Alapon

ছেলেরা কিভাবে মেয়েদের কৌশলে ফাঁদে ফেলে...?



إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌۢ بِمَا يَصْنَعُونَ ﴾
নিশ্চয় তারা যা পরিকল্পনা তৈরি করে আল্লাহ তা খুব ভালোভাবে খবর রাখেন।﴿ [সূরা নূর: ৩০]

“এবং তিনি জানেন যা তোমরা ম্যানুফ্যাকচার (Manufacture) করো”। আল্লাহ এখানে ছেলেদের একটা উদ্দেশ্যের কথা বলছেন। সেটা হলো ছেলেরা যে কৌশল অবলম্বন করে একটা মেয়েকে নিজের ফাঁদে টানে; প্রেম, যিনা বা মেলামেশার দিকে টানে। এই কৌশলী পরিকল্পনার ইংরেজি প্রতিশব্দ Manufacture (ম্যানুফ্যাকচার)।
এই ‘ম্যানুফ্যাকচার’ মানে কী?

‘ম্যানুফ্যাকচার’ মানে উৎপাদন করা, উদ্ভাবন করা। উৎপাদনে কী থাকে? একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা! হ্যাঁ, একটা ছেলে যেকোনো মেয়েকে কৌশলে নিজের আয়ত্বে আনতে পরিকল্পনা অনুযায়ীই আগাতে থাকে।

ধরুন, একটা গাড়ি তৈরি করতে কতগুলো অংশ (পার্টস) লাগবে, কী কী রঙ লাগবে, কোন অংশ আগে জোড়া দিতে হবে, কোন অংশ শক্ত হতে হবে, কোন অংশ নরম হবে, কোনটিকে কত বছরের জন্য টেকসই হিসেবে দিতে হবে, গাড়িটি তৈরি করতে কত সময় লাগবে, মার্কেটিং কীভাবে করবো, বিক্রি করবো কোথায়, কীভাবে ইত্যাদি সবই পূর্ব-পরিকল্পনা করা থাকে।

এই প্ল্যান (পরিকল্পনা) আশাপূর্ণ ফল লাভের জন্য খুবই কার্যকরী আর সুপরিকল্পিত কাজ না থাকলে কোম্পানির জিনিসটি ভালো চলে না। এভাবে একটা ছেলে যখন মেয়েকে নিয়ে গেমের মতো বিস্তারিত প্ল্যান করে, সেটাও আল্লাহ জানেন বলে এই আয়াতে উল্লেখ করেছেন।

প্রথমে ছেলেটা মেয়ের দিকে তাকায়। এরপর পিটপিট করে করে তাকানো, মিটমিট করে হাসা চলতে থাকে। তারপর একটু কৌশলে জিজ্ঞেস করে তোমার ফেইসবুকে আইডি আছে? কী নামে? এভাবে কৌশলে একটু কাছে এসে বলে,
‘আমি আসলে তোমাকে ইসলাম বিষয়ে জানতে আরো সহযোগিতা করতে চাই’।
‘ঐ জায়গায় কিন্তু ইসলামী আলোচনা হয়, চলো না যাই একদিন’।
‘ঐ ফেইসবুক গ্রুপে অনেক সুন্দর আলোচনা হয়, ঐখানে জয়েন করাই?’
আর মেয়েটিও এভাবে বলে,
‘হ্যা, অবশ্যই, এই যে আমার ফেইসবুক একাউন্ট, আমাকে ভালো ভালো গ্রুপে এড করে দিবেন দয়া করে’।

এভাবে ছেলের সাথেও ফেইসবুকে বন্ধু হওয়া শুরু হলো, সাথে বিভিন্ন গ্রুপেও যোগ দিলো।
এভাবে ছেলেটা সাথে সাধারণ কথাবার্তা চালাতে থাকে মেয়েটি।

তুমি কি হোমওয়ার্ক করেছো? ক্লাসে তোমার এসাইনমেন্টের টপিক যেনো কী ছিলো?—এসবই ছেলেটির মেয়েকে বাঘে আনার দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ। এভাবে ছেলেটি ধীরে ধীরে মেয়েটিকে কাছে পেতে চাচ্ছে, একান্তে, একার করে; প্রেমের দিকে-যিনার দিকে; আল্লাহর অবাধ্যতার দিকে-শয়তানের সাথী হতে, ভ্রষ্টতার দিকে এগোতে।

ছেলেটি জিজ্ঞেস করে, ‘তোমার এসাইনমেন্ট কি শেষ হয়েছে? তুমি তো খুব দক্ষ, আমাকে একটু পরামর্শ দাও-তো কীভাবে ভালো করা যায়’।

ক্লাসে একশত ছাত্র থাকতে একটি মেয়ের কাছে কেন সে জিজ্ঞেস করছে? এটা প্ল্যান (পরিকল্পনা) এর অংশ, পুরোটাই ম্যানুফ্যাকচারিং এর প্ল্যান। এগুলো সবই মেয়েটিকে যিনায় জড়ানোর পূর্ব-পরিকল্পনা।

আজকে সে একটু কথা বলবে। এরপরের দিন আরো একটু বেশি। এরপরে ফ্রি হলে মোবাইল নাম্বার আদান-প্রদান চলবে। তারপরে একদিন বলবে,
‘শোন, ঐ রেস্টুরেন্টের দারুণ একটা রেসিপি আছে, চলো যাই’।

এরপরে কোনো একদিন বলবে, ‘এই, একটু একা আসো তো, চলো একটু নিরিবিলিতে গিয়ে গল্প করি, একটু হাটাহাটি করি উন্মুক্ত ঘাসে, ছায়ার নীড়ে, বৃষ্টিভেজা বিকেলে’।
দেখবেন মেয়ে হিসেবে আপনি যে কোর্স নিয়েছেন, ছেলেটিও ঠিক সেই কোর্সই নিয়েছে। সে বলে বসবে, ‘তুমি ঐ কোর্সের না? আর সে বোঝাবে—আরে আমিও-তো ঐ কোর্সেই নিয়েছি!’ এটা তার প্ল্যানের অংশ, সে পূর্ব-পরিকল্পনা করেই করেছে এটা। এমন নয় যে ছেলেটি ঐ কোর্সটি ভালোবাসে, বরং এখানে আপনিই তার প্ল্যানের অংশ, কোর্সটি নয়।
তার একই কোর্সের কথা শুনে আপনিও আহলাদে আটখানা হয়ে বলেন, কি আশ্চর্য!! একই কোর্স! অথচ ছেলেটির কাছে আপনি তার গেমের অংশ, পরিকল্পনার অংশ, প্রেম-যিনার অশ্লীলতার অংশ, যিনার দিকে ভাগানোর শুরুর অংশ।

এটা মেয়েদের গাফলাহ—অতি মাত্রার অবহেলা। কিছু মেয়ে এগুলো বুঝতে পারে কিন্তু অধিকাংশ মেয়েরাই এগুলো বুঝতে পারে না। এসব মেয়েদের এতো বেশি মাত্রার সরলতা খুবই অস্বস্তিকর। তারা এতটাই বুদ্ধিহীন সরল যে জানেই না কী হচ্ছে চারিপাশে! আপনার চিন্তায় ছেলেটি বলছে এসাইনমেন্টে সহযোগিতা করতে?
আপনার মাথা খারাপ? কোন দুনিয়ায় থাকেন আপনি?

এই ছেলেটি আপনার কাছে এসে ইসলাম নিয়ে জিজ্ঞেস করে। আপনি ভাবেন আহ, ছেলেটি ইসলাম নিয়ে জানতে চাচ্ছে। গতকাল আপনি তার সাথে চার ঘন্টা শরিয়া নিয়ে কথা বলেছেন। একজন আলেমকে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আমি কি তার সাথে আলোচনা চালিয়ে যেতে পারি? সে ইসলাম নিয়ে অনেক কিছু জানতে চায়। অনেক প্রশ্ন আছে তার, আমি কি তাকে সাহায্য করতে পারি?

‘এই ধরুন তার প্রশ্নগুলো নিয়ে কলেজ/ভার্সিটিতে বসে তাকে উত্তর দেওয়া, একটু রেস্টুরেন্টে খেতে খেতে বা মাঠে বাদাম খেতে খেতে তার প্রশ্নগুলোর যুক্তিসই উত্তর দেওয়া’।

আলেম বললেন, ‘আমার কাছে পাঠিয়ে দেন, আমি কথা বলি, তার সব প্রশ্নের উত্তর দেই’।
আপনি বলেন, ‘না, না, সে আমার সাথে কথা বলতে পছন্দ করে, আরামবোধ করে—যেহেতু প্রথম থেকেই আমিই তার ইসলাম নিয়ে কথা শুরু করেছিলাম’।

এরপরে কিছুদিন পরে বলবে, আমি ভালো হতে চাই, ‘আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই, কারণ আমি তোমার কাছেই ইসলাম শিখেছি, তোমার সাথে থেকেই আরো শিখতে চাই, আর এটা তোমার সাথে না থাকলে হবে না’।

আমি ছেলেটির ব্যাপারে কিছু বলতে চাচ্ছি না আর! কিন্তু আপনার কি মনে হয় বিষয়টা সম্পর্কে? এই ছেলেটি প্ল্যান করেই এসব করেছে, ম্যানুফ্যাকচারিং এর প্ল্যান।
এটা কেবল আপনার জন্য ইসলামে আসা না, সে আপনাকে পাওয়ার জন্যই এত কিছু করেছে!

তার নিয়ত আপনাকে পাওয়া। প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে আপনার আগ্রহের জায়গায় আসা ছিলো তার প্ল্যান, আপনার সাথে কথা বলার বাহানা, আপনার কাছে ভালো সাজার পরিকল্পনা, আপনার কাছে আসার গল্পের সূচনা—এসবই তার প্রেম-যিনার পূর্ব-পরিকল্পনার অংশ। মেয়েদের এসব ব্যাপারে এত বোকা হলে চলবে না। তাদের শক্ত কথা বলা শেখা উচিত, ছেলেদেরকে দূরে সরিয়ে রাখার মতো দৃঢ়তা তাদের দেখানো দরকার।

—ওহ, আপনি কি ফেইসবুকে আছেন?
—আছি কি না আছি তাতে আপনার কি? অ্যা?
এভাবে শক্তভাবে বলে দিন। সে আর আপনার চারপাশে ভুলেও জিজ্ঞেস করার জন্য আসবে না, পর্ব শেষ, খতম।

এভাবে বললে আপনার আর ঐ ধরনের সমস্যা থাকবে না। যা করতে হবে আপনাকে সেটা হলো শক্ত কথা বলা। আপনার কণ্ঠস্বর সোজাসুজি রাখুন, সরাসরি শক্ত কথা বলে দিন। এই বিষয়ে প্রশ্রয় না দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে শক্ত হতে হবে; যাতে নিজেকে ছেলেটির প্ল্যানের অংশ থেকে নিরাপদ রাখতে পারেন, অনাগত সমস্যা থেকে বাঁচাতে পারেন।

আপনাকে আরো একটা কাজ করতে হবে: ছেলেদের দেখে কখনই হাসবেন না, কখনই না। আপনি যখন একটা ছেলের দিকে তাকিয়ে হাসি দেন, আপনি নিজেও জানেন না কতটুকু কী করলেন। ছেলেটির মাথার মধ্যে তখন চিন্তা আসে, অহ, ইয়াহহুউউ...। আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না ছেলেটির ওপর হাসির প্রভাব কত বিশাল হতে পারে।
—আহ, তার হাসি কি যাদুকরী! কি অপরূপ সে হাসি!
ছেলেটি একেবারেই আসক্ত হয়ে যায় এই হাসির প্রতি। অথচ আপনি কিচ্ছু জানে না, আপনার কোনো ধারণাই নেই কি করেছেন আপনি।

এরপর ছেলেটি কী করে? ঐ যে ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান, সেই গেইম প্ল্যান। আপনাকে নিয়ে সে ফন্দি আঁটে দীর্ঘদিনের—কীভাবে বশে আনা যায়। এরপর সে আপনার সামনে এমন কিছু করে, এমন কিছু বলে যা আপনাকে হাসায়, আপনাকে আনন্দ দেয়। আপনাকে কেউ বারণ করলে, আপনি চট জলদি জবাব দিয়ে দেন, ‘আমি তো অন্য কিছু করছি না তার সাথে, সে খুবই মজার ছেলে—কেবল এটুকুই!’ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌۢ بِمَا يَصْنَعُونَ ﴾নিশ্চয় তারা যা পরিকল্পনা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।﴿ [সূরা নূর: ৩০]। আল্লাহ এসব কিছুই জানেন।
অথচ আপনি চাইলেই আপনার চক্ষু এবং মাথাকে অবনত করতে পারতেন, হাসি না দিতে পারতেন—তাহলে ছেলে আগ্রহবোধ করতো না, এরকম প্ল্যান করতে পারতো না, আপনার প্রভাব তার ওপর পরতো না।

আপনি যদি কেবল হাসি না দিতেন, নিজেকে অবনত করে রাখতেন, শক্ত কথা দাড় করাতে পারতেন—তাহলে সে এতো ফন্দি-ফিকির করতে পারতো না। তখন সবকিছুই পালটে যেতো—সে আপনার কোর্সে ভর্তি হতো না, আপনার ফেইসবুক একাউন্ট চাইতো না, মেসেজে চ্যাট করতো না, ধীরে ধীরে একান্তে মেলামেশার সুযোগ পেতো না—আপনি সুযোগের প্রশ্রয় না দিলে এগুলো কিছুই হতো না। চাইলেই আপনার নিজেকে এবং আরেকজনকে শয়তানী পরিকল্পনা থেকে রক্ষা করতে পারতেন। কিন্তু আপনার অতি সরল উপলব্ধির কারণে, সুযোগ দেওয়ার কারণে, কথার দৃঢ়তা না থাকার কারণে সবকিছু ভিন্ন পথে, ভ্রষ্ট পথে চলতে থাকে।

আর এখন তো ফুসবুকের বদৌলতে অনেক কিছু হচ্ছে! ক্লাসের গ্রুপ ফটো! ইফতার পার্টির মিক্সিং ফটো, অমুক রেস্টুরেন্টে পার্টি! এখন আপনি ফেইসবুকে শত শত ঘন্টা হাসির ফটো দিয়ে রাখছেন! আর কেউ আপনাকে এ ব্যাপারে বললেই তাকে চরমপন্থি বলেন। ওকে, আপনি চরমপন্থিই থাকেন এসব ক্ষেত্রে। ফেইসবুকের কাজ, গ্রুপ ফটো, এমনকি ফেইসবুকে একাউন্ট না থাকলেও আপনি বেঁচে থাকবেন।

আপনাকে আপনার স্ত্রী নিয়ে জড়াজড়ির ছবি ফেইসবুকে দিতে হবে কেন? এগুলো ঘরের জিনিস, বাইরে আনবেন কেন এগুলো? এগুলো ঘরের একেবারেই ভেতরে থাকবে। এজন্য আল্লাহ কারো ঘরে ঢুকতে সালাম বা কড়া করে অনুমতি নিতে বলছেন, অথচ আপনি সেটাই সবার সামনে মেলে ধরছেন! এখন তো তার ঘরের দরজায় টোকা দেওয়ারও দরকার হয় না, ফেইসবুক-ইনস্ট্রাগ্রামে ঢুকে একটা ক্লিক করলেই হলো—আপনি নিজেই হাতের মোবাইলের মাধ্যমে অন্যের ঘরে চলে এসেছেন! আল্লাহ আপনাকে গোপনীয়তা রক্ষার জন্য অনুমতির ব্যবস্থা করলেন, আর আপনি সেটা থেকে বেরিয়ে নিজেই মানুষের ঘরে ঢুকে গেলেন!
আমি বলছি না ফেইসবুক হারাম, কিন্তু এটা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে আপনাকে কিছু বিষয়তো মাথায় রাখতে হবে—আপনার হাসি ঘন্টার পর ঘন্টা, দিনের পর দিন কেন আরেকজন দেখবে? কেন সে হাসি দেখে আপনার পেছনে গেইম প্ল্যান করবে? কেন আপনার অন্দর মহলের বিষয়াদি ফেইসবুকে অন্যের জন্য উন্মুক্ত করে দিবেন? ফেইসবুক ব্যবহার করলে সুন্দর করে করেন, কার্যকরীভাবে করেন।

- নোমান আলী খান

পঠিত : ৩৫১ বার

মন্তব্য: ০