Alapon

পাসপোর্ট থেকে ইসরাইলের নাম মুছে দেওয়া এবং কিছু কথা...



ইসরাইল ফরেন মিনেস্ট্রির অফিসিয়াল টুইটার একাউন্টে একটি টুইট দেখে দুঃখ, কষ্ট, অভিমান, অপমানে মাথাটা নিঁচু হয়ে গেল। আগে বাংলাদেশের পাসপোর্টে লেখা থাকত, ‘এই পাসপোর্ট দিয়ে সব দেশ ভ্রমণ করা যাবে কিন্তু ইসরাইল ব্যতীত।’

অতি সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সরকার পাসপোর্ট থেকে এই লেখাটি মুছে দিয়েছে। যদিও পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলছে, ‘পাসপোর্টের মান বিশ্বমানের করার জন্য এটি তুলে দেওয়া হয়েছে। বাস্তবে ইসরাইলের সাথে বাংলাদেশের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হবে না।’

বাস্তবে কী হবে আর কী হবে না তা জনসাধারণ আর কতটুকুই বা জানতে পারবে। কিন্তু হাসিনা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ইসরাইল স্বাগত জানিয়েছে। আর তারা যখন স্বাগত জানিয়ে পোস্ট দিচ্ছে তখন একজন বাংলাদেশি হিসেবে এর চেয়ে লজ্জাজনক বিষয় আর কিছু হতে পারে না।

আশির দশকে বাংলাদেশের পাসপোর্টে তিনটি দেশের কথা লেখা ছিলো, যেগুলোতে বাংলাদেশের নাগরিকরা ভ্রমণ করতে পারবে না। সেই তিনটি দেশ হলো দক্ষিণ আফ্রিকা, তাইওয়ান ও ইসরাইল। বর্ণ বৈষম্যের প্রতিবাদে তখন দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বব্যাপী বয়কটের স্বীকার হয়েছিল। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশও দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলো। পরবর্তীতে দক্ষিণ আফ্রিকা বর্ণ বৈষম্য সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ সরকারও দক্ষিণ আফ্রিকার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়।

তাইওয়ানের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রদান করতে হয়েছিলো মূলত চীনের কারনে। চীনের কারনে তখন তাইওয়ানকে স্বীকৃতি প্রদান করা যাচ্ছিল না। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে তাইওয়ানের সাথে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন ধনকুবের ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই সম্পর্কের জেরে তাইওয়ান বাংলাদেশে ব্যবসায়িক লিয়াজো অফিস চালুর আবেদন করেছিলো। আর এই অনুমতির জের ধরে বাংলাদেশের সাথে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানির দিকে যেতে থাকে। ফলে বাংলাদেশ সরকারকে বাধ্য হয়ে তাইওয়ানকে বাংলাদেশে অফিস চালু করবার অনুমতি দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হয়। কিন্তু ততোদিনে পাসপোর্ট থেকে তাইওয়ানে ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

আর ইসরাইলের উপর নিষেধাজ্ঞার কারণ তো সবাইর জানা। কিন্তু তারপরও হাসিনা সরকার পাসপোর্ট থেকে ইসরাইলের নাম মুছে দিয়েছে। এই মুছে দেওয়ার উদ্দেশ্য কী, রাষ্ট্রের কোনো বিশেষ প্রতিষ্ঠানের সাথে ইসরাইলের যোগসাজোস? যারা কিনা ইসরাইলি প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের বিরোধীমতকে নির্মূল করতে কাজ করে যাচ্ছে!

যাইহোক না কেন, পাসপোর্ট থেকে ইসরাইলের নাম মুছে দিয়ে হাসিনা সরকার ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী মানুষদের সাথে প্রতারণা করেছে। আমি আশা করব, সরকার তাদের ভুল বুঝতে পেরে খুব দ্রুতই এই ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এবং পাসপোর্টের উপর আবারও লেখা থাকবে, ‘এই পাসপোর্ট দিয়ে বিশ্বের সমস্ত দেশ ভ্রমণ করা যাবে, কেবল ইসরাইল ছাড়া!’

পঠিত : ৩৩৯ বার

মন্তব্য: ০