Alapon

মাজহাবি ইখতিলাফ

মাজহাবি ইখতিলাফ
আব্দুল্লাহ আযযাম রহিমাহুল্লাহ 

মাজহাবি(সালাফী/হানাফী) ইখতিলাফ এর ব্যপারে শাইখ ডঃ আব্দুল্লাহ আযযাম রাহিমাহুল্লাহর ঐতিহাসিক ফতওয়া


প্রশ্নঃ আমাদের আফগান (হানাফী)ভাইদের সাথে সালাতের হুকুম কি হবে? আমারা কি এমন কিছু সুন্নাত ছেড়ে দিতে পারব, যেগুলো সুন্নাহ হওয়ার ব্যপারে আমাদের আফগান ভাইয়েরা জানেনা? নাকি আমরা সেই সুন্নাহগুলোও পালন করব ?

উত্তরঃ আমাদের জন্য উত্তম হবে ছেড়ে দেয়া। এ ব্যপারে আমি ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহর একটি "রিসালাহ" (ছোট বই) দেখেছি, যে চিঠিতে এই ফাতওয়াটি আছে। বইটির নাম ( ﺍﺧﺘﻼﻑ ﺍﻷﻣﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﻌﺒﺎﺩﺓ ) "ইবাদাতের ক্ষেত্রে উম্মাহর ইখতিলাফ"। এই ফাতওয়াটি ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহর "আল রাসাইল আল মুনিরিয়াহ" গ্রন্থসমগ্রেও আছে।

এই কিতাবে ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ "(ঐক্য ধরে রাখার জন্য)উত্তম অনুত্তম এর ক্ষেত্রে মতবিরোধপুর্ন "সুন্নাহ" আমল ছেড়ে দেয়াই উচিৎ। কিছু সুন্নাহ পালন করার চেয়ে, উম্মাহর ঐক্য ধরে রাখা অধিক কল্যানকর। কেননা উম্মাহর ঐক্য ধরে রাখা ফরজ। কিন্তু সুন্নাহ আমল করা তো সুন্নাহ-ই। তাই ফরজ সুন্নাতের চেয়ে প্রাধান্য পাবে।" আপনারা লক্ষ্য করলে দেখবেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্বা'বাকে ইসমাঈল আলাইহিস সালাম এর ভিত্তির উপর নিয়ে আসেননি। কেননা তিনি এতে ফিতনাহর আশংকা করেছিলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, "হে আয়শা! যদি তোমার সম্প্রদায় কিছুদিন পুর্বে কুফুর থেকে ফিরে আসা নওমুসলিম না হত, তাহলে আমি ক্বাবাকে ভেঙ্গে দিয়ে আবার ইবরাহীম অন্য বর্ণনায় ইসমাঈল (আঃ) এর ভিত্তির উপর আবার নির্মান করতাম, এবং তাতে একটি দরজা দিতাম যেখান দিয়ে মানুষ প্রবেশ করত, আর আরেকটি দরজা দিতাম যা দিয়ে মানুষ বের হয়ে যেত।" ( সহীহ বুখারী।) এজন্যই ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ সহীহুল বুখারীতে "মুসল্লীদের অন্তর দূরে সরে যাওয়ার আশংকায় ইমাম কতৃক (সালাতে উত্তম আমল) ত্যাগ করা" শীর্ষক আলাদা একটি অধ্যায় রচনা করেছেন। শাইখ আলবানী রাহিমাহুল্লাহকে জিজ্ঞাসা করা হলঃ "আফগানদের সাথে আমাদের সালাত সম্পর্কে আপনার মতামত কি? আমরা কি রাফউল ইয়াদাইন (সালাতে হাত উত্তোলন) করব? (উচ্চস্বরে)"আমীন" বলব? বুকের উপর হাত বাধবো? উত্তরে তিনি বললেনঃ "বরং (এসব সুন্নাহ) ছেড়ে দিয়ে তারা যেরকম সালাত পড়ছে সেরকমই পড়বে।কেননা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "ইমাম নিযুক্ত করায়েছে তাকে অনুসরণ করার জন্যই। সুতরাং যখন ইমাম তাকবীর দেবেন, তখন তোমরাও তাকবীর দাও, যখন তিনি রুকু করেন, তখন তোমরাও রুকু করো, যখন তিনি সিজদায় যান, তখন তোমরাও সিজদায় যাও, (এমন কি) যখন তিনি বসে সালাত আদায় করেন, তখন তোমরা সকলেই বসে সালাত আদায় করো।(সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম) রাসুল (সা) আরো বলেনঃ "ইমামকে অনুসরন করার জন্য সালাতের একটি রুকনকেই ছেড়ে দিতে হবে। আর সেই রুকনটি হল, কিয়াম।" রাফূল ইয়াদাইন করা,সালাতে বুকের উপর হাত বাধা, এগুলোকে শরীয়তে বেশির থেকে বেশি মানদূব বা সুন্নাহ হিসেবে বর্ননা করেছে, কিন্তু এগুলো সালাতের আরকান বা মুল স্থম্ভ নয়। সুতরাং এগুলো ত্যাগ করাই উত্তম। তাছাড়া যেহেতু রাসুল (সাঃ) ইমামকে অনুসরনের জন্য সালাতের একটি রুকনকে ছেড়ে দেয়াকে ওয়াজিব করে দিয়ে বলেছেনঃ "যখন ইমাম বসে সালাত পড়ান তখন তোমরা সকলেই বসে সালাত আদায় করো" অথচ দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা সালাতের রুকুন বা ফরজ কাজ। অনুরুপভাবে ইমামের অনুসরন করার জন্য রাফূল ইয়াদাইন ও বুকের উপর হাত বাধার মত সুন্নাহ ছেড়ে দেয়া তো আরো জরুরী। আল্লাহু আলাম।
তারপর হে প্রিয় ভাই! আমি তোমাকেই বলছিঃ "জিহাদ এখন ফরজ, কিন্তু রুকুতে রাফউল ইয়াদাইন করা নফল ও সুন্নাহ। (রাফউল ইয়াদাইনের মত) সালাতের এসব আমলসমুহ মুস্তাহাব। যদি আপনি (মসজিদে নয়)আপনার বাড়িতে সালাত আদায় করার সময় এসব আমল ছেড়ে দেন,তাহলে কি আপনার সালাত বাতিল হয়ে যাবে............!? না হবে না। তাহলে কি আপনার সালাত মাকরুহে তাহরীমি হবে?????? উত্তরে আমি আপনাকে বলবঃ না আপনার সালাত মাকরুহ হবেনা। কারন তা বেশির থেকে বেশি সুন্নাহ পর্যায়ের আমল, অথচ জিহাদ ফরজ আমল। এখন যদি দেখা যায়, একটি নফল বা সুন্নাহ আমল ফরজ আমলকে নষ্ট করে দেয়ার উপক্রম হয়েছে, তাহলে কি সেই নফল আমলকে পালন করা জায়েয হবে???? আমি আপনাকে একটি উদাহরন দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছি, মনে কর আপনি ভোরে সুর্য উদিত হওয়ার দু মিনিট আগে ঘুম থেকে উঠলে তারপর উযু করলে। এবার আপনার সামনে দুমিনিট সময় আছে। আপনি কি এখন দু রাকাত সুন্নাহ আদায় করবে, নাকি দু রাকাত ফরজ আদায় করবে ????? আমি নিশ্চিত,আপনি ফরজ-ই আদায় করবে। এবার, আপনি জানো যে (সালাতে আপনার এইসব আমল) গ্রহন করতে পারছে না, তাদের মনে আপনার এই (অস্বাভাবিক আচরন) ভাল লাগছে না, তাহলে কোন কাজটি আপনার জন্য উত্তম? নিশ্চয়ই তাদের সাথে আপনার অন্তরের বন্ধন মজবুত ও দৃঢ় করে তাদের সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে জিহাদ করা, তারপর ধীরে ধীরে মনের মধ্যে প্রবেশ করে তাদের ইসলাহ করা। যখন তারা তোমাকে ভালবাসবে, তখন তোমার সব কিছুই তারা গ্রহন করবে। শেষপর্যন্ত তুমি-ই তাদেরকে এটা শিখাতে পারবে যে (সালাতে এসব আমল) সুন্নাহ। এগুলো শরিয়তের অন্তর্ভূক্ত আমল, (শরিয়তবিরোধী কিছু নয়)।(তাহলে তুমিই বল) কোনটি তোমার জন্য করা উত্তম দিবে? জিহাদ ছেড়ে দিবে? তাদের ইসলাহ করা ছেড়ে দিবে? তাদের "ভুল বিশ্বাসের" সংশোধন করা ছেড়ে দিবে। সালাতে রাফউল ইয়াদাইন করা ব্যক্তিকে আফগানিস্থানে "ওয়াহাবী" বলে ডাকা হয়। তোমরাও জানো যে আফগানিস্তানে কিছু আলেমের কাজই হল জিহাদের বিরোধীতা করা, ইসলামী বিশ্বের সাথে জিহাদের সম্পর্কচ্ছেদ করা। এরাই তারা যারা আফগানিস্তানে আসা আরব মুজাহিদদেরকে ঘৃনা করে। এসব শাইখরাই আফগান মুজাহিদ ও আরব মুজাহিদদের মাঝে বিদ্বেষ ছড়াতে গিয়ে আফগান মুজাহিদদেরকে বলবে "এই যে ওয়াহাবী"।(মুজাহিদদের মাঝে ফাটল ধরাতে) এটা তো তাদের সাধারন একটা সাধারন ঘটনাই বললাম। অথচ সাধারন আফগানিরা জানেই না "ওয়াহাবী" কারা। একদম-ই জানে না। আল্লাহু আলাম।

reference:[ফাতওয়াটি শাইখ আবু মুহাম্মাদ আসেম আল মাকদিসী হাফিযাহুল্লাহর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট "মানবার আত তাওহীদ ওয়াল জিহাদ" থেকে নেয়া।

পঠিত : ৪৬০ বার

মন্তব্য: ০