এলিট শ্রেণীর নাগরিকরা বরাবরই স্বৈরাচারের বন্ধু হিসেবে পাশে থাকে...
তারিখঃ ৭ মে, ২০২১, ১৯:৫২
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দেখলাম কতক মানুষ গাছ বাঁচানোর ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। উল্লেখ্য, উদ্যানের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য কয়েকটি গাছ কাটা হয়েছে। সেইসাথে আরও বেশ কিছু গাছ কাটতে হবে। কিন্তু কতক মানুষ এই গাছগুলোর বেঁচে থাকার দাবি নিয়ে আন্দোলন করতেছে। তারা উদ্যানের কর্তনকৃত গাছগুলোর জন্য ক্রোন্দন করছে, আর অবশিষ্ট গাছগুলো বাঁচিয়ে রাখার দাবিতে আন্দোলন করছে।
তাদের এই আন্দোলন দেখে আমার ভীষণ হাসি পেলো! যাকে বলে পেট ফাটিয়ে হাসি। কিন্তু রাস্তায় দাঁড়িয়ে একা একা হাসলে মানুষ পাগল ভাবতে পারে বলে আর হাসলাম না। যে দেশে মানুষের জীবনেরই কোনো দাম নেই, সেই দেশে গাছের বেঁচে থাকার দাবি নিয়ে আন্দোলন করা হচ্ছে। এর চেয়ে হাস্যকর আন্দোলন আর কী হতে পারে! অথচ আজ যারা গাছের বেঁচে থাকার দাবি নিয়ে আন্দোলন করতেছে, তাদের কখনো মানুষের বেঁচে থাকার দাবি নিয়ে আন্দোলন করতে দেখা যায় না। অতি সম্প্রতি হেফাজত ইসলামের আন্দোলনে পুলিশ গুলি করে সরকারি হিসেবে ১৭ জন আর হেফাজতের হিসাবে ২১ মানুষ হত্যা করল, তাদের নিয়ে কিন্তু এই গাছ বাঁচাও আন্দোলনকারীরা কোনো কথা বলেনি। এমনকি কতকক্ষেত্রে মনে হয়েছে, তারা এই হত্যাকান্ডের পক্ষে!
হেফাজত মৌলবাদি শক্তি, তাদের কথা না হয় বাদই দিলাম! চলতি মাসেই পুরো দেশ নাড়িয়ে দেওয়ার মতো একটি ঘটনা ঘটেছে। বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি আনভীরের প্রেমিকা তার নিজ বাসায় আত্মহত্যা করেছে। আর এই আত্মহত্যার ঘটনার পরপরই আনভীর কার্গো বিমানে করে দেশত্যাগ করেছে। পুলিশ ঘটনার মোটিভ দেখে বলেছে, এই আত্মহত্যার পিছনে বসুন্ধরার এমডি আনভীর প্রচ্ছন্নভাবে জড়িত থাকতে পারে। অথচ আমাদের পরিবেশবাদীরা আনভীরের বিচার নিয়ে একটি কথাও বলেনি। ভাবখানা এমন যে, আনভীর সাহেব যে দেশ কাঁপিয়ে দেওয়ার মতো এতো বড়ো একটি ঘটনা ঘটালেন, সেটা তারা জানেনই না!
আনভীরের কথা না হয় বাদই দিলাম। শিকদার গ্রুপের রন শিকদারের কথা মনে আছে তো? ব্যাংক থেকে টাকা না পেয়ে ব্যাংকের এমডিকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন। তারপর নিজস্ব প্লেনে থাইল্যান্ড পালিয়ে গিয়েছিলেন। আর থাইল্যান্ড সরকার যেন তার বিমান ল্যান্ড করতে দেয়, সে বিষয়ে আমাদের দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সুপারিশ করা হয়েছিল। এরপর বহুদিন কেটে গেছে! তারপর রন শিকদার দেশে ফিরে আদালতে আত্মসমর্পন করলেন এবং জামিনও পেয়ে গেলেন। অন্যদিকে, ঠিক সেই সময় কাশিমপুর কারাগারে একজন লেখক বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন। মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত তার অসুস্থতার কথা আদালতকে জানিয়ে ৮ বার জামিনের আবেদন করা হয়েছিলো। কিন্তু আদালত তাকে জামিন দেয়নি। কারণ, তিনি ছিলেন সরকারের সমালোচনাকারী। আর সরকারের সমালোচনাকারী অ্যাটেম টু মার্ডার মামলার আসামীর চেয়েও ভয়ংকর। তাই আদালত সেই লেখককে জামিন না দিয়ে, জামিন দিয়েছে রন শিকদারের মতো চিন্হিত অপরাধীকে।
আমাদের বিচার ব্যবস্থার এই যে অসংগতি, তা কিন্তু এইসকল পরিবেশবাদীদের চোখে পড়ে না। তাদের চোখে পড়ে, কুকুরের বেঁচে থাকার অধিকার, কাকের বেঁচে থাকার অধিকার হরণের মতো ব্যাপারগুলো। আবার এই সকল আবালমার্কা নাগরিকদের আমাদের মিডিয়া এলিট নাগরিক বলে সংজ্ঞায়ন করে। আসলেই তারা এলিট শ্রেণীর নাগরিক। যারা এসব মানবিক আন্দোলনের মোড়কে সরকারের বড়ো বড়ো অপরাধ গোপন করার চেষ্টা করে, তারা তো সরকারের কাছে এলিট নাগরিকের মর্যাদা পাবেই। কারণ, তারা স্বৈরাচারের দোষর! আর স্বৈরাচারের বন্ধুরা বরাবরই বিভিন্ন পরিবেশবাদী আন্দোলনের মোড়কে স্বৈরাচার পাশেই থেকেছে! আরও সহজ করে বললে, এলিট শ্রেণীর নাগরিক মানেই অন্ধ! তাদের চোখে সরকারের কোনো দোষই ধরা পড়ে না। যাবতীয় দোষ, সব দেশের সাধারণ নাগরিকের!
মন্তব্য: ০