Alapon

মাওলানা মামুনুল হক কি পারবেন ভয়কে জয় করতে...?



অবশেষে মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেফতার করা হলো। বিগত কয়েকদিনে হেফাজতের নেতাদের গ্রেফতার করা দেখে ধারণা করেছিলাম, মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেফতার করা হবে। আর মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেফতার করা হলে যেন কোনো আন্দোলন না হয়, সেজন্য লকডাউনের নামে মাদ্রাসাগুলো আগেই বন্ধ করা হয়েছে।

কিন্তু তারপরও সরকার হেফাজতকে নিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারেনি। আর নিশ্চিন্ত হতে না পারার কারণেই হেফাজতে ইসলামের মধ্যম ও প্রথমসারির অধিকাংশ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একইসাথে সারাদেশে হেফাজতে ইসলামের কয়েক শতাধিক কর্মীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

আমার ব্যক্তিগত একটি মতামত শেয়ার করি। ব্যক্তিগতভাবে আমি চাইতাম, মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেফতার করা হোক। গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেওয়া হক। তারপর আকাশের যতো তারা, আইনের ততো ধারায় তাকে হয়রানি করা হোক। তাতে যা হবে, মাওলানা মামুনুল হক জেল থেকে পূর্ণতা নিয়ে ফিরে আসবেন।

মাওলানা মামুনুল হকের অপূর্ণতা যা ছিল, তা হলো ভয় আর প্রজ্ঞাহীণতা। তিনি জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়ে মাঠ গরম করতে পারঙ্গম হলেও, নিজে সেই গরম ধরে রাখতে পারতেন না। ভাস্কর্য ইস্যুতে যখনই মাওলানার নামে দুই একটা মামলা হলো, ছাত্রলীগ তার হাত,পা, কল্লা কেটে দেওয়ার স্লোগান দিয়ে মিছিল করলো, আর অমনি তিনি সুর পাল্টিয়ে ফেললেন। তিনি সংবাদ সম্মেলন করে ভয় পাওয়া বিড়ালের মতো মিউ মিউ করে নিজের প্রজ্ঞাহীণতা জাতির সামনে প্রকাশ করে দিলেন। এই ভয়টা কীসের? এই ভয়টা ছিল, জেলে যাওয়ার ভয়। রিমান্ডে নির্যাতীত হওয়ার ভয়।

এইবার জেলে গিয়ে রিমান্ডে নির্যাতন সহ্য করে, এই ভয়টাকে জয় করার পালা! যেন সরকার আর কখনো তাঁকে জেল-জুলুমের ভয় দেখিয়ে কাবু করতে না পারে।

আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, ২০১৩ সালে হেফাজতের আন্দোলনের পর সরকারের সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন আল্লামা বাবুনগরী। আমি বিশ্বাস করি, এই নির্যাতনই তাঁকে রাজনৈতিকভাবে প্রজ্ঞাবান করে তুলেছে। এই নির্যাতনই তাঁকে নেতৃত্বে কৌশলী হতে শিখিয়েছে। যার কারণে আল্লামা শফীর কুলাঙ্গার পুত্র কতৃক শত লাঞ্জনার শিকার হওয়ার পরও তিনি সেসব কথা কখনো মিডিয়ার সামনে প্রকাশ করেননি। মিডিয়াকে সেসব কথা বলে হেফাজতে ইসলামকে কৌতুকের বিষয় হতে দেননি। তিনি ধৈর্য ও প্রজ্ঞার সাথে সেসব দিন মোকাবেলা করে আজ সম্মানের সহিত হেফাজতের আমীরের দায়িত্ব পালন করছেন।

ঠিক তেমনি মাওলানা মামুনুল হক যদি সরকারের নির্যাতনের কাছে মাথানত না করে, ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করতে পারে, তবে জেল থেকে তিনি যে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা অর্জন করবেন, তা আর কোনো জায়গা থেকে পাবেন না। এই নির্যাতন এবং কারাভোগ যদি তিনি বিনা আপোষে মেনে নিতে পারেন, তবে তিনিও আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর মতোই আপোষহীণ নেতা হয়ে উঠতে পারবেন।

আর যদি মাওলানা মামুনুল হক রিমান্ডের নির্যাতন সইতে না পেরে সরকারের সাথে আপোষে রাজি হন, তাহলে এই মাওলানা মামুনুল হক কলের পরিক্রমায় হারিয়ে যাবেন। আর এই পরিস্থিতিতে তিনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারবেন, হাসতে হাসতে ফাঁসির দড়ি গলায় পরা কতোটা কঠিন!

আশা করছি, মাওলানা মামুনুল হক এই বিপদ ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করতে সক্ষম হবেন। সেইসাথে কারাগার থেকে একজন রাজনৈতিক প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি হিসেবে আবারও ময়দানে ফিরে আসবেন। বাংলার তৌহিদা জনতা সেই প্রজ্ঞাবান ও সাহসি মাওলানা মামুনুল হকের অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছে!

পঠিত : ৩৮৯ বার

মন্তব্য: ০