Alapon

প্রতিরোধ আন্দোলনের নায়ক- ইজ্জউদ্দীন আল কাসসাম রহিমাহুল্লাহ

হাইফা, ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী একটি বন্দর শহর। আল-ইসতিকলাল মসজিদ ছিল সেই শহরের সবচেয়ে বড় মসজিদ। আল-কাসসাম সেখানে খতীব নিযুক্ত হবার পর সেখানে অনেক মানুষ জড়ো হতো তাঁর খুতবা শুনতে, কেননা তাঁর খুতবা প্রদানের ভংগি ছিলো একেবারেই আলাদা। সেখানকার মানুষেরা পূর্বে যেসব খতীবের বয়ান শুনেছিলো, তারা সর্বদা ইবন-নাবাতাহ বা ইবনে হাজার এর খুতবার অনুকরণ করার চেষ্টা করতো- যাদের খুতবা গুলো লিখিত হয়েছিলো ছয় থেকে সাত শতাব্দী পূর্বে। তারা বারংবার সেসব বয়ানের ই পুনরাবৃত্তি করতো, যার ফলে সাধারণ মানুষের তা মুখস্ত হয়ে গিয়েছিলো। তারা তখন খতীবের সাথে খুতবার অংশবিশেষ পাঠ করতো।

তাই যখন আল-কাসসাম নতুন ভঙ্গিমায় খুতবা প্রদান করা শুরু করলেন, তারা তা তন্ময় হয়ে শুনতো। যেহেতু আল-কাসসাম একজন বিদ্বান ব্যক্তি ছিলেন, তিনি তাদেরকে ধর্মের মৌলিক দিক গুলো সম্বন্ধে শিক্ষাদান করতে লাগলেন। তাঁর এমন কার্যাবলীর প্রয়োজনীয়তা বুঝতে হলে সেসময়কার মুসলমানদের অবস্থা সম্পর্কে জানতে হবে যে, তারা কতটুকু সচেতন ছিলেন নিজ ধর্মের ব্যাপারে। আসলে, সেসময় মুসলমানদের অবস্থা ছিলো খুবই শোচনীয়, তাঁদের ধর্মীয় জ্ঞানের পরিধি ছিলো স্বল্প। কিছু সংখ্যক মানুষ ইবাদাতগুজার ছিলেন এবং নিতান্তই অল্প সংখ্যক মানুষ ধর্মের সঠিক জ্ঞান রাখতেন। তাই তাঁদের জন্য এটাই উত্তম ছিলো যে, কেউ তাদেরকে ইসলাম সম্পর্কে মৌলিক ধারণা প্রদান করবে এবং তাদেরকে পবিত্রতা, নামাজ, রোজা, ইসলামের আরকান, ঈমানের স্তম্ভসমূহ সম্পর্কে জানাবে। অধিকন্তু, তিনি চাইতেন, তাদের মনে আল্লাহর পথে লড়াই ও শাহাদাতের কামনা দৃঢ়ভাবে গেঁথে দিতে, যা তাৎপর্যপূর্ণ ছিলো।

এটা উল্লেখ্য যে, বিগত চার শতাব্দী ধরে মুসলমানেরা উসমানীয় সাম্রাজ্যের পতনকে কেন্দ্র করে কঠিন সময় পার করছিলো। এগারোশ শতাব্দীর শুরু থেকে চৌদ্দশো শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত এরূপ অবস্থা বজায় থাকে, কেননা উসমানীয় সাম্রাজ্য সহ পুরো মুসলিম বিশ্ব নানাবিধ সমস্যার মাঝে পতিত ছিলো। সাম্রাজ্য জুড়ে অজ্ঞতা আর অন্যায়ের ছায়া বিরাজমান ছিলো, যার সামগ্রিক ফলাফল হিসেবে এখন মুসলমানদের এরূপ পরিণতি। অবমাননাকর এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে আছে মুসলিম জাতি। মুসলিম ভূমিগুলো আজ অন্যের করায়ত্ত হয়ে আছে, কিছু ভূমি আজ অপবিত্র করা হচ্ছে। বর্তমানে ইসলামী জাগরণ হচ্ছে, দিকে দিকে জনতা ইসলামের দিকে প্রত্যাবর্তিত হচ্ছে, কিন্তু এখন আমরা পূর্বের সেই কঠিন সময়ের পরিণতি ভোগ করে চলেছি। জ্ঞানের মশাল জ্বালিয়ে মুসলমানদের মাঝে নবজাগরন করার জন্য ইজ্জউদ্দীন কঠোর পরিশ্রম করতেন।

আল-কাসসাম তাই সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টায় থাকতেন কিভাবে সবার মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা যায়, তাদের মাঝে জ্ঞানের মশাল জ্বেলে দেওয়া যায় । এই কাজের মূলত ২টি দিক ছিলো। ইংরেজদের বিষয়ে সতর্কীকরণ এবং ইহূদীদের বিষয়ে সচেতন করা। ইংরেজদের বিষয়ে তার উদ্দেশ্য ছিলো জনসাধারণকে এটা বোঝানো যে, ইংরেজদের মধুর বুলির প্রলোভনে না পড়ে তারা যেনো তাদের কর্মকান্ডের দিকে দৃষ্টি দেয় এবং এ বিষয়ে সাবধান হয়। সেসময় ইংরেজদের ভূমিকা ছিলো সেরূপ চতুর শিকারীর ন্যায়, যে ঘুঘু জবেহ করার সময় ঘুঘুটি ধরে মোলায়েম ভাবে নিজের হাতে রাখে এবং তার গন্ডদেশ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। তখন হয়তো কোন ঘুঘু তা দেখে অপরকে বলবে, দেখো! তার চোখে অশ্রু! অন্য ঘুঘু তখন বলে, সেদিকে নয়! বরং তার হাতের দিকে খেয়াল করে দেখো, যে সে আসলে কি করছে!

ইংরেজদের অবস্থান ও ছিলো তদ্রুপ।
এই পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ করে তুলেছিলো কাদিয়ানীদের ইংরেজদের সাথে মিত্রতা! কাদিয়ানীরা সেসময় "জাফফা" নামক স্থানে বাস করতো। কাদিয়ানীরা, বাহাইদের(একটি স্বতন্ত্র মতবাদের অনুসারী ধর্মের লোকেরা) সাথে মিলিত হয়ে ইংরেজদের মানুষের মাঝে পছন্দনীয় হিসেবে উপস্থাপনের প্রচারণা চালাচ্ছিলো। "বাহাই"-রা তখন হাইফায় বসবাস করতো। কাদিয়ানীরা সাধারণ মানুষকে ইংরেজদের মান্য করে চলতে উদ্বুদ্ধ করতো এই বলে যে, এটা মুসলমানদের জন্য কর্তব্য। কাদিয়ানীরা ছিলো একটি কুখ্যাত মতাদর্শের অধিকারী এবং "বাহাই"-রা ও এর থেকে ব্যতিক্রম ছিলো না। অর্থাৎ, আল-কাসসামকে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সাথে আলোচনা করতে হয়েছে। তিনি তাদের বোঝানোর চেষ্টা করতেন পূর্বসময় থেকে ইংরেজদের সম্পর্কে তারা যে ধ্যান ধারণা লালন করেছে- যে ইংরেজদের ভালো উদ্দেশ্য রয়েছে, তারা মুসলমানদের উপকার করবে; এরূপ ধারণা ভুল, তারা যেনো তা পরিবর্তন করে। আসন্ন সমূহ বিপদের ব্যাপারে তিনি তাদের সতর্ক করতেন।

ইহূদীদের ব্যাপারে তার সতর্কীকরণ ছিলো এরূপঃ ইহুদীরা প্রকৃতপক্ষে মুসলমানদের থেকে এ পবিত্র ভূমি দখল করতে আসছে। তারা এ ভূমিকে তাদের মাতৃভূমি বানাতে চায়। দূর্ভাগ্যবশত, কিছু আরব লেখক সেসময় ইহূদীদের আগমনকে অতিথিসুলভ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। তারা ইহূদীদের অতিথির ন্যায় বরণ করেছিলেন, কেননা তারা ইয়াহুদীদের বাইবেলের ধারক ভাবতেন। আসলে তারা প্রকৃত বাস্তবতা সম্বন্ধে বড়োই গাফেল ছিলেন। ১৯১৮ সালে মক্কার "আল-ক্কাবিলাহ" পত্রিকায়, যা ছিলো শরিফ হুসেইন ইবন আলীর মুখপাত্র, একটি আর্টিকেল প্রকাশ করে। সেই আর্টিকেলে ইহূদীদের কে ফিলিস্তিনে আগত মেহমান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিলো। সেখানে বলা হয়, আরবীয়দের উচিত ইহুদীদেরকে স্বাগত জানানো এবং তাদের আতিথেয়তা করা!
কেবল ভেবে দেখুন, সেসময় আরবীয় এবং অন্য মুসলিমেরা কতটা গাফেল ছিলো! তারা কতোটা বিভ্রান্ত ছিলো!

আল-কাসসাম মানুষের মন থেকে এসব ভুল ভ্রান্তি দ্বারা পরিপূর্ণ চিন্তাগুলো সরিয়ে দেওয়ার জন্য সোচ্চার ছিলেন। তিনি এসব ধারণার মোকাবিলা করতেন এবং অদূরদর্শী এসব ভাবনার বিরোধীতা করতেন, যদিও তা ছিলো বৈসাদৃশ্যপূর্ণ এক লড়াই। তবুও তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যেতেন, শত্রুদের এসব মতবাদ জনসাধারণের মন থেকে সরিয়ে দিতে। তাঁর এ মহান কাজে কি কেউ সাহায্য করতেন? দুঃখের সাথে বলতে হয়, স্বল্পসংখ্যক কিছু মানুষ ব্যতীত আর কেউ নয়।

যাদের মাঝে সামান্য সচেতনতা ছিলো এবং ইহুদীদের পরিকল্পনা প্রতিরোধ করতে চাইতো, তারা ফিলিস্তিনে আরব শাসন প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছে পোষণ করতো।

কিন্তু আফসোস! তারা এই বিষয়ে বুঝতে অসমর্থ হয়েছিলো, যে ইংরেজ জাতি কখনোই মুসলমানদের ভালো চাইবে না। তারা ভাবতো, ইংরেজরা আরবীয়দের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করবে। তাঁদের নেতা ছিলেন একজন ভালো মানুষ, তার নাম ছিলো হাজী আমিন আল-হুসেইনী, যিনি একজন ফিলিস্তিনী শায়খ ছিলেন। তিনিও কিছু বিষয়ে বিভ্রান্তির শিকার ছিলেন। ইংরেজরা তাকে মিত্র বানিয়ে তার দ্বারা এ কথা আদায় করে নেয় যে, কোন শ্রমিক ধর্মঘট করার পূর্বে ইংরেজদের অনুমতি আদায় করতে হবে। প্রতিবাদ করার অনুমতি কখনোই দেয়া হবে না এটা সবার ই বোঝার কথা! প্রতিরোধ কখনোই অনুমতিসাপেক্ষ নয়। এটা মানুষের অনুভূতি, তাদের মতস্বাধীনতার উপর ভিত্তি করে হয়ে থাকে। প্রতিবাদে শাসকের হস্তক্ষেপের কোন যৌক্তিকতা হতেই পারেনা৷ অধিকার আদায় করে নেওয়া হয়, অনুমতির পরোয়া করে না।
বিখ্যাত কবি শাওকি রহিমাহুল্লাহ বলেন,

"
রক্ত দ্বারা অর্জিত স্বাধীনতার থাকে এমন একটি দরোজা,
যেখানে প্রত্যেক রক্তরঞ্জিত হাত কড়া নাড়তে পারে"।


আমরা আমাদের শত্রুদের থেকে আমাদের স্বাধীনতার প্রত্যাশা করতে পারিনা। তারা এমনটা কখনোই করবে না।
আল-কাসসাম জনসাধারণকে প্রতিরোধের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে শ্রুতিমধুর বাক্যের ব্যবহার করতেন।

১৯২৯ সালে " আল-বোরাক" বিপ্লব সংঘটিত হয়। আল বোরাক, যেখানে মিরাজের পবিত্র রাতে রাসূল(সাঃ) গিয়েছিলেন এবং ইহূদীদের কাছে এটি "ওয়েইলিং ওয়াল" বা ক্রন্দন দেয়াল নামে পরিচিত।

যেহেতু আমাদের রাসূল(সাঃ) এর বাহন সেখানে অবতরণ করে বলে সবার জানা আছে; তাই এটি যে ইসলামের ইতিহাসের সাথে সংযুক্ত তা স্পষ্ট, প্রমাণ করার কোন প্রয়োজন নেই। এটি সন্দেহাতীতভাবে একটি ইসলামী স্থাপনা। কেননা সমগ্র ফিলিস্তিনী ভূমি অনেক সময় ধরেই আরব মুসলিমদের করায়ত্ত ছিলো। আরব মুসলমানেরা যখন ফিলিস্তিন জয় করে, তখন তারা ইহুদীদের বিতাড়িত করেনি। বরং ফিলিস্তিনকে রোমানরা-ই আরবীয়দের কাছে সমর্পণ করেছিলো। মুসলমানেরা ফিলিস্তিন পুনরুদ্ধার করেছিলো পূর্ববর্তী নবী-রাসূলের স্মৃতিসম্বলিত স্থান হিসেবে। এই মহান কাজ সংঘটিত হয়েছিলো সাহাবায়ে কেরামদের দ্বারা। সাহাবীগণ ফিলিস্তিনকে নবী-রাসূলের পদধূলি দ্বারা ধন্য ভূমি হিসেবে পুনরুদ্ধার করেন, যেখানে সাত শতাব্দী ধরে মুশরিকেরা বাস করতো। অর্থাৎ, আরবীয়রা প্রকৃতপক্ষে ইহুদীদের থেকে কোন কিছুই কেড়ে নেয় নি। বাইতুল মুকাদ্দাসের কাছাকাছি আসার অনুমতি ইহুদীদের ছিলো না। উমরের শর্ত অনুযায়ী, তারা কেবল সপ্তাহে একদিন সেই দেয়ালের কাছে এসে প্রার্থনা করতে পারতো এবং বাইতুল মুকাদ্দাসে প্রবেশ না করেই তাদের ফিরে যেতে হতো।

যখন ১৯২৯ সাল, অর্থাৎ প্রায় ১৩৪৮ হিজরীতে "আল-বোরাক" বিপ্লব সংঘটিত হয়; তখন ইংরেজরা তিনজন নেতাকে আটক করে, যারা ছিলেন আল-কাসসামের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তারা ছিলেনঃ আতা আল-রাজী, ফুয়াদ হিজাযী এবং মোহাম্মদ জামজুম। তাদেরকে গ্রেফতার করা হয় এবং ফাঁসি দেয়া হয়। আল্লাহ তাদের উপর শান্তি বর্ষণ করুন।
সময় স্বল্পতার কারণে তাদের বিখ্যাত উক্তি গুলো উল্লেখ করতে পারছি না। তবে ফুয়াদ হিজাযীর একটি চমৎকার উক্তি রয়েছে। তিনি বলেন,
"আমরা অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কারাবরণ করতে রাজি আছি,
যদি তা ফিলিস্তিনের ভাগ্যাকাশে আলোকিত প্রভাতের সূচনা করে"।
আল-কাসসাম যখন তাঁর সাথীদের শাহাদাতবরণের কথা জানতে পারেন, তিনি তাঁর অনুভূতি দমন করার চেষ্টা করেন। তিনি একজন দয়ালু, গুরুগম্ভীর মানুষ হিসেবে ই সকলের কাছে পরিচিত ছিলেন। মামুলি, অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে তিনি এড়িয়ে যেতেন এবং আধ্যাত্মিক আলোচনা কে প্রাধান্য দিতেন বেশি। তিনি তাঁর অশ্রু সংবরণ করলেন এবং মিম্বারে উঠে লোকেদের উদ্দ্যেশ্যে প্রশ্ন করলেন। যদি ফাঁসি দ্বারা দন্ডপ্রাপ্ত সাথীরা তোমাদের গ্রামের হয়ে থাকে, তারা যদি ফিলিস্তিনি হয়ে থাকে এবং তোমাদের সাথেই একসময় এই আল-ইসতিকলাল মসজিদে শিক্ষাদান করে থাকে; তাহলে তাদের সাথে এরূপ হবার পরও কি করে তোমরা আয়েশের জীবন যাপন করতে পারো!

ইংরেজরা এই দাঙ্গা শুরু হওয়ার পর বহু আরবকে হত্যা করে এবং অনেককে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়। শুধুমাত্র সে সময় ই ১১৬ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি শাহাদাত বরণ করে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন। প্রায় ৩০০ জন লোক সেই ঘটনায় আহত হয়। সার্বিকভাবে বলতে গেলে এটি এক বিরাট হত্যাকাণ্ডের ই নামান্তর।
তারা কীভাবে এরূপ সহ্য করেছিলো এবং চুপ করে ছিলো? কিন্তু এটাই ছিলো বাস্তব চিত্র!

আল-কাসসাম বরাবরের মতো তাদের মাঝে জিহাদী প্রেরণা জাগিয়ে তুলতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। একদিন তিনি মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবায় বললেন,
"মসজিদে আসার পথে আমি কিছু যুবককে দেখছিলাম। তারা রাস্তা পরিষ্কারের উদ্দেশ্যে নিজেদের সাথে ঝাড়ু বহন করছিলো। কতোই না ভালো হতো যদি আল্লাহর পথে লড়াই করার উদ্দেশ্যে তাদের ঘাড়ে বন্দুক থাকতো! আমি আরো কিছু মানুষকে দেখলাম তারা ইংরেজ সৈন্যদের জুতো সাফ করে দিচ্ছিলো! কিন্তু তাদের উচিত ছিলো জুতো পরিষ্কার না করে সেসব ইংরেজ সৈন্যদের প্রাণ নিয়ে নেওয়া! কেননা এরা হচ্ছে সেই দখলদার বাহিনী যারা আমাদের ভূমি অন্যায়ভাবে কব্জা করে নিয়েছে, সাধারণ মানুষকে অপদস্ত করেছে এবং দেশের ক্ষতিসাধন করছে"।

এভাবেই তিনি সবার মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতেন, তাদের মাঝে জিহাদের প্রেরণা জাগাতেন।
একদিন তিনি মসজিদে উপস্থিত সকলের সামনে একটি পিস্তল উঁচু করে দেখিয়ে বললেন, কেউ যদি আল্লাহ এবং আখিরাতের উপর ঈমান এনে থাকে, তবে তাঁর কাছে অবশ্যই এরূপ অস্ত্র থাকা উচিত! আল্লাহু আকবার! তিনি কতোটা সচেষ্ট ছিলেন মানুষের মাঝে সচেতনতা ছড়িয়ে দিয়ে তাদের আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য প্রস্তুত করতে!
তিনি বলতেন, আমরা জয়লাভ করছি কিনা সে বিষয়ে আমার উদ্বেগ নেই । বরং আল্লাহর পথে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে লড়াই করার উদ্দীপনা ক্রমশ পুনরুজ্জীবিত করতেই আমরা কাজ করে যাবো। কেননা তখন সাধারণ মানুষের মনে জিহাদের প্রেরণা মৃতপ্রায় ছিলো! তারা এসব নিয়ে ছিলো বেখেয়াল, তাদের মাঝে শাহাদাতের তামান্না ছিলো না!
১৯৬৪ সালে গঠিত ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থার সংগঠক আশ-শুকাইর আহমেদ, (যিনি আল-কাসসাম ফিলিস্তিনে থাকাকালীন সেখানেই বাস করতেন) বলেন যে তিনি এরকম টা কখনো ভাবতে পারতেন না যে একজন পাগড়ী পরিহিত শায়খ ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সূচনা করতে পারে৷ এমনকি আল-কাসসামের মৃত্যুর পরও আশ-শুকাইর, আমিন আল-হুসেইনী সহ আরবীয় নেতারা জানতেন না যে ইংরেজদের বিরুদ্ধে মিলিটারী বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছেন আল-কাসসাম! কেননা তিনি এই কাজ গোপনে সম্পাদনা করতেন। আশ শুকাইরি বলেন, তারা কখনো এটা চিন্তাই করতে পারেন নি যে একজন শায়খ এবং খতীব কিভাবে ইংরেজদের বিরুদ্ধে এরূপ প্রতিরোধ গড়তে পারে এবং মানুষকে সশস্ত্র জিহাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারে! তিনি আরো বলেন, আল-কাসসামের অস্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কে অতোও জ্ঞান ছিলো না, তার কাছে রাজনৈতিক কিংবা মিলিটারি কোন জ্ঞান ছিলো না। তবে তার এবং তার অনুসারীদের মাঝে ছিলো পরিপূর্ণ বিশ্বাস। আল্লাহর প্রতি ভরসা এবং অকুন্ঠ বিশ্বাসের কারণেই তারা কোনরূপ সামরিক প্রস্তুতি ব্যতীত সবার প্রতি আল্লাহর পথে লড়াই করার ডাক দিতে পেরেছিলেন।
উদ্ধৃত এ সমস্ত কথাগুলোই আল-কাসসামের ব্যাপারে বলেছিলেন আশ-শুকাইরী।
আল-কাসসাম মসজিদে প্রায় ই কোরআনের একটি আয়াত উল্লেখ করতেন এবং দারসের মধ্যে এই আয়াতের ব্যাখ্যা বুঝিয়ে দিতেন। আয়াতটি হলোঃ
"আর তোমরা নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী সর্বাধিক পরিমাণ শক্তি ও সদাপ্রস্তুত ঘোড়া তাদের মোকাবিলার জন্য জোগাড় করে রাখো। এর মাধ্যমে তোমরা ভীত-সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহর শত্রুকে, নিজের শত্রুকে এবং অন্য এমন সব শত্রুকে যাদের তোমরা চেনো না। "
(সূরা আল আনফাল-আয়াতঃ৬০)
এই আয়াতের বারংবার উল্লেখ ইংরেজদের রাগান্বিত করতো। তারা তাঁর কাছে জানতে চাইলো, এই বানীর অর্থ কি? কেন তুমি বারবার এটা পাঠ করো! উত্তরে তিনি বলেন, এটি প্রভুর একটি শক্তিশালী আয়াত। ভেবে দেখুন, কি নিদারুণ সাহসিকতার কাজ করেছেন তিনি! আল্লাহর আয়াতকে দুশমনের সামনে শ্রেষ্ঠ বলে সত্যের পক্ষে ঘোষণা দেন এবং তিনি এই আয়াতের ব্যাখ্যা দেওয়া শুরু করেন। ইংরেজরা এতে ভীষণ রকম ক্ষেপে গিয়ে তাকে আটক করে। পরবর্তীতে হাইফা জুড়ে জনবিক্ষোভের সূচনা হলে ইংরেজরা তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এটাই ছিলো তাঁর শিক্ষাদানের ধরণ!

এভাবেই তিনি আল্লাহর কালাম এবং নবীজি(সাঃ) এর জীবনাচরণ সম্পর্কে মানুষকে শিক্ষা দিতেন। তিনি সবসময় বিদয়াতের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। যেমনঃ ইসলামে নব্য প্রবেশকারী কিছু আচার-অনুষ্ঠান হিসেবে শোকসভা, কারো কবরের উপর মাজার বা বেদী নির্মাণ করা, এবং সেই মাজারে লোকের আগমন ইত্যাদি। আল-কাসসাম আরেকজন সিরীয় ব্যক্তির সাথে একত্রে একটি বই লিখেছিলেন, যার নাম ছিলো মোহাম্মদ ক্কামিল আল-কাসসাব! পরস্পরের সহযোগীতায় এই বইটি রচনা করেছিলেন একজন ব্যক্তির কাজের সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে, যিনি বিদয়াতকে সমর্থন করতেন এবং বিদয়াতের মতো ঘৃণিত কাজের প্রসার ঘটাচ্ছিলেন। বইয়ের নাম ছিলোঃ খাজিরান সৃষ্ট বিভ্রান্তির উপর পর্যালোচনা”। এবং এই বইটি বাজারে ছাপা অবস্থায় পাওয়া যায় এখনো, সমাদৃত রূপে।

আল-কাসসাম মাঝে মাঝেই গ্রামে যেতেন পরিভ্রমণে, কেননা তিনি চাইতেন সেখানে অবস্থানরত কৃষক এবং শ্রমজীবী মানুষদের ব্যাপারে তিনি যেন বিস্মৃত না হন। তিনি তাদেরকে ভালো কাজ করতে এবং মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকার দাওয়াত দিতেন। এভাবে তিনি তাদের দ্বীন সম্পর্কে ধারনা দিতেন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আল-কাসসামের দ্বারা যেসব আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিলো, তাতে শামিল হওয়া ব্যক্তিদের মাঝে অধিকাংশই ছিলেন কৃষক, শ্রমিক! অনেকে হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারেন কেনো তিনি শিক্ষিত ব্যক্তিদের তাঁর সাথে রাখতেন না! তিনি চাইলে শায়খ, স্কলার, ছাত্র এদের মত ব্যক্তিদের প্রতি দাওয়াত দিতে পারতেন, এদেরকে তাঁর লক্ষ্য অর্জনের সহযোগী বানাতে পারতেন।কিন্তু তিনি তা না করে গ্যা্সোলিন বিক্রেতা, টিনের কারিগর- এদেরকে তাঁর কাজের সহযোগী করে নিয়েছিলেন। এর উত্তর তিনি নিজেই দিয়েছেন। তিনি বলেন, হাজারো মানুষের ভীড়ে এই মানুষগুলোকে আমি দেখেছি, সত্যের দিকে দ্বিধাহীনভাবে সাড়া দিতে। কেননা তাঁদের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্যের কারণেই তারা মিথ্যের সাথে আপোষ করতো না কখনো।
তাঁর সে সময়ে সাধারণ জনগণ ইসলাম থেকে দূরে সরে ছিলো। তাঁদের জীবনযাপন পদ্ধতির মাঝে ইসলামের লেশ মাত্র ও ছিলো না। তাঁদের ধারনা, চেতনার পরিবর্তন ঘটেছিলো। যার ফলে তারা ইসলামের সহীহ, সত্য ধারনা বুঝতে অসমর্থ ছিলো।এভাবে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, কৃষক এবং শ্রমিকেরা তাঁদের স্বভাবজাত সারল্যের দরুণ তাঁর সত্যের প্রতি দাওয়াতকে বেশ সহজেই গ্রহণ করবে। হয়তো তিনি নবী-রাসূলদের জীবনী পড়ে এটা জেনেছিলেন যে, অধিকাংশ নবী-রাসূলদের অনুসারীগণ ছিলেন দুর্বল এবং দরিদ্র, অসহায়।
অধিকন্তু, শিক্ষিত ব্যক্তিগণ আরবীয় পার্টিদের দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিলো, যারা জনসাধারণকে প্রতিজ্ঞা করেছিলো যে, ইংরেজরা ফিলিস্তিনের ভূমির প্রকৃত দাবীদারদের সকল ভূমি ফিরিয়ে দিবে। তারা সবাইকে এ বলে বুঝ দিতো যে, এখনকার এই বিপর্যয়পূর্ণ পরিস্থিতি একদিন কেটে যাবে। যদিও এসব ছিলো নিছক ই রাজনৈতিক মিথ্যে আশ্বাস। প্রায় ৭০ বছর যাবত এসব মিথ্যে আশা ই দেওয়া হচ্ছিলো, যদিও তা কোনভাবেই কোন ইতিবাচক ফলাফল আনতে ব্যর্থ হয়।
সকল রাজনীতি, চুক্তি, সন্ধি বিফলে যায়; কেননা ইহুদীরা কখনোই তাঁদের ঈশ্বর কে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ই রক্ষা করেনি, তাঁদের কাছে প্রেরিত রাসূলের সাথে করা ওয়াদা রক্ষা করেনি, এমনকি আমাদের রাসূল(সাঃ) এর সাথে করা চুক্তিও তারা ভঙ্গ করেছে এবং রাসুলুল্লাহ(সাঃ) কে হেয় করেছে। তাহলে কীভাবে তারা আমাদের সসাথে করা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে? যদি কেউ বিশ্বাস করে যে তারা(ইহুদীরা) কথা রাখবে, তাহলে সে পুরোপুরি সত্যের প্রতি অন্ধ। এখন থেকে ৭০ বছর আগে মানুষজন সত্য সম্বন্ধে আরো গাফেল ছিলো। তারা ভাবতো, সশস্ত্র আন্দোলনের কোন প্রয়োজন নেই বরং তারা রাজনীতি, নথিপত্র ও চুক্তির সাহায্যে ই তাঁদের অধিকার আদায় করে নিতে পারবে। তারা ঠিক এরূপ ই ভাবতো!
শিক্ষিত এবং সভ্য লোকেদের চিন্তা ভাবনা আরবীয় দলগুলো দ্বারা প্রভাবিত ছিলো। যাদের মাঝে হাজী আমিন আল-হুসেইনী, জামাল আল-হুসেইনী, মোহাম্মদ ‘ইজ্জাত দারওয়াজা প্রমুখ অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, যারা সেসময় ফিলিস্তিনের জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তারা সবাই ভাবতো যে, তারা এভাবেই অধিকার আদায় করে নিবে, কোন আন্দোলনের প্রয়োজন হবে না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এসব ধারণা ছিলো অযৌক্তিক এবং অদূরদর্শীতার অভাব!
আল-কাসসাম চেষ্টা করেছিলেন, তাঁর আন্দোলন গোপনে শুরু করতে এবং একারণে তিনি নিজস্ব কাজ দ্বারা নিজেকে সবার কাছে অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী হিসেবে প্রকাশ করেন। যেনো মানুষ তাঁকে অনুসরণ করে। কেন? কারণ সেই সময়, এটাই ছিলো উপযুক্ত পদক্ষেপ। সত্যের দিকে সবাইকে ডাকা যেতো সর্বসম্মুখে! কিন্তু আল্লাহর পথে জিহাদ করার জন্য মানুষকে সবার সামনে ডাকা যেতো না। কেননা সর্বত্র ইংরেজদের গুপ্তচর ছড়িয়ে থাকতো। তারা আরবদের প্রতিটি ঘরে, রাস্তায় আরবদের কর্মকান্ডের প্রতি নজর রাখতো। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এই যে, তখন সাধারণ মানুষ জিহাদের দাওয়াত গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত ছিলো না। তাই তাকে কাজ করতে হতো একান্ত গোপনে, এমনকি ফিলিস্তিনের মুক্তির জন্য কাজ করা নেতাদেরকে ও তিনি এ বিষয়ে অবগত করেন নি। তাঁর সমস্ত বীরোচিত কাজের কথা তাঁর শাহাদাৎবরণের পর প্রকাশ পায়। সাধারণ মানুষ প্রতিরোধ হতে দেখেছিলো, কিন্তু তারা জানতো না কোন নেতাদের দ্বারা এসব প্রতিরোধ পরিচালিত হয়। আল-কাসসাম ই ছিলেন সেই ব্যক্তি, যিনি এসব অপারেশন পরিচালনা করেছেন।
তিনি কীভাবে লোকেদের নির্বাচন করতেন? যারা আল- ইসতিকলাল মসজিদে শিক্ষাগ্রহণ করতে আসতো; তিনি তাদের গতিবিধি,উৎসাহ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতেন। এরপর তিনি সেসব ব্যক্তিদের বাছাই করতেন যারা শক্তিশালী ও মনোবলে বলীয়ান ছিলো, আল্লাহর পথে লড়াই করার ইচ্ছা পোষণ করতো এবং শাহাদাতের বাসনা করতো। পরবর্তীতে তিনি তাদের সহজাত বৈশিষ্ট্যের উন্নয়ন ঘটানোর প্রচেষ্টা করতেন। তাদের সাথে নিয়মিত সাক্ষাৎ করতেন। এভাবে ক্রমাগত পর্যবেক্ষণের পর যখন তাঁর কাছে মনে হতো, এই ব্যক্তি উপযুক্ত, আল্লাহর পথে লড়াই করার মতো ইচ্ছে, সাহস তার রয়েছে- তখন তিনি তার সাথে প্রাসংগিক বিষয়ে আলোচনা করতেন। তাকে বোঝাতেন যে আল্লাহর পথে জিহাদ করার গুরুত্ব কতোখানি! এভাবে যখন পাঁচ জন লোক তাঁর কাছে সংঘবদ্ধ হতো তিনি একজন যোগ্য ব্যক্তিকে তাদের নেতা হিসেবে নির্বাচন করে দিতেন, অন্যদের এবং তাঁর(আল-কাসসাম) মাঝে সংযোগ স্থাপনের জন্য! তারপর তিনি তাদেরকে অস্ত্র চালনার সেইসব কৌশল শিক্ষা দিতেন, যতটুকু তিনি সিরিয়ায় থাকাকালীন উসমানীয় সাম্রাজ্যের পতনপূর্ব সময়ে আয়ত্ত করেছিলেন! তিনি তাদেরকে এরপর ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা দিতেন। ইবাদতের নিয়মাবলী সম্বন্ধে প্রশিক্ষণ দিতেন। ইসলামের স্তম্ভসমূহ, ঈমান, জিহাদের গুরুত্ব এসব নিয়ে আলোচনা করতেন। তিনি এই কার্যক্রম চালিয়ে গিয়েছিলেন যতোক্ষণ না শতো শতো মানুষ তার কাছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। তার অনুসারী সংখ্যা হাজারের ও কম ছিলো। কেবল কয়েকশত অনুসারী ছিলো তাঁর। কিন্তু তাদের যোগ্যতা, মানসিক মনোবল এত বেশি ছিলো যে, তারা প্রত্যেকে নেতৃত্ব দিয়ে অগ্রগামী হতে পারতেন। এবং তারা মানুষের কাছে নিজেদের সম্মান ও ইজ্জতের জায়গা তৈরি করতে সমর্থ হয়েছিলেন। তারা সবাইকে সঠিক পথের দিকে আহবান করতেন।

আল-কাসসামের মৃত্যুর পরও তার সাথীরা তাঁর পদাংক অনুসরণ করে দাওয়াতের, প্রশিক্ষণের কাজ এবং আল্লাহর পথে লড়াই করা অব্যাহত রেখেছিলো। এভাবেই তিনি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে লোকেদের তৈরি করতেন এবং জিহাদের ডাক দেওয়ার সময় না আসা পর্যন্ত এ প্রশিক্ষণ চালিয়ে যেতেন। তাঁর মৃত্যুর কেবল দু'বছর পূর্বে তিনি তাঁর অনুসারীদের প্রতি জিহাদের আহবান করেন। তিনি ফিলিস্তিনে আসার পর থেকেই এই উদ্দেশ্য সামনে রেখে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু সেই প্রচেষ্টার বাস্তব রূপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন মৃত্যুর ২ বছর আগে! কেন তিনি আরো দেরি করলেন না? কারণ তাঁর কাছে মনে হয়েছিলো, সময়টা এমন যে আর সহ্য করা যাচ্ছে না। তাই তাঁরা লড়াই এর জন্য প্রস্তুত হলেন। কেননা যদি তারা এরূপ না করতেন, তবে ইংরেজ রা ই যুদ্ধের সূচনা করতো। যদি এই উদ্যোগ তিনি না নিতেন, তবে এর সুযোগ তারা নিয়ে নিতো। কারণ ইংরেজরা এ বিষয়ে অবগত ছিলো যে তাদের প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, যদিও তাদের জানা ছিলো না যে এর পেছনে আল-কাসসাম মূল ভূমিকা পালন করছেন।
আল-কাসসাম ইহুদীদের বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপ নিতে শুরু করলেন যেনো তাকে শাসকবিরোধী আখ্যা না দেওয়া হয়। তাই তিনি ইহুদীদের উপর আক্রমণ করতেন।
ফিলিস্তিনের নাহালাল গ্রামে একটি লড়াই সংঘটিত হয়েছিলো এবং সেই গ্রামটি মারজ ইবন আমরে (একটি উপত্যকা) অবস্থিত ছিলো। এই উপত্যকা আজর ওয়াইজম্যানের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিলো, যিনি পরবর্তীতে ইহুদী রাষ্ট্র ফিলিস্তিনের প্রথম রাষ্ট্রপতি হন। লড়াই হওয়ার পর, আজর ওয়াইজম্যান গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন- যদিও ইহুদীদের ক্ষতি অতোটা বৃহৎ ছিলোনা। দু'জন ইহুদী মারা যায় ও কিছু ব্যক্তি আহত হয়। কিন্তু এই লড়াই ফিলিস্তিনীদের উপর বিরাট প্রভাব বিস্তার করে। কেননা এটাই ছিলো প্রথম বার, যখন কেউ সশস্ত্র লড়াইয়ে লিপ্ত হয়েছিলো। ইংরেজরা উৎসুক ছিলো এই ঘটনার প্রধান ভূমিকা পালনকারী কারা তা জানার জন্য। একজন টিনের কারিগর, যার নাম ছিলো মুস্তাফা আল-আহমদ; একটি হাতে বানানো বিস্ফোরক তৈরি করে এবং তা আহমদ আল- ঘালায়েনীর হাতে দেয়। তিনি সেই বিস্ফোরক সেখানে পেতে রাখেন, যেখানে গ্রাম্য রক্ষীরা থাকতো। তিনি তাদের আগমণের সকল চিহ্ন মুছে দিতে ভেড়ার পাল সাথে নিয়ে এসেছিলেন। এরপর কাজ শেষ করে তারা পাহাড়ে, তৃণভূমিতে ছড়িয়ে পড়েন, যাতে কেউ কোনভাবেই জানতে না পারে এই পরিকল্পনার পেছনে কারা ছিলো।
বিস্ফোরক হামলায় দুজন ইহুদির মৃত্যু ও কয়েকজনের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এতটুকু ঘটার কারণেই সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু হলো, এই লড়াইয়ের উদ্যোগ কারা নিয়েছে তা কেউ জানে কিনা! ইংরেজ দখলদারেরা বরাবরের মতোই ইহুদীদের পক্ষে ছিলো। তারা ইহুদীদের জন্য সকল সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করে চলেছিলো। তাদের উচ্চপদে অধিষ্ঠিত করা, অধিক হারে অভিবাসন করা, অস্ত্রের ব্যাপারে কোন বাধা না দেওয়া ইত্যাদি। কোন আরবীয় যদি কেবল একটি অস্ত্র বহন করা অবস্থায় আটক হয়, তার জন্য মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাবাস এবং ভয়াবহ নির্যাতন নিশ্চিত ছিলো। অন্যদিকে ইহুদীরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত হওয়া এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত হতে যাওয়া অস্ত্রের প্রশিক্ষণ পেতো। এটা ছিলো এক বেদনা ভারাক্রান্ত সময়ের গল্প!
আল-কাসসামের সাথীরা পাহাড়ে দেখা করতেন একে অপরের সাথে। একবার তারা সিদ্ধান্ত নিলেন, হাইফা অবরোধ করবেন এবং শত্রুদের উপর অপ্রত্যাশিত হামলা করবেন। কিছু ব্যক্তি উদ্যোগ নিয়েছিলেন এবং অন্যরা তাদের সমর্থন করেছেন। তো, তারা পরিকল্পনা করলো পুলিশ কেন্দ্র, পৌরসভা কার্যালয় ইত্যাদি স্থানে আক্রমণ করবে। তারা আশা করেছিলো যে আরবীয়রা এ লড়াইয়ে তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে এবং হাইফা অত্যাচারী ইংরেজ ও ইহূদীদের থেকে মুক্তি লাভ করবে। তারা ভেবেছিলো, সমগ্র ফিলিস্তিনের মুক্তিলাভের পথে এটাই হবে প্রথম সাফল্য। এরূপ ভেবে তারা পরিকল্পনা করেছিলো। তারা বনজঙ্গল এবং পাহাড় থেকে হাইফা ঘিরে ফেললো এবং অবরুদ্ধ করলো। কিন্তু তাদের স্বারা অনিচ্ছাকৃত ভাবে একটি ভুল হয়ে গিয়েছিলো।
আল-কাসসামের মুজাহিদ দলের একজন সদস্য দু'জন ইহুদীকে টহল দিতে দেখে। তাই দেখে সে এদেরকে মেরে ফেলার কথা ভাবলো। সে অস্ত্রসজ্জিত অবস্থায় প্রস্তুত হয়েই ছিলো শত্রুকে আক্রমণের জন্য। সে তখন একজনকে হত্যা করে ফেললেও অন্যজন পালিয়ে যেতে সমর্থ হয়। সে ফিরে গিয়ে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে অবহিত করে। তখন ব্রিটিশ পুলিশ তাদের গোয়েন্দাদের কাজে লাগিয়ে জানতে পারে যে আল-কাসসাম তার সাথীদের নিয়ে ওই ঘটনাস্থলেই অবস্থান করছেন। তাই তারা ভাবলো এই ক্রমবর্ধমান আন্দোলনকে এখানেই রুখে দেওয়ার এটাই মোক্ষম সময়। ৪০০ এর ও বেশি ব্রিটিশ সৈন্য জড়ো হয় এবং আকাশপথে সমগ্র এলাকা নজরদারীতে রাখা হয়। পুরো এলাকা টহল দিয়ে বের করা হয় আল-কাসসাম কোথায় আছেন। তখন আল-কাসসামেরা কয়জন সাথী ছিলেন? কেবল মাত্র নয়জন! আটজন সাথী এবং তিনি স্বয়ং!
৪০০ জন সৈন্য তাদের পরিবেষ্টন করে ফেললো এবং আল-কাসসামকে বলা হলো আত্মসমর্পণ করতে। কিন্তু তারা তাতে রাজী হন নি। তিনি এবং তাঁর সাথীরা শাহাদাতের পথ বেছে নিলেন। আল্লাহু আকবার!
আল-কাসসাম কখনোই লড়াইয়ে জয়লাভ করা নিয়ে চিন্তা করতেন না। তার উদ্দেশ্য ছিলো জিহাদের চেতনা মানুষের মাঝে পুনরুজ্জীবিত করা। তাই তিনি এবং তাঁর সাথীরা শাহাদাত বরণ করার সম্মান অর্জন করলেন।
ফলাফল হয়েছিলো এই যে, কেবল তাঁর দু'জন সাথী বেঁচে ছিলো এবং আর সবাই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে! এটা হয়েছিলো ১৩৫৪ হিজরীতে, অর্থাৎ ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে। আল-কাসসামের শাহাদাত বরণের মাধ্যমেই তার জীবন শেষ হয়ে যায়নি। বরং শাহাদাতের পর তাঁর আদর্শ সবার মাঝে আরো বিস্তৃত হয়েছে।
আল্লাহ বলেনঃ
" যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে, তাদেরকে মৃত মনে কোরো না। তারা আসলে জীবিত। নিজেদের রবের কাছ থেকে তারা জীবিকা লাভ করছে। আল্লাহ নিজের অনুগ্রহ থেকে তাদের যা কিছু দিয়েছেন তারা তাতেই আনন্দিত ও পরিতৃপ্ত এবং যেসব ঈমানদার লোক তাদের পরে এ দুনিয়ায় রয়ে গেছে এবং এখনো সেখানে পৌঁছেনি, তাদের জন্যও কোন ভয় ও দুঃখের কারণ নেই, একথা জেনে তারা নিশ্চিন্ত হতে পেরেছে। তারা আল্লাহর পুরষ্কার ও অনুগ্রহ লাভে আনন্দিত ও উল্লসিত! "
(সূরা আল-ইমরান, আয়াতঃ ১৬৯-১৭১)
তাই বলা যায়, আল-কাসসামের মৃত্যুর পর তাঁর আদর্শে এবং ফিলিস্তিনের সংগ্রামে এক নবজীবনের সূচনা হয়। তাঁর যোগ্য অনুসারী ফারহান আল- সা'দী তাঁর মৃত্যুর কয়েকমাস পরেই ১৯৩৬ সাল থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত ৩ বছর ব্যাপী সমগ্র ফিলিস্তিন জুড়ে সাধারণ ধর্মঘট এর সূচনা করেন। তিনি রোজাদার অবস্থায় শাহাদাতবরণ করেন, যখন ইংরেজরা তাঁকে ফাঁসিকাষ্ঠে হত্যা করে। তখন তাঁর বয়স ছিলো ৭৭ বছর। আল্লাহু আকবার! ৮০ বছর হওয়ার পূর্বে তিনি রোজাদার অবস্থায় আল্লাহর ডাকে সাড়া দেন। ফারহান আল-সা'দী, আল-কাসসামের মৃত্যুর পর তাঁর অনুসারীদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। জিহাদের এ ধারা অব্যাহত থাকে এবং ফিলিস্তিনের জনগণ সম্মান ও মর্যাদার স্বরূপ বুঝতে পারে।
ফিলিস্তিনের একজন দেশপ্রেমী ইতিহাসবিদ, মোহাম্মদ ইজ্জাত দারওয়াজা। তিনি বেশ সুপরিচিত ছিলেন এবং অনেক রাজনৈতিক রোজনামচা লিখেছেন। তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত মুসলিম এবং দ্বীন সম্বন্ধে সঠিক ও পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখতেন। তিনি বলেন, আল-কাসসাম আল্লাহর পথে লড়াইয়ের মাধ্যমে তাঁদের অর্জনের পথ সুগম করে দিয়েছেন।
প্রিন্স রুওয়াইহাহ, (যিনি সেসময় ইরাকে ছিলেন) একজন ফিলিস্তিনী নেতা, যিনি ফিলিস্তিনে উদ্ভূত সমস্যা নিয়ে তৎপর ছিলেন। তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করতেন, যদি সেসময় আল-কাসসামের সাথে যুক্ত হয়ে এই মহান লড়াইয়ে তিনি অংশ নিতে পারতেন! তিনি আরো বলেন, সেসময় আরব এবং মুসলিমদের কাছে সামনে এগিয়ে যাওয়া এবং ইহুদীদের রুখে দেওয়ার জন্য আল্লাহর পথে লড়াইয়ে লিপ্ত হওয়া ছাড়া আর কোন পথ ছিলো না।
এরূপ আরো অনেকেই ইজ্জউদ্দীন আল-কাসসামের ব্যাপারে প্রশংসা করেছেন। এই মহান মানুষের ত্যাগ ও অবদান কেউ কখনো ভুলবে না। আমি আগেই উল্লেখ করেছি যে, অধিকাংশ মানুষ বিস্মিত হয়েছিলো এটা জানতে পেরে যে, মসজিদের একজন শায়খ ৬ বছর ধরে ইংরেজ ও ইহুদীদের দাবিয়ে রাখা সেই সংগঠনের মূল সংগঠক! তারা কখনো এটা তাদের চিন্তাতে আনতে ও পারেনি শেষ দু'বছরের সকল লড়াইয়ের পিছনে তাঁর ভূমিকা ছিলো!
আল-কাসসামের মৃত্যু তাৎপর্যপূর্ণ ছিলো এবং আল্লাহ তাঁকে এর জন্য সর্বোত্তম প্রতিদান দান করবেন। এখনো পর্যন্ত ফিলিস্তিনের মুসলমানেরা শ্রদ্ধাভরে তাঁকে স্মরণ করে এবং চিরদিন তিনি সবার অন্তরে অমলিন হয়ে থাকবেন।
হামাসের মুজাহিদ দল "ইজ্জউদ্দীন আল-কাসসাম" দল নামে সমধিক পরিচিত। আল্লাহ তাঁর স্মরণ থেকে মানুষকে বিস্মৃত করেন নি। বরং তাঁর সময় থেকে আরো ৫০ বছর পর জন্মগ্রহণ করা কিছু ন্যায়বান যুবক তার আদর্শকে পুনরুজ্জীবিত করেন। তারা তাঁর লড়াইয়ের নীতি অনুসরণ করে। এর মাধ্যমে এটা প্রমাণ হয় যে, সেসময় আল-কাসসামের অবলম্বনকৃত পন্থা ই ছিলো যুক্তিযুক্ত! অন্য কোন পন্থাই তখন কার্যকর ও সফলতা এনে দিতে পারতো না। অন্য সকল পন্থা কেবল বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। তাই, আল্লাহর পথে লড়াই করার মাধ্যমেই কেবল উদ্দেশ্য সফল করা সম্ভব ছিলো!
মানুষ যেসব কল্পনা করতো ইহুদীদের সাথে শান্তিতে, মিলেমিশে বসবাস করার, এবং এই উদ্দেশ্যে তারা বিভিন্ন চুক্তি সম্পাদন করেছিলো; তা কেবল স্বপ্ন ই ছিলো! কোন ইতিবাচকতা সেখানে ছিলো না।
তাই, আল-কাসসামের মৃত্যুর পঞ্চাশ বছর পর, ন্যায়নিষ্ঠ যুবকেরা, তাঁর দেখানো পথে অগ্রসর হয়ে, লড়াইয়ের ক্ষেত্রে তাঁর নীতির অনুসরণ করে পুনরায় শত্রুকে আক্রমণ করে।
এখন, এত সময় পর, যখন আমরা আল-কাসসামের সহযোগীদের ব্যাপারে জানতে পারি, আমাদের গর্ববোধ হয় এবং আমরা আশার বাণী খুঁজে পাই। আল-কাসসাম দৃঢ় সংকল্পের দ্বারা যেসব তরুণদের অনুপ্রাণিত করে গিয়েছেন, তারা একদিন শত্রুকে পরাজিত করে দীর্ঘপ্রতীক্ষিত বিজয় আনবেন এবং আল্লাহ তাদের এ অর্জনে সাহায্য করবেন ইনশাআল্লাহ। যা পুরো মুসলিম উম্মাহর জন্য সম্মান ও গৌরবের অর্জন হবে। আমাদের নিকট অতীতের ইতিহাস নিশ্চয়ই আমাদের জন্য কষ্টের। কিন্তু পূর্বের এসব ইতিহাস আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়, আশার আলো জিইয়ে রাখে। বর্তমানে যেসকল লড়াই সাহসিকতার সাথে পরিচালিত হয়, যার খবর আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি, তা আমাদের আশান্বিত করে।
এই কথা কে কবে ভাবতে পেরেছিলো যে, শ্যারন- যে কিনা সাবরা এবং শাতিলা হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী ছিলো, এবং তার অপরাধের জন্য কুখ্যাত ছিলো, হামাসে সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রার্থনা করবে! সে হামাস এবং ইজরায়েল এর মাঝে যুদ্ধবিরতি চেয়েছিলো! আল্লাহু আকবার! ঈমানের জোরেই কেবল এটা সম্ভব হয়েছিলো! ইজরায়েল এর সাথে সংগ্রামের দরুণ আরবীয়দের ই যুদ্ধবিরতি প্রার্থনা করার কথা ছিলো। আমাদের ই এই যুদ্ধবিরতি চাওয়ার প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু এখন শ্যারন, হামাস থেকে যুদ্ধবিরতি চাইছে। এটা আমাদের জন্য আনন্দিত হওয়ার মতো ব্যাপার। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, আল-কাসসামের অবলম্বন করা সকল নীতি যথোপযুক্ত ছিলো, কেননা আসলে ইহুদীরা এ ছাড়া আর কোন উপায়ে পরাস্ত হবার নয়। তারা কেবল শক্তি ও জোরের কাছে ই হার মানবে।
আল-কাসসামের কন্যা, মাইমানাহ কি বলেছিলেন তা জানেন কি? মাইমানাহকে ১৯৩৮ সালে কায়রোতে নিয়ে আসা হয়, যাতে সে তাঁর পিতার মৃত্যুকে স্মরণ করতে পারে। তিনি শুরুতেই আল্লাহর প্রশংসা করেন, যিনি তাঁর পিতার শাহাদাত কবুল করে নিয়ে তাকে সম্মানিত করেছেন। এ কথা বলার পরই তিনি জ্ঞান হারান। কি হৃদয়স্পর্শী ঘটনা! এগুলো হচ্ছে তাঁর মেয়ের কথা, যাকে তিনি সাহসিকতা ও লড়াইয়ের শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং ইসলামকে ভালোবাসতে শিখিয়েছেন।
আল্লাহ তায়ালা আল-কাসসাম এবং তাঁর কন্যা মাইমানাহকে জান্নাতের সম্মানের আসনে আসীন করুন এবং আমাদেরকে তাদের সাথী হবার তাওফিক দান করুন।
আমীন।

“ ইজ্জউদ্দদীন আল কাসসাম(রহিমাহুল্লাহ)
(২য় ও শেষ পর্ব)

মূলঃ শায়খ মূসা আল শরীফ(হাফিজাহুল্লাহ
ভাবানুবাদঃ সাবিহা সাবা

পঠিত : ৩১৯ বার

মন্তব্য: ০