Alapon

আমাদের জীবন নিয়ে স্বৈরাচারের হাসি ঠাট্টা



তখন আমি কারাগারে। আট বছর আগের কথা। একটা আট তলা ভবন ধ্বসে পড়েছে। সেখানে গার্মেন্টস ছিল। প্রচুর মানুষ মারা যাচ্ছে। আমরা কারাগারে অলস বসে থেকে এসব খবর পাচ্ছি। প্রচুর উৎকণ্ঠা।

এর মধ্যে আমার 'দেখা' এসেছে। দেখা আসা মানে কেউ কারাগারের বাইরের কেউ আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন। একজন ঘোষক ঘোষণা করে আমাকে দেখা করার স্লিপ দিয়ে চলে গেলেন।
কারাগারে সাধারণত আটক ব্যক্তিরা তাদের ভবনের সীমানা অতিক্রম করতে পারেন না। তাই এই স্লিপের ব্যবস্থা। আমি যে ভবনে থাকতাম তার নাম 'হালদা'। হালদা থেকে বের হওয়ার সময় এক কারারক্ষীর সাথে দেখা। কুশল বিনিময় করলাম।

তিনি আমাকে বললেন, শুনছেন মখায় কী বলছে? আমি বললাম, না। শুনি নি। তিনি বললেন, মখা হারামজাদা কইছে বিএনপি-জামাত নাকি ঠেলা দিয়া রানা প্লাজা ফেলাইয়া দিছে! আমি হো হো করে হেসে উঠলাম। ওনার কথাকে মোটেই সিরিয়াসলি নিই নান। ভেবেছিলাম হয়তো মজা করে বলেছেন।

এরপর সাক্ষাৎ কক্ষে বহুক্ষণ থাকতে হলো। আমার সাংগঠনিক ভাইয়েরা এসেছেন নানান বিষয়ে পরামর্শ করার জন্য। সেসব কথাবার্তা শেষ করে যখন ওয়ার্ডে ফিরলাম ততক্ষণে যোহরের নামাজ শেষ।

সবাই গোল হয়ে বসে আছে দিগন্ত টিভির খবর দেখবে বলে। জেলখানায় ডিশ কানেকশন থাকে না। তবে কিছু কিছু ওয়ার্ডে যেগুলো সীমানা প্রাচীরের পাশে সেসব স্থানে একটু শক্তিশালী এন্টেনা লাগালে স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো ধরা পড়ে। আমাদের ওয়ার্ডে এই সুবিধা পাওয়া যেত। তাই হালদার অন্যান্য ওয়ার্ডের রাজনীতি সচেতন মানুষরা এখানে এসে খবর দেখতেন।

যাই হোক আমার মনোযোগ খবরের দিকে ছিল না। যেহেতু নামাজের জামায়াত মিস করেছি তাই আমি অযু করার জন্য টয়লেটে ঢুকতে যাবো এমন সময় শুনলাম, খবরে বলছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর বলেছেন,

//কিছু হরতাল সমর্থক ভবনটির ফাটল ধরা দেয়ালের বিভিন্ন স্তম্ভ এবং গেট ধরে নাড়াচাড়া করেছে বলে তিনি জানতে পেরেছে। আর এই কারণে এটি ধ্বসে পড়েছে।//

আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। এও কী সম্ভব! একজন রাজনৈতিক নেতা ও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী কীভাবে এইকথা বলতে পারেন? বিল্ডিং কি নাড়াচাড়া দিয়ে ফেলে দেওয়া যায়! এটা কেমন বিল্ডিং!
যাই হোক এরপর অনেক নাটক, অনেক বছর পার হয়ে গেল। মানুষ মারা গেল ১১৩৬ জন। এর ফলে গার্মেন্টেস শিল্প একটি বড় সড় ধাক্কা খায়।

কিন্তু যে জিনিসটা এখনো শেষ হয়নি তা হলো স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর জনগণকে নিয়ে মজা করা, উপহাস করা। মখা কী বোকা লোক? মোটেই না। তারা জনগণের জীবন নিয়ে ঠাট্টা করতে আনন্দ পায়। এটা হাসিনাই তার চ্যালা-চামুন্ডা ও পাইক-পেয়াদাদের শিখিয়েছে।

আজ আট বছর হয়ে গেল। এই ঘটনার বিচার হওয়া তো দূরের কথা। এখনো সাক্ষ্যগ্রহণই হয়নি। ঘটনার দুই বছর পর ৪১ জনকে আসামী করে একটি চার্জশিট তৈরি করা হয়। এর মধ্যে ৬ জন প্রভাবশালী আসামী হাইকোর্টে চার্জশিটের বৈধতা নিয়ে রিট করে। হাইকোর্টের বিজ্ঞ(!) বিচারকেরা এই মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়।

এই স্থগিতবস্থা নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে বার বার লিখিত আবেদন করেও কোনো ফলাফল পাওয়া যায় নি। ১১৩৬ জনের গণহত্যা নিয়ে হাসিনা সরকার কী উপহাসটাই না করে যাচ্ছে!

পঠিত : ৪৩৮ বার

মন্তব্য: ০