Alapon

হিজরত তারবিয়াতের একটি বড় পর্যায়



হিজরত করা মানে পরিত্যাগ করা, ছেড়ে দেওয়া। এটা সহজ ব্যাপার ছিল না। মক্কা থেকে সকল সহায় সম্বল বিসর্জন দিয়ে অন্য স্থানে গমন করা ছিল প্রশিক্ষণের একটি বড় পর্যায়। এজন্য আল্লাহর রাসূল সা. যারা হিজরতের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তাদের বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। তাদেরকে নেতৃত্বের অধিক হকদার হিসেবে বিবেচিত করেছেন। আল্লাহর রাসূল সা.-এর সাহাবীদের মধ্যে মুহাজির বা হিজরতকারীরা হলেন মর্যাদার দিক থেকে সবচেয়ে উঁচুতে।

আল্লাহ তায়ালা নবী সা. ও তাঁর সাহাবীদের হিজরতের মতো কঠিন পরীক্ষায় উপনীত করেন। এর মাধ্যমে তাঁদের ঈমান যাচাই ও পুরস্কারের ব্যবস্থা করেন। এটি প্রশিক্ষণ বা তারবিয়াতের একটি বড় ধাপ। এই ধাপ অতিক্রমকারীরা আল্লাহর বাছাই করা বান্দা হিসেবে পরিগণিত হন। আল্লাহ কাউকে মুহাজির হিসেবে পরীক্ষা করেন আর কাউকে আনসার হিসেবে পরীক্ষা করেন। আল্লাহর রাসূল সা.-এর সময়ে মক্কার লোকদেরকে আল্লাহ তায়ালা মুহাজির বা হিজরতকারী হিসেবে পরীক্ষা নিয়েছেন। আর আবিসিনিয়ার নাজ্জাশী ও মদিনার মুসলিমদের আনসার হিসেবে পরীক্ষা নিয়েছেন।

প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার শুরু হলে যুলুম অত্যাচার ও নির্যাতন শুরু হয়। নবুয়তের চতুর্থ বছরের মাঝামাঝি বা শেষ দিক থেকে মুসলিমদের ওপর জুলুম নির্যাতন শুরু হয়েছিল। প্রথমদিকে ছিলো হালকা কিন্তু দিনে দিনে এর মাত্রা বেড়ে চললো। নবুয়তের পঞ্চম বছরের মাঝামাঝি সময়ে তা চরমে পৌঁছলো। মুসলিম অবস্থায় মক্কায় অবস্থান করা মুসলমানদের জন্য অসম্ভব হয়ে উঠলো, সেই সংকটময় সময়ে সূরা কাহাফ নাযিল হলো, এতে পৌত্তলিকদের উত্থাপিত বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেয়া হয়েছে, তাতে বর্ণিত তিনটি ঘটনায় আল্লাহর পক্ষ থেকে মু'মিন বান্দাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ইংগিত দেয়া হয়েছে, আসহাবে কাহাফের ঘটনায় এ শিক্ষা মজুদ রয়েছে যে, দ্বীন ঈমান যখন আশঙ্কার সম্মুখীন হয় তখন কুফুরী এবং যুলুম-অত্যাচারের কেন্দ্র থেকে হিজরত করতে হবে।

আল্লাহ তায়ালা সূরা কাহাফের ১৬ নং আয়াতে বলেন, //আর যখন তোমরা তাদের থেকে আলাদা হয়েছ এবং আল্লাহ ছাড়া যাদের তারা উপাসনা করে তাদের থেকেও, তখন গুহায় আশ্রয় নাও। তাহলে তোমাদের রব তোমাদের জন্য তার রহমত উন্মুক্ত করে দেবেন এবং তোমাদের জন্য তোমাদের জীবনোপকরণের বিষয়টি সহজ করে দেবেন।//

সূরা কাহাফের পর আল্লাহ তায়ালা সূরা ঝুমার নাযিল করেন। এতে হিজরতের প্রতি ইশারা করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, আল্লাহর জমিন সংকীর্ণ নয়। আল্লাহ তায়ালা ১০ নং আয়াতে বলেন, //হে আমার মুমিন বান্দারা যারা ঈমান এনেছ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর। যারা এ দুনিয়ায় ভাল কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ। আর আল্লাহর যমীন প্রশস্ত, কেবল ধৈর্যশীলদেরকেই তাদের প্রতিদান পূর্ণরূপে দেয়া হবে কোন হিসাব ছাড়াই।//

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জানা ছিলো যে, আবিসিনিয়ার (ইথিওপিয়া) বাদশাহ আসহামা নাজ্জাশী একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক, তার রাজ্যে কারো ওপর কোনো জুলুম অত্যাচার করা হয় না, এ কারণে আল্লাহর রাসূল মুসলমানদেরকে তাদের দ্বীনের হেফাজতের জন্য আবিসিনিয়ায় হিজরত করার আদেশ দিলেন। এরপর পরিকল্পিত কর্মসূচী অনুযায়ী রজব মাসে সাহাবায়ে কেরামের প্রথম দল আবিসিনিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন, এ দলে বারো জন পুরুষ এবং চারজন মহিলা ছিলেন, হযরত উসমান বিন আফফান রা. ছিলেন দলনেতা। রাসূলুল্লাহ সা. তাদের সম্পর্কে বলেন, হযরত ইবরাহীম আ. এবং হযরত লুত আ. এর পর আল্লাহর পথে হিজরতকারী এরা প্রথম দল।

একদিন রাতের অন্ধকারে গোপনে ১ম দল গন্তব্যস্থলের দিকে অগ্রসর হয়। মুশরিকরা যাতে জানতে না পারে সেজন্যই এই গোপনীয়তা। তারা লোহিত সাগরের শুরাইবা বন্দরের দিকে অগ্রসর হন। সৌভাগ্যক্রমে সেখানে দুটি বাণিজ্যিক নৌকা পাওয়া গিয়েছিলো। সেই নৌকায় আরোহণ করে তারা নিরাপদে আবিসিনিয়ায় গমন করেন, তারা চলে যাওয়ার পর মুশরিকরা কিছু মুসলিমের হিজরতের খবর পায়। তারা খবর পাওয়ার পরপরই সমুদ্র উপকূল পর্যন্ত ছুটে যায়। কিন্তু উসমান রা.-এর নেতৃত্বে সাহাবারা আগেই চলে গিয়েছিলেন। এ কারণে তারা ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে। ওদিকে মুসলমানরা হাবশায় পৌঁছে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন।

এরপর মক্কায় দুর্বল মুসলমানদের ওপর মুশরিকদের অত্যাচার আরো বেড়ে গেল। পরিবারের অমুসলিমরা মুসলমানদের নানাভাবে কষ্ট দিতে লাগলো কারণ মুশরিকরা খবর পেয়েছিলো যে, নাজ্জাশী মুসলমানদের সাথে খুব ভালো ব্যবহার করেছেন এবং আবিসিনিয়ায় মুসলমানরা খুব ভালোভাবে দিন যাপন করছেন। এ খবর তাদের অন্তরে হিংসার আগুন বাড়িয়ে দিয়েছিলো। মুশরিকদের অত্যাচার নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায় রাসূলুল্লাহ সা. আবার আবিসিনিয়ায় হিজরত করতে সাহাবাদের পরামর্শ দিলেন।

তবে প্রথম বারের হিজরতের চেয়ে এটা ছিল কঠিন। কারণ মুশরিকরা এবারে ছিল সতর্ক, তাদের ফাঁকি দিয়ে মুসলমানরা অন্যত্র চলে গিয়ে নিরাপদে জীবন যাপন করবে এটা তারা ভাবতেই পারছিলো না। কিন্তু মুসলিমরা এবারো গোপনে তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালাতে সক্ষম হয়েছিলো। এবারের কাফেলা ছিল বড়। ২য় বারে মুহাজিরদের সংখ্যা ছিল ১৮ জন মহিলাসহ মোট ৮২ জন।

আবিসিনিয়ায় মুশরিকদের ষড়যন্ত্র
মুসলিমরা শান্তিতে থাকবে আর সেটা মুশরিকরা সহ্য করবে, এটা হতে পারে না। দুই দফায় হিজরত মুশরিকদের অনেক কষ্ট দিয়েছে। তাই তারা সিদ্ধান্ত করলো আবিসিনিয়া থেকে মুসলিমদের বের করে নিয়ে আসবে। এই নিয়ে তারা মিটিং ডাকে। অনেক আলোচনার পর তারা সিদ্ধান্ত করে আমর ইবনুল আস এবং আবদুল্লাহ ইবনে রবিয়াকে এই গুরুত্বপূর্ণ মিশনে আবিসিনিয়ায় পাঠানো হবে।

এই দুজন তখনও ইসলাম গ্রহণ করেন নি, এরা যথেষ্ট বুদ্ধিমান ছিলেন। হাবসার বাদশাহকে দেওয়ার জন্য কোরাইশরা এই দুজন দূতের মাধ্যমে মূল্যবান উপহার পাঠালো। এরা প্রথম বাদশাহকে উপঢৌকন দিলেন, এরপর সেসব যুক্তি এবং কারণ ব্যাখ্যা করলেন, যার ভিত্তিতে তারা মুসলমানদের জন্য মক্কায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান।

তারা বললো, হে বাদশাহ, আপনার দেশে আমাদের কিছু নির্বোধ যুবক পালিয়ে এসেছে। তারা স্বজাতির ধর্ম বিশ্বাস পরিত্যাগ করেছে। কিন্তু আপনি যে ধর্মে বিশ্বাস পোষণ করেন সেই ধর্ম বিশ্বাসও তারা গ্রহণ করেনি, বরং তারা এক বিদআতী ধর্ম বিশ্বাস গ্রহণ করেছে। এ ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে আমরাও কিছু জানিনা, আপনারাও কিছু জানেন না। ওদের পিতা মাতা ও আত্মীয়স্বজন আমাদেরকে ওদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য পাঠিয়েছেন। উপহার পেয়ে দরবারের সভাসদরাও চাচ্ছিলেন যে, বাদশাহ নাজ্জাশী যেন মুসলমানদের ফিরিয়ে দেন।

নাজ্জাশী ভাবলেন যে, এ সমস্যার গভীরে প্রবেশ করে সব দিক ভালোভাবে পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। তাই তিনি মুসলিমদের তার দরবারে ডেকে পাঠালেন, মুসলমানরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তারা নির্ভয়ে সত্য কথা বলবে। এতে পরিণাম যা হয় হবে, মুসলমানরা দরবারে আসার পর নাজ্জাশী জিজ্ঞাসা করলেন,

তোমরা যে ধর্ম বিশ্বাসের কারণে নিজেদের স্বজাতীয়দের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছ সেটা কি?

মুসলমানদের মুখপাত্র জাফর ইবনে আবু তালিব রা. বলেন, হে বাদশাহ! আমরা ছিলাম মূর্তি পূজায় লিপ্ত একটি মূর্খ জাতী। আমরা মৃত পশুর মাংস খেতাম, পাপ কাজে লিপ্ত থাকতাম, নিকটাত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতাম, প্রতিবেশীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতাম, আমাদের মধ্যে শক্তিশালীরা দুর্বলদের উপর অত্যাচার করতো, আমরা যখন এরূপ অবস্থায় ছিলাম, তখন আল্লাহ তায়ালা আমাদের মধ্যে একজনকে রসূলরূপে পাঠান। তাঁর উচ্চ বংশ মর্যাদা, সত্যবাদিতা, সচ্চরিত্রতা, আমানতদারী ও বিশ্বস্ততা সম্পর্কে আমরা আগে থেকেই জানতাম।

তিনি আমাদেরকে বুঝিয়েছেন যে, আমরা যেন এক আল্লাহকে কে মানি এবং তাঁর ইবাদত করি। যেসব মূর্তি ও পাথরকে আমাদের পূর্বপুরুষ পূজা করতেন সেসব যেন পরিত্যাগ করি। তিনি আমাদের সত্য বলা, আমানত আদায় করা, নিকটাত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক স্থাপন, পাপ না করা, রক্তপাত থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। অশ্লীল কাজে লিপ্ত, মিথ্যা বলা, ইয়াতিমের ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করা এবং সতী পুণ্যশীলা মহিলার নামে অপবাদ না দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন।

তিনি বলেছেন, আমরা যেন শুধু আল্লাহর ইবাদত করি, তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করি। তিনি আমাদের নামাজ আদায়, রোজা রাখা, যাকাত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সেই নবীকে সত্য বলে মেনেছি, তাঁর উপর বিশ্বাস স্থাপন, তাঁর আনীত দ্বীনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ও আনুগত্য করেছি।

এসব কারণে স্বজাতীয় লোকেরা আমাদের ওপর নাখোশ হয়েছে। তারা আমাদের উপর অত্যাচার নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে এবং পূর্ববর্তী ধর্মে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য নানাভাবে চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে। তারা চায়, আমরা যেন আল্লাহর ইবাদত পরিত্যাগ করে মূর্তিপূজার প্রতি ফিরে যাই। যেসব নোংরা জিনিস ইতোপূর্বে হারাম মনে করেছিলাম, সেসব কিছুকে যেন হালাল মনে করি।

ওরা যখন আমাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের মাত্রা বহুলাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে, পৃথিবীকে আমাদের জন্য সঙ্কীর্ণ করে দিয়েছে এবং তারা আমাদের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে তখন আমরা আপনার দেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছি এবং অন্যদের তুলনায় আপনাকে প্রাধান্য দিয়ে আপনার আশ্রয়ে থাকা পছন্দ করেছি। আমরা আশা পোষণ করেছি যে, আপনারা এখানে আমাদের প্রতি দয়া দেখাবেন এবং আমাদের ওপর কোনো প্রকার জুলুম অত্যাচার করা হবে না।

জাফর রা.-এর বক্তব্য শুনে নাজ্জাশী বললেন, আমাকে তোমাদের রসূলের আনীত গ্রন্থ থেকে একটু পড়ে শোনাও।

জাফর রা. সূরা মরিয়মের প্রথম অংশের কয়েকটি আয়াত পাঠ করলেন। তা শুনে নাজ্জাশীর মন পরিবর্তন হলো, তিনি অবিরাম কাঁদতে থাকলেন। তাঁর দাড়ি অশ্রুতে ভিজে গেলো। তাঁর ধর্মীয় উপদেষ্টারাও কাঁদলেন। নাজ্জাশী এরপর বললেন, এই কথা ও হযরত মূসা আ. আনীত কথা একই উৎস থেকে উৎসারিত।

এরপর নাজ্জাশী আমর ইবনুল আস এবং আবদুল্লাহ ইবনে রবিয়াহকে বললেন, তোমরা চলে যাও। আমি ঐসব লোককে তোমাদের হাতে তুলে দিতে পারবো না।

বাদশাহর নির্দেশের পর কোরাইশদের উভয় প্রতিনিধি দরবার থেকে বেরিয়ে এলো। এরপর আমর ইবনুল আস আবদুল্লাহ ইবনে রবিয়াকে বললো, আগামীকাল ওদের বিরুদ্ধে বাদশাহর কাছে এমন কথা বলবো যে, ওদের সব চালাকি ছুটিয়ে দেব। আবদুল্লাহ ইবনে রবিয়া বললেন, না তার দরকার নেই। ওরা যদিও আমার ধর্ম বিশ্বাস পরিত্যাগ করেছে, কিন্তু ওরা তো আমার গোত্রের লোক। তবুও আমর ইবনুল আস তার সিদ্ধান্তে অটল থাকলেন।

পরদিন আমর ইবনুল আস বাদশাহর দরবারে গিয়ে বললেন, হে বাদশাহ! ওরা ঈসা ইবনে মারিয়াম সম্পর্কে অদ্ভুত কথা বলে। এ কথা শুনে নাজ্জাশী পুনরায় মুসলমানদের ডেকে পাঠালেন। তিনি হযরত ঈসা আ. সম্পর্কে মুসলমানদের মতামত জানতে চাইলেন। মুসলমানরা এবার ভয় পেয়ে গেলেন। তবু তারা সিদ্ধান্ত নিলেন, যা হবার হবে, কিন্তু সত্য কথা ছাড়া অন্য কিছু বলা হবে না।

নাজ্জাশীর প্রশ্নের জবাবে হযরত জাফর রা. বললেন, আমরা হযরত ঈসা আ. সম্পর্কে সেই কথাই বলে থাকি, যা আমাদের নবী সা. আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, হযরত ঈসা আ. আল্লাহর বান্দা, তাঁর রসূল, তাঁর রূহ এবং তাঁর কালেমা। তাঁকে আল্লাহ তায়ালা কুমারী সতী সাধ্বী হযরত মরিয়ম আ. এর কাছে সন্তান করে পাঠিয়েছেন।

এ কথা শুনে নাজ্জাশী বললেন, আল্লাহর কসম! তোমরা যা কিছু বলেছ, হযরত ঈসা আ. ঠিক তাই। এতে আবিসিনিয়ার ধর্মীয় নেতারা বিরক্তি প্রকাশ করলো। কারণ তারা খৃস্টান ছিল এবং ঈসা আ.-কে আল্লাহর পুত্র মনে করতো। বাদশাহ নাজ্জাশী ধর্মীয় নেতাদের উদ্দেশে বললেন, তোমরা বিরক্ত হলেও আমি যা বলছি এ কথা সত্য।

এরপর নাজ্জাশী মুসলমানদের বললেন, যাও, তোমরা আমার দেশে সম্পূর্ণ নিরাপদ, যারা তোমাদের ওপর গালি দেয়, তাদের উপর জরিমানা ধার্য করা হবে। আমি চাইনা কেউ তোমাদের কষ্ট দিক। আর তার পরিবর্তে আমি যদি সোনার পাহাড়ও লাভ করি তারপরও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হবে না।

এরপর নাজ্জাশী তার ভৃত্যদের বললেন, মক্কা থেকে আগত প্রতিনিধিদের আনীত উপহার তাদের ফিরিয়ে দাও। এগুলোর কোনো প্রয়োজন নেই। অবশেষে মুশরিকদের উভয় প্রতিনিধি তাদের আনীত উপহারসহ অসম্মানজনকভাবে দেশে ফিরে গেলো। আর মুসলিমরা ইথিওপিয়ায় নিরাপদে বসবাস শুরু করেছিলেন। এরপর মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম হওয়ার পর সেখানে সবাই চলে গিয়েছিলেন।

এরপর বড় হিজরত হয়েছে মক্কা থেকে মদিনায়। আল্লাহর রাসূল সা. তাঁর অবশিষ্ট সাহাবীদের নিয়ে নবুয়তের ১৩ তম বছরে হিজরত করেন।

নিজ দেশ ও সম্পদের প্রতি মমতা মানুষের সহজাত। এরপরও মুশরিকদের চাপে অনেককেই এসব ফেলে হিজরত করতে হয়। যারা হিজরত করেন, মহান রাব্বুল আলামীন তাদের সম্পর্কে সূরা তাওবার ২০ নং আয়াতে বলেন, //যারা ইমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং আল্লাহর পথে জান ও মাল দিয়ে লড়াই করেছে, তারা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী আর তারাই সফলকাম।//

আল্লাহ তাআলা সূরা নাহলের ৪১ নং আয়াতে আরো বলেন, //যারা অত্যাচারিত হয়ে আল্লাহর পথে হিজরত করে, আমি তাদের দুনিয়াতে উত্তম ঠিকানা দান করবো। আর আখিরাতের পুরস্কারই শ্রেষ্ঠ। হায়, যদি তারা বুঝতো!//

পঠিত : ৩৭৯ বার

মন্তব্য: ০