Alapon

সাংবাদিকরা কি দেশের আইনের উর্ধ্বে...



দিন কয়েক আগের কথা। বাইক নিয়ে বের হয়েছিলাম। বাসায় ফেরার পথে ট্রাফিক সার্জেন্ট বাইক থামাতে বলে। তারপর প্রয়োজনীয় কাগজ দেখতে চায়। আমার কাগজপত্র ঠিকঠাক দেখে চলে যেতে বলে। এরই মধ্যে সেই আর্জেন্ট আর একটি বাইক থামায়। সেই বাইকের চালকের মাথায় হেলমেট নেই। হেলমেট না থাকা মানেই মামলা খাওয়া। বাইক থামানোর সাথে সাথে সেই বাইক চালক বলল, ‘আমি সাংবাদিক! এই দেখুন আমার প্রেস কার্ড।’

তখন সেই পুলিশের সার্জেন্ট বললেন, ‘আপনি সাংবাদিক তো কি হয়েছে? সাংবাদিকরা কি দেশের আইনের উর্ধ্বে? আপনি সাংবাদিক, আমি আপনার প্রফেশনকে সম্মান করি। এখন আমাকে আমার দায়িত্ব পালন করতে দিয়ে আপনি যে দেশের একজন সচেতন নাগরিক তার প্রমাণ দিন। একইসাথে আপনি যেহেতু সাংবাদিকও তাই আপনার আইনের প্রতি আরও শ্রদ্ধাশীল থাকার কথা। আশা করি, আপনি সাংবাদিক হিসেবে সেই শ্রদ্ধা দেখাবেন এবং আমাকে হতাশ করবেন না।’

এই কথা শুনে সেই সাংবাদিক বেচারার মুখের অবস্থা বাংলার পাঁচের মতো হয়েছিল। এই অবস্থা শুধু ট্রাফিক পুলিশের ক্ষেত্রেই না, সাংবাদিকরা সবক্ষেত্রেই তাদের এই সাংবাদিক পরিচয় বহন করে পার পেতে চায়। এমনকি তারা ফৌজদারি অপরাধ করার পরও আইন ও বিচারের উর্ধ্বে থাকতে চায়। ব্যাপারখানা এমন যেন, সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে দেশের যাবতীয় আইন রহিত করা হয়েছে। আর যদি সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে ফৌজদারি আইন বলবত করা হয়, তবেই সেরেছে! সব সাংবাদিক হারেরেরে রব তুলে বলবে, দেশে গণমাধ্যমের কোনো স্বাধীনতা নেই। দেশে সাংবাদিকদের কোনো নিরাপত্তা নেই। এই কথাগুলো সত্য, তবে সকলের ক্ষেত্রে সত্য নয়! যেমন সত্য নয় প্রথম আলোর অনুসন্ধানী রিপোর্টার রোজিনা ইসলামের ক্ষেত্রে!

নথি চুরির অভিযোগে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে, এটি পুরনো সংবাদ। নতুন সংবাদ হলো, এতোদিন যে রোজিনা ইসলামকে নির্দোষ বলে দাবি করে আসা হচ্ছিল, তা একটি ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পরপরই সেই দাবি ভুণ্ডুল হয়ে গেছে। সেই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রোজিনা সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম সচিবালয়ের একটি কক্ষে প্রবেশ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখান থেকে বের হয়ে দৌড়াতে থাকেন। তখনই তাকে সচিবালয়ের দায়িত্বে থাকা পুলিশ গ্রেফতার করে। গ্রেফতার করে দেখা যায়, তিনি নথি চুরি করে পালাচ্ছিলেন। আর নথি চুরির কথা তিনি নিজ মুখেই স্বীকার করেছেন। বলেছেন, ‘আমি ভুল করেছি। আমি মুচলেকা দিচ্ছি, আমাকে ছেড়ে দিন।’

রোজিনা ইসলামের দ্বারা নথি চুরির ঘটনা কি এটাই প্রথম?

না, এটাই প্রথম নয়। এর আগেও তিনি নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয় থেকে নথি চুরির সময় হাতে নাতে ধরা পড়েন। তারপর সেখানে মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পান। এবারও রোজিনা ইসলাম মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কথায় আছে, চোরের দশদিন গেরোস্তের একদিন। আজ সেই গেরোস্তের দিন। নথি চুরি করতে গিয়ে এবার রোজিনা ইসলাম হাতেনাতে ধরা পড়েছেন।

এভাবে নথি চুরি করা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। এই ঘটনার সাথে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা জড়িয়ে আছে। আমি সরকারের বহু কাজের বিরোধী হলেও, এই কাজটির পক্ষে! সরকারের উচিত হবে, রোজিনা ইসলামকে কঠোর শাস্তি প্রদান করুক। সেইসাথে এই নথি চুরির পিছনে আর কারো কোনো যোগসাজোশ আছে কিনা, তা ক্ষতিয়ে দেখার দাবি জানাচ্ছি।

পঠিত : ২৫৫ বার

মন্তব্য: ০