্য পায় সে|



চারদিকের মানুষগুলো কেমন অদ্ভুত ! কাঠ , পাথর ও মাটির তৈরি জিনিসপত্রের সামনে নত হয়ে মস্তিষ্ক ঠেকিয়ে দেয়। তাদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। সে-সবের সামনে বিড়বিড় করে কী কী যেনো বলে যায় অবিরাম !

এই মানুষগুলো কেমন ! কী করছে তারা! কীভাবে নিজ হাতে তৈরি জিনিসপত্রের সম্মুখে মাথাটা ঠেকিয়ে দেয় এভাবে ? আবার সাহায্যও চায় ! করজোড়ে মিনতি করে ! স্রষ্টা ডাকে, স্রষ্টার অংশিদার ভাবে । এ- কীভাবে সম্ভব! নিজের বানানো জিনিসটাকে নিজেই....আবার কিছুদিন পর আরো কিছু বানায় ,সেগুলোকে ফেলে দেয় পানিতে । বিসর্জন দিয়ে দেয় । আবার তাদের সামনেই নত হয়ে পড়ে ! নাহ , এসব কিচ্ছু তাঁর মাথায় ঢুকছে না । এসব কী হচ্ছে ! এসব কীভাবে স্রষ্টা হয় !! সত্যটা কী তা খুঁজতে হবে । আসোল স্রষ্টাকে তা জানতে হবে । আমাকেই খুঁজে বের করতে হবে তা— এই তাঁর ভাবনা , এই তাঁর ইচ্ছে। সত্যের খোঁজে উতলা আজ তাঁর মন-মনন । সারাক্ষণ সারাদিন তার মগজের ভাঁজে ভাঁজে বিপুল ভাবনা! সেই ভাবনার উঠোনের পিঠে যেনো সর্বক্ষণ তাগড়া ঘোড়ার দৌড়াদৌড়ি! যেখানেই যান তিনি স্রষ্টাকে খোঁজেন ,তাঁর উপস্থিতি ,তাঁর অস্তিত্ব অনুসন্ধান করেন । দিন যায় সাঁঝ আসে । বিকেল গড়িয়ে নামে সন্ধ্যে । তাঁর ভাবনায় আর আসে না স্থিরতা । সত্যিকারের স্রষ্টার খোঁজে তাঁর চিত্ত অনেক বেশি অস্থির ।

আজকের আকাশটা অনেক বেশিই স্বচ্ছ । একেবারে ঝকঝকে নীলাকাশ । সন্ধ্যে নেমে এলো পৃথিবীর বুকে । তাঁর ভাবুক আর অনুসন্ধানী মনটা আকাশের দিকে উদাস হয়ে তাকিয়ে আছে । আকাশের বুকে নেমে এলো অসংখ্য-অগণিত তারকা। তারাগুলো জ্বলজ্বল করছে আকাশের বুকে । একটা বড়ো তারকা দেখেই সে বলে ওঠলো —এই তো আমার রব ।আমি পেয়ে গেছি তাহলে আমার স্রষ্টাকে ! কিন্তু কিছুক্ষণ পর তা-ও হারিয়ে গেলো । মনটা তাঁর বিষণ্ণ হয়ে ওঠলো । মনে মনে ভাবনাটা এই যেনো মনে হয় — স্রষ্টা কেনো হারিয়ে যাবে? কেন চলে যাবে ? পরদিন আবারও একই নিয়ম । একই নিয়মে তারকাদের উদয় । আবারো হারিয়ে গেলো তা আড়ালে । নাহ , আমার স্রষ্টা-আমার রব এমন হতে পারে না ।

এবার আকাশের বুক চিরে উদিত হোলো আগের চেয়ে সুন্দর , আগের চাইতে আরো বেশি উজ্জ্বল একটা জিনিস — চন্দ্র । এর আলো তারকাদের চাইতেও অধিক দীপ্তিময় । দিকে দিকে ছড়িয়ে দীপ্তি ছড়ায় সে আলো । ভীষণ মিষ্টি সেই আলো । সে আলো বিকিরণ করছে — পাহাড়ে-পাথারে । আকাশে - জমিনে । সমূদ্র-সৈকতে । পৃথিবীর চারিদিকেই । তিনি স্পষ্ট-ই বলে ওঠলেন — হ্যাঁ ,এ-ই আমার রব । কারণ , আগের চাইতে এ বড়ো । আলোও বেশি ।
সময় বয়ে যায় । রাত কেটে যায় । তার আলোও ক্ষয়ে যায় ,ধীরে ধীরে । একসময় হারিয়েই গেলো চাঁদটি । এবং এর আলো-ও । পূণরায় মন খারাপ হয়ে গেলো তাঁর । মনের আকাশে সন্ধ্যার ঘনঘটা আবারও । এটাকেও রব হিসেবে গ্রহণ করতে তাঁর সত্যের অনুসন্ধানী মন সায় দিলো না । কী করে এ রব হতে পারে — যার নিজের-ই কোনো স্থায়িত্ব নেই ?
রাত গিয়ে প্রভাত আসে । ভোর ফোটা সকাল হাসে । সেই সকালের আগমনের সাথে সাথে আসমানের পূব কোণে উদিত হয় এক বিরাট সুরুজ । সেই সুরুজ হাসিয়ে তোলে সারাটা দুনিয়াকে । ধীরে ধীরে সুরুজটা সূর্য হয়ে ওঠে । চারদিকে সে তেজ ছড়ায় । তার তেজের তাপ সেবন করে পৃথিবীর জমিন । জমিনের বৃক্ষরাজি ,কীট-পতঙ্গসহ সকল কিছু । এতোসব অবলোকন করেন তিনি , আর ঘোষণা দিয়ে ওঠেন —তাহলে এ-ই আমার রব! কারণ, ওদের চেয়ে এ-ই বেশি শক্তিশালী । সবচে’ বেশি ক্ষমতাবাণ ও বড়ো !
ধীরে ধীরে দিন চলে যায়। বেলা পড়ে যায় । আলো কমে যায় । প্রখর সেই সূর্যটার সকল শক্তি-ঐশ্বর্য ক্ষয়ে যায় ধীরে ধীরে । হারিয়ে ফেলে সে তার ক্ষমতা , তার যৌবন । এক সময় সে পশ্চিমাকাশের কোলে ঢলে পড়ে ডুবে যায় , পুরোপুরি। এবারো তিনি হতচকিত হয়ে পড়েন । এ-ও তো অবশেষে হারিয়ে গেলো । ওদের মতো করে । আবার এর জায়গায় আসবে পূণরায় চাঁদ ,তারা । এ যদি রবই হতো , তাহলে তো সে হারিয়ে যেতো না । এরা কেউ পুজো-অর্চনা দাসত্ব-ইবাদাত পাবার হকদার নয় । হকদার তিনি ,যিনি এদেরকে ওঠায়-হারায় । এরা তো একটা নির্দিষ্ট নিয়মের অধিন কেবল । সেই নিয়ম মেনেই এরা জ্বলে-নেভে । আসে-যায় । সুতরাং আমার স্রষ্টা তিনি— যিনি এদেরও স্রষ্টা । এদেরও রব । আমি একমুখি হয়ে এখন থেকে কেবল সেই স্রষ্টার-ই দাসত্ব করবো । করবো তার-ই ইবাদাত । তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন নিজ গোত্রের সকলকে —আমি শিরক করবো না । আমি মুশরিক নই । তোমাদের মতো রবের সাথে অংশিদার স্থাপনকারী নই ! এখন থেকে কেবল আমি আমার রব আল্লাহর দাসত্ব করবো । এক আল্লাহর ! তিনিই সারা বিশ্বের স্রষ্টা । আমার । তোমাদের , এবং তোমরা যে সকল বস্তু আর বিষয়ের দাসত্ব করছো ; সে সবেরও।

হ্যাঁ ,ইনিই হলেন তিনি — যিনি আমাদের পিতা , মুসলিম জাতির পিতা, 'সাঈয়িদিনা ইবরাহিম আলাইহিস সালাম' ! তিনি উন্মুক্ত হৃদয়ে সত্যের অনুগামী হতে চেয়েছেন। করেছেন সত্যের সন্ধান। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তাই তাঁর সেই প্রচেষ্টা আর খুলুসিয়াতের বদৌলতে তাঁকে সত্যের পথ দেখিয়েছেন। পেয়েছেন তিনি সত্যের সন্ধান। খুঁজে পেয়েছেন তাঁর রবকে। নিজ স্রষ্টাকে।

এভাবেই যদি কেউ সত্যের পরশপাথরের স্পর্শ পেতে চায়, সত্যের আলোয় আলোকিত হতে চায় , এবং চারদিককে আলোকিত করতে চায় — তবে সে ব্যক্তি সত্যের সাক্ষাৎ পাবেই। আল্লাহ রব্বুল আলামিন তার জন্য সত্য পথ সহজ করে দিবেনই। করিয়ে দিবেন সত্যের সঙ্গে তার মোলাকাত। এই সত্যের পথ পাবার পরে ইবরাহিম আলাহিস সালাম কী করেছেন? অটল-অনড়ভাবে সেই পথে সুদৃঢ় ছিলেন। আগুনে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন , তবুও একচুলও সরেন নি সত্য থেকে। স্রষ্টার পথ থেকে। আবার তাদেরকে আল্লাহর একাত্ববাদের দিকে যেই এক সুমহান আহবান, সেই আহবানও বন্ধ করেন নি।
কেউ কেউ ইবরাহিম আলাইহিসালাম সালামের সেই আহবানে সাড়া দিয়ে সাথি হয়েছেন, কেউবা হয় নি। ধুমিয়ে চালিয়ে গেছে চচন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র এবং তাদের নিজ হাতে গড়া পাথর-মাটির পুজো। কিন্তু মুসলিম জাহানের পিতা, ইবরাহিম আলাইহিসালাম সালাম তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয় নি। বরং সত্যকে খুঁজে সেই সত্যের ওপর ছিলেন হিমাদ্রীসম অটল-অনড়। আমরাও যদি চাই সত্যের অনুসারী হতে, আর যদি খুঁজি সত্যকে, তাহলে আমরাও পাবো তা। আর সত্যের পরশপাথরের স্পর্শ পিয়ে আমাদেরও সাইয়িদিনা ইবরাহিম আলাইহিসালাম সালামের মতো সুদৃঢ় হয়ে থাকতে হবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদেরকে সত্যের অনুগামী করে দিন। আ-মী-ন!!

||সত্য খোঁজে যে - সত্য পায় সে||
~রেদওয়ান রাওয়াহা

পঠিত : ৪৫১ বার

মন্তব্য: ০