Alapon

সময়টা পরিবর্তনের!

মুসলিম উম্মাহর “বুদ্ধিজীবী” সম্প্রদায় থেকে প্রায়ই কিছু স্বগতোক্তি উচ্চারিত হয়! এই যেমন ধরুন, “ওয়েস্ট কতো এগিয়ে! মুসলিমরা চিরকাল পিছিয়ে ই থেকে গেলো! আমরা কি ভাই পারবো বলেন ওদের সাথে, পারমাণবিক শক্তি তো আমাদের নাই!” তাদের কথা শুনলে মনে হয় যেনো হাজার বছর ধরে পশ্চিমারা সভ্যতা বিনির্মান করেছে!

এই যে আপনি এত চমৎকার করে পশ্চিমাদের প্রশংসা করে যাচ্ছেন, আপনার কি জানা আছে প্রকৃত ইতিহাস? এই মানসিক দৈন্যতা থেকে আর কবে মুক্তি পাবেন? গোলামীর জিঞ্জির থেকে বাহ্যত মুক্তি দিয়ে গেলেও আসলে ইংরেজরা আপনাদের চিন্তাধারা মন-মানসিকতা তে শিকল পড়িয়ে দিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। তাই এখন আপনি সর্বদা কেবল ভাবতে ই থাকেন, ওরা ই শক্তিশালী, হার্ড ওয়ার্ক করে ওরা এতো হায়ার পজিশনে উঠতে পেরেছে। নিজেকে ওদের গোলামি থেকে এখনো মুক্ত ভাবতে শেখেন নি আপনি।

Brooks Adams তাঁর The Law Of Civilization and Decay নামক গ্রন্থে বলেন,

“১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পর থেকে বাংলার লুন্ঠিত সম্পদগুলো আসা শুরু হয় আর সত্বর এর ফল প্রকাশ পেতে শুরু করে। এত বড় বিরাট শিল্প বিপ্লব যার প্রভাব পৃথিবীর প্রত্যন্ত কোণে কোণে অনুভূত হচ্ছে, সৃষ্টিই হতো না যদি পলাশীর যুদ্ধ সংঘটিত না হতো। কেননা ভারতবর্ষের সম্পদই এই শিল্প বিপ্লব সৃষ্টির সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছিলো। দ্বিতীয়ত, ভারতবর্ষ থেকে সম্পদের পাহাড় যখন লন্ডনে এসে আছড়ে পড়তে শুরু করলো এবং পুঁজি বৃদ্ধি পেল তখন আবিষ্কার উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে এক বিরাট প্রতিযোগিতা শুরু হলো। তৃতীয়ত, পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে টাকা পয়সার দ্বারা আজ পর্যন্ত এত বেশি মুনাফা অর্জিত হয় নি যতটা হয়েছে লুন্ঠিত ভারতীয় সম্পদ দ্বারা! কেননা পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত এক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের কোন প্রতিদ্বন্দ্বী ও ছিলো না!!!!!”

স্যার উইলিয়াম ডিগবী বলেন,

❝পলাশীর যুদ্ধের আগে যখন ভারতবর্ষের সম্পদ প্লাবনের বেগে ইংল্যান্ডের বুকে আছড়ে পড়ে নি ততোদিন আমাদের দেশের সৌভাগ্যের সূর্য উদিত হয়নি! প্রকৃত ব্যাপার হলো, ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব বাংলার বেশুমার সম্পদ এবং কর্ণাটকের বিপুল ভান্ডারের বদৌলতেই সম্ভব হয়েছিলো।❞
(Prosperous India:A revolution, p. 30)

এটা ছিলো আসল ইতিহাস! শিল্প বিপ্লব এমনি এমনি ই হুট করে হয়ে যায় নি। আফ্রিকান উপনিবেশ থেকে ফ্রেঞ্চরা, ভারতীয় উপমহাদেশে থেকে ইংরেজ বেনিয়ারা রক্ত শোষণ করে যেই অর্থসম্পদ লুট করেছিলো, (সিম্পলি লুট করেছিলো) সেই লুটের টাকায় তাদের দেশে বিপ্লব হয়েছে। কে বলেছে যে মধ্যযুগের পরবর্তী সময়ে মুসলিমেরা জ্ঞান বিজ্ঞানে পিছিয়ে পড়েছে? যদি জানার মতো মনন থাকে, বোঝার মতো বিবেক থাকে, তবে চোখ খুললে ই দেখতে পাবেন কিভাবে সুসভ্য পশ্চিমা অপশক্তি, তাদের মিশনের ন্যুনতম বিরুদ্ধে যাবে এমন ছোটখাটো সম্ভাবনা গুলোকে ও মাথাচাড়া দেবার পূর্বেই সমূলে উপড়ে ফেলে! গুপ্তহত্যার ইতিহাস নতুন করে সমসাময়িক কালে রচিত হয়নি। তাদের এ ক্ষেত্রে পুরনো রেকর্ড রয়েছে।


অতীতের সাথে বর্তমানের একটা বড়সড় পার্থক্য হলো, একতা নেই। উম্মাহর মাঝে ঐক্য নেই আগের মতো। আগে যেমন ছোট ছোট বেইলিকগুলোর মাঝে বিরোধ থাকলেও সুলতানের এক আদেশে সবাই টেম্পলারদের বিপক্ষে যুদ্ধে লড়াই করতো, সেই সুরটুকু কেটে গেছে! প্রকৃতপক্ষে এটিই আসল কারণ কিনা জানিনা। তবে হ্যা, মুসলিম উম্মাহ ক্রান্তিলগ্ন পার করছে বলে যাচ্ছেতাই বলে যাবেন না। উম্মাহর জন্য পারলে কিছু করুন। হোক সেটি ক্ষুদ্র কিছু। কিন্তু নিয়ত যেনো পরিশুদ্ধ হয়। কেবল সোশ্যাল মিডিয়ায় দোষারোপ করে দায় সারবেন না। আপনার ও দায়বদ্ধতা আছে। বুদ্ধিবৃত্তিক দৈন্যতা থেকে বেরিয়ে এসে তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগান। ফিলিস্তিনের এইটুকু ছোট শিশুদের ঈমান, তেজ দেখে আপনি খুব অবাক হন, ভালো লাগে! কিন্তু এত সংকীর্ণ মানসিকতা, দৈন্যতায় পরিপূর্ণ চিন্তা ভাবনা নিয়ে তারা ঘরের কোণে বসে থাকলে কিন্তু এ প্রতিরোধ সম্ভব হতো না! তাই সমাজে পরিবর্তন এর ছোঁয়া আনুন।


~সময়টা পরিবর্তনের!~

√ সাবিহা সাবা

পঠিত : ২২২ বার

মন্তব্য: ০