Alapon

সেই সাংবাদিকতা হারিয়ে গেল কোথায়...?



মনে আছে শারমীন রিমার কথা! তার স্বামী মনিরের সাথে খুকু নামের এক নারীর অবৈধ পরকীয়ার ঘটনায়; চার মাসের নব বিবাহিতা স্ত্রী শারমীন কে খুন করে, ব্রিজের নীচে ফেলে যায়! ১৯৮৯ সালের এপ্রিল মাসের ৯ তারিখের এই ঘটনাটি সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল। ন্যায় বিচার আদায় করে নিতে তদানীন্তন সময়ের সাংবাদিকদের আচরণ অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। ঘটনাটি সারা বাংলাদেশের মানুষের মনে গভীর রেখাপাত সৃষ্টি করেছিল!

খুনি মনিরের মা ছিলেন পেশায় ডাক্তার এবং ক্ষমতায় জাতীয় সংসদের জাতীয় পার্টির শক্তিশালী মহিলা এমপিদের একজন। প্রেসিডেন্ট হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতায়! তার প্রেসিডেন্সি সুযোগ ব্যবহার করে নানা ছুতোয় মনিরকে বাঁচিয়ে দেবার কলাকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছিলেন। কিন্তু এই মামলায় সাংবাদিকেরা ছিলেন লোহার ভিতের মত অটল, অনড়। আদালত মনিরের মৃত্যুদণ্ড দেয়। মামলার ধীর গতি সৃষ্টি হয়। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় সাংবাদিকেরা জোঁকের মত লেগে থাকে। প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার সুযোগ লাগাতে ব্যর্থ হয় মনিরের অর্থশালী ক্ষমতাসীন মা। ফাঁসি কাস্টে মনিরকে ঝুলতেই হয়েছিল! লাশ নিতে গিয়ে মনিরের মা আক্ষেপ করে মাত্র একটি বাক্য বলেছিলেন, "সাংবাদিকেরাই আমার ছেলেকে বাঁচতে দেয়নি তাকে খুব তাড়াতাড়িই ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে"।

এই ঘটনায় সাংবাদিকদের প্রতি মানুষের আস্তা, ভালবাসা, বিশ্বাস বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ পেশার প্রতি তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ আরো গতি প্রাপ্ত হয়। দলে দলে ছাত্ররা সাংবাদিকতা বিষয় নিয়ে পড়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় জট লাগাত।

বাংলাদেশের বিখ্যাত কিংবদন্তি সাংবাদিক ফজলে লোহানী (১৯২৮-১৯৮৫) যখন বিটিভিতে তার ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান "যদি কিছু মনে না করেন" প্রচার করতেন। টিভি আছে এমন পাড়া-মহল্লায় সুনসান নীরবতা হাজির হত! সকল মানুষের দৃষ্টি তখন ফজলে লোহানীর প্রতি নিবদ্ধ হতো। এ কেমন সাংবাদিকতা! কি বোর্ডের বোতাম টিপে লিখে বুঝানো সম্ভব নয়। এমন ব্যক্তিদের রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ে পর্যন্ত শ্রদ্ধা ও সমীহ করা হত!

আজ সেই সাংবাদিকতা গেল কই? একজন শিল্পপতির ছেলে, যার নামে থানায় মামলা হয়েছে। তার নাম নেবার মত সাহসী সাংবাদিক দেশে নেই! সত্য উদঘাটনে কোন বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন নেই! ১৯৭১ সালে এই ধরনের সাংবাদিকেরা যদি দেশের নাগরিক হতো, তাহলে হাজার বছরেও দেশ স্বাধীন হতো কিনা সন্দেহ আছে।

সাংবাদিকেরা হল জাতীর বিবেক, জনগণের আয়না স্বরূপ। তাদের লেখনীর মাধ্যমে বোবা মানুষের ক্রন্দনের আওয়াজ ভেসে আসে। অসহায়ের আর্তি প্রচারিত হয়। নিপীড়িত, নির্যাতিতরা আশা-ভরসার সবকিছুই হারিয়ে সাংবাদিকের দ্বারস্থ হয়। সাংবাদিক সম্মেলন করে তাদের হৃদয়ের হাহাকার তুলে ধরার সুযোগ পায়। আমরা আশা করি আমাদের দেশের সাংবাদিকেরা এমনই হবেন! তাদের কর্তব্য বোধই তো এমন হওয়া উচিত। মানুষ কেন তাদের প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে দেবে?

- টিপু

পঠিত : ৩৩৫ বার

মন্তব্য: ০