Alapon

|| স্রষ্টা যদি দয়ালুই হয়..... ||




কিছু প্রশ্ন বারবার করে আমাদের ভাই-বোনেরা। এরকম একটা প্রশ্ন গতো কয়দিন আগে একজন খুব প্রিয় ছোটো ভাইও করেছে। এর আগেও অনেকেই করেছেন। আজ সকালে একজন বোনও করেছেন।
সেটা হলো আল্লাহ যদি দয়ালুই হয়, তা হলে শাস্তি দিবেন ক্যান! কিংবা শাস্তি দিবেন ঠিক আছে, কিন্তু আগুনে পোড়াবে ক্যান? আগুনে পিটিয়ে-পুড়িয়ে শাস্তি দেওয়াটা কীভাবে ন্যায় হয়? এটা কীভাবে দয়ালু স্রষ্টার বৈশিষ্ট্য হয়? একজন দয়ালু স্রষ্টা কীভাবে এরকম শাস্তি প্রদান করতে পারেন?

এখন এই যে প্রশ্নগুলো মনে মনে জপে জপে আমাদের কিছুটা ঈমানদার ভাইয়েরা হতাশা অনুভব করে। অশান্তি অনুভব করে, সন্দেহ-সংশয়ের কোপানলে দগ্ধ হয়ে বসে বসে হেড়ে গলায় হয়তো গাইতে থাকে -

"কেনো জীবন আকাশে সূর্য হাসে না
কেনো পাখিদের গানে আর মন ভরে না,
কোনো হৃদয় বিনায় আর সুর ওঠে না "

ঠিকই তো আছে, আপনি অন্যের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে থাকলে, ঈমানী ইমারতটাকে সুদৃঢ় না করলে আপনার-আমার জীবনাকাশে সূর্য হাসবে কীভাবে? পাখিদের কলকাকলিতে মনও-বা ভরবে কীভাবে?

আর যারা এককাঠি বেশি সরেশ, তারা তো একসময় কন্ঠ উঁচু করে ঘোষণা-ই দিয়ে বসে যে ধুর ছাই! এইসব স্রষ্টা-ফ্রষ্টা বলে কেউ নেই। খাও-দাও ফূর্তি করো। দুনিয়াটা মস্ত বড়ো। ( নাঊযুবিল্লাহ )

আচ্ছা যাই হোক, আমি সেই ভাই-বোনদের জিজ্ঞেস করতে চাই যে, আপনি বলুন তা হলে ;

১. আল্লাহ কোন শাস্তিটা দিলে সেটা ন্যায় হবে?

২. একজন দয়ালু স্রষ্টার বৈশিষ্ট্য বা তিনি দয়ালু হতে হলে কী কী বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে, তা আপনিই বলুন?

৩. তিনি আগুনে পোড়ানো ছাড়া কোন শাস্তিটা দিলে সেটা ন্যায় হবে?

৪. শাস্তি দিলেই কি তা হলে স্রষ্টার দয়ালু হবার বৈশিষ্ট্য নিঃশেষ হয়ে যাবে?

এখন হয়তো আপনি মনে মনে নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য অংকন করে ফেলেছেন, আর বললেন যে, এগুলোই হচ্ছে দয়ালু হবার বৈশিষ্ট্য। একজন স্রষ্টা এই শাস্তি দিলেই তিনি দয়ালু হবেন, কিংবা এই শাস্তিটা ন্যায়সঙ্গত। এভাবে আপনি কিছু সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দিলেন, অমুকে কিছু বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে দিলো। আলটিমেটলি হোলো কী, একেকজনের দৃষ্টিতে স্রষ্টার দয়ালু হবার বৈশিষ্ট্য একেকরকম। তাহলে একেকজনের জন্য স্রষ্টা হতে হবে একেকজন। আলাদা আলাদা। তোহ আসোলে এটা কিছু হোলো? স্রষ্টা কি এরকম হাজার হাজার হবার বিষয়? আমরা তো স্রষ্টাকে এক এবং একক ভাবি। সেই স্রষ্টার অন্যকোনো অংশিদার ভাবি না। আমাদের রব্ব আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা সম্পর্কে আমাদের ঈমান খুবই স্বচ্ছ এবং পরিস্কার।

দ্বিতীয়ত হচ্ছে যে, আমাদের আল্লাহ, আমাদের রব্ব শুধু দয়ালুই নয়। তিনি অনেকগুলো গুণাবলির আধার। অসংখ্যগুণের সমষ্টির অধিকারী হচ্ছে আমাদের আল্লাহ। তিনি যেমন অনেক দয়ালু এবং মেহেরবান, [ সুরা : ফাতিহা -০২] তেমনি তিনি কঠিন শাস্তিদাতা, [সুরা : বাকারাহ -২১১] তিনি ন্যায়বিচারক, [ সুরা ত্বিন -০৮ ] তিনি প্রতিশোধ গ্রহণকারীও।[ সূরা: ইবরাহিম -৪৭ ]

তৃতীয়ত যে বিষয়টি বলবো তা হলো ; আমরা সবসময়ই অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হই, নাস্তিক, সুশীল সেক্যুলারান্ধ টাউটদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ি। তাদের যুক্তি আর কথাগুলোকে অমীয় সুধার মতো পান করি। আমরা নিজের থেকে আমাদের কর্মের আর বাস্তবতা নিয়ে চিন্তা করি না। কুরআন আর হাদিস নিয়ে ভাবি না, পড়ি না। পড়ি না রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু অা'লাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাহ! আমাদের কৃত কাজসমূহ , আমাদের বলা কথাগুলো, আমাদের আচরণগুলোর সুদূর প্রসারি ফলাফল কী হতে পারে এবং কতোটা ব্যপক এবং বিস্তৃত - তা চিন্তাও করি না।

ধরুন আপনি একজন সতী-সাধবা মেয়েকে অপবাদ দিলেন। এই অপবাদটা তিনি নিতে পারলো না। মানসিক যন্ত্রণায় তিনি কাতরাচ্ছেন দিনের পর দিন। রাতের পর রাত যায় তার যন্ত্রণার জ্বালায়। এভাবে এই অবস্থায় পড়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তাকে নিয়ে তার বাবা-ভাই, মা-বোন সবাই চিন্তাক্লিষ্ট হয়ে পড়েছেন। দৌড়াদৌড়ি আর দুশ্চিন্তায় তাদেরও ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা।

এই যে এতোগুলো মানুষকে আপনি এমন একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিলেন স্রেফ একটা মিথ্যে অপবাদ রটিয়ে, তাহলে আপনিই বলুন আপনার শাস্তি কেমন হওয়া উচিত? কী করা উচিত আপনাকে?

কিংবা একজন মানুষকে আপনি খুন করলেন। খুন করে তার মাকে সন্তানহারা করলেন, স্ত্রীকে বিধবা করেছেন, সন্তানগুলোকে এতিম অনাথ করে দিলেন।

এই যে এতোগুলো মানুষের অধিকার, ভালোবাসা এবং তাদের হক নষ্ট করলেন, এরজন্য আপনার কোন শাস্তিটা প্রাপ্য বলে মনে করেন?

কাউকে কটুকথার দ্বারা দেখা যায় আপনি অনেকের শান্ত মনে অশান্তির দাবানল সৃষ্টি করেন, সেই অশান্তির পালে হওয়া দেন নানাভাবে, নানান উপোয়ে ; তিনি তার সেই অশান্ত মনের অগ্নি নেভাতে করেন আরো অনেক মানুষের মনে অশান্তি আর অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি। এই যে ক্ষুদ্র আর আর স্বাভাবিক দুয়েকটা কাজের দ্বারাও আপনি এরকম অনেক কিছু করে ফেলেন সমাজে, এবং সমাজের মানুষের মনে - তা হলে সেইসব কাজবাজের জন্যে আপনার কোন শাস্তিটা প্রাপ্য বলে মনে করেন? আপনাকে শাস্তি দিলে কীভাবে তা অ-ন্যায্য হবে?

এরপর সর্বশেষ যে বিষয়টি বলবো, তা হোলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদের তো বলেও দিয়েছেন যে দুনিয়ায় আমাদের পাঠানোই হয়েছে পরীক্ষার জন্য। তার বিধান মতো চলার জন্যে। [ সুরাহ : মূলক -০২ ] এখন আমরা যদি তার বিধান মতো না চলি, পরীক্ষায় ফলাফল খারাপ করি; তা হলে তো তিনি শাস্তি দিবেনই।


|| স্রষ্টা যদি দয়ালুই হয়..... ||
~রেদওয়ান রাওয়াহা
১০.০৪.২১

পঠিত : ৩৫৬ বার

মন্তব্য: ০