Alapon

আখি সংঘঠন

আখি সংঘঠন

উসমানীয় খেলাফত কে পাহাড়ে মতো অটল এবং গাছের শাখা প্রশাখার মতো ছড়িয়ে দিতে, যে শক্তিটি মেঘের মতো দুরন্ত হয়ে কাজ করেছিল সেটি হলো আখি সংঘঠন। আখি মানে ভাই। প্রত্যেক সংঘে একজন করে সুফি-শায়খ থাকে, যার অধীনে তারা জীবনযাপন করে।

এই সংঘের মূল কথা ছিল—তাসাউফ আত্মার উন্নতির মাধ্যমে মানুষকে উন্নতির দিকে ধাবিত করা। আর উন্নত মানুষ, তার পেশাদার জীবনে উন্নত পণ্য তৈরী করে। উন্নত পণ্য উৎপাদন করে যে রিজিক উপার্জিত হয় তা হয় হালাল রিজিক। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই এতে উপকৃত হবে। পাশাপাশি অর্জিত মুনাফা গরিব-অসহায়-এতিমদের মাঝে বিলিয়ে দেয়া। তাছাড়া, এদের শায়খ ছিল, অনুশোচনাকারী-পাপীষ্ঠ-মানসিক সমস্যায় বিবর্জিত দুমড়িয়ে-মুচড়িয়ে যাওয়া লোকদের মনের প্রতিষোধক।

আখিরা মূলত ছিল, তরুন ব্যবসায়ী। এই অবিবাহিত তরুণদের জীবন ছিল অনেকটা ছকে বাঁধা। কিন্তু এতে তারা ক্লান্ত হতো না। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম, বিকেলে খেলাধুলা, সন্ধ্যার পর কোনো সুফির আশ্রমে গিয়ে দ্বীন শিক্ষা, তারপর ধীরে ধীরে সংগীতের আসরে ডুবে যাওয়া। পরিশেষে, জিকিরে মগ্ন হওয়া। এগুলো ছিল আখিদের জীবন চক্র।

নারীদের মধ্যেও ছিল আখি সংঘের প্রভাব। সম্ভবত পৃথিবীর প্রথম নারী সংঘঠনের জন্ম হয় আনাতোলিয়াতেই, নাম ছিল বাজিয়ান-ই রুম। আনাতোলিয়ার পশমি পোশাক বোনা মেয়ার এই সংগঠনের তৈরি করেছিল। এখানে তারা ব্যবসায়ীর পাশাপাশি আত্মশুদ্ধির চর্চা করত। তাদেরও ছিল সামাজিক কল্যাণ সমিতি।

আখির সংঘঠনটি ঐসময়ে এক বিশাল প্রয়োজন মিটাতেই তার আবির্ভাব। শত্রু ঘেরা আনাতোলিয়াতে ব্যবসা-বাণিজ্যে এক আধিপত্য করে রেখেছিল খ্রিস্টানরা। মুসলিমদের পান থেকে চুন খোসতে দেরী, তাদের উপর বাণিজ্য অবরোধ করতে ভুলেও দেরী ছিল না। এতে মুসলমানদের মুদ্রাস্ফীতি, দুর্ভিক্ষ ও মহামারী বেড়েই চলতো। খ্রিস্টানদের এই কর্মকাণ্ডের প্রতিরোধের জন্যই আখিদের আগমন। তারা এসে মুসলমানদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্বাবলম্বী করে তুলেছিল।


ঐ সময়ের বাইজেন্টাইনদের মতো ঘৃণ্য বাণিজ্য-কূটকৌশল অস্ত্র, দাদারা, আমাদের দেশেও চালায়। আমাদের দেশের সমগ্র অর্থনীতির চাকা তারা প্রতক্ষ্য বা পরোক্ষ ভাবে ঘুরায়। তারা চাইলে আমরা বিশুদ্ধ অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারবো, তাদের দয়া হলে আমরা করোনায় মৃত মানুষদের পচা লাশের দূষিত পানি পান করার জন্য পাবো। আহা কি ভাগ্য! ইতিহাসের চাকা ঘোরে, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে কিন্তু কেউ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না।

একটি দেশের মূল চালিকা শক্তি হলো অর্থনীতি। তাই, আপনার প্রতি উদাত্ত আহ্বান, পরনির্ভশীলতার গোলামী থেকে এদেশকে, আপনাকে, আপনার পরিবার ও পরবর্তী বংশধরকে বাঁচান। পরর্বতী প্রজন্মকে মাথাউঁচু করে স্বাধীনভাবে চলার পথ তৈরী করে দিন। সাহস করে কাজ করুন, আল্লাহ ভরসা।

নতুন উদ্যক্তার পথ চেয়ে… মুক্ত বাতাসের খোঁজে প্রভাতের দিকে চেয়ে আছি।

পঠিত : ৫৫৩ বার

মন্তব্য: ০