গত ১১ দিনের যুদ্ধে ফিলিস্তিনিরা যা অর্জন করেছে...
তারিখঃ ২৩ মে, ২০২১, ১৯:১৭
১১ দিন যুদ্ধের পর ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে। এই যুদ্ধ যতোটা না ইসরাইলের যুদ্ধ ছিলো, তার চেয়ে ঢের বেশি ছিল নেতানিয়াহুর যুদ্ধ! গত তিন বছর ধরেই নেতানিয়াহুর গদির টালমাটাল অবস্থা। বিভিন্ন ধানাইপানাই করে নেতানিয়াহু গত তিন বছর ধরে নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রেখেছে। কিন্তু সরকার বিরোধী আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখনই নেতানিয়াহু গদি বাঁচানোর কৌশল হিসেবে যুদ্ধকে বেছে নিলো। কিন্তু এই যুদ্ধ নেতানিয়াহুর ‘ইসরাইল নিরাপদ দেশ’ মতবাদকেই প্রশ্নবিদ্ধ করলো।
নেতানিয়াহু এবং তার সরকার বহু বছর ধরেই সারাবিশ্বের ইহুদিদের কাছে দাবি করে আসছিলো, ইসরাইল নিরাপদ দেশ। এই দাবি ২০১৪ সালের অপারেশন প্রটেসটিভ এজ যুদ্ধের পর থেকে বেশি করা হচ্ছিলো। সেইসাথে দাবি করা হচ্ছিলো, ইসরাইল হামাসকে রুখে দিয়েছে। হামাসকে রুখে দেওয়ার সেই দাবিও এই যুদ্ধে ভুণ্ডুল হয়ে গেলো। গত ১১ দিনের যুদ্ধ নেতানিয়াহুর ক্ষমতাকে নিরাপদ করবে কিনা তা সময়ই বলে দিবে। কিন্তু ১১ দিনের যুদ্ধ ফিলিস্তিনকে অনেক কিছুই দিয়েছে।
প্রথমত, ২০১৪ সালের যুদ্ধের পর ইসরাইল তাদের আয়রন ডোম নামক অস্ত্রের ব্যাপক প্রচার চালায়। তারা দাবি করে, এই আয়রন ডোম ভেদ করে হামাসের আর কোনো রকেট ইসরাইলে প্রবেশ করতে পারবে না। এই দাবির ব্যাপারে ইসরাইল খুবই আত্মবিশ্বাসী ছিলো। কিন্তু গত ১১ দিনের যুদ্ধ ইসরাইলিদের সেই বিশ্বাস চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছে। কারণ, ইসরাইলের শক্তিশালী আয়রন ডোম ভেদ করে হামাসের বেশ কয়েকটি রকেট ইসরাইলের মাটিতে আঘাত হেনেছে এবং ইসরাইলি নাগরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। যার কারণে ইসরাইলি নাগরিকদের মধ্যে হামাসের রকেট ভীতি কাজ করছে। অন্যদিকে, হামাসের রকেট ইসরাইলের আয়রন ডোম ভেদ করতে সক্ষম হওয়ায় হামাসের যোদ্ধা এবং ফিলিস্তিনের জনগণের মাঝে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং কতকক্ষেত্রে তারা হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে। এটা ফিলিস্তিনিদের জন্য বিরাট অর্জন!
দ্বিতীয়ত, ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফিলিস্তিনের জনগনের প্রতি সমর্থক ফোরাম গড়ে উঠছে। আর এই সমর্থকদের মধ্যে অধিকাংশরাই তরুণ। এবার ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা এমনকি গ্রীসের রাজধানী এথেন্সেও ফিলিস্তিনিদের পক্ষে মিছিল করতে দেখা গেছে। আর সেসব মিছিলে মানুষের উপস্থিতি ছিলো উল্লেখ করার মতো। পশ্চিমা মিডিয়ার এক চোখা নীতি এবং জায়োনবাদীদের প্রতি নগ্ন সমর্থন দান এবং সেই ব্যাপারে প্রচার ও প্রচারণা চালানোর পরও পশ্চিমা বিশ্বে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন বাড়ছে। একইসাথে ফিলিস্তিনের সমর্থনকারীদের আন্দোলন প্রচারে পশ্চিমা মিডিয়া বরাবরই অনাগ্রহী। কিন্তু এবার সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে তা ব্যাপক প্রচার ও প্রচারণা পায়। তাই এক পর্যায়ে পশ্চিমা মিডিয়াও তাদের ব্যাপারে প্রচার করতে বাধ্য হয়। আর এটা ফিলিস্তিনিদের জন্য বিরাট অর্জন।
সেই ১৯৪৮ সাল থেকে ফিলিস্তিনিরা তাদের হারানো জন্মভূমি ফিরে পাওয়ার নিমিত্তে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আন্দোলন আর যুদ্ধ করে যাচ্ছে। পশ্চিমা জায়োনবাদী মিডিয়া এতোদিন ফিলিস্তিনিদের এই মুক্তি আন্দোলনকে সন্ত্রাসবাদী বলে প্রচার করে আসছে। আর বহুল প্রচারের কারণে সাধারণ মানুষও মিডিয়ার কথা বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলো। কিন্তু এতো অপপ্রচার স্বত্বেও ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী মানুষদের আন্দোলন বিশ্বের সচেতন মানুষদের তাদের ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলে। আর সেই আগ্রহ থেকেই সারাবিশ্বে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থক গোষ্ঠী গড়ে উঠছে। ভিন্নদিকে দখলদার ইসরাইলিদের জন্য অপেক্ষা করছে শুধুই ঘৃণা!
মন্তব্য: ০