Alapon

'আসর' নিয়ে ভাবনা-১

সত্যের কথনApril 28, 2021
وَ الۡعَصۡرِ

সুরা আসরের প্রথম আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,‘সময়ের কসম’
স্বাভাবিক দৃষ্টিতে এই আয়াত সম্পর্কে আলোচনা করার কিছু নেই।আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে অনেক কিছুর শপথ করেছেন,এটা তেমনি একটা শপথ।কিন্তু যদি আমরা এই আয়াত নিয়ে ‘দাব্বারুন’ করি বা চিন্তা-ভাবনা করি তাহলে এই আয়াতের গভীর তাৎপর্য আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়।

প্রথমে আসি ‘ওয়াও’ বা শপথ সম্পর্কে।আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের অনেকগুলি সুরা শুরু করেছে শপথ করার মাধ্যমে।যেমন,সুরা লাইল,আদিয়াত,বুরুজ,তীন ইত্যাদী।কিন্তু সব শপথের চেয়ে ব্যতিক্রম শপথ করেছেন আল্লাহ তায়ালা সুরা আছরে।এখানে তিনি সময় বা একটা মুহুর্তের শপথ করেছেন।
আরবী ভাষায় সময়কে বুঝানোর জন্য আরো অনেক শব্দ আছে।যেমন:‘জামান,সা’আত,ওয়াক্ত,মাতওয়াত্ব ইত্যাদী।কিন্তু আল্লাহ তায়ালা সময়কে বুঝানোর জন্য এসকল শব্দ ব্যবহার করার পরিবর্তে ব্যবহার করেছে আছর।এখন দেখি কেনো আল্লাহ তায়ালা আছর শব্দটা প্রয়োগ করলেন এই সুরায়।
আসর এর সময়টা খুবই অল্প সময়।যখনি দিন শেষের দিকে চলে আসে তখনি আসরের ওয়াক্ত হয়।আসরের পরে আর দিন থাকে না,ধীরে ধীরে নেমে আসে গহীন অন্ধকার।পশু-পাখি সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করে নিজেদের খাবার গ্রহণের জন্য অথবা অন্য কাজে কিন্তু যখনি আসরের সময় হয় তখনি পশু-পাখি নীড়ে ফেরার প্রস্তুতি নেয়।পশু-পাখিরা ঝাকে ঝাকে দলবেধে নীড়ে ফিরে আসে যত দূরই যাক না কেনো।এটা এক মনোরম দৃশ্য।
একজন কৃষক সারাদিন মাঠে কাজ করে,একজন জেলে সারাদিন মাছ ধরে,একজন চাকুরীজীবি সারাদিন ডিউটতে থাকে,এভাবে সকলে সারাদিনে কোন না কোন কাজে ব্যাস্ত থাকে।তারা কাজ করছে এমতাবস্থায় আসরের সময় হয়ে গেলো তখন তারা তাদের কাজ থামিয়ে দেয়।তারা নীড়ে ফেরার জন্য প্রস্তুতি নেয় কারণ সময় তো বেশি নেয়,এইতো অন্ধকার নেমে এলো।

এই বিষয়টা ভালোভাবে উপলব্ধি করা গেছে যখন বিদ্যুতের কোন ব্যাবস্থা ছিল না।মানুষ দূর দূরান্তে কাজ করতে যেতো পায়ে হেটে যানবাহনের ব্যাবস্থা বেশি ছিল না।এমতাবস্থায় যখন আসরের সময় হয় তখন থেকে কর্মজীবীরা কাজ বন্ধ করে দিয়ে একটা বিষয়েই চিন্তা করে যে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে।খুব শীগ্রই অন্ধকার নেমে পড়বে।তখন আর করার কিছু থাকবে না।এজন্য তারা খুব দ্রুত বাসার দিকে রওনা হয়ে যায়।অলস হয়ে বসে থাকার কোন সুযোগ নেই।কারণ,যদি রওনা দিতে দেরি হয়ে যায় হতে পারে কোন হায়েনা এসে তাকে ছিন্নভিন্ন করে দিবে।
এরকম গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো ‘আসর’ যে সময়ে এতটুকু অলসতার সুযোগ নেই।সুরা আসরে আসর শব্দটি ব্যবহার করে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে জানাচ্ছেন যে আমাদের হাতে বেশি সময় নেই।খুবই অল্প সময় রয়েছে যার এক মুহুর্ত নষ্ট করলে হায়েনার শিকার হতে হবে এবং সঠিক উদ্দেশ্য হাসিল হবে না।

চারদিকটা যখন অন্ধকারে ছেয়ে যায় তার পূর্বেই পাখিরা তাদের রাত্রিযাপন সুন্দর করার জন্য খারাপ সংগ্রহ করে,কারণ তারা জানে অন্ধকার নেমে আসলে তাদের আর কিছুই করার থাকবে না।আমাদেরকে বুঝতে হবে আসরের সময় হয়ে গেছে,আর একটু পরে নেমে আসবে অন্ধকার(মৃত্যু)।এই অন্ধকার আসার পূর্বেই আমাকে রাতের(আখেরাত) জন্য ব্যাবস্থা করতে হবে না হলে আমার হায়েনার(শাস্তি) স্বীকার হওয়া আর কোন উপায় থাকবে না।
এজন্যে আল্লাহ তায়ালা যে আসরের শপথ করেছেন সেই আসরকে সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে হবে অন্ধকার আসার পূর্বেই।এক্ষেত্রে কোনপ্রকার অলসতা করা যাবে না।যদি অলসতা করা হয় তাহলে হয়তো মঞ্জিলে(জান্নাতে) পৌছার পূর্বেই অন্ধকার চলে আসবে,শিকার হতে হবে হায়েনার।
আল্লাহ আমাদেরকে জীবনের প্রতিটি সময়কে কাজে লাগানোর তৌফিক দান করুন।(আমিন)

পঠিত : ৪১০ বার

মন্তব্য: ০