Alapon

প্রতিরোধ আন্দোলনের নায়ক- ইজ্জউদ্দীন আল কাসসাম



উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে জন্ম নেয়া একজন বীর, যিনি সদর্পে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন ফরাসী, ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে; গড়ে তুলেছিলেন প্রতিরোধ সংগ্রাম- তার সম্বন্ধে আমরা কয়জন ই বা জানি?

তাহলে চলুন, সেই মহৎ ফিলিস্তিনী শায়খের জীবনাচরণ সম্পর্কে জানি, যার নাম ছিলো ইজ্জউদ্দীন আল-কাসসাম।

তিনি আল্লাহর পথের একজন মুজাহিদ ছিলেন। আল্লাহতায়ালা তাঁকে অগাধ প্রজ্ঞা এবং জ্ঞানের আলোকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের যোগ্যতা দিয়েছিলেন, যা ছিলো আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত। এই ইমাম ছিলেন চমৎকার একজন ব্যক্তিত্ব। তিনি একজন আদর্শ পুরুষ ও যোদ্ধা ছিলেন, যার অভিমতসমূহ ছিল লক্ষণীয় এবং তা সময়ের পরিক্রমায় সর্বদা স্মরণীয় হয়ে আছে। তাঁর অবদানসমূহে আল্লাহ রাজি খুশী ছিলেন, এবং তাই আজও তিনি সবার কাছে শ্রদ্ধাভাজন হিসেবে স্মরণীয়। তাঁর স্মৃতি আজ মানুষের মননে সংরক্ষিত। অনেক মানুষ আজ তার মতো হতে, সেরূপ বীরোচিত কাজ করার ইচ্ছে পোষণ করে।

জন্মসূত্রে সিরীয় ছিলেন। কিন্তু এ বিষয়টি সর্বজনবিদিত নয়। এসেছিলেন সিরিয়া থেকে এবং তাঁর জন্ম লাতাকিয়ার নিকটবর্তী জাবলাহ গ্রামে হিজরী ১৩০০ বছরে।

১৪ বছর বয়স পর্যন্ত একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন কোরআন শিক্ষা, নবী(সাঃ) এর জীবনী, আরবি ভাষা শিক্ষা সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করার জন্য। পরবর্তী সময়ে আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে গমন করেন ইসলামী আইনশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করতে। কেননা তখনকার সময়ে এরূপ প্রথাই প্রচলিত ছিলো। শিক্ষার্থীরা নিজ দেশে পড়াশোনা করে জ্ঞানের ভিত্তি গড়ে নিতেন এবং পরবর্তীতে বিদেশ ভ্রমণ করে নিজেদের শিক্ষা পরিপূর্ণ করতেন মিশরের আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞান রপ্ত করে। ইজ্জউদ্দীন আল-কাসসাম ও মিশর গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি নয় বছর অতিবাহিত করেন নিজস্ব জ্ঞান আহরণে ও তৎকালীন মিশরের মুসলমানদের সম্পর্কে ধারণা নিতে। তিনি আল-আযহার থেকে বাস্তবিকভাবেই অনেক উপকৃত হয়েছিলেন।

শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি লাতাকিয়া গ্রামে ফিরে আসেন এবং সেখানে শিক্ষকতা শুরু করেন। তিনি দিনের বেলায় ছোট শিশুদের পাঠদান করতেন এবং রাত্রিবেলায় বড়োদের শিক্ষাদান করতেন। এটাই হচ্ছে একজন প্রকৃত মুসলিমের পরিচয়, যিনি সর্বদা নিজ সময়কে কাজে লাগান জ্ঞান অর্জনে এবং তা ছড়িয়ে দিতে। একজন বিশ্বাসী মুসলিম জানেন যে, এ পৃথিবীতে তার স্থায়িত্ব ক্ষণিকের। তাই তিনি সর্বাগ্রে চেষ্টা করেন, মৃত্যুর পূর্বে ইসলামের সেবায় নিজেকে পরিপূর্ণরূপে নিয়োজিত করতে। ইজ্জউদ্দিন আল-কাসসাম ও এই নীতি অবলম্বন করতেন।

এরকম ভাবেই চলছিলো তাঁর জ্ঞানসাধনা ও প্রচার। তিনি যখন শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, তখন চতুর্দিকে নানা শত্রুর বেষ্টনীর মাঝে অটোম্যান সাম্রাজ্যের অবস্থা ছিলো নাজুক। সিরিয়া তখন বৃহত্তর সিরিয়া বা লেভান্ত নামে পরিচিত ছিলো, যার অন্তর্ভুক্ত ছিলো সিরিয়া, ফিলিস্তিন, জর্ডান ও লেবানন। তৎকালীন সিরিয়ার শাসনভার ছিলো উসমানীয় সাম্রাজ্যের হাতে। উসমানীয় সাম্রাজ্যের দুর্বল দশা সত্বেও মুসলমানেরা এই সাম্রাজ্যকে তাদের খেলাফতের প্রতীক মনে করতো। তাদের জন্য এই সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব ছিলো অতি মূল্যবান। কেননা এই সাম্রাজ্য বিদ্যমান থাকার দরুণ পুরো মুসলিম উম্মাহ একতাবদ্ধ হবার প্রেরণা পেতো। যখন উসমানীয় সাম্রাজ্যের কাঠামো ভেঙে গেলো, মুসলিম উম্মাহর অবস্থা হলো ঘোর বর্ষণের অন্ধকার রাতে ভয়ার্ত মেষের মতো। সংঘবদ্ধ হবার মতো কোন নিশান ছিলো না। সেই সময়টা মুসলিম জাতির জন্য বেশ করুণ ছিলো।

উসমানীয় সাম্রাজ্য সিরীয় জাতিকে আল্লাহর পথে যুদ্ধে নেমে পড়ার আহবান জানালো। ইজ্জউদ্দীন আল-কাসসাম রহিমাহুল্লাহ যুদ্ধের কিছু কলাকৌশল সম্বন্ধে অবগত ছিলেন এবং অস্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কেও তাঁর ধারণা ছিলো। এসব তিনি শিখেছিলেন, ভবিষ্যতে কখনো যদি কাজে লেগে যায়- তা ভেবে।
সেসময়ে লিবিয়া, বিধ্বংসী ইটালীয় ঔপনিবেশিক নীতির কারণে নির্যাতিত, পীড়িত ছিলো। তখন উমার আল-মুখতার সিরীয়দের সাথে একত্রে ইটালীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সাহসীকতার সাথে লড়াই করে। অন্যান্য সাধারণ মুসলিম জনগণ ও তাদের সাহায্যে এসেছিলো। সিরিয়ার জনগণ এ জুলুম নির্যাতন সম্পর্কে গাফেল ছিলো না। অধিকন্তু তারা ছিলো এ বিষয়ে সম্যক অবগত এবং সচেতন। এখনকার সময়ের সবাই হয়তো অবাক হবেন যে কিভাবে তারা এতো খবর রাখতে পারতো। কেননা সামগ্রিক অস্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপটে বলতে গেলে, তখন মিডিয়ার কেবল কিছু নির্দিষ্ট ভূমিকা ছিলো। কিন্তু মুসলমানেরা একতাবদ্ধ হয়ে তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে সদা সোচ্চার হলো এবং শত্রুর মোকাবিলায় তারা এক দেহের মতো হয়ে গেলো, যেখানে দেহের এক অংশ নিপীড়িত হলে অন্য সব অংশও আক্রান্ত হয়!
__________________

ইজ্জউদ্দীন আল-কাসসাম রহিমাহুল্লাহ ছিলেন আল-মানসুরী নামক এক মসজিদের ধর্মপ্রচারক। তিনি মসজিদে আগত ব্যক্তিদেরকে লিবিয়ার মুসলিমদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে উদ্ধুদ্ধ করতেন। তিনি কেবল এটুকুই করেন নি, বরং তিনি জাবলাহ গ্রামে তাঁর নিজস্ব বসবাসের বাড়ি বিক্রয় করে দিয়ে মুসলিম মুজাহিদদের অস্ত্র খরিদ এবং তাদের প্রশিক্ষণে সেই অর্থ ব্যয় করেন।
ভেবে দেখুন তিনি কতোটা পরহিতৈষী ছিলেন! আল্লাহু আকবার! তাঁর চিন্তার জগৎ ছিলো কতটা সুবিস্তৃত! তিনি মুজাহিদদের জন্য অস্ত্র খরিদ করার উদ্দেশ্যে নিজ গৃহ বিক্রি করে ফেলেন, যা ছিলো সম্পূর্ণ অনন্য এবং বিস্ময়কর ব্যাপার।

লেভান্তের উত্তরে অবস্থিত জাবলাহের বিক্ষোভগুলোতে তিনিই নেতৃত্ব দিতেন। তাঁদের বিক্ষোভের স্লোগান ছিলো,
ইয়া রহিম, ইয়া রহমান- ওগো করুণাময়,
মুসলিম সুলতানের দাও জয়,
ইটালীয় শত্রুর ঘটাও পরাজয়”।


আল-কাসসাম তার লিবীয় ভাইদের সহযোগিতা, আল্লাহর পথে লড়াই এবং মুসলমানদের প্রতি আহবান জানানোর মাধ্যমে তাদের একত্রিত করতে দিনরাত উদ্যমী হয়ে কাজ করে যেতেন। শত শত লোক তাঁর কাছে সমবেত হতো এবং তিনি উসমানীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের ইস্কেন্দেরুন পাঠানোর ব্যবস্থা করেন, যেখান থেকে তারা সমুদ্রপথে লিবিয়া পৌঁছে যেতে পারবে।

আল-কাসসাম কিছু মুজাহিদের সাথে গোপনে সিরিয়া পৌঁছেন, যেখানে তারা ওমর আল-মুখতারের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এই সাক্ষাৎকারের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি, এটি কেবল জনশ্রুতি থেকে জানা যায়। তবে যদি এ বর্ণনা সত্যি হয়ে থাকে তাহলে তা আল-কাসসাম এর ত্যাগের পরিধি সম্পর্কে এবং আল্লাহ'র জন্য লড়াই করার পরম উৎসাহ সম্পর্কে ধারণা দেয়।

লিবিয়ার উপর যখন ইতালীয় আগ্রাসন চলছিলো, এটা সেই সময়ের ঘটনাচিত্র। তখন শায়খ আল-কাসসাম সার্বক্ষণিক সবাইকে শিক্ষাদান করতেন, মানুষদের ইসলাম সম্পর্কে জানতে উৎসাহিত করতেন এবং তাদের জিহাদের প্রকৃত স্বরূপ সম্পর্কে অবগত করতেন। এরকম ভাবেই চলছিলো সব, যতক্ষণ পর্যন্ত না বিপর্যয় নেমে এলো সিরিয়ার উপর! সিরিয়ার সমুদ্র উপকূল দ্বারা প্রবেশ করে ফরাসীরা আক্রমণ করলো। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১৯১৮ সালে এ ঘটনা হয়েছিলো। এই ঘটনাকে ফ্রান্সের বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রতারণা হিসেবে দেখা হয়, কেননা এই পদক্ষেপের মাধ্যমে পূর্বের সকল চুক্তি বাতিল হয়ে গিয়েছিলো, যা সম্পাদিত হয়েছিলো ফ্রান্স, ইংল্যান্ড এবং শরীফ হুসাইন ইবন আলীর (মক্কার শরীফ) মাঝে। চুক্তিটি এরূপ ছিলো, শরিফ হুসেইন শত্রুপক্ষকে(উসমানীয়) প্রতিরোধ করবেন এবং এই সাহায্যের বিনিময়ে তাঁকে অধিকাংশ আরব দেশের উপর নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হবে। সেই দেশগুলো ছিলোঃ ইরাক, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন সহ আরো কিছু দেশ। শরিফ হুসেইন ইবন আলী, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর আরব সাম্রাজ্যের অধিপতি হবার স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু যখন যুদ্ধ শেষের দিকে, এবং এটা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলো যে, জয় ব্রিটেন এবং ফ্রান্স এর ই হবে- তখন উভয় দেশ তাদের চুক্তি ভংগ করে ফেলে। শরিফ হুসেইনের সাথে সম্পাদিত হওয়া চুক্তি তারা পরিত্যাক্ত প্রমাণ করে।

পরবর্তীতে ব্রিটেন ইরাকের দিকে যাত্রা করে যা তাদের জন্য বাধ্যতামূলক ছিলো। ১৯১৮ সালে, তারা ফিলিস্তিনে প্রবেশ করে। জেনারেল অ্যালেনবি ইংরেজ বাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়ে ফিলিস্তিনে প্রবেশ করেন এবং ঘোষণা দেন যে, অবশেষে ক্রুসেডের সমাপ্তি ঘটেছে। তিনি এ কথা এতো জোরালোভাবে বলেন, যেনো তাদের এই দখলের উদ্দেশ্যই ছিলো খ্রিষ্টীয় ক্রুসেডের জয়, নিছক শত্রুভাবাপন্ন হয়ে তারা মুসলমানদের অপমান করার জন্যই তাদের ভূমি দখল করেছে। ফরাসী সৈন্যবাহিনী সিরীয় উপকূলে অবতরণ করে ১৯১৮ সালে। কিন্তু সিরিয়া দীর্ঘ ২ বছর ধরে প্রতিরোধ করেছিলো, যতোদিন পর্যন্ত না দামেস্কে একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধের ফলাফলস্বরূপ ইউসুফ আল-আজমা শাহাদাতবরণ করেন এবং দামেস্ক ফ্রান্সের হস্তগত হয়। ক্রুসেডারদের বংশধর, জেনারেল গোরাড সিরিয়াতে প্রবেশ করে দামেস্কে অবস্থিত মহাবীর গাজী সালাহউদ্দিনের কবরে লাথি দিয়ে নিজের উষ্মা প্রকাশ করেন এই বলে, “সালাহউদ্দীন! প্রতিশোধ নেবার জন্য আমরা এসে গেছি! দেখো, আমরা আবারো ফিরে এসেছি!”

ক্রুসেডারদের সালাহউদ্দীন আল- আইউবীর প্রতি চরম আক্রোশ ছিলো, কেননা তিনিই তাদের জেরুজালেম ত্যাগে বাধ্য করেছিলেন। যদিও ৬-৭ শতাব্দী পূর্বে এই ঘটনা সংঘটিত হয়, তবু তারা সালাহউদ্দীনের কথা ভুলতে পারেনি। জেরুজালেম থেকে তাঁদের বিতাড়িত করেছিলেন তিনি। জেনারেল গোরাডের এই উক্তি থেকে ক্রুসেডীয় সেই বিদ্বেষের প্রকাশ ঘটেছিলো। সেসময় এই ফরাসী দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আল-কাসসামের ভূমিকা কেমন ছিলো?
_____________________
আল-কাসসাম আল্লাহর পথে লড়াই করে শহীদ হওয়ার জন্য সোৎসাহী ছিলেন। তাঁর মনের প্রবল বাসনা ছিলো এটাই, এবং আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একজন ইসলামীক বিদ্বান ব্যক্তি হিসেবে ইসলামের অবমাননা বা এর প্রতি কোনরূপ হীন আচরণ করা তিনি সহ্য করতে পারেন নি। সিরিয়াতে ফরাসীদের আগ্রাসন এবং লেভান্তকে দেওয়া হুমকি তিনি কোনভাবেই বরদাশত করেন নি। তাই তিনি ফরাসী শত্রুদের বিরুদ্ধে সক্রিয় অবস্থানের সিদ্ধান্ত নেন, যেমনটা তাঁর এবং তাঁর সঙ্গী-সাথিদের থেকে প্রত্যাশা করা হয়েছিলো। ফরাসী দখলদার বাহিনী খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিলো যে জোরালো প্রতিরোধ তৈরি করা হবে, যা ইতোঁমধ্যে লেভান্তের উত্তর প্রান্তের এক অখ্যাত শহরে শুরু হয়ে গিয়েছিলো । তাই তারা আল-কাসসামের সাথে আলোচনা করার উদ্দেশ্যে একটি প্রতিনিধি দল পাঠালো। যাদের লক্ষ্য ছিলো, আল-কাসসামকে উঁচু পদ ও অর্থের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতিরোধ থেকে বিরত রাখা। কিন্তু আল-কাসসাম ছিলেন আল্লাহর পথের একজন লড়াকু সৈনিক, যিনি কখনো ইসলামের শত্রুর থেকে ঘুষ নিতে পারেন না। ফলস্বরূপ, তাঁকে ফরাসি কর্তৃপক্ষ আলাউয়িতে মৃত্যুদণ্ডের ঘোষনা দেয়। কিন্তু তারা তাঁকে বন্দী করতে পারেনি।

ফরাসীরা সিরিয়া দখলের পর সমগ্র সিরিয়াকে চারটি ভাগে বিভক্ত করে। দামেস্ক রাষ্ট্র, আলেপ্পো রাষ্ট্র, আলাউয়ি রাষ্ট্র ও জাবাল দ্রুজ রাষ্ট্র। এই চারটি রাষ্ট্র দ্বারা সমস্ত সিরিয়াকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আকারে বিভক্ত করা হয়েছিলো, যেনো মুসলমানেরা ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে এবং তাঁদের জন্য রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করা সহজসাধ্য হয়। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়েছিলো তাঁদের পূর্বের “বিভক্ত করো এবং জয় করো” নীতি অনুসারে। এই নীতি অনুসরণের মাধ্যমে তারা মুসলিম রাষ্ট্রগুলো জয় করতে সফল হয়েছে। এক্ষেত্রে এই নীতি ফলপ্রসূ ছিলো।

আল-কাসসাম যখন বুঝতে পারলেন যে ফরাসীরা তাঁকে গ্রেফতার করে ফেলবে, তখন তিনি দামেস্কে চলে গেলেন এবং সেখানে তিনি দখলদার বাহিনীর সাথে মুখোমুখী লড়াই করেন। লেভান্তের জনগণ তাঁদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে প্রতিরোধের জন্য বীরত্বের সাথে লড়াই করে, যা সম্মানের সাথে স্মরণীয়। কিন্তু তাঁদের জন্য এটা অসম্ভব ছিলো, যে দশ হাজার সুসজ্জিত, প্রশিক্ষিত সৈন্য বাহিনীর সাথে মাত্র কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ পেরে উঠবে। ফলস্বরূপ, তাই ই ঘটলো, যা পূর্বে সিরিয়া, আলজেরিয়া, মরক্কো, লেবাননে হয়েছিলো। এসব ইতিহাস হয়তো আমাদের হতাশ করে দেয়, কেননা মুসলমানেরা তাঁদের স্বাধীনতা হারিয়েছিলো, কিন্তু এসব ইতিহাস আমাদের সেই সব বীরত্বগাঁথা সম্পর্কে ও স্মরণ করিয়ে দেয়, যা আমাদের পূর্ববর্তীগণ রচনা করেছিলেন।

এই ইতিহাস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় মুসলমানদের সম্মান, সাহসিকতা, মনোবলের কথা। তাঁদের আত্মমর্যাদাবোধ, গৌরব, এবং খ্যাতির কথা। আমরা এমন এক জাতি, যারা কখনো ইসলামের অসম্মান, ইসলামের প্রতি কোনরূপ হীন আচরণ সহ্য করতে পারেনা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে, সত্যের পথে, মাজলুমের পক্ষে যারা সদা সোচ্চার। তাই, প্রতিরোধের জন্য আমাদেরকে সর্বোচ্চ মনোবল ও শক্তি নিয়ে জেগে উঠতে হবে।
আল-কাসসাম যখন বুঝতে পারলেন সিরিয়ার পতন আসন্ন এবং দামেস্ক ও দখল হয়ে গিয়েছে, তিনি জীবনধারার পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে গোপনে ফিলিস্তিনের হাইফায় পাড়ি জমালেন। অধিকাংশ মানুষ তাঁর ব্যাপারে ধারনা রাখে যে, তিনি একজন ফিলিস্তিনী। কিন্তু তিনি আসলে জন্মসূত্রে সিরীয় ছিলেন। তাঁর জীবনী আমাদের শিক্ষা দেয় যে, মুসলিম জাতি কখনোই জাতীয়তাকে গুরুত্ব দেয় না। না তো তারা কোনভাবে কৃত্রিম কোন সীমারেখা দ্বারা আবদ্ধ থাকে। মুসলমান সর্বদা তাঁর অন্য মুসলিম ভাইকে সাহায্য করে। রাজনৈতিক কিংবা ভৌগোলিক কোন সীমারেখা তাঁকে এ সাহায্য করা থেকে বিরত রাখতে পারেনা। আল-কাসসামের গোপনে হাইফা যাওয়ার গল্প অনেক ঘটনাবহুল, তাই এখানে উল্লেখ করা নিষ্প্রয়োজন মনে করছি। হাইফায় পৌঁছানোর পর তিনি সেখানকার আল-ইসতিকলাল মসজিদের খতীব নিযুক্ত হন।

প্রথম পর্ব


মূলঃ শায়খ মূসা আল শরীফ হাফিজাহুল্লাহ
ভাবানুবাদঃ সাবিহা সাবা

পঠিত : ৩২১ বার

মন্তব্য: ০