Alapon

পীড়াদায়ক কথা




তাহমিদ বাসায় ঢুকতেই দেখে তার ছোটো ভাই নিহাল মন খারাপ করে বসে আছে। তার মুখটা ভীষণ মলিন। তাহমিদকে দেখেই চোখজুগল থেকে দরদর করে অশ্রু ঢেলে দিলো নিহাল। সে তাকে পিঠে হাত বুলিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করতেই বললো- ভাইয়া! মানুষের অসার কথাবার্তা আমাকে পীড়া দেয়। কঠিন পীড়া। অমূলক কথার চোটে হৃদয়টা ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায়। কারো কারো অযাচিত অশোভন বাক্যবানে কলিজাটা এফোড়-ওফোঁড় হয়ে যায় আমার। আমি এমন কথার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাই। যন্ত্রণাদায়ক কথার তীর থেকে স্বস্তি চাই। কিন্তু মুক্তি নেই। স্বস্তি নেই। পাই না। পরম কাছের বন্ধুটিও কষ্ট দেয়। চরম ভালোবাসার মানুষটিও রাশভারি কথাবার্তা দিয়ে হতাশার চোরাবালিতে ডুবিয়ে দেয় , মাঝেমধ্যে ।
তা হলে আমি কি এমন পীড়াদায়ক আর অস্বস্তিমূলক কথাবার্তার যে নোংরামি আর বর্বরতা, তা থেকে রেহাই পাবো না? একটুখানি মিষ্টি কথার মাঝে মনোরম প্রশান্তিময় যে শীতল সমীরণ থাকে, সেই প্রশান্তিময় শীতল সমীরণ আমার কপালে কি জুটবে না?
তিক্ত কথা, খোঁচামারা কথা কার ভালো লাগে? ভাইয়া, আমার না একটুও ভালো লাগে না। বড্ড কষ্ট হয় আমার। আমি কষ্ট পাই। ভীষণ কষ্ট! অথচ কেউই তা বুঝে না। প্রতিনিয়ত আমাকে কষ্ট দিয়েই যায়। কষ্ট দিয়েই যেনো তারা মজা পায়! আমার আর ভালো লাগে না। পৃথিবীতে আর থাকতে ইচ্ছে হয় না।
তাহমিদ বুঝতে পেরেছে তার কথা, তার কষ্ট। সে নিহালকে বললো - ভাইয়া, তুমি ব্যথাভরা বুক নিয়ে আল্লাহর কাছে, তাঁর কালামের কাছে ঘুরে এসেছো কখনো? চলো আজ তোমাকে তাঁর পবিত্র কালামের কাছে একটুখানি ঘুরিয়ে নিয়ে আসি! দেখবে তোমার আর কোনো কষ্ট থাকবে না। তুমি তাঁর কালামের মায়ায় পড়ে যাবে।

একটা আয়াত দেখো। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেন;
“সেখানে তারা ‘শান্তি’ ছাড়া পীড়াদায়ক কোনো বাক্যলাপ শুনবে না এবং সেখানে সকাল-সন্ধ্যা তাদের জন্য থাকবে অবারিত রিযিক -জীবনোপকরণ।” [সূরা মারইয়াম: ৬২]
দেখেছো কতো সুন্দর তাঁর আয়াত। কতো সুন্দর তাঁর বাণী। আমার আল্লাহ আমাকে-তোমাকেই যেনো বলেছেন আর মনখারাপের বৃষ্টি ঝরিয়ো না। তোমার জন্যে আমার জান্নাত আছে। সেই জান্নাতে তুমি কখনোই পীড়াদায়ক অশালীন-অশোভন কথা শুনবে না। সেখানে তুমি পাবে নানা ধরনের জীবীকা। সবকিছুই পাবে সেখানে, দুধের নহর। মধুর নহর। একেবারে স-অ-ব! আমাদের শুধু আল্লাহর কাজ করে যেতে হবে। করে যেতে হবে ভালো কাজ। যে কাজ করলে আমরা পরকালে পাবো সাফল্য। দেখো এমন আরো কিছু আয়াতে কারীমা। যেখানে আল্লাহ বলেন;
" অনেক মুখমণ্ডল সেদিন হবে আনন্দোজ্জ্বল, নিজেদের কাজের সাফল্যে (তারা থাকবে) পরিতৃপ্ত ! সুউচ্চ জান্নাত। সেখানে তারা অসার-পীড়াদায়ক কোনো বাক্য শুনবে না। সেখানে থাকবে বহমান ঝরনাধারা!" (সুরা গাশিয়া:০৮-১২)
নিহালের চেহারা লাবণ্যময় হয়ে ওঠলো। চোখের তারায় তারায় আনন্দের ঝলকানি ফুটে ওঠেছে মনে হয়। তার ব্যথাতুর মন হয়ে ওঠেছে আশাবাদী । নিহাল বললো- ভাইয়া ,এতোদিন আমার জীবনটা দুর্বিষহ হয়েছিলো! আজকে আমার হৃদয়টা জেগে ওঠেছে । নতুন করে। নতুনভাবে। আমি তো চেষ্টা করি ভালো কাজ করতে, আজকে থেকে আমি আরো বেশি ভালো কাজ করবো। আল্লাহর কাজ করবো। তাহলেই আমি জান্নাতে যাবো। সেখানেই আমি মুক্ত থাকতে পারবো এমন অশালীন অমূলক আর পীড়াদায়ক কথার তীর হতে। তাই না ভাইয়া? তাহমিদ বললো -জি। ইন শা আল্লাহ

//পীড়াদায়ক কথা//
-রেদওয়ান রাওয়াহা

( কপি করা নিষেধ)

পঠিত : ৫৩৪ বার

মন্তব্য: ০