Alapon

আমরা ব্যক্তিপূজা করছি না তো...?



মামুনুল হক দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন এটা নিয়ে ইসলামে আপত্তি নেই।
কিন্তু তিনি যে একজন জাতীয় নেতা বা দক্ষ রাজনীতিবিদ হবার দৌড়ে অনেক পিছিয়ে তা বোঝা গেল। তিনি ভিডিও তে ক্ষমা চেয়েছেন ভুলের জন্য। কিন্তু এর মাঝে যা হবার অনেক কিছুই হয়ে গিয়েছে।

শুধু মামুনুল হক কেন যে কারো ব্যক্তিগত বিষয় নিয়েই নাক গলানোর অধিকার কারো নেই। সেটার বিচার চাই। কিন্তু যখন মামুনুল সাহেবের মত একজন রাজনীতিবিদ জানেন বর্তমান সরকার কীভাবে নজরদারিতে রাখে মানুষকে, তার দিক থেকে এতগুলো ব্লান্ডার মেনে নেয়া যায়না।

দ্বিতীয় বিয়ে তিনি করতেই পারেন। কিন্তু তার মত জাতীয় ব্যক্তিত্বের জন্য এটা শোভা পায়না যে তা প্রথম স্ত্রী থেকে গোপন রাখবেন। লক্ষ্য করবেন আমি 'শোভা' পায়না বলেছি। হারাম বলিনি। এত কিছু ব্যাখ্যা করে বলতে হয় এটাও একটা পরাধীনতা। এ ব্যাপারটা নিয়ে পরে কিছু বলব।

তার মত রাজনীতিবিদের জন্য এটাও শোভা পায়না যে তার বিয়েটা নথিভুক্ত থাকবেনা (যদিও নথিভুক্তের ব্যাপারটি নিশ্চিত নই)। বিয়েটা নথিভুক্ত না হয়ে থাকলে সেটা একটা কৌশলগত অপরিপক্বতা।

তার স্ত্রীর সাথে ফোনালাপে দেখা গিয়েছে তিনি সবার কাছে বলতে বলেছেন যে উনি সব জানেন আসলে আদতে তার স্ত্রী ব্যাপারটা জানত না। একটা কাঁচা কাজের জন্য উনাকে কত কসরত করতে হল। সেগুলোও গোপন থাকবে না সরকারের কাছে এসব একজন কৌশলি মানুষের বোঝা উচিত।

এ তো গেল মামুনুল হক সাহেবের কথা। কিন্তু তাঁর ভক্তকূল (আমি নিজেও একজন আলেম হিসেবে তার ভক্ত) ভিডিও কে ডিপফেইক প্রমাণ করতে লেগে গেলাম। ডিপফেইক হয়তো অসম্ভব কিছু না। এটা হতেও পারত। আমি নিজেও ভাবা শুরু করেছিলাম এগুলো নিশ্চ্যই ডিপফেইক। পরে মামুনুল হক নিজেই স্বীকার করলেন এগুলো তাঁর ফোনালাপ।

আসলে ফোনালাপ ডিপ ফেইক না ডিপজল তা নিয়ে আমার মাথাব্যাথা এই স্ট্যাটাসে নেই। আমার পর্যবেক্ষণে সমস্যা টা অন্য জায়গায়। আমরা বাঙালি ইসলামপন্থীরা ধীরে ধীরে হিরো ওয়ার্শিপারে পরিণত হচ্ছি। আমাদের অনেকের ধারণা হচ্ছে এই হিরোরা (আলেমরা) ভুল করতে পারেন না। তারা নিখুত।

ফলে সমস্যা যেটা হয়েছে, কেও আমাদের হিরোর সমালোচনা করলেই হল। চারিদিক থেকে এই হিরো ওয়ার্শিপাররা তেড়ে আসবে।

আমিতো ছাত্রলীগ আর এদের মধ্যে পার্থক্য দেখিনা। ছাত্রলীগ তাদের নেতৃবৃন্দ কে যেভাবে মাত্রাতিরিক্ত পূজার কারণে কেও তাদের ও তাদের দলের বিরুদ্ধে বললেই রাজাকার বানিয়ে ফেলে এরাও সেরকম।

মামুনুল হক সাহেবদের কোন ভুল বলা যাবেনা। বললেই ইসলামবিদ্বেষী। এমন ইসলাম তোমাদের কে শিখিয়েছে?

মামুনুল হক ভুল করলে সেটা অবশ্যই বলতে হবে যেমন সরকারের ভুল আমরা বলে থাকি। আমরা আল্লাহ ছাড়া কারো পূজা করিনা।

আর কেও যদি ভাবে মামুনুল হকের ভুল বললে সেকুলারর সুবিধা পাবে তবে আপনাদের ইসলাম চেতনা নিয়ে কিছু বলার নেই। হেফাজতে ইসলাম না বলে তখন এই কন্সেপ্টের নাম দিতে হবে হেফাজতে উলামা মাশায়েখ।

কেও কেও ভাবতে পারেন আমি মামুনুল হকের পেছনে লাগলাম কিনা। নাহ, মোটেই না। আমি রাজনৈতিকভাবে মামুনুল হকের পক্ষে। তিনি অপরাজনীতির স্বীকার। এবং সামনে অনেকে অপরাজনীতির স্বীকার হবেন বলেই মনে হচ্ছে। তাই আমার এ স্ট্যাটাস টা বরং আমাদের নিজেদেরকে সাবধান করবার জন্য। ভাই, আত্মসমালোচনা করেন আর নিজের ভুলগুলোকে বড় করে দেখেন ইনশা আল্লাহ সামনে বেঁচে থাকবেন। আর ধামাচাপা দেয়া, মিথ্যা বলা, অসততা করা এসব করবেন তবে একদম গর্তে গিয়ে পড়বেন। আর দয়া করে সব সমালোচকদের বিরোধী ভাববেন না। সমালোচনা থেকে বুদ্ধিমানরা শিক্ষা নেয় আর গাধারা চিৎকার করে।

পরিশেষে বলব , আমি লেগেছি কিছু মাথামোটা লোকদের পক্ষে। যারা দাবি করে তারা ইসলামের পক্ষের লোক। কিন্তু মানুষকে আওয়ামি লীগ গালি দিতে দিতে কখন তারা নিজেরাই আওয়ামি লীগ হয়ে গিয়েছে তা জানেনা। আওয়ামী লীগ একটা কন্সেপ্টের নাম। আপনি হেফাজতে ইসলামে থেকেও আওয়ামি লীগার হয়ে যেতে পারেন সাবধান না হলে।

- আসিফ

পঠিত : ৪৩৮ বার

মন্তব্য: ০