Alapon

কুরআন খতমের ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনা কী?



একবার রাসূল সা. আব্দুল্লাহকে ডেকে পাঠালেন। এই আব্দুল্লাহ হলেন বিখ্যাত সেনাপতি ফিলিস্তিন ও মিশর বিজয়ী আমর ইবন আল-আসের সন্তান। আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো তিনি পরিকল্পনা করেছেন তিনি প্রতিদিন রোজা রাখবেন, রাতে সালাত আদায় করবেন এবং প্রতিদিন কুরআন পড়ে শেষ করবেন। যাকে আমরা কুরআন খতম বলি। আব্দুল্লাহ রা. এ অনুযায়ী আমল শুরু করলেন।

আল্লাহর রাসূল সা. তা জানতে পেরে আব্দুল্লাহকে ডেকে পাঠালেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন আমি তোমার ব্যাপারে এই বিষয়টা জেনেছি এটা কি সত্যি?

আব্দুল্লাহ বললেন, হ্যাঁ ইয়া রাসূল্লাহ, এটা সত্যি।

তখন মহানবী বললেন, তুমি এমনটা করো না। কারন তোমার উপর পরিবারের হক রয়েছে, প্রতিবেশিদের হক রয়েছে। ইবাদাতের ব্যাপারে কড়াকড়ি করবে না। আল্লাহ তায়ালা সেই আমল পছন্দ করেন যে আমল নিয়মিত করা হয়। তুমি এখন যে আমল করছো তা বয়স বেড়ে গেলে পারবে না।

তিনি আরো বললেন, আমি তো সালাতও আদায় করি আবার নিদ্রাও যাই, রোযা পালনও করি আবার রোযা ভঙ্গও করি। তাই তুমিও সালাত আদায় কর, নিদ্রা যাও, সাওম পালন করো এবং সাওম ভঙ্গও করো। তিনি আব্দুল্লাহকে আদেশ দেন,
- তুমি প্রত্যেক মাসে তিন দিন সাওম পালন করো।
- আমি তো এরও অধিক সাওম পালনের সামর্থ্য রাখি।
- ঠিক আছে, তুমি সপ্তাহে দুই দিন সাওম পালন করো।

আব্দুল্লাহ এবারও আবেদন করলেন আরেকটু বেশি সাওম পালন করার জন্য। তখন মহানবী তাকে অনুমতি দিলেন, তাহলে তুমি দাঊদ আ.-এর মতো সাওম পালন কর। অর্থাৎ একদিন সাওম পালন কর আর একদিন সাওম ভঙ্গ কর। আব্দুল্লাহ বললো, আমি তো এর চেয়েও অধিক সাওম পালনের সামর্থ্য রাখি। মহানবী তাকে অনুমতি না দিয়ে বললেন, এর চেয়ে বেশি সাওম অনুত্তম।

এরপর রাসূল সা. আসলেন কুরআন খতমের ইস্যুতে।

রাসুলুল্লাহ্‌ সা.-তাকে বললেন,
- তুমি প্রতি মাসে একবার কুরআন খতম করো।
- হে আল্লাহর নবী! আমি এর চেয়েও বেশি পড়ার সামর্থ্য রাখি।
- তাহলে তুমি প্রতি বিশ দিনে একবার কুরআন খতম করো।
- হে আল্লাহর নবী! আমি এর চেয়েও বেশি করতে সক্ষম।
- তাহলে তুমি প্রতি দশ দিনে একবার কুরআন খতম কর।
- হে আল্লাহর নবী এর চেয়েও বেশি পারি।
- তুমি সাতদিনে কুরআন খতম কর, তবে এর চেয়ে বেশি পড়ো না।
- আমাকে আরো বেশি পড়ার অনুমতি দিন।
- যে ব্যক্তি তিন দিনের কমে কুরআন খতম করে, সে কুরআনকে হৃদয়ঙ্গম করতে পারেনি।

//শেষ বয়সে আবদুল্লাহ রা. আফসোস করে বলতেন, আমি নিজের উপর কঠোরতা করেছি। ফলে আমার উপরও কঠোরতা চেপে বসেছে। নবী সা. আমাকে বলেছিলেন, তোমার জানা নেই হয়তোবা তুমি দীর্ঘায়ু লাভ করবে। তখন তোমার পক্ষে এত বেশী আমল করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। তিনি যা বলেছিলেন বাস্তবে তাই হলো। আমি এখন বয়োবৃদ্ধ হয়ে পড়লাম! হায়! আমি যদি নবী সা.-এর দেওয়া ছাড়টুকু গ্রহণ করতাম! ওনার পরামর্শ শুনতাম!//

এখান থেকে আমরা কুরআন খতমের ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল সা.-এর যে নির্দেশনা পাই তা হলো, প্রতি মাসে একবার কুরআন খতম করা উত্তম। তবে কেউ যদি চায় সাতদিনেও কুরআন খতম করতে পারে। তবে কোনোভাবেই যেন তিনদিনের কম সময়ে কুরআন খতম না করা হয়।

আব্দুল্লাহ যাতে ধীরে ও সময় নিয়ে কুরআন পড়ে সেজন্য রাসূল সা. তাঁকে আরেকটি ইনফরমেশন দেন তা হলো জান্নাতে কুরআন তিলওয়াতকারীদের বাহনে উঠিয়ে চলতে বলা হবে। তারা পৃথিবীতে যেভাবে কুরআন পড়তো এখানেও সেভাবে কুরআন পড়বে। যার পড়া যেখানে শেষ হবে সেখানেই তার সীমানা নির্ধারণ হবে। অতএব আব্দুল্লাহ তুমি ধীরে ও স্পষ্ট উচ্চারণে কুরআন পড়ো।

যাই হোক এই আলোচনা করার উদ্দেশ্য হলো রমজান এলে আমাদের মসজিদ্গুলোতে এক অসুস্থ প্রতিযোগিতার আলোচনা শুরু হয়। আমি যে মসজিদে নামাজ পড়ি উনি সামহাউ হাফেজ্জি হুজুরের ভক্ত। প্রায়ই তাঁর কারামত নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি আমাদের জানালেন হাফেজ্জি হুজুর দিনে দুইবার কুরআন খতম করতেন।

ইমাম আবু হানিফা নিয়েও এসব কথা চালু আছে। মসজিদে মিম্বার ব্যবহার করে কিছু হুজুর রমজান এলেই এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু করেন। ইমাম আবু হানিফা বা হাফেজ্জি হুজুর আসলেই এই আমল করতেন কিনা সেটা জানি না। তবে এই আমল অনুচিত আমল। আল্লাহর রাসূল সা. নিষেধ করেছেন।

আমরা আমাদের ইমামদের মান উঁচু করতে, সম্মান বাড়াতে এমনসব আমলের কথা উল্লেখ করলাম অথচ তা আল্লাহর রাসূলের নির্দেশনার পরিপন্থী। এমনটা যেন না হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সহীহভাবে আমল করার তাওফিক দান করুন।

আমাদের জেনে রাখা উচিত, কুরআন খতম করার জন্য অথবা পাঠ করে সওয়াব অর্জনের জন্য নাজিল হয়নি। এটা গাইডলাইন, এটা অনুসরণ করার জন্য। এখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য। কুরআন পড়াটা যেন মূল লক্ষ্য না হয়। মূল লক্ষ্য হবে পড়ে অনুসরণ করা।

পঠিত : ৩৩৮ বার

মন্তব্য: ০