Alapon

বোন সারাহ নীড়ে ফিরলো যেভাবে...


বোন সারাহ। তার তাওবাহর ঘটনা বর্ণনা করেছেন আমর খালিদ নামের এক ইজিপশিয়ান আলিম। শাইখ বলেন,"তিনদিন আগে আমার কাছে অস্ট্রেলিয়া থেকে এক তরুনীর ই-মেইল আসে।

সেই ই-মেইলটি হুবহু তুলে ধরছি -
"আমি একজন লেবানীজ। লেবাননে আমার জন্ম। আমার বাবা ছিলেন একজন মুসলিম আর মা ছিলেন খ্রিস্টান। জীবনের প্রথম দশ বছর লেবাননে কেটেছে আমার, সেখানেই বেড়ে ওঠা। এরপর সপরিবারে মাইগ্রেট করে অস্ট্রেলিয়াতে চলে আসি। এখানে আসার পর মিডলইস্টের সাথে আমার যোগাযোগ একদম বিছিন্ন হয়ে যায়। বর্তমানে আমার বাইশ বছর চলছে। অস্ট্রেলিয়াতে আসার পর দ্বীনের সাথে আমার সম্পৃক্ততাও সম্পূর্ণরুপে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

শুধুমাত্র আমার নাম দেখেই বোঝা যায় যে আমি একজন "মুসলিমাহ"। আমি জানি না 'ক্বুরআন মাজিদ' দেখতে কেমন? আমি জানি না কীভাবে সলাত পড়তে হয়। ধর্ম-কর্ম আমার জীবনে তেমন কোন প্রভাবও ফেলে না। আমার বাবা-মা আলাদা হয়ে গেছেন। তারা দুজনে অন্যত্র বিয়েও করেছেন। আমি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হই। আমার বাবা - মা আমাকে একা ফেলে অস্ট্রেলিয়াতে চলে যান। আমার মাথা গোঁজার কোন ঠাঁইও রইল না। না আছে ভাই, না আছে বোন, না কোন আত্মীয়-স্বজন। লেবাননে গিয়ে থাকব - এমন কেউও ছিল না।
উপায়ান্তর না দেখে আমি অস্ট্রেলিয়াতেই থাকতে শুরু করলাম নিজের হাত খরচার জন্য একটা চাকরিও জুগিয়ে নিলাম। সকালে ইউনিভার্সিটিতে যেতাম আর বিকালে মদের বারে কাজ করতাম। আমার একটা বয়ফ্রেন্ড ছিল। তার আর আমার মাঝে এমন কোন হারাম সম্পর্ক অবশিষ্ট নেই, যা ঘটেনি। আমার রক্তে পশ্চিমা সভ্যতা মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। আমি হাল্কা পাতলা আরবী জানি। আর আমার সৌন্দর্য ছিল চোখে পড়ার মতো। আমি নিউজিল্যান্ডের এক সুন্দরী প্রতিযোগিতায় আমার নাম লিখাই। সেখানে বিজয়ী হই। সামনে আরো বড় একটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার ইচ্ছ আছে। বর্তমানে বিভিন্ন ম্যাগাজিনে মডেলিং করছি।

এরইমধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত এক লেবানিজ পরিবারে আমার যাতায়াত শুরু হয়। সেখানে একদিন টিভিতে রমাদ্বানকেন্দ্রিক এক ইসলামিক অনুষ্ঠান দেখি। সেই পর্বে "পর্দা ও শালীনতা" নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে আমার ভিতরে এক ধরনের স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হল। আমি একদম ভেঙে পড়লাম। আমার কাছে মনে হচ্ছিল সেদিনের সেই পর্বটা আমাকে ঘিরেই বানানো হয়েছে। প্রতিটি কথাই যেন এক অজানা বার্তা পৌঁছে দিচ্ছিল আমাকে। টিভি স্ক্রলে একটি ওয়েবসাইট ও ই-মেইল এড্রেস দেখতে পেলাম।

আজ আমি আপনাকে ই-মেইল করছি একটি প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য। "আল্লাহ কি আমাকে গ্রহণ করবেন, মানে, আল্লাহ কি আমাকে মাফ করবেন?"
সারাহ'র ইমেইল এখানেই শেষ হলো। সুবহানাল্লাহ!

পাঠক! মানুষের ঈমানের হালত যাই হউক না কেন, তার অন্তর তার রবের দিকেই তাক করা থাকে। যেমনিভাবে পাকস্থলী খাবারের জন্য ক্ষুধার্ত হয়। পাখি দূর প্রান্তরে যতই উড়ুক, বেলা শেষে তার ঘরে ফিরেই প্রশান্তি পায়। তেমনিভাবে আমাদের অন্তর আল্লাহর দিকেই ধাবিত হয়েই প্রশান্তি খুঁজতে চায়।

শাইখ আমর খালিদ, সারাহ'র ই-মেইলের জবাবে তাওবাহর শর্তসমূহ লিখে একটি নাসিহাহ পাঠিয়ে দেন। আল্লাহ অবশ্যই তাকে ক্ষমা করে দিবেন যদি সে খাঁটি তাওবাহ করে - তিনি এটাও তাকে জানান।

দু'দিন পরে শাইখ আমির খালিদের সাথে যোগাযোগ করে সারাহ। সে বলে, "আমি আল্লাহর কাছে তাওবাহ করেছি, আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছি, প্রতিজ্ঞা করেছি তার সাথে আর কোনদিন যোগাযোগ করব না।"

এর দু'দিন পর সে আবার শাইখের সাথে যোগাযোগ করে। সে বলে, "কীভাবে সলাত আদায় করতে হয়, জানতে চাই।"

আরো দু'দিন পর সে ক্বুরআন তিলাওয়াত শোনার জন্য কয়েকটি অডিও টেপ লাগবে বললে, শাইখ আমর খালিদ কিছু কুরআনের ক্যাসেট কুরিয়ারে পাঠিয়ে দেন।

দুই সপ্তাহ পর সে আবারো যোগাযোগ করে তাকে জানায়,"নিউজিল্যান্ডের সেই সুন্দরী প্রতিযোগিতা থেকে সে তার নাম উঠিয়ে নিয়েছে।" সে আরো বলে, "আমি এখন থেকে হিজাব পড়া শুরু করে দিয়েছি।"

প্রিয় পাঠক! গল্পের এখানেই শেষ নয়। কিছু গল্প শেষ হয়েও শেষ হয় না।
ঠিক এর দু'দিনের মাথায় শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করে সে। ব্যাথার দুর্বিষহ যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে সে ডাক্তার দেখায় ৷ রিপোর্টে ব্রেইন ক্যান্সার ধরা পড়ে। আর অল্পকিছু দিন বাঁচবে সে। অপারেশানের জন্য হসপিটালে ভর্তি হলে অস্ট্রেলিয়ান ডাক্তাররা জানায়, এই রোগে অপারেশনে সফলতার হার মাত্র বিশ শতাংশ (২০%)।

পাঠক! এমন পরিস্থিতিতে সারাহ কী বলেছিল জানেন? সে বলেছিল,
"আমি আনন্দিত এই ভেবে যে, আল্লাহর সাথে আমার সাক্ষাৎ হতে যাচ্ছে এমন একটি সময় যখন আমি তাওবাহ করেছি৷ আমি জানি না আমার বাবা-মা আমার ব্যাপারে জানবেন কি-না। আমি যদি বেঁচে থাকি তাহলে আপনাদের ওয়েবসাইটকে সমৃদ্ধ করতে সকল প্রকার সহযোগিতা করব - কেননা এই সাইটটি আমার জন্য ইসলাম জানার জানালা।"

ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রজিউন,
আমরা আল্লাহর জন্যই আর আমরা তার দিকেই ফিরে যাব।
মহান আল্লাহ সারাহকে ক্ষমা করে দিন, যে মাত্র বাইশ বছর বয়সে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। তাকে নিউজিল্যান্ডে মুসলিম কবরস্থানে দাফন করা হয়েছিল।
মৃত্যুর আগে সে শাইখ আমর খালিদকে একটা চিঠি লিখে গিয়েছিল। তাতে লেখা ছিল -
"আমি আমার রব থেকে বাইশটি বছর দূরে থেকেছি, অথচ মাত্র তিন সপ্তাহ আগে আমি তাওবাহ করে ফিরে এসেছি। আপনাদের আশেপাশে ও ইন্টারনেট ফোরামে কতশত মুসলিম আছে জানি না। আমার অনুরোধ আপনারা আমার জন্য দু'আ করবেন যেন মহান আল্লাহ আমার উপর রহম করেন। আর আমার জীবনের সব গুনাহর খাতা ক্ষমা করে দেন। আমার মায়ের জন্য দু'আ করবেন যেন মহান আল্লাহ তাকে হিদায়াত দেন, সে আমার ব্যাপারে কিছুই জানল না।
ইতি, সারাহ।

প্রিয় পাঠক! কী ভাবছেন? আল্লাহ কি তাকে ক্ষমা করবেন, নাকি করবেন না? শুনুন মহান আল্লাহর ওয়াদা, তিনি ইরশাদ করেন,
"তবে যে তাওবাহ করে, ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, ফলে আল্লাহ তাদের গুনাহসমূহ নেকী দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর যে তাওবাহ করে ও সৎকাজ করে, সে তো সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর অভিমুখী।" [সূরা আল ফুরক্বান, ৭০ - ৭১]

ঘটনাটি তাওবাহর গল্প বই থেকে নেওয়া। আমাদের আশেপাশে অনেক বোন আছেন যারা জিল্লতির জিন্দেগী গুজার করছেন। তাওবাহ না করে মারাও যাচ্ছেন। সারাহ'র এই ঘটনা থেকে তারা অবশ্যই শিক্ষা নেবেন। কেননা আমরা কেউ জানি না কবে কখন কীভাবে আমাদেরকে আল্লাহর কাছে চলে যেতে হবে।
নাস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া নাতুবু ইলাইহি।

- Rajib

পঠিত : ৭৩৩ বার

মন্তব্য: ০