Alapon

করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ এবং কিছু কথা...



বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে শুরু করেছে। চেনা-পরিচিত অনেকেই অসুস্থ হয়ে বাসায় বসে আছে। যারাই টেস্ট করতেছে তাদেরই টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ আসতেছে। অন্যদিকে ডাক্তাররা বলছে, হাসপাতালে তিল ধরণের ঠাই নেই। করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোর আইসিইউ বেড একটিও ফাঁকা নেই। প্রায় প্রতিদিনই ৫ হাজারের উপরে রোগী সনাক্ত হচ্ছে। আক্রান্তের হার ২০% অতিক্রিম করেছে। পরিস্থিতি দিন দিন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে সরকার পরিবহনে যাত্রী চলাচলে কিছুটা কঠোরতা আরোপ করেছে। আবার লকডাউনের চিন্তা করতেছে।

কৌতুহলি মন বারবার জিজ্ঞেস করছে, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের এই লাগামছাড়া সংক্রমনের দ্বায় আসলে কার।

প্রথমত, এই দোষ আমরা যারা সাধারণ মানুষ আছি তাদের। কারণ, আমরা সচেতন মানুষ নই। গতবছর যখন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলো তখন আমরা সাধারণ মানুষরা বেশ সচেতন ছিলাম। মুখে মাস্ক পরতাম, হাতে গ্লাফস পরতাম, বাহিরে থেকে ঘরে ফিরে সাবান দিয়ে হাত ধুইতাম, স্যানেটাইজার ব্যবহার করতাম। কিন্তু এখন আমাদের মাস্ক ব্যবহার করতেই কষ্ট হয়ে যায়। আমি নিজেকে দিয়েই বলতে পারি, গত বছর সংক্রমণ শুরু হওয়ার সময় আমি বেশ সচেতন ছিলাম। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই সচেতনতা উবে গেছে। সেখানে ঠাই করে নিয়েছে অলসতা আর অসেচনতা। আমিও মাঝে মাঝে মাস্ক ছাড়াই বাহিরে বের হচ্ছি। এই আমাদের মত সাধারণ মানুষরা ভাবছে, ‘আরেহ! করোনা ভাইরাস তো চলে গেছে। এতো মাস্ক-টাস্ক পরে আর হাত ধুঁয়ে আর কোনো কাজ নেই।’

আমাদের এই পাত্তা না দেওয়া মনোভাবের কারণেই করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ আমাদের উপর ভয়ানকভাবে আঁছড়ে পড়েছে। এখন দেখার বিষয়, এই ঢেউ আমাদের কী অবস্থা করে।

দ্বিতীয়ত, এই অবস্থার জন্য আমাদের সরকারও কম দ্বায়ী নয়। করোনা ভাইরাসের প্রকোপ কমে যাওয়ার পরপরই সরকার নিজেদের সফল বলে দাবি করতে থাকে। সরকারের মন্ত্রীরা টেলিভিশনের মাইক্রোফোন দেখলেই বলতে থাকে, আমরা করোনা জয় করেছি। সরকারের তরফ থেকে এমন বক্তব্য দেওয়ার কারণেই সাধারণ মানুষের মধ্য থেকে সচেতনতার মনোভাব হারিয়ে গেছে। আর করোনা ভাইরাসের টিকা নিয়ে সরকার যা করলো, তা নিয়ে তো আর নতুন করে কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না।

আমরা যারা পত্র-পত্রিকা পড়ি এবং দেশের সার্বিক অবস্থা জানার চেষ্টা করি, তারা আগে থেকেই জানি, দেশের করোনা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। আর এই খারাপ পরিস্থিতি গত মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়েছে। কিন্তু আমাদের সরকার বাহাদুর সেই পরিস্থিতির কথা প্রকাশ করেননি এবং প্রকাশ করতে দেননি। কারণ, সরকার তখন বঙ্গবন্ধুর শত জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠান পালনের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। সরকার যেকোনো উপায় এই অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন করতে চায়। আর সেকারণেই সরকার করোনা পরিস্থিতি মানুষের থেকে গোপন করেছিল। এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, জন্মশত বার্ষিকী অনুষ্ঠানের পরপরই হয়তো সরকার লকডাউন দিতে পারে। আর দিনশেষে সরকার সে দিকেই হাটছে।

পরিশেষে বলব, উন্নত বিশ্বের রাষ্ট্রগুলো করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তি রাষ্ট্র ভারতও প্রায় নাজেহাল হয়ে পড়েছে; যেখানে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর শত শত মানুষ চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে যায়। সেই দেশও ঠিকঠাক চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে ব্যর্থ হচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশের মতো স্বল্প আয়ের দেশে চিকিৎসা সেবার বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মূল কথা হচ্ছে, সেই সংকটগুলোকে স্বীকার করে নিয়ে, যতোটুকু সামর্থ আছে, সেই সামর্থ্যের আলোকে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু আমাদের সরকার বাহাদুর কেবল বক্তৃতা প্রদানেই নিষ্ঠার পরিচয় দিতে পারেন, জনগনের প্রয়োজন এমন কাজে তারা বরাবরই উদাসীন থাকেন।

করোনা ভাইরাস এমন একটি রোগ, এর সংক্রমণ আরও প্রকোট আকার ধারণ করলে সরকারের এমপি, মন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীও রক্ষা পাবে না। তাই নিজেদের জন্য হলেও এই ভাইরাসের নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের জন্য অতীব জরুরী। এতে দেশের মানুষ বাঁচবে, বাঁচবে রাষ্ট্র ও সরকার। আশা করছি, সরকার কেবল দ্বায়সারা ভাবে বড়ো বড়ো বক্তৃতার মাঝেই নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সীমাবদ্ধ রাখবে না। তারা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কার্যকরি ভূমিকা রাখবে।

পঠিত : ৪১০ বার

মন্তব্য: ০