Alapon

তবে কি লকডাউনের নামে ক্র্যাকডাউন চলছে...?



একদিকে চলছে কঠোর লকডাউন। আর অন্যদিকে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চালাচ্ছে কঠোর ক্র্যাকডাউন।

যেদিন থেকে কঠোর লকডাউনের কথা শোনা যাচ্ছিল, সেদিন এক ফেসবুক অ্যাক্টিভিস্ট আমাকে বলেছিলেন, খুব সম্ভবত সরকার লকডাউনের আড়ালে সরকার বিরোধী অ্যাক্টিভিস্টদের উপর ক্র্যাকডাউন চালানো হবে। আমি তখন তার কথাটাকে তেমন গুরুত্ব দেইনি। তখন বলেছিলাম, দেশের কোভিড ১৯ পরিস্থিতি আসলেই খারাপ। তাই সরকার বাধ্য হয়ে লকডাউন ঘোষণা করতেছে। ক্র্যাকডাউন চালানোর জন্য তো আর লকডাউনের প্রয়োজন নেই। আর বর্তমান সরকার কাকে ভয় পায় যে, তাদের লকডাউন দিয়ে ক্র্যাকডাউন চালাতে হবে! মিডিয়া সরকারের পক্ষে সাফাই গাইছে, মানবাধিকার সংগঠনগুলো সরকারের টাকা ফুলে ফেপে কলা গাছ হয়ে যাচ্ছে, যার কারণে তাদের পক্ষ থেকে কখনো সরকারের মানবতাবিরোধী কাজে জোরালে প্রতিবাদ দেখা যায় না। সেখানে সরকার লকডাউন দিয়ে ক্র্যাকডাউন চালাবে বলে মনে হয় না।

কিন্তু আমার সেই ধারণাকে মিথ্যা হয়ে গেল। সরকার সত্যিই সত্যিই লকডাউনের আড়ালে বিরোধী পক্ষদের উপর ক্র্যাকডাউন চালাচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রধান টার্গেট হেফাজত ইসলাম এবং নুরুল হক নুরুরের দল ছাত্র অধিকার পরিষদ। গতকাল রাতে মাওলানা মামুনুল হকের মাদ্রাসা থেকে একজন হেফাজত নেতাকে গ্রেফতার করেছে RAB । এছাড়াও সারা দেশে প্রায় শতাধিক হেফাজত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

অন্যদিকে গতকাল সন্ধ্যায় ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা আকতার টিএসসি এলাকায় গরীব খেটে খাওয়া মানুষদের মাঝে ইফতার সামগ্রি ও খাবার বিতরণ করছিলো। সেই অনুষ্ঠান থেকে একদল সাদা পোষাকধারী আকতারকে তুলে নিয়ে যায়। সারারাত তার গ্রেফতারের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্বীকার না করলেও, আজ তাকে আদালতে তুলেছে। আদালতে তুলে তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করলে, আদালত ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। খুব সম্ভবত, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ছাত্র অধিকার পরিষদের আরও কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করা হতে পারে। একইসাথে গ্রেফতার হতে পারেন হেফাজতে ইসলামের আলোচিত নেতা মাওলানা মামুনুল হক।

লকডাউনের আড়ালে ক্র্যাকডাউন চালানোর কারণ খুঁজতে গিয়ে আমার যেটা মনে হয়েছে, অতি সম্প্রতি গোটা দেশ জুড়ে হেফাজতে ইসলাম যে আন্দোলন চালিয়েছে তা সরকারের ভিতকে নাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ, বিগত কয়েক বছরে পুলিশের গুলির সামনে একটি আন্দোলনও দাড়াতে পারেনি। কিন্তু এবারের আন্দোলন ছিলো ব্যতিক্রম। পুলিশ আন্দোলনকারীদের উপর যতো গুলি চালিয়েছে, আন্দোলন ততো বেগবান হয়েছে। পুলিশের গুলিতে যতো আন্দোলনকারী শহীদ হয়েছে, তার বিপরীতে আন্দোলন বিদ্যুৎবেগে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সেইসাথে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারীরা থানা ঘেরাও করেছিল।

এমন শক্ত প্রতিরোধ দেখে সরকার হয়তো আর কোনো ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। আর সেকারণেই লকডাউনের আড়ালে বিরোধী মতের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন চালাচ্ছে হাসিনা সরকার। এই লকডাউনেই হয়তো সরকার হেফাজত ও নাগরিক অধিকারের অধিকাংশ নেতাকর্মীদের কারান্তরীণ করে ফেলবে। ফলে, সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার আর কেউ সাহস করবে না। অতীতে সকল স্বৈরশাসকই ক্র্যাকডাউন চালিয়ে নিজের গদি রক্ষা করতে চেয়েছে। কিন্তু কেউই শেষ পর্যন্ত গদি রক্ষা করতে পারেনি। আমাদের ভোটারবিহীণ নির্বাচনের সরকার শেষ পর্যন্ত টিকতে পারবে তো...?

পঠিত : ৩৫৪ বার

মন্তব্য: ০