Alapon

হযরত সুলায়মান আ. ছিলেন জ্ঞান ও বুদ্ধির আঁধার...



হযরত সোলায়মান আ.। পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান মানুষদের একজন। তিনি ছিলেন একজন শাসক তথা রাজা, একই সাথে তিনি ছিলেন আল্লাহর পয়গম্বর বা নবী। তাঁকে যেমন দ্বীন ইসলামের কাজ করতে হতো, তেমনি রাষ্ট্রের বিভিন্ন কাজও করতে হতো। সেই কাজগুলোর মধ্যে একটি কাজ হলো, বিচারকার্য পরিচালনা করা।

একদিন তাঁর দরবারে দুজন নারী একজন শিশুর দাবি নিয়ে মামলা দায়ের করে। ঘটনাটা ছিল এমন, দুজন নারী, পাশাপাশি বাড়িতে থাকতো। তাদের দুজনের মধ্যে বেশ ভাবও ছিলো। তারা একইসময়ে গর্ভবতিও হয়। আর মজার বিষয় হলো, তাদের বাচ্চা প্রসবও হয় একই দিনে এবং একই সময়ে।

বাচ্চা প্রসব হওয়ার পর দেখা গেল, একজন মৃত বাচ্চা প্রসব করেছে আর একজন জীবিত বাচ্চা প্রসব করেছে। মৃত বাচ্চা প্রসব করা মহিলা এই নিজের সন্তানের শোকে প্রায় পাগলপারা হয়ে গেল। এমতাবস্থায় যখন সে জানতে পারলো, পাশের বাড়ির তার বান্ধবী জীবিত সন্তান প্রসব করেছে, তখন সে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। হিংসায় জ্বলে পুড়ে যাচ্ছিল। আর হিংসা ও জেদের বশবর্তি হয়ে সে চিন্তা করল, তার বান্ধবীর বাচ্চাকে সে চুরি করবে। যেই ভাবা সেই কাজ। সে যেকোনো ভাবেই হোক, তার বান্ধবীর বাচ্চাটাকে চুরি করে। আর তার বান্ধবীও বুঝতে পারে, পাশের বাড়ির বান্ধবীই তার বাচ্চাকে চুরি করেছে। আর এই মামলা নিয়ে সেই দুই মহিলা হযরত সুলায়মান আ.-এর দরবারে হাজির হয়েছে।

হযরত সুলায়মান আ.-এর দরবারে হাজির হলে, আল্লাহর নবি তাদের কাছে ঘটনার বিবরণ জানতে চাইলেন। ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে সেই দুই মহিলা আবারও বিবাদে জড়িয়ে পড়লো। আর বিবাদকালীণ সময়ে তাদের দুজনের মধ্যে একজন বলল, ‘মৃত বাচ্চাটা তোমার আর জীবিত বাচ্চাটা আমার।’ তখন অপর মহিলা বলল, ‘না না জীবিত বাচ্চাটা আমার আর মৃত বাচ্চাটা তোমার।’

হযরত সুলায়মান আ. খুব মনোযোগ দিয়ে তাদের বাদানুবাদ শুনলেন এবং প্রায় সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেলেন। নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য তিনি বললেন, ‘তোমার এই সমস্যার তো কোনো সমাধান দেখছি না। ঠিক আছে, এক কাজ করি। বাচ্চাটাকে তরবারি দিয়ে সমানভাবে দুভাগ করে ফেলি। তারপর তোমাকে অর্ধেক দেই, আর তোমাকে অর্ধেক দেই।’

এই কথা শোনার সাথে সাথে দু জনের মধ্যে একজন মহিলা বলে উঠলেন, ‘না না, এমনটা করবেন না। সে আমার বাচ্চা না। ওরই বাচ্চা। ওকেই দিয়ে দিন।’

হযরত সুলায়মান আ. এই কথা শোনার পর আলহামদুলিল্লাহ পড়লেন। তিনি মনে মনে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেটাই সত্য হয়েছে। যে মহিলা বাচ্চাটাকে দুভাগ করতে নিষেধ করলো, ‍সুলায়মান আ. তাঁর হাতেই সেই শিশুকে তুলে দিলেন। তারপর বললেন, এই মহিলাই এই শিশুর আসল মা।’

আর সে যে এই শিশুর আসল মা, এটা সুলায়মান আ. তাদের বাদানুবাদের সময়ই বুঝতে পেরেছিলেন। তাদের বাদানুবাদের সময় এক মহিলা বলেছিল, ‘মৃত বাচ্চাটা তোমার আর জীবিত বাচ্চাটা আমার।’ আর অপর মহিলা বলেছিলো, ‘না না জীবিত বাচ্চাটা আমার আর মৃত বাচ্চাটা তোমার।’

এখানে মূলত যে প্রথমে মৃত বাচ্চার কথা উচ্চারণ করেছে, মৃত বাচ্চাটা তারই। কারণ, সে আবেগ ও মায়ার টানে আগে নিজের মৃত বাচ্চার কথাই ভেবেছে। আর সে কারণে প্রথমে মৃত বাচ্চার কথা বলেছে। আর যে বাচ্চার প্রকৃত মা, সে নিজের বাচ্চার প্রতি মায়া ও ভালোবাস থেকে আগে জীবিত বাচ্চার কথা বলেছে। হযরত সুলায়মান আ. এভাবেই অতিসুক্ষাতি সুক্ষ্ম বিষয় পর্যবেক্ষণ করে বিচার কার্য পরিচালনা করতেন। আর এমন সুক্ষ্ম বিষয় কেবল জ্ঞানী ব্যক্তিরাই লক্ষ করতে পারেন। হযরত সুলায়মান আ. ছিলেন জ্ঞান ও বুদ্ধির আধার।

পঠিত : ৪৬৩ বার

মন্তব্য: ০