Alapon

// বদলে যাওয়া বদলে দেওয়া-০৫//



প্রশংসা শুনতে কার না ভালো লাগে? কেউ যদি আপনার- আমার তথা আমাদের প্রশংসা করে, তখন আমরা কী করি? অনেক খুশি হই না? মনে আনন্দ জাগে না? ভালো লাগার আলাদা একটা অনুভূতি সৃজন হয় না মনের মুকুরে? অবশ্যই হয়। যে অস্বীকার করবে সে হয়তো সত্য বলবে না। যে-ই প্রশংসা করুক না ক্যান, তাকে তখন ভালো লাগে। আলাদা দৃষ্টিতেই দেখি তাকে। স্বলাত-সিয়াম করেন, দ্বীন মানতে চেষ্টা করেন —এমন লোকজনও খুব বেশি প্রশংসা পেতে চায়। পারতপক্ষে কেউ সামনাসামনি সুনাম করলে তাকে বারণ করি না। বাধা প্রধান করি না। মানুষ আমার প্রশংসা করলে, ভালো বললে সে প্রশংসা ফিল করি, উপভোগ করি —সব সময় না, সবাই না । অধিকাংশ ক্ষেত্রে অধিকাংশ লোকই।

অনেকেই তো আমরা তোষামোদ ও চাটুকারিতার ছলনায়, তিলে তিলে নিজের আত্মসম্মান-ঈমান-আমল-ব্যক্তিত্বকে বিলিন করে দিই। যে একটু তোষামদ করে, যে একটু চাটুকারিতা করে— তাকে কাছে টেনে নিই, আপন করে নিই। নিজ-ক্ষমতা বলে তাকে যেভাবে যতোটুকু সুযোগ সুবিধে দেওয়ার প্রয়োজন তারচে' বেশি-ই দিই। অন্যকে বঞ্চিত করে তোষামদকারী এবং চাটুকারীকে-ই সুযোগ-সুবিধে প্রধান করি।
আল্লাহর রাসুল স্বল্লালাহু আলাইহি ওসাল্লামের সাহাবি মিকদাদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু । তিনি এমনটা মোটেই পছন্দ করতেন না। রাসুল্লাহ স্বল্লালাহু আলাইহি ওসাল্লামের একটি বিখ্যাত হাদিস আছে, যাতে তিনি বলেছেন—যে ব্যক্তি তোমার সামনাসামনি প্রশংসা করবে, তুমি তাঁর মুখে মাটি ছুড়ে মারো।* এই হাদিসটার বাস্তপ্রতিফলন তিনি তাঁর জীবনেও করেছেন।

যখন যাকেই দেখেছেন অযাছিত প্রশংসা করতে, তিনি তখনই তাঁর মুখে বালি-মাটি নিক্ষেপ করতেন। একদিন তিনি কোনো একব্যক্তিকে দেখলেন যে, সে দণ্ডায়মান অবস্থায় কোনো এক আমীরের বা নেতার ভূয়সী প্রশংসা করে যাচ্ছে, তখন মিকদাদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সাথে সাথেই তার মুখে মাটি ছুঁড়ে দিয়ে বললেন—রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন অতিমাত্রায় প্রশংসাকারীদের মুখে মাটি ছুঁড়ে মারার জন্য।*

একদিন উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর কাছে কিছু লোক এসেছে, সেখানে মিকদাদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুও ছিলেন। তারা মিকদাদের সামনেই তাঁর প্রশংসা শুরু করে দিলো। তিনি এতে এতো বেশি রুষ্ট হলেন যে, তাদের মুখে মাটি ছুঁড়ে মারতে লাগলেন। উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলে উঠলেন—মিকদাদ, এ কী হচ্ছে? তিনি বললেন রাসুলুল্লাহ স্বল্লালাহু আলাইহি ওসাল্লাম বলেছেন; তোমরা অতিমাত্রায় প্রশংসাকারীদেরকে দেখলে তাদের চেহারায় মাটি নিক্ষেপ করবে।*

আল্লাহর রাসুল সামনাসামনি প্রশংসা করতে নিষেধ করেছেন কেনো? কারণ হচ্ছে এতে ব্যক্তির মনে অহংকারের জন্ম হতে পারে, ফিতয়ায় নিপতিত হতে পারে, সেজন্য ইসলামে তা নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। আর অতিমাত্রায় প্রসংসাকারীর মুখে মাটি ছুড়ে মারতে বলছেন।

আচ্ছা, ওনারা কি প্রশংসা প্রাপ্তির যোগ্য ছিলো না? অবশ্যি ছিলো। কিন্তু তবুও আল্লাহ ভীতিকে,স্বচ্ছ আমলকে কতো বেশি প্রাধান্য দিলে এমন সচেতন-সতর্ক থাকতে পারেন, ভাবা যায় ?
আমরা তো কাউকে মুখলিস-মুহসীন আর মুত্তাকি বান্দা হিসেবে নিজেকে কিংবা অন্যকে তখন মনে করি—যখন অধিক প্রশংসা দেখি। আমরা প্রশংসার প্রণোদনায় প্রলুব্ধ হয়েই আমল-আখলাক, ক্রিয়াকলাপ পরিচালনা করি, প্রশংসা করলে প্রাণোচ্ছলতা পাই, বাহবা পেলে ভালো লাগে, উদ্দীপ্ত হই। কিংবা অন্যকেও অযাচিত প্রশংসার বানে বাসিয়ে দিই। আমরা আমাদের কর্মকাণ্ডগুলো যদি স্রেফ আল্লাহর সন্তোষের নিমিত্তে পরিচালনা করতে পারতাম কিংবা পারি, তা হলে আমরাও পারবো গোটা দুনিয়াকে বদলে দিতে, যেভাবে পেরেছেন মিকদাদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুগণ।

// বদলে যাওয়া বদলে দেওয়া-০৫//
~রেদওয়ান রাওয়াহা

পঠিত : ৩২১ বার

মন্তব্য: ০