Alapon

তাওহিদ বা ইমান ভঙ্গকারী বিষয়সমূহ

তাওহিদ বা ইমান ভঙ্গকারী বিষয়সমূহ

অজু-সালাত-সিয়ামসহ বিভিন্ন ইবাদত বিনষ্ট হওয়ার যেমন কিছু কারণ আছে, ঠিক তেমনই সকল ইবাদতের মূল ইমান বা তাওহিদ ভঙ্গেরও কিছু কারণ আছে। কিন্তু অত্যন্ত আফসোসের বিষয় হলো, বিভিন্ন আমল ভঙ্গের কারণ আমাদের জানা থাকলেও সকল আমলের ভিত্তিমূল ইমান ভঙ্গের কারণগুলো আমরা অধিকাংশ মুসলিমই জানি না; অথচ ওগুলোর চাইতে এটা জানার গুরুত্ব অনেকগুণে বেশি। কেননা, যে জিনিস যত দামী হয়, তা বিনষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করাটাও তত গুরুত্বপূর্ণ হয়। দুনিয়ার জীবনে একজন মুমিনের জন্য যেহেতু ইমানই সবচেয়ে দামী ও গুরুত্বপূর্ণ, তাই এটা বিনষ্ট হওয়ার কারণসমূহ জেনে তা থেকে ইমানকে রক্ষা করাটাও তার কাছে সবচেয়ে অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য হবে—এটাই স্বাভাবিক।

ইমান ভঙ্গের কারণ কয়টি, এ নিয়ে অনেক আলিম ও গবেষকের মাঝে সংখ্যাগত কিছু মতপার্থক্য থাকলেও এটা মৌলিক কোনো মতভিন্নতা নয়। বস্তুত গুরুত্বের বিচারে কেউ কমসংখ্যক কারণগুলো উল্লেখ করেন আর কেউ একটু বিস্তারিত বলতে গিয়ে প্রকার বৃদ্ধি করেন। কারও আলোচনায় একটার মধ্যেই একাধিক কারণ চলে আসে, আবার কারও আলোচনায় প্রত্যেকটিকে আলাদা আলাদা করে বিচার করা হয়। এজন্যই বিভিন্নজনের কথা বা আলোচনায় সংখ্যাগত কিছুটা ভিন্নতা দেখা যায়। অবশ্য দুয়েকটি বিষয়ে মৌলিক মতভিন্নতাও রয়েছে। আমরা সব কারণ যাচাই-বাছাই করে ও এতে পরিমার্জন-পরিশোধন করে মোট দশটি কারণ নির্ণয় করেছি। এ দশটির মাঝেই ইমান ভঙ্গের মৌলিক সব কারণ চলে এসেছে। ইমান ভঙ্গের এ দশটি কারণ মুখস্ত করলে ইমানের পরিচর্যা করা এবং ইমান বিনষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ হবে, ইনশাআল্লাহ। আমরা নিম্নে সংক্ষিপ্তাকারে কারণগুলো উল্লেখ করছি।

এক : গাইরুল্লাহর ইবাদত করা

এটা হলো উলুহিয়্যা বা কাউকে উপাস্য বানানোর ক্ষেত্রে শিরক। আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর পূজা করা বা কাউকে ইবাদতের উপযুক্ত মনে করা—এটা কুফর হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। কোনো মুমিন গাইরুল্লাহর ইবাদত বা তাতে বিশ্বাসী হলে তার ইমান বিনষ্ট হয়ে যাবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন :
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ. لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ
‘বলুন, আমার সালাত, আমার ইবাদাত, আমার জীবন ও আমার মরণ জগতসমূহের রব একমাত্র আল্লাহরই জন্যে। তাঁর কোনো শরিক নেই। আর আমাকে এ আদেশই করা হয়েছে এবং আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে আমিই প্রথম।’ (সুরা আল-আনআম : ১৬২-১৬৩)

শাইখ সুলাইমান বিন আব্দুল্লাহ রহ. বলেন :
وقد نص العلماء من أهل المذاهب الأربعة، وغيرهم في باب حكم المرتد، على أن من أشرك بالله فهو كافر، أي: عبد مع الله غيره بنوع من أنواع العبادات.
‘চার মাজহাবের উলামায়ে কিরাম এবং অন্য সকলেই ‘মুরতাদের হুকুম’ অধ্যায়ে বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করবে, অর্থাৎ আল্লাহর সাথে অন্য কারও ইবাদত করবে, চাই তা যে প্রকারের ইবাদতই হোক না কেন, সে কাফির।’ (তাইসিরু আজিজিল হামিদ : ১৮৮, প্রকাশনী : আল-মাকতাবুল ইসলামি, বৈরুত)

দুই : রুবুবিয়্যার ক্ষেত্রে শিরক

রুবুবিয়্যার ক্ষেত্রে শিরক হলো, এই বিশ্বাস পোষণ করা যে, সৃষ্টির কর্তৃত্বকারী আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ আছে। যেমনটি জাহিল লোকগণ অনেক অলিদের ব্যাপারে এ বিশ্বাস রাখে যে, তাদের হাতে বিভিন্ন বিষয়ের কর্তৃত্ব ও বিপদ দূর করার ক্ষমতা রয়েছে। অনুরূপ শিয়া ইমামিয়া, ইসমাইলিয়া ও বাতিনি সম্প্রদায় বিশ্বাস করে যে, সৃষ্টিজগতে তাদের ইমামদের অদৃশ্য ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব রয়েছে। এসব বিশ্বাস সব শিরকপূর্ণ। কোনো মুমিন এমন বিশ্বাস রাখতে পারে না। কেউ এমন বিশ্বাস রাখলে তার ইমান চলে যাবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ وَإِنْ يُرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلَا رَادَّ لِفَضْلِهِ يُصِيبُ بِهِ مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَهُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
‘আর আল্লাহ যদি তোমার ওপর কোনো কষ্ট আরোপ করেন, তিনি ছাড়া আর কেউ নেই, যে তা দূর করবে। আর আল্লাহ যদি তোমার কল্যাণ চান, তবে এমন কেউ নেই, যে তাঁর অনুগ্রহ প্রতিহত করবে। তাঁর বান্দাদের মধ্যে তিনি যাকে ইচ্ছা কল্যাণ দান করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা ইউনুস : ১০৭)

অন্যত্র আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :
مَا يَفْتَحِ اللَّهُ لِلنَّاسِ مِنْ رَحْمَةٍ فَلَا مُمْسِكَ لَهَا وَمَا يُمْسِكْ فَلَا مُرْسِلَ لَهُ مِنْ بَعْدِهِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
‘আল্লাহ মানুষের প্রতি যে রহমত খুলে দেন, কেউ তা নিবারণ করতে পারে না এবং যা কিছু তিনি রুদ্ধ করেন, এমন কেউ নেই, যে তার পরে তা উন্মুক্ত করতে পারে। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা ফাতির : ২)

আল্লাহ তাআলা অপর এক আয়াতে বলেন :
قُلِ ادْعُوا الَّذِينَ زَعَمْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ لَا يَمْلِكُونَ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ وَمَا لَهُمْ فِيهِمَا مِنْ شِرْكٍ وَمَا لَهُ مِنْهُمْ مِنْ ظَهِيرٍ
‘বলুন, তোমরা ওদেরকে ডাকো, যাদেরকে তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে ইলাহ মনে করো। ওরা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে অণু পরিমাণ কিছুর মালিক নয় এবং এতদুভয়ে ওদের কোনো অংশ নেই। আর ওদের কেউ তাঁর সহায়কও নয়।’ (সুরা সাবা : ২২)

তিন : দ্বীনের অকাট্য বিধানকে অস্বীকার করা

একজন মুমিনের জন্য দ্বীনের অকাট্য সব বিধানের ব্যাপারে স্বীকৃতি থাকা আবশ্যক। যদি কেউ দ্বীনের এমন অকাট্য কোনো বিষয়ে মিথ্যারোপ বা অস্বীকৃতি প্রদর্শন করে, তাহলে তৎক্ষণাৎ তার ইমান বিনষ্ট হয়ে যাবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أَوْ كَذَّبَ بِآيَاتِهِ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُونَ
‘তাঁর চেয়ে বড় জালিম আর কে হতে পারে, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে কিংবা আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে? নিশ্চয়ই অপরাধীরা সফলকাম হবে না।‘ (সুরা আল-আনআম : ২১)

আল্লামা ইবনু আবিল ইজ রহ. বলেন :
فَلَا خِلَافَ بَيْنَ الْمُسْلِمِينَ أَنَّ الرَّجُلَ لَوْ أَظْهَرَ إِنْكَارَ الْوَاجِبَاتِ الظَّاهِرَةِ الْمُتَوَاتِرَةِ، وَالْمُحَرَّمَاتِ الظَّاهِرَةِ الْمُتَوَاتِرَةِ، وَنَحْوِ ذَلِكَ، فَإِنَّهُ يُسْتَتَابُ، فَإِنْ تَابَ، وَإِلَّا قُتِلَ كَافِرًا مُرْتَدًّا
‘মুসলমানদের মধ্যে এ ব্যাপারে কোনো বিরোধ নেই যে, কোনো ব্যক্তি যদি দ্বীনের অকাট্য ও সুস্পষ্ট ওয়াজিব বা হারাম বা এ জাতীয় (অকাট্য) কোনো বিধানকে অস্বীকার করে; তাহলে তাকে তাওবা করতে বলা হবে। সুতরাং তাওবা করলে তো ভালো; নতুবা তাকে কাফির ও মুরতাদ হিসেবে হত্যা করা হবে।’ (শারহুল আকিদাতিত তাহাবিয়্যা : ২/৪৩৩ (মুআসসাসাতুর রিসালা, বৈরুত)

আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَجَحَدُوا بِهَا وَاسْتَيْقَنَتْهَا أَنْفُسُهُمْ ظُلْمًا وَعُلُوًّا فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُفْسِدِينَ
‘তারা (ইহুদিরা) অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন করে নির্দেশগুলো প্রত্যাখ্যান করল; যদিও তাদের অন্তর এগুলোকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছিল। অতঃপর দেখুন, বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কেমন হয়েছিল।’ (সুরা আন-নামল : ১৪)

আল্লাহ তাআলা অন্যত্র ইরশাদ করেন :
قَدْ نَعْلَمُ إِنَّهُ لَيَحْزُنُكَ الَّذِي يَقُولُونَ فَإِنَّهُمْ لَا يُكَذِّبُونَكَ وَلَكِنَّ الظَّالِمِينَ بِآيَاتِ اللَّهِ يَجْحَدُونَ
‘অবশ্যই আমি জানি, তারা যা বলে তা তোমাকে নিশ্চয়ই কষ্ট দেয়। কিন্তু তারা তো (কেবল) তোমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে না; বরং এই জালিমরা আল্লাহর নিদর্শনসমূহকেই অস্বীকার করে।’ (সুরা আল-আনআম : ৩৩)

আল্লাহ আরও তাআলা বলেন :
مَنْ كَفَرَ بِاللَّهِ مِنْ بَعْدِ إِيمَانِهِ إِلَّا مَنْ أُكْرِهَ وَقَلْبُهُ مُطْمَئِنٌّ بِالْإِيمَانِ وَلَكِنْ مَنْ شَرَحَ بِالْكُفْرِ صَدْرًا فَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ مِنَ اللَّهِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
‘যার ওপর জবরদস্তি করা হয় এবং তার অন্তর বিশ্বাসে অটল থাকে, সে ব্যতীত যে কেউ বিশ্বাসী হওয়ার পর আল্লাহতে অবিশ্বাসী হবে এবং কুফরির জন্য মন উম্মুক্ত করে দেবে, তাদের ওপর আপতিত হবে আল্লাহর গজব এবং তাদের জন্যে রয়েছে মহাশাস্তি।’ (সুরা আন-নাহল : ১০৬)

চার : হারামকে হালাল বা হালালকে হারাম মনে করা

শরিয়তের হারামকে হারাম জানা আর হালালকে হালাল জানা ইমানের জন্য অন্যতম শর্ত। অতএব, কেউ যদি দ্বীনের প্রমাণিত কোনো হারামকে হালাল দাবি করে বা অন্তরে হালাল মনে করে কিংবা প্রমাণিত কোনো হালালকে হারাম দাবি করে বা অন্তরে হারাম বলে বিশ্বাস করে, তাহলে তার ইমান চলে যাবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন :
قَاتِلُوا الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلَا يُحَرِّمُونَ مَا حَرَّمَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَلَا يَدِينُونَ دِينَ الْحَقِّ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ حَتَّى يُعْطُوا الْجِزْيَةَ عَنْ يَدٍ وَهُمْ صَاغِرُونَ
‘তোমরা যুদ্ধ করো আহলে কিতাবের ওই লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও হাশর দিবসের প্রতি ইমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম; (তাদের সাথে ততক্ষণ যুদ্ধ করো) যতক্ষণ না করজোড়ে তারা জিজিয়া প্রদান করে।’ (সুরা আত-তাওবা : ২৯)

ইমাম ইবনু আব্দিল বার রহ. বর্ণনা করেন :
وَقَالَ عَدِيُّ بْنُ حَاتِمٍ: أَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَفِي عُنُقِي صَلِيبٌ فَقَالَ لِي: يَا عَدِيَّ بْنَ حَاتِمٍ: أَلْقِ هَذَا الْوَثَنَ مِنْ عُنُقِكَ. وَانْتَهَيْتُ إِلَيْهِ وَهُوَ يَقْرَأُ سُورَةَ بَرَاءَةٍ حَتَّى أَتَى عَلَى هَذِهِ الْآيَةِ {اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ} [التوبة: [31 قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا لَمْ نَتَّخِذْهُمْ أَرْبَابًا، قَالَ: بَلَى، أَلَيْسَ يُحِلُّونَ لَكُمْ مَا حُرِّمَ عَلَيْكُمْ فَتُحِلُّونَهُ، وَيُحَرِّمُونَ عَلَيْكُمْ مَا أَحَلَّ اللَّهُ لَكُمْ فَتُحَرِّمُونَهُ؟ فَقُلْتُ: بَلَى، قَالَ: تِلْكَ عِبَادَتُهُمْ.
‘আদি বিন হাতিম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, গলায় ক্রুশ ঝুলানো অবস্থায় আমি একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট আসলাম। তখন তিনি বললেন, হে হাতিমপুত্র আদি, তোমার গলা থেকে এ মূর্তি ফেলে দাও। তিনি সুরা তাওবা তিলাওয়াতকালীন আমি তাঁর নিকট পৌঁছলাম। তিনি সুরা তাওবা তিলাওয়াত করতে করতে যখন এ আয়াত اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ [‘তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের পণ্ডিত ও সংসার বিরাগীদেরকে তাদের প্রভুরূপে গ্রহণ করেছে।’ সুরা তাওবা : ৩১] পর্যন্ত পৌঁছলেন তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমরা তো তাদের প্রভুরূপে গ্রহণ করিনি! তিনি বললেন, হ্যাঁ করেছ। তোমাদের জন্য যা হারাম করা হয়েছিল তারা কি তা হালাল করেনি, যদ্দরুন তোমরাও তা হালাল বলে গ্রহণ করেছ? আর তোমাদের জন্য যা হালাল করা হয়েছিল তারা কি তা হারাম করেনি, যদ্দরুন তোমরাও তা হারাম বলে গ্রহণ করেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, এটাই ছিল তাদের ইবাদত ও উপাসনা।’ (জামিউ বায়ানিল ইলমি ওয়া ফাজলিহি : ২/৯৭৫, হা. নং ১৮৬২, প্রকাশনী : দারু ইবনিল জাওজি, সৌদিআরব)

শাইখ সুলাইমান বিন আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব রহ. বলেন :
وأما استحلال المحرمات المجمع على حرمتها أو بالعكس فهو كفر اعتقادي لأنه لا يجحد تحليل ما أحل الله ورسوله أو تحريم ما حرم الله ورسوله إلا معاند للإسلام ممتنع من التزام الأحكام غير قابل للكتاب والسنة وإجماع الأمة
‘আর ঐকমত্যপূর্ণ হারামকে হালাল মনে করা বা এর উল্টো ঐকমত্যপূর্ণ হালালকে হারাম মনে করা কুফরে ইতিকাদি বা বিশ্বাসগত কুফর। কেননা, একমাত্র ইসলামবিদ্বেষী, বিধিবিধানের বাধ্যবাধকতা অস্বীকারকারী ও কুরআন-সুন্নাহ-ইজমা অগ্রাহ্যকারীরাই আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক হালালকে হালাল আর হারামকে হারাম মানতে অস্বীকৃতি জানায়।’ (আত-তাওজিহ আন তাওহিদিল খাল্লাক : পৃ. নং ৯৮, প্রকাশনী : দারু তাইয়িবা, রিয়াদ)

পাঁচ : দ্বীনবিমুখ বা ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া

ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া অর্থ দ্বীনের ব্যাপারে পুরোপুরি বিমুখতা প্রদর্শন করা। এমন বলা বা বিশ্বাস করা যে, আমার সাথে আল্লাহ ও রাসুলের বা ইসলামের কোনো শত্রুতাও নেই আবার কোনো বন্ধুত্বও নেই। আমি সবার ক্ষেত্রে সমতায় বিশ্বাসী ও সব ধর্মকেই সম্মানের চোখে দেখি। এমন কথা বলা বা বিশ্বাস করা নিঃসন্দেহে কুফরি।

আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا إِلَى مَا أَنْزَلَ اللَّهُ وَإِلَى الرَّسُولِ رَأَيْتَ الْمُنَافِقِينَ يَصُدُّونَ عَنْكَ صُدُودًا
‘তোমাদের যখন বলা হয়, আল্লাহ তাআলা যা অবতরণ করেছেন তার দিকে এবং রাসুলের দিকে এসো, তখন মুনাফিকদের তুমি দেখবে যে, তারা তোমার নিকট হতে একেবারে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।’ (সুরা আন-নিসা : ৬১)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন :
وَيَقُولُونَ آمَنَّا بِاللَّهِ وَبِالرَّسُولِ وَأَطَعْنَا ثُمَّ يَتَوَلَّى فَرِيقٌ مِنْهُمْ مِنْ بَعْدِ ذَلِكَ وَمَا أُولَئِكَ بِالْمُؤْمِنِينَ. وَإِذَا دُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ إِذَا فَرِيقٌ مِنْهُمْ مُعْرِضُونَ. وَإِنْ يَكُنْ لَهُمُ الْحَقُّ يَأْتُوا إِلَيْهِ مُذْعِنِينَ. أَفِي قُلُوبِهِمْ مَرَضٌ أَمِ ارْتَابُوا أَمْ يَخَافُونَ أَنْ يَحِيفَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَرَسُولُهُ بَلْ أُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
‘তারা বলে, আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ইমান আনলাম এবং আমরা আনুগত্য স্বীকার করলাম। কিন্তু এরপর ওদের একদল বিমুখতা প্রদর্শন করে। ওরা নিশ্চিত মুমিন নয়। যখন তাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের কাছে তাদের মাঝে ফয়সালা করে দেওয়ার জন্য আহবান করা হয়, তখন তাদের একদল মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর যদি তাদের প্রাপ্য থাকে, তাহলে তারা বিনীতভাবে রাসুলের নিকট ছুটে আসে। তাদের অন্তরে কি ব্যাধি আছে? না তারা সংশয় পোষণ করে? না তারা ভয় করে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ওদের প্রতিও জুলুম করবেন? বরং ওরাই তো জালিম।’ (সুরা আন-নুর : ৪৭-৫০)

ইমাম ইবনু কাইয়িম আল-জাওজিয়া রহ. বলেন :
وَأَمَّا كُفْرُ الْإِعْرَاضِ فَأَنْ يُعْرِضَ بِسَمْعِهِ وَقَلْبِهِ عَنِ الرَّسُولِ، لَا يُصَدِّقُهُ وَلَا يُكَذِّبُهُ، وَلَا يُوَالِيهِ وَلَا يُعَادِيهِ، وَلَا يُصْغِي إِلَى مَا جَاءَ بِهِ الْبَتَّةَ
‘কুফরে ইরাজ বা বিমুখতামূলক কুফর হলো, কর্ণ ও অন্তর দিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বিমুখতা প্রদর্শন করা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সত্যায়নও না করা, আবার তার প্রতি শত্রুতাও না রাখা এবং তাঁর আনীত দ্বীনের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপও না করা।’ (মাদারিজুস সালিকিন : ১/৩৪৭, প্রকাশনী : দারুল কিতাবিল আরাবিয়্যি, বৈরুত)

ছয় : দ্বীনের কোনো বিধান অপছন্দ করা

ইমান ঠিক থাকার জন্য দ্বীনের সকল বিধানের প্রতি নিঃশর্ত সন্তুষ্টি ও আনুগত্য প্রকাশ আবশ্যক। অতএব কেউ যদি কোনো দ্বীনের সুসাব্যস্ত কোনো বিধানের ব্যাপারে নাক ছিটকায় বা কোনো আইনের বিষয়ে অন্তরে বিদ্বেষ পোষণ করে, তাহলে তা যত ছোট বিধান-ই হোক না কেন, এতে তার ইমান বিনষ্ট হয়ে যাবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَالَّذِينَ كَفَرُوا فَتَعْسًا لَهُمْ وَأَضَلَّ أَعْمَالَهُمْ. ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ كَرِهُوا مَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ
‘যারা কুফরি করেছে, তাদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ এবং তিনি তাদের কর্ম ব্যর্থ করে দেবেন। এটা এজন্য যে, আল্লাহ তাআলা যা অবতরণ করেছেন, ওরা তা অপছন্দ করে। সুতরাং আল্লাহ তাদের কর্ম নিষ্ফল করে দেবেন।’ (সুরা মুহাম্মাদ : ৮-৯)

শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রহ. শরিয়তের কোনো বিধান অপছন্দ করাকে ‘নাওয়াকিজুত তাওহিদ’ বা তাওহিদ ভঙ্গকারী বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণ উল্লেখ করে বলেন :
لأنه يعترف لله ورسوله بكل ما أخبر به ويصدق بكل ما يصدق به المؤمنون لكنه يكره ذلك ويبغضه ويسخطه لعدم موافقته لمراده ومشتهاه ويقول: أنا لا أقر بذلك ولا ألتزمه وأبغض هذا الحق وأنفر عنه فهذا نوع غير النوع الأول وتكفير هذا معلوم بالاضطرار من دين الإسلام والقرآن مملوء من تكفير مثل هذا النوع
‘কেননা, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রদানকৃত সকল সংবাদ স্বীকার করে; মুমিনরা যা সত্যায়ন করে, সেও তার সবই সত্যায়ন করে; এতৎসত্ত্বেও তাঁর প্রবৃত্তি ও কামনা বাসনার চাহিদা মোতাবেক না হওয়ার কারণে সে তা অপছন্দ করে, এর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে এবং অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে। তখন সে বলে, আমি এটার স্বীকৃতি দেবো না এবং আঁকড়ে ধরব না। আমি এই হকের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করি এবং এটাকে ঘৃণা করি। এটা প্রথম প্রকার ভিন্ন আরেকটি প্রকার। এই ব্যক্তির কুফরি ইসলামের সুনিশ্চিত দলিল দ্বারা প্রমাণিত এবং পুরো কুরআনে এ প্রকারের কুফরে লিপ্ত ব্যক্তিকে কাফির বলার বিষয়টি ভরপুর।’ (আস-সারিমুল মাসলুল : ৫২২, প্রকাশনী : আল-হারাসুল অতনি, সৌদিআরব)

সাত : আল্লাহ, রাসুল ও ইসলাম নিয়ে বিদ্রুপ ও গালিগালাজ করা

আল্লাহ, রাসুল ও ইসলামের বড় থেকে ছোট যেকোনো বিধানের ব্যাপারে যদি কেউ ঠাট্টা-বিদ্রুপ বা তুচ্ছ জ্ঞান করে কিংবা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে গালি দেয় তাহলে তৎক্ষণাৎ তার ইমান বিনষ্ট হয়ে যাবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন :
يَحْذَرُ الْمُنَافِقُونَ أَنْ تُنَزَّلَ عَلَيْهِمْ سُورَةٌ تُنَبِّئُهُمْ بِمَا فِي قُلُوبِهِمْ قُلِ اسْتَهْزِئُوا إِنَّ اللَّهَ مُخْرِجٌ مَا تَحْذَرُونَ. وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلْعَبُ قُلْ أَبِاللَّهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ. لَا تَعْتَذِرُوا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيمَانِكُمْ إِنْ نَعْفُ عَنْ طَائِفَةٍ مِنْكُمْ نُعَذِّبْ طَائِفَةً بِأَنَّهُمْ كَانُوا مُجْرِمِينَ
‘মুনাফিকরা আশঙ্কা করে এমন সুরা না আবার অবতীর্ণ হয়ে যায়, যা তাদের অন্তরের কথা ব্যক্ত করে দেবে। আপনি বলে দিন, তোমরা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতে থাকো। তোমরা যা আশঙ্কা করছ, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা প্রকাশ করে দেবেন। আপনি তাদেরকে প্রশ্ন করলে নিশ্চয়ই তারা বলবে, আমরা তো আলাপ-আলোচনা ও ক্রীড়া-কৌতুক করছিলাম। আপনি বলে দিন, তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসুলকে বিদ্রুপ করছিলে? ছলনা করো না; তোমরা ইমান আনার পর কুফরি করেছ। তোমাদের মধ্যে কোনো দলকে ক্ষমা করলেও অন্য দলকে শাস্তি দেবো; এজন্য যে, তারা ছিল অপরাধী।’ (সুরা আত-তাওবা : ৬৪-৬৬)

শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেন :
وهذا نص في أن الاستهزاء بالله وبآياته وبرسوله كفر فالسب المقصود بطريق الأولى
‘আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রুপ কুফরি হওয়ার ব্যাপারে এই আয়াতটি সুস্পষ্ট। তাহলে গালি দেওয়ার ব্যাপারটি তো আর বলারই অপেক্ষা রাখে না।’ (আস-সারিমুল মাসলুল : ৩১, প্রকাশনী : আল-হারাসুল অতনি, সৌদিআরব)

তিনি আরও বলেন :
إن سب الله أو سب رسوله كفر ظاهرا وباطنا وسواء كان الساب يعتقد أن ذلك محرم أو كان مستحلا له أو كان ذاهلا عن اعتقاده هذا مذهب الفقهاء وسائر أهل السنة القائلين بأن الإيمان قول وعمل. وقد قال الإمام أبو يعقوب إسحاق بن إبراهيم الحنظلي المعروف بابن راهويه وهو أحد الأئمة يعدل بالشافعي وأحمد: قد أجمع المسلمون أن من سب الله أو سب رسوله عليه الصلاة والسلام أو دفع شيئا مما أنزل الله أو قتل نبيا من أنبياء الله أنه كافر بذلك وإن كان مقرا بما أنزل الله.
‘যদি কেউ আল্লাহ বা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে গালি দেয়; তাহলে সে ভেতর-বাহির উভয় দিক থেকে কাফির হয়ে যাবে। চাই গালিদাতা এটা হারাম মনে করুক বা হালাল মনে করুক অথবা কোনো ধরনের বিশ্বাসই না রাখুক। এটাই ফুকাহা ও আহলুস সুন্নাহর মাজহাব, যারা এ কথার প্রবক্তা যে, ইমান হলো কথা ও কাজের নাম। ইমাম শাফিয়ি রহ. ও ইমাম আহমাদ রহ.-এর সমপর্যায়ভুক্ত প্রখ্যাত ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুইয়া রহ. বলেন, মুসলমানদের এ ব্যাপারে ইজমা রয়েছে যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ বা তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে গালি দেবে, সে কাফির হয়ে যাবে; যদিও সে আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তা স্বীকার করে।’ (আস-সারিমুল মাসলুল : ৫১২, প্রকাশনী : আল-হারাসুল অতনি, সৌদিআরব)

আট : আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও কাছে প্রার্থনা করা

আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কোনো জীবিত বা মৃত ব্যক্তির নিকট সরাসরি কোনো কিছু প্রার্থনা করা সুস্পষ্ট শিরক, যা মানুষের ইমান বিনষ্ট করে দেয়। যেমন : পির-আউলিয়ার কাছে সন্তান চাওয়া, কোনো কবরবাসীর কাছে বিপদ থেকে মুক্তি চাওয়া ইত্যাদি।

আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَلَا تَدْعُ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنْفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِنَ الظَّالِمِينَ. وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ وَإِنْ يُرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلَا رَادَّ لِفَضْلِهِ يُصِيبُ بِهِ مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَهُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
‘আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকেও আহবান কোরো না, যা তোমার উপকারও করে না, অপকারও করে না। কারণ, এটা করলে তো তুমি সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। আর আল্লাহ যদি তোমার ওপর কোনো কষ্ট আরোপ করেন, তিনি ছাড়া আর কেউ নেই, যে তা দূর করবে। আর আল্লাহ যদি তোমার কল্যাণ চান, তবে এমন কেউ নেই, যে তাঁর অনুগ্রহ প্রতিহত করবে। তাঁর বান্দাদের মধ্যে তিনি যাকে ইচ্ছা কল্যাণ দান করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা ইউনুস : ১০৬-১০৭)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন :
فَلَا تَدْعُوا مَعَ اللَّهِ أَحَدًا
‘আল্লাহর সাথে অপর কাউকে ডেকো না।’ (সুরা আল-জিন : ১৮)

আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেন :
لَهُ دَعْوَةُ الْحَقِّ وَالَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ لا يَسْتَجِيبُونَ لَهُمْ بِشَيْءٍ
‘সত্যের আহবান একমাত্র তাঁরই। আর যারা তাঁকে ছাড়া অন্যদের ডাকে, তারা তাদের আহবানে কোনোই সাড়া প্রদান করে না।’ (সুরা আর-রাদ : ১৪)

আল্লামা শাওকানি রহ. বলেন :
وإخلاص التوحيد لا يتم إلا بأن يكون الدعاء كله لله، والنداء، والاستغاثة، والرجاء، واستجلاب الخير، واستدفاع الشر له ومنه لا لغيره ولا من غيره
‘সমস্ত দুআ বা প্রার্থনা আল্লাহর জন্য হওয়ার আগ পর্যন্ত তাওহিদ খাঁটি হতে পারে না। আহবান, সাহায্য-প্রার্থনা, আশা-আকাঙ্খা, কল্যাণ চাওয়া এবং অকল্যাণ দূর করতে চাওয়া ইত্যাদি আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহরই পক্ষ থেকে। অন্যের জন্য নয়, অন্যের পক্ষ থেকেও নয়। (আল-ফাতহুর রাব্বানি : ১/৩৩৮, প্রকাশনী : মাকতাবাতুল জাইলিল জাদিদ, সানআ)

তবে যেসব বিষয়ে আল্লাহ মাখলুককে সক্ষমতা দান করেছেন সেসব ক্ষেত্রে মাখলুককে মাধ্যম মনে করে তার সাহায্য চাওয়াতে কোনো সমস্যা নেই। যেমন কেউ গর্তে পড়ে চিৎকার করে বলতে লাগল, ভাই, আমাকে বাঁচাও, আমাকে সাহায্য করো। এ ঘটনায় তাকে সাহায্য করার মতো শক্তি ও সামর্থ্য আল্লাহ মাখলুককে দান করেছেন; তাই এখানে অসিলা বা মাধ্যম হিসাবে মাখলুকের কাছে সাহায্য চাওয়া শিরক হবে না। এভাবে দুনিয়ার অন্যান্য কাজে একে অপরের কাছে সাহায্য-সহযোগিতা চাওয়া সম্পূর্ণরূপে জায়িজ। এ ব্যাপারে ফুকাহায়ে কিরামের ইজমা রয়েছে।

‘আল-মাওসুআতুল ফিকহিয়্যা’ গ্রন্থে বলা হয়েছে :
اتَّفَقَ الْعُلَمَاءُ عَلَى أَنَّ الاِسْتِغَاثَةَ لِدَفْعِ شَرٍّ، أَوْ جَلْبِ نَفْعٍ مِمَّا يَمْلِكُهُ الْمَخْلُوقُ تَجُوزُ بِالْمَخْلُوقِينَ مُطْلَقًا، فَيُسْتَغَاثُ بِالْمُسْلِمِ وَالْكَافِرِ، وَالْبَرِّ وَالْفَاجِرِ
‘উলামায়ে কিরাম এ ব্যাপারে ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন যে, মাখলুকের সাধ্যের মধ্যে হলে তার কাছে কোনো অনিষ্ট দূরীকরণ বা কোনো সুবিধা অর্জনের জন্য সাহায্য চাওয়া বৈধ; চাই সে যে মাখলুকই হোক না কেন। অতএব, মুসলিম বা কাফির, ভালো বা মন্দ সব ধরনের লোকের কাছেই সাহায্য চাওয়া যাবে।’ (আল-মাওসুআতুল ফিকহিয়্যা : ৪/৩০, প্রকাশনী : অজারাতুল আওকাফ ওয়াশ শুয়ুনিল ইসলামিয়্যা, কুয়েত)

‘ফাতাওয়াল লাজনাতিদ দায়িমা’-তে এসেছে :
الاستعانة بالحي الحاضر القادر فيما يقدر عليه جائزة، كمن استعان بشخص فطلب منه أن يقرضه نقودا أو استعان به في يده أو جاهه عند سلطان لجلب حق أو دفع ظلم.
‘জীবিত, উপস্থিত ও সক্ষম ব্যক্তির কাছে তার সাধ্যের মধ্যে হলে সাহায্য চাওয়া বৈধ। যেমন, কেউ কোনো লোকের কাছে সহযোগিতার জন্য কিছু টাকা ঋণ চাইল অথবা বাদশার নিকট কোনো অধিকার আদায় বা জুলুম দূর করতে তার শক্তি বা প্রভাবের সাহায্য কামনা করল।’ (ফাতাওয়াল লাজনাতিদ দায়িমা : ১/১৭৪, প্রকাশনী : রিয়াসাতু ইদারাতিল বুহুসিল ইলমিয়্যা ওয়াল ইফতা, রিয়াদ)

বুঝা গেল, মাখলুকের কাছের কোনো কিছু চাইলেই তা ইমান বিনষ্টের কারণ হবে না; বরং দেখতে হবে, যা চাওয়া হচ্ছে তা মাখলুকের সাধ্যে আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে তা শিরক হবে না এবং এতে কোনো সমস্যাও হবে না। যেমন লেনদেন, চলাফেরা, উঠাবসাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরস্পরে সাহায্য চাওয়া। আর যদি তা বান্দার সাধ্যের বাইরে হয় তাহলে তা হবে শিরক এবং এর কারণে তার ইমান বিনষ্ট হয়ে যাবে। যেমন পিরের কাছে সন্তান চাওয়া, মৃত ব্যক্তির কাছে বিপদআপদ থেকে মুক্তি চাওয়া ইত্যাদি।

নয় : আল্লাহর আইনের বিপরীতে ভিন্ন আইন প্রণয়ন

যেসব ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহর স্পষ্ট বিধান ও আইন রয়েছে, সেসব আইনের বিপরীত ভিন্ন কোনো আইন প্রণয়ন করা সুস্পষ্ট কুফরি। কেননা, এটা শরিয়তের সাথে সরাসরি যুদ্ধ ও বিদ্রোহের নামান্তর। আর এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, শরিয়তের বিরুদ্ধে এমন সরাসরি অবস্থান পরিষ্কার কুফরি।

আল্লাহ তাআলা বলেন :
أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوا لَهُمْ مِنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَنْ بِهِ اللَّهُ وَلَوْلَا كَلِمَةُ الْفَصْلِ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ وَإِنَّ الظَّالِمِينَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
‘তাদের কি এমন কিছু শরিক দেবতা আছে, যারা তাদের জন্য দ্বীনের এমন সব বিধান তৈরি করে, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি? যদি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না থাকত, তাহলে তাদের ব্যাপারে ফায়সালা হয়ে যেত। নিশ্চয়ই সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা আশ-শুরা : ২১)

শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেন :
وَالْإِنْسَانُ مَتَى حَلَّلَ الْحَرَامَ الْمُجْمَعَ عَلَيْهِ أَوْ حَرَّمَ الْحَلَالَ الْمُجْمَعَ عَلَيْهِ أَوْ بَدَّلَ الشَّرْعَ الْمُجْمَعَ عَلَيْهِ كَانَ كَافِرًا مُرْتَدًّا بِاتِّفَاقِ الْفُقَهَاءِ.
‘মানুষ যখন ঐকমত্যপূর্ণ হারামকে হালাল বানায় অথবা ঐকমত্যপূর্ণ হালালকে হারাম বানায় কিংবা ঐকমত্যপূর্ণ আইন পরিবর্তন করে, তখন সে সর্বসম্মতিক্রমে কাফির হয়ে যায়।’ (মাজমুউল ফাতাওয়া, ইবনু তাইমিয়া : ৩/২৬৭, প্রকাশনী : মাজমাউল মালিক ফাহাদ, মদিনা)

আল্লাহ তাআলা বলেন :
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا
‘তুমি কি তাদেরকে দেখোনি, যারা দাবি করে যে, তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং তোমার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে, তাতে তারা বিশ্বাস করে? তারা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়; অথচ তাগুতকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর শয়তান তাদেরকে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়।’ (সুরা আন-নিসা : ৬০)

শাইখ মুহাম্মাদ আমিন শানকিতি রহ. তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থীর কুফরি বর্ণনা করে বলেন :
وَمِنْ أَصْرَحِ الْأَدِلَّةِ فِي هَذَا: أَنَّ اللَّهَ جَلَّ وَعَلَا فِي سُورَةِ النِّسَاءِ بَيَّنَ أَنَّ مَنْ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى غَيْرِ مَا شَرَعَهُ اللَّهُ يَتَعَجَّبُ مِنْ زَعْمِهِمْ أَنَّهُمْ مُؤْمِنُونَ، وَمَا ذَلِكَ إِلَّا لِأَنَّ دَعْوَاهُمُ الْإِيمَانَ مَعَ إِرَادَةِ التَّحَاكُمِ إِلَى الطَّاغُوتِ بَالِغَةٌ مِنَ الْكَذِبِ مَا يَحْصُلُ مِنْهُ الْعَجَبُ ; وَذَلِكَ فِي قَوْلِهِ تَعَالَى: أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا [النساء : 60[
‘এ ব্যাপারে সবচেয়ে স্পষ্ট দলিল হলো, যা আল্লাহ তাআলা সুরা নিসায় সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন যে, যারা আল্লাহর আইন ভিন্ন অন্য আইনে বিচার প্রার্থনা করে, তারা নিজেদেরকে মুমিন দাবি করায় আল্লাহ তাআলা আশ্চর্যবোধ করেছেন। এটা কেবল এজন্যই যে, তাগুতের কাছে বিচার প্রার্থনা করা সত্ত্বেও মৌখিকভাবে তাদের ইমানের দাবি এমন চূড়ান্ত পর্যায়ের মিথ্যাবাদিতা, যাতে আশ্চর্য না হয়ে পারা যায় না। আর তা রয়েছে আল্লাহ তাআলার এই বাণীতে :
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا
“তুমি কি তাদেরকে দেখোনি, যারা দাবি করে যে, তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং তোমার পূর্বে যা অবতীর্র্ণ হয়েছে, তাতে তারা বিশ্বাস করে? তারা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়। অথচ তাগুতকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়।” [সুরা নিসা : ৬০]’ ( আজওয়াউল বায়ান : ৩/২৫৯, প্রকাশনী : দারুল ফিকর, বৈরুত)

আল্লামা সাদি রহ. বলেন :
يعجب تعالى عباده من حالة المنافقين. {الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ} مؤمنون بما جاء به الرسول وبما قبله، ومع هذا {يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ} وهو كل من حكم بغير شرع الله فهو طاغوت. والحال أنهم {قد أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ} فكيف يجتمع هذا والإيمان؟ فإن الإيمان يقتضي الانقياد لشرع الله وتحكيمه في كل أمر من الأمور، فمَنْ زعم أنه مؤمن واختار حكم الطاغوت على حكم الله، فهو كاذب في ذلك.
‘মুনাফিকদের অবস্থা অবলোকনে আল্লাহ তাআলা আশ্চর্যবোধ করেছেন, যারা দাবি করে যে, তারা রাসুলের আনীত ও পূর্ববর্তী নবীদের আনীত কিতাবের প্রতি বিশ্বাসী; এতৎসত্ত্বেও তারা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়। তাগুত হলো, প্রত্যেক ওই ব্যক্তি, যে আল্লাহর আইন ব্যতীত অন্য আইন দ্বারা বিচার ফয়সালা করে; অথচ তাদেরকে আদেশ দেওয়া হয়েছিল তাগুতকে অস্বীকার করার। সুতরাং এটা আর ইমান কীভাবে একত্র হতে পারে? কেননা, ইমানের দাবি হলো, আল্লাহর আইনের প্রতি আত্মসমর্পণ এবং সকল বিষয়ে আল্লাহকেই বিচারক ও বিধানদাতারূপে মেনে নেওয়া। সুতরাং যে নিজেকে মুমিন বলে দাবি করবে, আবার আল্লাহর হুকুমের ওপর তাগুতের হুকুমকে প্রাধান্য দেবে, সে ইমানের দাবিতে মিথ্যাবাদী।’ (তাফসিরুস সাদি : ১/১৮৪, প্রকাশনী : মুআসসাসাতুর রিসালা, বৈরুত)

দশ : মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাগুতকে সাহায্য করা

মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফির ও তাগুতকে সাহায্য-সহযোগিতা করা বা তাদের পক্ষে গোয়েন্দাগিরি করা তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করার নামান্তর। আর যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে, সে ইমান থেকে বের হয়ে কাফির হয়ে যাবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন :
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
‘হে ইমানদারগণ, তোমরা ইহুদি-খ্রিষ্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে তাদেরই মধ্যে গণ্য হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিম সম্প্রদায়কে হিদায়াত দেন না।’ (সুরা আল-মায়িদা : ৫১)

ইমাম ইবনু কাইয়িম আল-জাওজিয়া রহ. বলেন :
أَنَّهُ سُبْحَانَهُ قَدْ حَكَمَ – وَلَا أَحْسَنَ مِنْ حُكْمِهِ – أَنَّهُ مَنْ تَوَلَّى الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى فَهُوَ مِنْهُمْ: {وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ} [المائدة: 51[، فَإِذَا كَانَ أَوْلِيَاؤُهُمْ مِنْهُمْ بِنَصِّ الْقُرْآنِ كَانَ لَهُمْ حُكْمُهُمْ،
‘আল্লাহ তাআলা ফায়সালা দিয়েছেন -আর তাঁর চেয়ে উত্তম ফায়সালাকারী কে আছে!- যে ব্যক্তি ইহুদি-খ্রিষ্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে। “তোমাদের মধ্যে হতে যে তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে।” [সুরা আল-মায়িদা : ৫১] সুতরাং যখন কুরআনের ভাষ্যানুসারে কাফিরদের বন্ধুরা কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত বলে সাব্যস্ত হলো, তখন তাদের হুকুমও কাফিরদের মতোই হবে।’ (আহকামু আহলিজ জিম্মাহ : ১/১৯৫, প্রকাশনী : রামাদি, দাম্মাম)

শায়খ বিন বাজ রহ. বলেন :
وقد أجمع علماء الإسلام على أن من ظاهر الكفار على المسلمين وساعدهم عليهم بأي نوع من المساعدة، فهو كافر مثلهم، كما قال الله سبحانه: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ} وقال تعالى: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا آبَاءَكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ أَوْلِيَاءَ إِنِ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الْإِيمَانِ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ{
‘উলামায়ে ইসলাম এ ব্যাপারে একমত যে, যে ব্যক্তি মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফিরদেরকে যেকোনো প্রকারে সাহায্য-সহযোগিতা করবে, সেও তাদের মতো কাফির। যেমনটি আল্লাহ তাআলা বলেন :
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
“হে ইমানদারগণ, তোমরা ইহুদি-খ্রিষ্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে তাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে, সেও তাদের মধ্যেই গণ্য হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিম সম্প্রদায়কে হিদায়াত দেন না।” [সুরা আল-মায়িদা : ৫১]
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন :
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا آبَاءَكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ أَوْلِيَاءَ إِنِ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الْإِيمَانِ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
“হে ইমানদারগণ, তোমরা স্বীয় পিতা ও ভাইদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ কোরো না, যদি তারা ইমান অপেক্ষা কুফরকে ভালবাসে। আর তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে তারা সীমালঙ্ঘনকারী।” [সুরা আত-তাওবা : ২৩]’ (মাজমুউ ফাতাওয়া বিন বাজ : ১/২৬৯, মুহাম্মাদ বিন সাদ আশ-শুওয়াইয়ির কর্তৃক সংকলিত ও প্রকাশিত)

আল্লাহ আমাদের শিরকমুক্ত তাওহিদের ওপর জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন এবং এমন বিশুদ্ধ তাওহিদের ওপরই মৃত্যু দান করুন।

পঠিত : ৫৪৬ বার

মন্তব্য: ০