Alapon

ঈদের চাঁদ এবং কিছু কথা...



[১]
ইফতারের সময় হয়ে এসেছে। সম্ভবত ত্রিশ মিনিট বাকি। রুমে বসে ইস্তেগফার করছিলাম। কিন্তু মায়ের হুংকারে সংবিৎ ফিরে পেলাম। রান্নাঘর থেকে মা বলছে,
-‘কিরে তোর আব্বার জন্য লেবুর শরবত বানাবি না? নাকি ইফতারের সময় গালি খেতে চাচ্ছিস?’
-‘এইরে।’ জিহ্বে কামড় দিয়ে খাট থেকে লাফ দিয়ে নামলাম। আব্বার আবার ইফতারের সময় লেবুর শরবত ছাড়া চলে না। সময়মতো শরবত না পেলে তার মেজাজ মাথায় চড়ে যাবে। নিশ্চয় বলবে,
- ‘সারাদিন কি এমন কাজ করো যে একটু শরবত বানাতে পারো না?’ এই লোকের সাথে ঝগড়া দেবার মত শক্তি আর রুচি সম্ভবত পৃথিবীর কোন মানুষের নেই। তাই কিছু না বলেই আমরা মা-মেয়ে বাধ্য মেয়ের মত সব হুকুম পালন করি।

[২]
মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে আমি। ইচ্ছা থাকলেও সব শখ পূরণ করতে পারি না। খুব ইচ্ছা হয়, মানুষকে দু’হাত ভরে দান করি। কিন্তু স্বপ্ন, স্বপ্নই রয়ে যায়। সে দিন একজন ভিক্ষুককে দু’মুঠো চাল বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। সেজন্য ভাই বলে দিয়েছে, ‘আমি আর কখনো যেন ভিখারিদের কিছু দান করতে না যাই। ওটা মা করবে।’ শুনে প্রচন্ড খারাপ লেগেছে। দান করলে নাকি সম্পদ কমে! আমি আর কথা বাড়াইনি। চুপ করেছিলাম।

কড়াইয়ে লেবুর শরবত নাড়ার টুংটাং শব্দ বেশ উপভোগ্য। আমি টুলের ওপর পা তুলে শরবত নাড়াচ্ছি। মা রান্না ঘরে বসে সম্ভবত ছোলা রান্না করছে। আজ শেষ রোজা। ভেতরটা কেমন যেন বিষণ্ণতায় মাখামাখি করছে। আবারো একটা রমাদান চলে গিয়েছে। অথচ নিজেকে পরিবর্তন করতে পারিনি। তার থেকেও খারাপ লাগছে ভাই আর আব্বার জন্য। ভাই কাজের দোহাই দিয়ে একটা রোজাও রাখেনি। আব্বা রোজা রেখেছে ঠিকই, কিন্তু একদিনও মসজিদে যায়নি। তার মুখের ভাষাও পরিবর্তন হয়নি। রমাদান নাকি মানুষকে পরিবর্তন করার জন্য আসে। কিন্তু আমার আব্বা আর ভাই যেই সেই রয়ে গেলো।
আমি লেবুর শরবত নাড়ছি আর ভাবনার ভেতর শিলেগুড়ি বৃষ্টি ঝড়চ্ছে। এমন সময় ইয়াসমিনের ডাকে হুঁশ ফিরে পেলাম। কোথা থেকে যেন হন্তদন্ত হয়ে এসেছে। চেহারায় ঘাম ও তাড়াহুড়োর ছাপ। দরজার বাইরে দাড়িয়েই বললো,
-‘মামানি দুইডা ভাঙ্গা ডিম থাকলে দেন। ঘরে কিচ্ছু নাই। কাইল ঈদ, পোলাডারে সকাল বেলা কি দিমু?’
ইয়াসমিন আব্বার দুঃসম্পর্কিত বোনের মেয়ে। সে সুত্র ধরে আমার আব্বাকে মামা আর মা’কে মামানি ডাকে।
ইফতারির সময় অতিথির আগামনে আমার খুশি হবার কথা ছিল, কিন্তু আব্বার ভয়ে সে খুশি আমার হাওয়া হয়ে গেল। যদি আব্বা ইয়াসমিনকে এই সময় দেখতে পায়, তবে ওর চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়বে। আমি কিছুই বললাম না। ইয়াসমিনের দিকে একনজর তাকিয়ে আবার শরবত নাড়তে লাগলাম। ওদিকে এই সময় ইয়াসমিনকে দেখে মা অস্থির হয়ে গেল। দৌড় দিয়ে দরজার সামনে এসে ওর দিকে কড়া চোখে বলল,
- ‘আর আসার সময় পেলি না? সারাদিন করো কি?’ কথাগুলো বলে মা হন্যেহয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে গেল। সম্ভবত ডিম আনতে গিয়েছে।
মায়ের প্রশ্ন শুনে ইয়াসমিন বলা শুরু করলো,
-‘আপনাগো বাড়ি আইতে চাই নাই। রুস্তমগো বাড়ি ডিমের জন্য গেছিলাম। কিন্তু হেগো নাকি ডিম নাই। এই জন্য আইছি। মামানি, এট্টা রোজাও ভাঙ্গি নাই। খাইয়া না খাইয়া রাখছি। দুই ডা ডিম দিলেই হইবে। আস্তা ডিম লাগবে না। দুই ডা ভাঙ্গা ডিম দেন।’
ইয়াসমিনের কথাগুলো শুনে ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। একজন রোজাদারের করুণ কাকুতিভরা কথাগুলো আমার ভেতরটা মুহূর্তের মধ্যেই দুমড়েমুচড়ে বিষিয়ে দিলো। ইশ, যদি আজ ইয়াসমিনের সাথে ইফতার করতে পারতাম! কিন্তু মনের গোপন কথা সব সময় প্রকাশ করতে নেই। তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। আমার গোপন বাসনা শুনে না জানি আব্বা উল্টা ইয়াসমিনের ওপরে ক্ষেপে যায়। তার থেকে বেচারিকে ভালোয় ভালোয় যেতে দিলেই হয়।
এরই মাঝে মা দু'টো আস্ত ডিম ওর হাতে ধরিয়ে দিয়েই বলল,
-‘তাড়াতাড়ি ভাগ এখন। তোর মামা দেখলে খবর আছে!’

মা ডিম দু’টো ইয়াসমিনের হাতে দিয়ে রান্না ঘরে ছুট দিলেন। আমার মাথায় তখন এক বিভাজিত ভীতসন্ত্রস্ত চিন্তা খেলা করছে। কাজটা করব কি করব না ভেবে পাচ্ছি না। দ্বিধা দ্বন্দে দোদুল্যমান অবস্থায় কোন কিছু না ভেবেই দৌড় দিয়ে রুমে গেলাম। ব্যাগ খুলতেই পাঁচশ টাকার টকচকে একটা নোট বের হলো। ভাবছি দেব কি দেব না? এই মাসে টিউশনির জমানো পাচঁশ টাকা। এটা দিয়ে দিলে আগামী একমাস ফেইসবুক চালাতে পারব না। অনলাইনের ক্লাশগুলোও করতে পারব না। একটু দ্বিধান্বিত হয়ে পড়লাম। কিন্তু এখন ভাবনার সময় নেই। যে কোন সময় আব্বা চলে আসবে। এসে যদি ইয়াসমিনকে দেখে, তবে তো আর কথাই নেই। সাথে যদি আমার টাকা দেয়াও দেখে ফেলে, তবে আমার অবস্থা শেষ। মহাত্মা গান্ধি, মাদার তেরেসা, হাতেম তাই সহ যত বিশেষণ আছে, সব আমার ঘাড়ে এসে পড়বে। নির্ঘাত বলবে, ‘ওরে জমিদারের ঝি, টাকা বেশি হয়ে গেছে? যা-না। আরো কিছু আছে কিনা দেখ। বাপের সম্পদ লাটে ওঠানো লাগবে না?’
বেশিকিছু ভাবার অবকাশ নেই এখন। দৌড় দিয়ে সামনের বারান্দা থেকে বের হলাম। চারিদিক অন্ধাকারে ছেয়ে যাচ্ছে। অন্ধকারের ভেতর ইয়াসমিনের হাতে টাকাটা গুঁজে দিয়ে বললাম,
- ‘সাবধান। কাক পক্ষীও যেন টের না পায়। যদি কোন ভাবে আব্বা আর ভাইয়ের কানে যায়। তবে আমার ভাত বন্ধ। আর তাড়াতাড়ি এখন যান। আব্বা দেখে ফেললে বিপদ আছে।’
কথাগুলো বলে দৌড়ে ঘরে আসব, কিন্তু বিপত্তি বাঁধালো ইয়াসমিন। আমার হাত দু’টো ধরে, সে কি কাঁন্না। বার বার মাথায় হাত দিচ্ছে, কাঁধে হাত দিচ্ছে, আবার শক্ত করে হাত দু’টো ধরে বলছে,
- ‘বইনরে। আল্লাহ তোরে অনেক অনেক হায়াত দিক। অনেক অনেক হায়াত দিক।’
হয়ত আরো কিছু বলতে চাচ্ছিল। কিন্তু তার কাঁন্নার কাছে সে সব অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে। আমার কণ্ঠ্যটাও বেশ ভারি হয়ে উঠল। এক অদ্ভুত, অদৃশ্য, অস্পষ্ট ও অন্যরকম অনুভূতি আমার ভেতরকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। আমি নিজেকে কোন মতে সামলে শক্ত গলায় তাকে বললাম,
-‘আরে তাড়াতাড়ি যান না। ইফতারের সময় হয়ে এসেছে।’
আমার কথায় সে বোধ ফিরে পেলো। তারপর গুনগুন শব্দে কাঁন্না করতে করতে জোরে হাটা ধরল। কথায় আছে, ‘যেখানে বাঘের ভয়। সেখানে রাত পোহায়।’ বেচারি ইয়াসমিন যেতে যেতে আমার মহামান্য পিতার সামনে পড়লো। আমার অবস্থা তখন, ‘বেঁচে পালাতে পারলেই হয়।’ কিন্তু অপেক্ষায় আছি আব্বার রিএ্যকশনের জন্য। তিনি ইয়াসমিনকে দেখেই বললেন,
-‘এই থাম। তোর হাতে কি?’
আব্বার এই প্রশ্ন শুনে আমার প্রাণ পাখি নাই হবার জোগাড়। কোথায় যাব, কি করব ভাবতে ভাবতেই শুনছি ইয়াসমিন বলছে,
-‘দুই ডা ডিম। মামানি দেছে।’
ইয়াসমিনের কথা শুনে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। ওর বাম হাতে টাকা ছিল আর ডান হাতে ডিম। বেচারি ডান হাতটা তুলে দেখিয়ে বলেছে, ‘ডিম।’ না হলে আজ আর রক্ষে ছিল না।
আব্বা তেমন কিছু বলার সুযোগ পেলেন না। কিন্তু সে আবার ছেড়ে দেয়ার পাত্রও নয়। তাই বললেন,
-‘কাণ্ডজ্ঞান বলতে কি কিছু আছে? সন্ধ্যার সময় আসিস কেন? সারাদিন কি রাস্তায় টকটক করে বেড়াস?’
ইয়াসমিন কিছু বললো না। চুপ মেরে রইল। তারপর আব্বা ও-কে হুকুমের ন্যায় বললেন,
-‘কাল সকাল সকাল পোলাডারে নিয়ে আসিস। কাল বাড়িতে অনেক কাজ আছে। কাজ করে খেয়েদেয়ে যাবি। আসবি নাকি বড়লোকি দেখাবি? তোদের তো ফুটানির ঠিক নাই।’
ইয়াসমিন হ্যাঁ সূচক ভঙ্গিতে মাথা নাড়িয়ে বললো,
-‘আসমু।’
ইয়াসমিনের কথা শুনে আব্বা আর কিছু বলেননি। ঘরের দিকে এগিয়ে আসছেন। আমি আজ অল্পতেই বেঁচে গিয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ। আব্বাকে ঘরের দিকে আসতে দেখে দৌড়ে আবার খাবার ঘরে চললাম। পেছন থেকে শুনলাম আমাকে আব্বা বলছে,
-‘সন্ধ্যার সময় বাইরে কি? ঘরে কি কাজ কাম নাই?’
আমি তেমন পাত্তা দিলাম না। এখনই আযান পড়বে। তাই খাবার টেবিলে খেজুর হাতে নিয়ে বসে গেলাম।

[৩]
মাগরিবের নামাজ পড়ে উঠোনে এসে বসে আছি। কিন্তু আকাশটা বেশ মেঘলা। চাঁদ সম্ভবত দেখা যাবে না। এবার ঈদের জন্য কিছুই কিনিনি। আব্বা বলেছে, ‘এত বড় মেয়ের আবার কিসের ঈদ?’ আমিও তেমন কিছু বলিনি। আর এখন আগের মত ঈদের আনন্দও কাজ করে না। ঈদের আনন্দ ছোট বেলার সাথে হারিয়ে গিয়েছে। তবে ঈদের চাঁদ দেখার আগ্রহ কিছুটা আছে। এখনো মনে আছে, ছোট বেলায় কোমর সমান পানি পার হয়ে পাশের বাড়ি যেতাম ঈদের চাঁদ দেখতে। চাঁদ উঠে আবার ডুবে যেতে পারে, সে জন্য পলিথিনের ঠোঙ্গার ভেতর ইফতারি নিয়ে সবাই হাজির হতাম। তারপর চাঁদের দেখা পেলে, মিছিল দিতাম। চাঁদ দেখার আনন্দগুলো আজ স্মৃতির পটেই ভালো মানায়।

চাঁদ দেখার জন্য আকাশের দিকে চাতক পাখির ন্যায় তাকিয়ে আছি, আর ছোট বেলার স্মৃতিরা মনের মাঝে ময়ূরের ন্যায় পেখম মেলে ধরছে। কিন্তু স্মৃতির ময়ূর বেশিক্ষণ পেখম মেলতে পারেনি। এরই মাঝে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ফোটা আমার চোখ-মুখ ছুঁয়ে যাওয়া শুরু করেছে। শীতল বাতাসে আমার পশম দাড়িয়ে গিয়েছে। আকাশে শব্দ বিহীন বিদ্যুৎ খেলা করছে। বুঝতে বাকি রইলো না, ভারিবর্ষণ হবে। দ্রুত চেয়ারটা হাতে নিয়ে ঘরের দিকে পা বাড়ালাম। ঠাণ্ডার সমস্যার জন্য নিজের আর বৃষ্টিবিলাস করা হয় না কখনো।

[৪]
গতকাল যা ভেবেছিলাম তা হয়নি।
বৃষ্টির কোন দেখা মেলেনি কাল। আকাশটা একটু হাক ডাক দিয়েই থেমে গিয়েছে। চাঁদ দেখতে পারিনি। তবে রেডিওর বদৌলতে আজকের ঈদের সংবাদ পেয়ে গিয়েছি। আব্বা আজও সম্ভবত মসজিদে যাবে না। ভাইকে দেখেছি নতুন পাঞ্জাবী পড়ে নবাবের ন্যায় হেলে দুলে বের হয়েছে। মসজিদে যাবে না নিশ্চিত। বাপ কা বেটা বলে কথা। কিছু সময় পর সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে হাজির হবে। তার আগে সব খাবার প্রস্তুত করে ফেলতে হবে। না হলে বাজখাঁই কণ্ঠে আব্বার মত বলবে,
- ‘তোমরা মহিলারা সারাদিন কি করো?’
এগুলো আন্দাজ না। প্রতি বছর বাপ-বেটা এই কাজই করে।
তাই জলদি ব্রাশ করে ফ্রিজ খুললাম। গরুর মাংস বের করে ভেজাতে হবে। ওদিকে মায়ের সাথে আব্বার তুমুল ঝগড়া লেগেছে বেশ কিছু সময় হলো। ঝগড়ার প্রাথমিক বিষয় ছিল, ‘আব্বা কেন ঈদের নামাজ পড়তে যায়নি?’ পরে সেটা ডালপালা গজিয়ে আমার নানা বাড়ি পর্যন্ত চলে গিয়েছে। আমার নানা নামাজ পড়তো কিনা, আমার মামা লোক দেখানো যাকাত দেয়, ইত্যাদি ইত্যাদি। মাও আজ ছেড়ে দেয়নি। বাপের বাড়ির সাথে মেয়েদের আলাদাই আবেগ কাজ করে। তাই বাপের বাড়ি নিয়ে কিছু বললে ছেড়ে দেয়া যায় না।

আব্বা আর মায়ের ঝগড়া এখন তুঙ্গে। পারলে দু’জনে মারামারি শুরু করে দিবে। কেউ কাউকে ছেড়ে দিয়ে কথা বলছে না। বেশ বিরক্ত লাগছে আমার। এমন কোন দিন নেই যে, এই বাড়িতে ঝগড়া হয় না। তাদের ঝগড়ার শব্দে কানের পোকা বের হয়ে যাবার জোগাড় হয়। এরই মাঝে দরজার বাইরে বসে কেউ ডাক দিয়ে বলল,
-‘মামানি দরজা খোলেন।’
বুঝলাম ইয়াসমিন এসেছে। গতকালের আব্বার আদেশ পালনের জন্যই তার আগমন। আমি মাংসটা পানিতে ভিজিয়ে দরজাটা খুললাম। দরজাটা খুলতেই লম্বা একটা সালাম ভেসে আসল কানে।
-‘আত্তালামু আলাইতুম।’
তাকিয়ে দেখি ইয়াসমিনের তিন বছরের ছেলে একটা লাল টুকটুকে পাঞ্জাবী পড়ে ইয়াসমিনের এক হাত ধরে দাড়িয়ে আছে। আর বাকি হাত তার কপালে। মুখে বাঁকা চাঁদের মত একফালি হাসি। ছোট ছোট কতগুলো দাঁতে মুখ ভরা। মাথায়ও একটা লাল টুপি। টুপিটা অর্ধেক কপাল ঢেকে ফেলেছে। কানের গোড়া থেকে তেল বেয়ে বেয়ে পড়ছে। ইয়াসমিনের গায়েও একটা নতুন ওড়না। ওড়নাটা খুব সুন্দর ভাবে মাথায় পেঁচিয়ে আছে। ছেলের সালাম দেয়ার পর্ব শেষ হলে ইয়াসমিন আমার হাত দু’টো ধরে বললো,
-‘বইন তোর টেকাটা দিয়া গতকাল রাইতে পোলাডার জন্য এই পাঞ্জাবী আর আমার এই ওড়নাটা আনছি। পোলায় তো নতুন জামা দেইক্কা তখনই পরবে। অনেক কান্দাকাড়ি করছে। কিন্তু পরতে দেই নাই। অহন পারাইয়া নিয়া আইছি। ভালো হইছে না?’
ইয়াসমিনের কথাশুনে তার ছেলের দিকে তাকালাম। সে তখন থেকেই বেশ বড়সড় একটা বাঁকা হাঁসি দিয়ে আছে। এখনো কপালে হাত। আমি তাকে কোলে তুলে নিয়ে বললাম,
-‘বেশ ভালো হয়েছে।’ কথাটা বলে ইয়াসমিনকে ঘরে ঢুকে বসতে বললাম। তারপর রুমে এলাম। এত বড় সালামে তো একটু সালামি দিতে হয়। অনেক খুঁজে নতুন দু’টো দশ টাকার নোট পেলাম। নোট দু’টো ইয়াসমিনের ছেলের হাতে দিলাম।

ভেতরে একটা নির্মল ভালোলাগা দীঘির জলের ন্যায় দোল খাচ্ছে। কাল যদি টাকাটা না দিতাম, তবে এত সুন্দর দু’টি হাসি দেখতে পেতাম না। আব্বা-আম্মার ঝগড়ায়ও এখন বিরক্ত লাগছে না। নিজেকে কিছুটা সুখী মানুষের মত মনে হচ্ছে। ইয়াসমিনের ছেলের হাসিটা দেখে মনে হচ্ছে, মেঘ কেঁটে গতকালের অদেখা ঈদের চাঁদটা বুঝি আজ উঠেছে।

সাওদা সিদ্দিকা

পঠিত : ৪২৬ বার

মন্তব্য: ০