Alapon

দ্বীন প্রচারে বাধা ও সমস্যা এবং কিছু কথা....



‘দ্বীন প্রচারে বাধা ও সমস্যা’ কথাটি অনেক ভারী। ইসলাম প্রচারে আপনি যদি দাওয়াতি কাজ করেন তাহলে অনেক বাধার ও সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে আপনাকে।১ম; আপনার পরিবার থেকে, ২য়, আপনার বন্ধু মহল, ৩য়, সমাজ।
.
১ম; পরিবার থেকে বাধা আসে এই রকম, তারা গান শুনতেছেন আপনি বললেন গান শুনা হারাম তারা আপনার কথা গুরুত্ব না দিয়ে আপনাকে নিয়ে উপহাস শুরু করে দিলো। অথবা কোন বোন ঘরে পর্দা করে চলছেন হঠাৎ আপনার মামাতো ভাই অথবা ফুফাতো ভাই আসলো আপনি তাড়াতাড়ি আপনার ঘরে চলে গেলেন তখন আপনার পরিবারে মানুষ বললে কত ডং, আগে কথা বলতো এখন সামনে আসতে চায় না। তারপর বিয়ে কোন কথা আসলে বর পক্ষের পুরুষের সামনে আসতে না চাইলে তখন কত কথা শুনতে হয় তা শুধু এক দ্বীনি বোন জানেন। বর এর যদি দাঁড়ি না রাখে তাতে যদি আপনি প্রশ্ন করেন তাহলে বোনকে অনেক কথা শুনতে হয়।আফসোস সেই পরিবারে জন্য যারা দ্বীনি ভাই ও বোনদের গুরুত্ব দেয় না।
.
২য়; বন্ধু মহল তারা কেউ কেউ যিনা (প্রেম) করে, সিগারেট খায় নামাজ পড়ে না আপনি তাদের দ্বীনের দাওয়াত দিলেন এবং এই হারাম কাজ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বললেন তখন তারা বলবে কাঠ মুল্লার আমরা কথা শুনি না আর বলবে এতো হাদিস ফলাতে আসবি না। আপনি যখন নবীজি (সাঃ) কে ভালোবেসে যদি দাঁড়ি রাখেন (ফ্যাশন দাঁড়ি নয়) তাতে তাদের সমস্যা তখন তারা আপনাকে উপহাস করে বিভিন্ন নাম দিবে, যেমন কাঠ মুল্লা, মুফতি, মাওলানা সাহেব। আপনাকে আসতে দেখলে ওই দেখ মুফতি অথবা মাওলানা সাহেব আসতেছেন এখন দেখবি ওয়াজ শুরু করে দিবেন বলে হাসাহাসি শুরু করে দিবে। নন-মাহরাম (মেয়েদের) সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলে তাতে সমস্যা ভাব দেখাচ্ছেন এবং কোন দিন দেখা হলে রাস্তায় অথবা কলেজে তখন অপমান জনক কথা শুনতে হয়।বোন যদি শরিয়ত সম্মত বোরখা সেখানে কিছু মানুষের সমস্যা। আর সেই বোনকে কলেজে অনেক হয়রানি হতে হয়। তা শুধু এক বোন জানেন। আপনি তাদের সঙ্গ ছেড়ে দিলেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালার জন্য। কিন্তু তারা আপনার অতীতের কর্ম নিয়ে খোটা দিবে যেটা খুব কষ্টদায়ক।
খোটা দেওয়া নিয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বলেন;
يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا لَا تُبْطِلُوا صَدَقٰتِكُم بِالْمَنِّ وَالْأَذٰى كَالَّذِى يُنفِقُ مَالَهُۥ رِئَآءَ النَّاسِ وَلَا يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْءَاخِرِ ۖ فَمَثَلُهُۥ كَمَثَلِ صَفْوَانٍ عَلَيْهِ تُرَابٌ فَأَصَابَهُۥ وَابِلٌ فَتَرَكَهُۥ صَلْدًا ۖ لَّا يَقْدِرُونَ عَلٰى شَىْءٍ مِّمَّا كَسَبُوا ۗ وَاللَّهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الْكٰفِرِينَ
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ!তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে (খোটা) নিজেদের দান খয়রাত বরবাদ করো না সে ব্যক্তির মত যে নিজের ধন-সম্পদ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না। অতএব, এ ব্যাক্তির দৃষ্টান্ত একটি মসৃণ পাথরের মত যার উপর কিছু মাটি পড়েছিল। অতঃপর এর উপর প্রবল বৃষ্টি বর্ষিত হলো, অনন্তর তাকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে দিল। তারা ঐ বস্তুর কোন সওয়াব পায় না, যা তারা উপার্জন করেছে। আল্লাহ কাফের সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না।
[আল বাকারাঃ আয়াত-২৬৪]
খোঁটা দেওয়া যে কত গর্হিত এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালার কাছে কত ঘৃণ্য, হযরত আবূ যর (রাযি.)-এর একটি হাদীস দ্বারা তা অনুমান করা যায়। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَ لَا يَنْظُرُ اِلَيْهِمْ وَ لَا يُزَكِّيْهِمْ وَ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ، قَالَ اَبُوْ ذَرٍّ فَقَرَأَهَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ ثَلَاثُ مِرَارٍ، قَالَ اَبُوْ ذَرٍّ : خَابُوْا وَ خَسِرُوْا، مَنْ هُمْ يَا رَسُوْلَ اللهِ؟ قَالَ : اَلْمُسْبِلُ وَ الْمَنَّانُ وَ الْمُنْفِقُ سِلْعَتَه بِالْحَلِفِ الْكَاذِبِ‎.
অর্থঃ ‘তিন ব্যক্তি এমন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালা যাদের সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। আবূ যর (রাযি.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথাটি তিন-তিনবার বললেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা কারা, তারা তো সর্বস্বান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেল? তিনি বললেন,
১.যে ব্যক্তি পরিধেয় কাপড় টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে রাখে; ২.যে ব্যক্তি উপকার করার পর খোঁটা দেয় এবং ৩.যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথের মাধ্যমে পণ্য চালায়।’
( মুসলিম, হাদীস-১০৬)।
.
৩য়; সমাজ, আপনি দ্বীনের দাওয়াত যদি দেন আপনার এলাকার বড় ভাই ও ছোট ভাই দের মধ্য তখন ও আপনি তাদের কাছে উপহাসের পাত্র হবেন। যদি কোন কাজে এক ওয়াক্ত নামাজ পড়তে পারেন নি তখন হেসে হেসে জিজ্ঞাসা করবে, কি রে?? নামাজ কই? নামাজ পড়বি না। কিন্তু তারা নামাজ পড়েছে না সেটা খেয়াল না রেখে আপনাকে নিয়ে মেতে উঠবে। অথবা আপনি ইসলামিক পোস্ট প্রতিদিন করছেন, আপনার বন্ধু কমে যাবে, অনেকে আপনাকে আনফ্রেন্ড করে দিবে আপনার দাওয়াতি কাজের জন্য।কেউ কেউতো বল্ক করে দিবে। আবার কোন ইসলামিক গ্রুপে দাওয়াত দিলে সেখান থেকে একদল সম্মতি জানাবে আর অন্য দল তাদের উপর যদি এই দাওয়াতটি কোন ভাবে তাদের কাজ কর্ম সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যায় তাহলে এমন বিরুদ্ধতা করবে যে একপ্রকার ফিতনা সৃষ্টি হবে তারপর বিশাল ঝামেলার দিকে নিয়ে যাবে। বোনদের তো অনেক সমস্যা হয়। সমাজের কিছু মানুষ এসে বোনটি পরিবারে বলে এই মেয়ের কোনদিন বিয়ে হবে না রাস্তাঘাটে কি রকম চলাফেরা করে নিচের দিকে চেয়ে হাটবে। আমার ছেলে তার সাথে কথা বলতে চেয়েছিল কোন পাত্তাই দেই নি। এই রকম এগো ভালো না। (নিজের অভিজ্ঞা থেকে বলছি) (বোনদের বিষয় গুলি দ্বীনি বোনদের পোস্ট থেকে নেওয়া)
ফিতনা সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বলেন:
وَقٰتِلُوهُمْ حَتّٰى لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ لِلَّهِ ۖ فَإِنِ انتَهَوْا فَلَا عُدْوٰنَ إِلَّا عَلَى الظّٰلِمِينَ
অর্থঃ আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই কর, যে পর্যন্ত না ফেতনার অবসান হয় এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর যদি তারা নিবৃত হয়ে যায় তাহলে কারো প্রতি কোন জবরদস্তি নেই, কিন্তু যারা যালেম (তাদের ব্যাপারে আলাদা)।
[আল বাকারাঃ আয়াত- ১৯৩]
ফিতনা সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেন:
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِنَّهَا سَتَأْتِي عَلَى النَّاسِ سِنُونَ خَدَّاعَةٌ يُصَدَّقُ فِيهَا الْكَاذِبُ وَيُكَذَّبُ فِيهَا الصَّادِقُ وَيُؤْتَمَنُ فِيهَا الْخَائِنُ وَيُخَوَّنُ فِيهَا الْأَمِينُ وَيَنْطِقُ فِيهَا الرُّوَيْبِضَةُ قِيلَ وَمَا الرُّوَيْبِضَةُ قَالَ السَّفِيهُ يَتَكَلَّمُ فِي أَمْرِ الْعَامَّةِ‎.
অর্থঃ আবু হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মানুষের নিকট এমন ধোকাব্যঞ্জক যুগ আসবে, যাতে মিথ্যাবাদীকে সত্যবাদীরূপে এবং সত্যবাদীকে মিথ্যাবাদীরূপে পরিগণিত করা হবে। যখন খেয়ানতকারীকে আমানতদার মনে করা হবে এবং আমানতদার আমানতে খেয়ানত করবে। যখন জনসাধারণের ব্যাপারে তুচ্ছ লোক মুখ চালাবে।
(আহমাদ ৭৯১২, ইবনে মাজাহ ৪০৩৬, হাকেম ৮৪৩৯, সহীহুল জামে’ ৩৬৫০)
.
বর্তমানে পৃথিবীতে তিন ধরনের মানুষ রয়েছেঃ-
১. যারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা কে ভালোবেসে সব হারাম থেকে ফিরে এসে। ইসলামের সব বিধিবিধান ও নবীজী (সাঃ) মোতাবেক জীবন চালনা করবে।
২. যারা শয়তানের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে।সবধরনের হারাম কাজে নিজেকে যুক্ত করে দিবে। তারপর ধীরেধীরে নাস্তিকের পন্থা অবলম্বন করে ধীরেধীরে নাস্তিক হয়ে যায়। (হে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা আপনি তাদের হেদায়াত দিন ও আমাদেরকে হেফাদাত করুন)
৩. যারা উপরে ২ টির সংমিশ্রণ। ইসলামের সব হুকুম-আহকাম মেনে চলবে ও হারাম কাজ করবে আবার প্রতিনিয়ত শিরক করে।
শিরক নিয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বলেন :
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِۦ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذٰلِكَ لِمَن يَشَآءُ ۚ وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرٰىٓ إِثْمًا عَظِيمًا
অর্থঃ নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন। আর যে লোক অংশীদার সাব্যস্ত করল আল্লাহর সাথে, সে যেন অপবাদ আরোপ করল।
[আন নিসাঃ আয়াত- ৪৮]
ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন,
من مات وهو يدعوا لله ندا دخل النار (رواه البخاري)‎
অর্থঃ ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করা অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে। সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’’ (বুখারি ২৩৫৫)
.
এই দুনিয়া আসলে পরীক্ষার হল। আর আমরা সবাই শিক্ষার্থী। ফলাফল পাশ হবে হাশরের দিনে। হাদিস। সেই দিন সব পাপ ও পুণ্য কাজের পাইটুপাই হিসাব নেয়া হবে। কেউ একপা ও নড়াতে পারবেনা হিসাব না দিয়ে।
এ সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বলেন,
﴿وَكُلَّ إِنسَانٍ أَلْزَمْنَاهُ طَائِرَهُ فِي عُنُقِهِ وَنُخْرِجُ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كِتَابًا يَلْقَاهُ مَنشُورًا اقْرَأْ كِتَابَكَ كَفَىٰ بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ حَسِيبًا﴾‎
অর্থঃ‘‘ যে মানুষের ভালমন্দ কাজের আমলনামা আমি তার গলায় ঝুলিয়ে দিবো এবং কিয়ামতের দিন তার জন্য বের করবো একটি কিতাব, যাকে সে খোলা আকারে পাবে। বলা হবেঃ পড়ো নিজের আমলনামা নিজেই। আজ নিজের হিসাব করার জন্য তুমি নিজেই যথেষ্ট’’। (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ১৩-১৪)
‘হাসান’ সনদে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন:
« الْكَيِّسُ مَنْ دَانَ نَفْسَهُ ، وَعَمِلَ لِمَا بَعْدَ الْمَوْتِ ، وَالْعَاجِزُ مَنِ أَتْبَعَ نَفْسَهُ هَوَاهَا ، وَتَمَنَّى عَلَى اللَّهِ » .‎
অর্থঃ “বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি, যে তার নফসের হিসাব নেয় এবং মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের জন্য কাজ করে; আর দুর্বল ঐ ব্যক্তি, যে নিজের নফসের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং আল্লাহর কাছেও আশা-আকাঙ্খা রাখে।”
(তিরমীযি- ২৪৫৯)।
যাদের ডান হাতে আমলনামা দেওয়া হবে তারা হেসে হেসে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা তার মুমিন বান্দা বান্দি জন্য রেখেছেন সেই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তখনি হবে আসল সাফল্য তখনি হবে আসল বিজয়।
এ সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বলেন:
وَبَشِّرِ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّٰلِحَٰتِ أَنَّ لَهُمْ جَنَّٰتٍ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَٰرُ كُلَّمَا رُزِقُوا۟ مِنْهَا مِن ثَمَرَةٍ رِّزْقًا قَالُوا۟ هَٰذَا ٱلَّذِى رُزِقْنَا مِن قَبْلُ وَأُتُوا۟ بِهِۦ مُتَشَٰبِهًا وَلَهُمْ فِيهَآ أَزْوَٰجٌ مُّطَهَّرَةٌ وَهُمْ فِيهَا خَٰلِدُونَ
অর্থঃ আর হে নবী (সাঃ), যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজসমূহ করেছে, আপনি তাদেরকে এমন বেহেশতের সুসংবাদ দিন, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহমান থাকবে। যখনই তারা খাবার হিসেবে কোন ফল প্রাপ্ত হবে, তখনই তারা বলবে, এতো অবিকল সে ফলই যা আমরা ইতিপূর্বেও লাভ করেছিলাম। বস্তুতঃ তাদেরকে একই প্রকৃতির ফল প্রদান করা হবে। এবং সেখানে তাদের জন্য শুদ্ধচারিনী রমণীকূল থাকবে। আর সেখানে তারা অনন্তকাল অবস্থান করবে।
(সূরাহ আল বাকারা : ২৫)
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ جَعْفَرٍ، عَنْ حُمَيْدٍ، عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ أُمَّ حَارِثَةَ، أَتَتْ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَقَدْ هَلَكَ حَارِثَةُ يَوْمَ بَدْرٍ، أَصَابَهُ غَرْبُ سَهْمٍ‏.‏ فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَدْ عَلِمْتَ مَوْقِعَ حَارِثَةَ مِنْ قَلْبِي، فَإِنْ كَانَ فِي الْجَنَّةِ لَمْ أَبْكِ عَلَيْهِ، وَإِلاَّ سَوْفَ تَرَى مَا أَصْنَعُ‏.‏ فَقَالَ لَهَا ‏ "‏ هَبِلْتِ، أَجَنَّةٌ وَاحِدَةٌ هِيَ إِنَّهَا جِنَانٌ كَثِيرَةٌ، وَإِنَّهُ فِي الْفِرْدَوْسِ الأَعْلَى ‏"‏‏.‏ (وَقَالَ ‏:‏غَدْوَةٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوْ رَوْحَةٌ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا، وَلَقَابُ قَوْسِ أَحَدِكُمْ أَوْ مَوْضِعُ قَدَمٍ مِنَ الْجَنَّةِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا، وَلَوْ أَنَّ امْرَأَةً مِنْ نِسَاءِ أَهْلِ الْجَنَّةِ اطَّلَعَتْ إِلَى الأَرْضِ، لأَضَاءَتْ مَا بَيْنَهُمَا، وَلَمَلأَتْ مَا بَيْنَهُمَا رِيحًا، وَلَنَصِيفُهَا ـ يَعْنِي الْخِمَارَ ـ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا‏)‏‏.‏‎
অর্থঃ কুতায়বা(রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, বদরের যূদ্ধে হারিসা (রাঃ) আদৃশ্য তীরের আঘাতে শাহাদাতবরণ করলে তার মাতা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আগমন করে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার অন্তরে হারিসার স্নেহ-মমতা যে কত গভীর তা তো আপনি জানেন। অতএব সে যদি জান্নাত লাভ করে তরে আমি তার জন্য কান্নাকাটি করব না। আর যদি ব্যতিক্রম হয় তবে আপনি অচিরেই দেখতে পাবেন আমি কি করি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি তো নির্বোধ। জান্নাত কি একটি, না কি অনেক? আর সে তো সবচেয়ে উন্নতমানের জান্নাত ফিরদাউসে রয়েছে। তিনি আরও বললেনঃ এক সকাল বা এক বিকাল আল্লাহর রাস্তায় চলা দুনিয়া ও তার মধ্যবর্তী সবকিছুর চাইতে উত্তম। তীরের দু'প্রান্তের দূরত্বের সমান বা কদম পরিমাণ জান্নাতের জায়গা দুনিয়া ও তৎ মধ্যবর্তী সবকিছুর চাইতে উত্তম। জান্নাতের কোন নারী যদি দুনিয়ার প্রতি দৃষ্টিপাত করে তবে সমস্ত দুনিয়া আলোকিত ও খুশবুতে মোহিত হয়ে যাবে। জান্নাতি নারীর নাসীফ (ওড়না) দুনিয়ার সব কিছুর চেয়ে উত্তম।
(বুখারী, ৬৫২৮ ও তিরমীযি, ১৪৬৮)
.
আর যাঁদের বাম হাতে আমলনামা দেওয়া হবে তারা হবে সবচেয়ে বড় কপাল পুড়া। জাহান্নামী ফেরেশতা তাদের টানতে টানতে জান্নামে নিক্ষেপ করবেন। যারা আজ ইসলামের বিরুদ্ধতা করছেন, যারা আজ শুধু নামে মুসলমান, যারা আজ ইসলামের বিধিবিধান নিয়ে হাসি তামাশা করছেন। তাদের সেই দিন সব কিছুর জন্য জিজ্ঞাসা করা হবে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বলেন:
ٱلْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلَىٰٓ أَفْوَٰهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَآ أَيْدِيهِمْ وَتَشْهَدُ أَرْجُلُهُم بِمَا كَانُوا۟ يَكْسِبُونَ.
অর্থঃ আজ আমি তাদের মুখে মোহর এঁটে দেব তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে।
(সূরাঃ ইয়া সিন, আয়াত: ৬৫)
حَدَّثَنَا حُمَيْدُ بْنُ مَسْعَدَةَ، حَدَّثَنَا حُصَيْنُ بْنُ نُمَيْرٍ أَبُو مِحْصَنٍ، حَدَّثَنَا حُسَيْنُ بْنُ قَيْسٍ الرَّحَبِيُّ، حَدَّثَنَا عَطَاءُ بْنُ أَبِي رَبَاحٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ لاَ تَزُولُ قَدَمَا ابْنِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ عِنْدِ رَبِّهِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ خَمْسٍ عَنْ عُمْرِهِ فِيمَا أَفْنَاهُ وَعَنْ شَبَابِهِ فِيمَا أَبْلاَهُ وَمَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيمَ أَنْفَقَهُ وَمَاذَا عَمِلَ فِيمَا عَلِمَ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ مِنْ حَدِيثِ ابْنِ مَسْعُودٍ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِلاَّ مِنْ حَدِيثِ الْحُسَيْنِ بْنِ قَيْسٍ ‏.‏ وَحُسَيْنُ بْنُ قَيْسٍ يُضَعَّفُ فِي الْحَدِيثِ مِنْ قِبَلِ حِفْظِهِ ‏.‏ وَفِي الْبَابِ عَنْ أَبِي بَرْزَةَ وَأَبِي سَعِيدٍ ‏.
অর্থঃ হুমায়দ ইবন মাসআদা (রহঃ) .... ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচটি বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামতের দিন প্রভুর নিকট থেকে আদম সন্তানের পা সরবে নাঃ জিজ্ঞাসা করা হবে তার বয়স সম্পর্কে, কি কাজে সে তা অতিবাহিত করেছে, তার যৌবন সম্পর্কে কি কাজে সে তা বিনাশ করেছে; তার সম্পদ সম্পর্কে, কোথা থেকে সে তা অর্জন করেছে আর কি কাজে সে তা ব্যয় করেছে এবং সে যা শিখেছিল তদনুযায়ী কি আমল সে করেছে?
( সহীহ, সহিহাহ ৯৪৬, তা'লীকুর রাগীব ১/৭৬, রওযুন নাযীর ৬৪৮, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২৪১৬)
.
বর্তমান আধুনিক যুগে আপনি এই সব হারাম কাজ যদি কষ্ট করে ছড়ে আসার চেষ্টা করেন। অনেক আপনাকে খ্যাত বলবে। থাকনা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালাকে ও উনার হাবিব (সাঃ) কে ভালোবেসে যদি আপনি তাদের কাছে খ্যাত হয়ে যান তাহলে আমার ও দ্বীনি ভাইদের জন্য সেই খ্যাত কথাটি হয়তো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালার দয়াতে নাজাতের উছিলা হতে পারে।
.
তারপর যিনা (প্রেম) থেকে বাঁচার জন্য যদি আপনি পরিবারে বিয়ের কথা বলেন, তাহলে পরিবার বলবে এখন কি বিয়ে, কি করো তুমি এখন যে বিয়ে করবে, আগে নিজের পায়ে দাঁড়ায়(আমি কি এতো অন্যর পায়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম) প্রতিষ্ঠিত হয় তারপর বিয়ে। এখন বিয়ে করলে বউ কে কি খাওয়াবা (মনে হচ্ছে বউ রাক্ষসী সব খেয়ে নিবে)। আসলে তারা যদি দ্বীনি ভাইদের কষ্ট বুঝতো তাহলে এই কথা গুলো বলতো না। এই যৌবন বয়সে অনেক ভাই খারাপ কাজে জড়িয়ে আসেন। কিন্তু নিজের ইমান বাঁচানোর জন্য যদি একটা হালাল সম্পর্কের কথা বলেন (বিয়ে) তাহলে তাদের মনোভাব যা কষ্টকর।
রিজিক এ সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বলেন;
وَمَا مِن دَآبَّةٍ فِى ٱلْأَرْضِ إِلَّا عَلَى ٱللَّهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا كُلٌّ فِى كِتَٰبٍ مُّبِينٍ.
অর্থঃ আর পৃথিবীতে কোন বিচরণশীল নেই, তবে সবার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ নিয়েছেন তিনি জানেন তারা কোথায় থাকে এবং কোথায় সমাপিত হয়। সবকিছুই এক সুবিন্যস্ত কিতাবে রয়েছে।
(সূরাহঃ হুদ- ৬)
سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ حَدَّثَنَا حَمَّادٌ عَنْ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ أَبِي بَكْرِ بْنِ أَنَسٍ عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ وَكَّلَ اللهُ بِالرَّحِمِ مَلَكًا فَيَقُولُ أَيْ رَبِّ نُطْفَةٌ أَيْ رَبِّ عَلَقَةٌ أَيْ رَبِّ مُضْغَةٌ فَإِذَا أَرَادَ اللهُ أَنْ يَقْضِيَ خَلْقَهَا قَالَ أَيْ رَبِّ أَذَكَرٌ أَمْ أُنْثَى أَشَقِيٌّ أَمْ سَعِيدٌ فَمَا الرِّزْقُ فَمَا الأَجَلُ فَيُكْتَبُ كَذَلِكَ فِي بَطْنِ أُمِّهِ‎.
অর্থঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহ্ রেহেমে (মাতৃগর্ভে) একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করেছেন। তিনি বলেন, হে প্রতিপালক! এটি বীর্য। হে প্রতিপালক! এটি রক্তপিন্ড। হে প্রতিপালক! এটি গোশতপিন্ড। আল্লাহ্ যখন তার সৃষ্টি পূর্ণ করতে চান, তখন ফেরেশতা বলে, হে প্রতিপালক! এটি নর হবে, না নারী? এটি দুর্ভাগা হবে, না ভাগ্যবান? তার রিযক্ কী পরিমাণ হবে? তার জীবনকাল কী হবে? তখন (আল্লাহর নির্দেশমত) তার মায়ের পেটে থাকাকালে ঐ রকমই লিখে দেয়া হয়। (আধুনিক প্রকাশনী- বুখারী ৬১৩৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- বুখারী ৬১৪৩)।
.
আপনার দ্বীনি প্রচার ও দাওয়াতি কাজ কারো জন্য, কে কি বললো অথবা কে কি কষ্ট দিলো সেই কথা গুলি সব ভুলে দাওয়াতি কাজ চালিয়ে যেতে হবে। আপনার এই কষ্ট ফল আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা যদি না দেন তাহলে নিশ্চয় জেনে রাখুন ভাই ও বোন আপনার প্রতিদান তিনি হাশরের ময়দানে দিবেন। কুল্লি হালিন তাওক্কালতু আল্লালাহ (সবসময় আল্লাহ উপর ভরসা ও বিশ্বাস রাখুন)।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বলেন:
فَإِنَّ مَعَ ٱلْعُسْرِ يُسْرًا. إِنَّ مَعَ ٱلْعُسْرِ يُسْرًا
অর্থঃ নিশ্চয়ই দুঃখের পর আছে সুখ। নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে আছে স্বস্তি।
(সূরাহঃ ইনশিরাহ, আয়াত- ৫,৬)
.
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা সব মুসলিম ভাই ও বোনদের উনার সন্তুষ্টি ও রাসূল (সাঃ) সুন্নাহ মোতাবেক বেশি বেশি আমল করার তাওফীক দিন।
ওয়া তাওফীকি ইল্লা বিল্লাহ,
আল্লাহুম্মা আমিন।

- জুবায়ের আহমেদ

পঠিত : ১৪০৬ বার

মন্তব্য: ০