Alapon

সংখ্যালঘুদের উপর হামলার পিছনে নেপথ্য কারণ...



আমার এক দাদা আছেন। বয়সে তিনি আমার বড়ো হলেও সম্পর্কের দিক থেকে বন্ধুর মতো। তিনি হিন্দুধর্মালম্বী। একদিন তিনি প্রশ্ন করে বসলেন, ‘আচ্ছা নাকীব, তোমাদের সংখ্যালঘুদের উপর এতো কীসের রাগ? তোমরা মুসলিমরা সুযোগ পেলেই সংখ্যালঘুদের উপর হামলা করো। তারপর দেশ থেকে তাড়িয়ে দিতে চাও!’

আমি খানিকটা হেসে বলেছিলাম, ‘হিন্দু ধর্মালম্বি বা সংখ্যালঘুদের নিয়ে প্রকৃত মুসলিমদের কোনো রাগ নেই; আর থাকার কথাও না। কিন্তু আপনারা হিন্দুধর্মালম্বীরা মনে করেন যে, ঈমানদার মুসলিমরা হয়তো হিন্দুদের সহ্য করতে পারে না। হিন্দু দেখলেই হয়তো জবাই দেওয়ার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে। সে কারণে আপনাদের ভিতরে সবসময় একটা ‘ঈমানদার মুসলিম ভীতি’ কাজ করে। আর এই ভীতিকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণীর সুযোগ সন্ধানী ব্যক্তিরা ঘোলা পানিতে মাছ স্বীকার করে।’

তিনি প্রশ্ন করলেন, ‘ঘোলা পানির মাছটা কী?’
জবাবে বললাম, ‘ভূমি। তারা ভূমি দখল করতে চায়। আর এটাই হলো ঘোলা পানির মাছ।’
তখন তিনি বললেন, ‘ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলো।’

তারপর লম্বা বক্তৃতা দেওয়া ভাব নিয়ে বললাম, ‘খুব খেয়াল করে দেখবেন, যেখানেই সংখ্যালঘুদের উপর হামলা করা হয়, সেখানেই প্রধান টার্গেট হয় বাড়ি আর বাড়িতে থাকা নারীরা। নারী সবসময়ই স্পর্শকাতর বিষয়। পুরুষেরা নারীদের বাড়ি নামক নিরাপত্তা বলয়ে রেখে বাহিরে কাজ করতে যায়। কিন্তু যখনই সেই ‘বাড়ি’ নামক নিরাপত্তা বলয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ধ্বংস করে নারীদের উপর হামলা করা হয়, তখনই পুরুষেরা অসহায় হয়ে যায়। খেয়াল করে দেখবেন, যেখানেই সংখ্যালঘুদের উপর হামলা করা হয়েছে, সেখানেই সরকারের তরফ থেকে নতুন বাড়ি করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও কাউকে আশ্বস্ত করা সম্ভব হয়নি। তারা বলেছে, যেখানে নিরাপত্তাই নেই, সেখানে নতুন বাড়ি দিয়ে কী করব! আর যখনই তারা নিজেদের এবং নিজেদের নারীদের নিরাপত্তাহীন ভাবতে শুরু করে, তখনই তারা এই দেশ, ভিটেমাটি ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আর এই সুযোগটাই গ্রহণ করে হামলাকারীরা।’

এরপর বললাম, ‘অতীত রেকর্ড পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার যখনই ক্ষমতায় ছিল, তখনই সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনা বেশি ঘটেছে। এর কারণ, সংখ্যালঘুরা তুলনামূলক বিএনপিকে সাম্প্রদায়িক মনে করে। যার কারণে তারা সেচ্ছায় হোক, আর অনিচ্ছায় হোক আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে। আর আওয়ামী লীগের ধান্দাবাজ স্থানীয় নেতারা এটা খুব ভালো মতোই বুঝতে পারে। তখন তারা জুজুর ভয় দেখানো শুরু করে। এভাবে জুজুর ভয় দেখাতে দেখাতে ধীরে ধীরে তারা সাম্প্রদায়িক হামলার একটি পরিবেশ তৈরি করে। যখন তারা বুঝতে পারে, সংখ্যালঘুরা প্রচন্ড নিরাপত্তাহীণতায় ভুগছে এবং ভাবছে, ঈমানদার মুসলিমরা এই বুঝি তাদের উপর আক্রমণ করলো! ঠিক তখনই সুযোগ সন্ধানী রাজনীতিবিদরা নিজেদের লোকদের পাঞ্জাবী, টুপি পরিয়ে তাদের উপর হামলা চালায়। আর একবার হামলার ঘটনা ঘটলে, তারা ভিটে মাটি বিক্রি করে দিয়ে চলে যাওয়ার চিন্তা করে। সংখ্যালঘুরা যেহেতু আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস করে, তাই তাদের জমি ক্রয়ের সুযোগটা আওয়ামী লীগের নেতারাই বেশি পেয়ে থাকে। আর কেউ যখন ভিটে মাটি বিক্রি করে দিয়ে একবারে চলে যাওয়ার চিন্তা করে, তখন যে দাম পায় তা-ই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে। অর্থাৎ মোটামুটি অর্ধেক দামে জমিজমা বিক্রি করে দিয়ে চলে যায়। এভাবেই রাজনৈতিক নেতারা সংখ্যালঘুদের উপর হামলা চালিয়ে প্রচ্ছন্নভাবে জমিজমা দখল করে। আর ঠিক এই ঘটনাই ঘটেছে শাল্লায়। পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশ হলো, হামলা করেছে হেফাজত ইসলাম। কিন্তু পুলিশ গ্রেফতার করলো স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকে।

এভাবেই যুগের পর যুগ আওয়ামী লীগ সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন চালিয়ে তাদের জমিজমা দখল করে নিচ্ছে, আর দোষ হচ্ছে ঈমানদার মুসলিমদের! সংখ্যালঘুরা যতোদিন না নিজেরা সচেতন হচ্ছে, ততোদিন তারা এভাবেই নির্যাতিত হতে থাকবে।

পঠিত : ৫০৯ বার

মন্তব্য: ০