Alapon

সব সত্য প্রকাশ করতে নেই...



ডিভোর্সটা হয়ে গেল। কোনভাবেই তাদেরকে বুঝানো সম্ভব হল না। বিয়ের সবেমাত্র এক বছর হয়েছে। কিন্তু বিয়ের এক মাস পর থেকেই ঝগড়া শুরু হয়। এরপর ননস্টপ চলতেই থাকে। অতঃপর ডিভোর্সের মাধ্যমে তাদের এই ঝগড়ার সমাপ্তি ঘটল।

ডিভোর্সের পর থেকে ভাইটা নীরব নিস্তেজ হয়ে গেল। তার এই বিসন্ন চেহারা বলে দেয়, তার উপর কি রকম ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আমি জানতাম না, কি কারণে তাদের ডিভোর্স হয়েছিল। জানতেও চাইতাম না। খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মানুষের জীবনের কাহিনী শোনা আমার স্বভাব বিরুদ্ধ। একদিন সেই ভাইটি বলল, ‘শাহমুন! খুব বেশি সৎ হইও না! সৎ মানুষের কোন দাম নাই এমনকি তার ভালবাসারও কোন মূল্য নাই’।
তখন প্রশ্ন করলাম, ‘ঘটনা কি?’

এইবার তিনি ঝেড়ে কাসলেন। ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরে পরেই কোন এক রমনীর প্রেমে পড়েন। সেই প্রেম ছয় মাস স্থায়ী হয়। এরপর তিনি ধীরে ধীরে ইসলাম বুঝতে শুরু করেন এবং একসময় প্রাকটিসিং মুসলিম হতে শুরু করেন। প্রাকটিসিং মুসলিম হবার সাথে সাথে তিনি এই অবৈধ প্রেমটাকেও বিদায় করতে শুরু করেন। কিন্তু মেয়ে নাছোড় বান্দা। তখন উপায়ন্তর না দেখে তিনি বললেন, ‘যদি থাকতে চাও তবে বিয়ে করতে হবে। না হলে এইভাবে কন্টিনিউ করা সম্ভব নয়।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী! সামনে উজ্জল ভবিষ্যৎ। তাই আর অবেলায় বিয়ে করে উজ্জল ভবিষ্যৎটাকে অনুজ্জল করতে চাইলেন না। প্রেমটা সেখানেই সমাপ্তি ঘটে।

এর ৬ বছর পর তিনি বাবা-মায়ের পছন্দে বিবাহ করলেন। বিবাহের প্রথম রাতেই তিনি নিজেকে সত্যবাদী প্রমাণে নিজের অতীত প্রেমের কথা খুলে বললেন। নতুন বউ প্রথমে সব হাসি মুখেই মেনে নিলেন। কিন্তু দিন বাড়ার সাথে সাথে নতুন বউ পুরনো প্রেমিকাকে নিয়ে খোঁটা দেওয়া শুরু করল। তারপরের অবস্থা তো সব প্রথমেই উল্লেখ করেছি।

তার ঘটনা শুনে হাসলাম। বললাম, সব সত্যই সত্য নয়। নিজেকে এতোবড় সত্যবাদী প্রমান করার চেষ্টা না করলেও পারতেন। তাহলেই হয়তো আল্লাহপাক বেশি খুশি হতেন। তাকে বললাম, ‘তাহলে উমর (রাঃ) এর খলিফা থাকাকালীন সময়ের একটি ঘটনা শোনাই। আপনার কাজে দিবে। পরবর্তিতে বিবাহে কাজে দিবে’!

এক লোক হযরতের উমরের দরবারে হাজির হলেন। তিনি একান্তে খলিফাকে বললেন, আমার মেয়ে জেনায় লিপ্ত হয়েছিল। এরপর সে তার ভুল বুঝতে পারে এবং আল্লাহর কাছে তওবা করে। এখন তার বিবাহের প্রস্তাব আসতেছে। আমার মেয়ে চাচ্ছে, সে তার জেনার কথা খুলে বলবে। এরপর যে তাকে বিশ্বাস করবে তাকেই সে বিয়ে করবে। তখন খলিফা উমর (রাঃ) বললেন, না! কক্ষনো এই কাজটি করতে যাবে না।

আল্লাহর রাসূল বলে গেছেন, তোমরা পাপকে গোপন কর। তা সে যে পাপই হোক। যদি তা প্রকাশ না পায় তবে তোমরা প্রকাশ করে দিও না। পাপ প্রকাশ করলে কল্যানের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে। তোমরা পাপ করলে একান্তে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও।

আমাদের মুসলিম ভাই/বোনেরা অধিকাংশ সময়ই নিজের অতীতের ভুলটাকে প্রকাশ করে দেন। এটি সৎ উদ্দেশ্য করা হলেও বাস্তবিক অর্থে এটি আল্লাহর আদেশকেই অমান্য করা হয়। তাই অতিসত্যবাদী হতে গিয়ে আল্লাহর আদেশ অমান্য করবেন না।

পঠিত : ৬৩৯ বার

মন্তব্য: ০