Alapon

বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থা যেভাবে চলছে...



হামিদ মিয়া আমের ব্যবসায়ী। আড়ৎ থেকে আম কিনে তারপর ভ্যানে করে খুচরা বিক্রি করে। হামিদ মিয়া আড়ৎ থেকে ৩৮ টাকা কেজি দরে হিমসাগর ক্রয় করে, সেই আম খুচরা ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করে। প্রতি কেজিতে লাভ করে ৬২ টাকা। প্রতি কেজিতে ৬২ টাকা লাভ করে হামিদ মিয়া দাঁত কপাটি বের করে বাজারে চাল কিনতে যায়। চাল কিনতে গিয়ে দেখে, গতকাল যে চালের কেজি ছিল ৪০ টাকা, আজ সেই চালের কেজি ৪২ টাকা! হামিদ মিয়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কেজি দুইয়েক চাল মাপতে দিয়ে বলে, ‘দাম এতো বেশি অইলে নাই খাইয়া মরতে হইবো!’

সেই চালওয়ালার আবার ‍পূর্বের দামে কেনা চাল। যার কারণে তার প্রতি কেজিতে ২ টাকা করে বেশি লাভ হয়েছে! লাভ যেহেতু একটু বেশিই হয়েছে, তাহলে আজ রাতে বউ-বাচ্চা নিয়ে একটু ভালো-মন্দ খাওয়া যাক। চালওয়ালা বেশি করে জর্দা দিয়ে মুখে একটা পান দিয়ে বাজারের দিকে হাটতে থাকে। সিদ্ধান্ত নেয় আজ রাতে গরু ভোজ হবে।
গরুর গোশতের দোকানের সামনে গিয়ে আয়েশি ভাব নিয়ে চালওয়ালা বলে, ‘কেজি কতো?’

কসাই বিরক্তমাখা মুখ নিয়ে বলে, ‘একদাম ছয়শ টাহা!’
বেচারা চালওয়ালা এতোক্ষণ বেশ মজা করেই মুখের পানটা চিবাচ্ছিল! কিন্তু গোশতের দাম শোনার পরপরই পানের স্বাদটা কেমন যেন তেতো তেতো হয়ে গেল।
তারপরও ‍মনে ক্ষীণ আশা নিয়ে চালওয়ালা বলে, ‘ক’য়দিন আগেই তো কিনলাম ৫২০ টাহা কইরা! আইজ এতো বেশি ক্যান?’

কসাই তার কথার জবাব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না। দ্রুত বিদায় করার জন্য বলে, ‘আইজ দাম বেশি! দিমু এক কেজি?’

চালওয়ালা মনে মনে কল্পনা করে, ‘বাড়িতে গোশত নিয়ে গেলে তার বউ-বাচ্চারা কেমন খুশি হবে। সেই খুশিখানি দেখার জন্য চালওয়ালা অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও এক কেজি গোশত কিনে বাড়ির পথ ধরে।

ওদিকে কসাইয়ের আবার বউ প্রেগন্যান্ট। তার বউ তেমন কিছু খাইতে পারে না। যা-ই খায় সবই বমি করে দেয়। সন্ধ্যাবেলা তার বউ মোবাইল করে বলে, ‘বাড়িত আসবার সময় একটা তরমুজ নিয়া আইসেন!’

কসাই মনে মনে ভাবে, ‘আইজ ব্যবসা ভালোই হইছে। বউ যখন নিজে থাইকা তরমুজ খাইতে চাইছে, তাইলে একটা ক্যান, আইজ দুইটা বড়ো বড়ো তরমুজ নিয়া যাবু! যখনই খাইতে মন চাইবো ফ্রিজ থাইকা বাইর কইরা খাইবো!’

কসাই লুঙ্গির বাঁধন শক্ত করে বাঁধতে বাঁধতে তরমুজের দোকানের দিকে এগিয়ে যায়। একটা মোটামুটি সাইজের তরমুজ দেখে কসাই দাম জিজ্ঞেস করে। জবাবে তরমুজওয়ালা বলে, ‘একদাম ৩৫০ টাহা! কোনো দামাদামি হইবো না।’

কসাইওয়ালা তরমুজের দাম শুনে আসমানের দিকে চেয়ে মনে মনে বলে, ‘এই জুলুমের শেষ কই! যা মন চাইতেছে তা-ই দাম চাইতাছে। আল্লাহ তোগো বিচার করবো...!’

পঠিত : ৪৭৭ বার

মন্তব্য: ০