Alapon

এই লকডাউন আদৌ ফলপ্রসূ হবে কি...?



দেশের করোনা পরিস্থিতি আবারও ভয়ানক হয়ে উঠতেছে। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এবার গতবারের চেয়ে সংক্রমণের হার ও মৃত্যুর হার অনেক বেশি। দৈনিক সংক্রমণের হার ২৩% এর বেশি। অর্থাৎ প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ২৩ জনই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। এমতাবস্থায় সরকার আজ থেকে ৭ দিনের লকডাউন ঘোষনা করেছে।

কেমন চলছে লকডাউন?

আজ ছিল লকডাউনের প্রথম দিন। কিন্তু পরিস্থিতি দেখে কেউ কেউ বলছিল, ঢিমেতালে ২০ দলীয় জোটের হরতাল চলছে। রাস্তাঘাটে গণপরিবহনের সংখ্যা কম, কিন্তু মোড়ে মোড়ে অফিসগামী শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। আবার কেউ কেউ হাস্যরস করে বলছেন, ‘এর চেয়ে হেফাজতের হরতার আরও কঠোর ছিল। হেফাজতের হরতালে রাস্তায় এর চেয়েও কম মানুষ ছিল।’ উপরোক্ত কমেন্ট দুটি এজন্যই উল্লেখ করলাম, যেন লকডাউন পরিস্থিতি বুঝতে পারেন। আদৌত এটা লকডাউন কিনা তা নিয়েই মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।

হঠাৎ লকডাউন কেন?

আসলে সরকার গত মাসে বঙ্গবন্ধুর শতজন্মবার্ষিকী উদযাপন নিয়ে বিরাট ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে এবং ব্যাপক ঢাকঢোল বাজিয়ে, বড়ো বড়ো অনুষ্ঠান করে এই উৎসবটি উদযাপন করেছে। পরিস্থিতি কিন্তু তখন থেকেই খারাপ হচ্ছিল। কিন্তু যে কোনো জন্মশত বার্ষিকী উৎযাপন করার অভিপ্রায়ে থাকা সরকার করোনা পরিস্থিতিকে তেমন পাত্তা দেয়নি। আর সেই পরিস্থিতি প্রকাশও হতে দেয়নি। এরপরও কতক সাংবাদিক স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি তো নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যাচ্ছে। সরকার লকডাউনের কথা ভাবছে কিনা?’
তখন মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘সরকার লকডাউনের কথা চিন্তাও করছে না। পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। করোনা পরিস্থিতি এখনো আমাদের আওতাধীণ রয়েছে।’
এই বক্তব্য দেওয়ার মাসও পার হয়নি, ইতিমধ্যে মন্ত্রী বলেছেন, ‘করোনা পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। আসলে করোনা নিয়ন্ত্রণ করার বদলে আমরা শুধু বড়ো বড়ো কথা বলেছি আর তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছি। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে গোটা ঢাকা শহরকে হাসপাতাল বানালেও রোগীদের স্থান দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।’

অথচ সরকার যখন করোনা টিকা প্রদান করলো তখন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত বলেছিলেন, আমরা করোনা জয় করেছি। আমাদের করোনা জয় করা দেখে গোটা বিশ্ব পর্যন্ত অবাক হয়ে গেছে। অথচ সরকার লকডাউন ঘোষণা করে এখন দেশের মানুষকে অবাক করে দিলো!

লকডাউন কি ফলপ্রসূ হবে?

লকডাউন ফলপ্রসূ হবে কিনা তা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু এতোটুকু বলতে পারি, লকডাউন ঘোষণার পরপরই ঢাকা শহর থেকে যে লক্ষ লক্ষ মানুষ গ্রামের পানে ছুটে গেল, তাতে ভাইরাস যে তৃণমূলেও ছড়িয়ে গেল- তা নিশ্চিত করে বলতে পারি। আসলে সরকার কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই এই লকডাউন ঘোষণা করেছে। লকডাউন ঘোষণা করার পর প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। সেই প্রজ্ঞাপনে দেখা যাচ্ছে, আগামীকাল থেকে লকডাউন কিন্তু বইমেলা চলবে! বইমেলা বেলা ১২ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত চলবে। অন্যদিকে লকডাউনের কারণে সমস্ত দোকান ও মার্কেট বন্ধ থাকবে। একদিকে লকডাউন, অন্যদিকে গণপরিবহন বন্ধ আবার বইমেলা চলছে-এটাকে কেমন লকডাউন বলে আমার ঠিক জানা নেই।

আসলে এটা প্রকৃত লকডাউন নয়। যার কারণে এই লকডাউন থেকে কোনো উপকার পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু এই লকডাউন বলবদ থাকলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকবে না। তাদের আয়-ইনকাম শূণ্যর পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। তখন সাধারণ মানুষ করোনা ভাইরাসে মারা না পড়লেও, খাবারের অভাবে মারা পড়বে।

পঠিত : ৪৫১ বার

মন্তব্য: ০