Alapon

মুশরিকদের এজেন্ডা রুখে দিতে হবে



কুরআনের একটি জনপ্রিয় আয়াত আছে, হে মুমিনগণ তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো। আমরা নানান আলোচনায় এই আয়াতের রেফারেন্স ইউজ করি। এই আয়াতের শানে নুজুল খুবই ইন্টারেস্টিং।

এই আয়াতের বেসিক উদ্দেশ্য বা শিক্ষা হলো আমরা যাতে ইসলাম গ্রহণের পর পূর্বের কুসংস্কার, ধ্যান ধারণা ও রসমকে পরিপূর্ণভাবে বাদ দিয়ে দিই। মুশরিক ও অন্যান্য বাতিল ধর্মের নিয়মকানুনের প্রতি যাতে আমাদের অনুরক্ততা না থাকে।

মুহাম্মদ সা.-এর যুগে মদিনাতে তিনটি ইহুদী গোত্রের বসবাস ছিল। তারা তাদের ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে আল্লাহর রাসূল সা.-এর আগমনের ভবিষ্যতবাণী জানতেন। এজন্য তাদের সাথে কারো ঝামেলা হলেই তারা বলতেন সময় হয়েছে আখেরি নবী আসার। তিনি আসলে তোদের শায়েস্তা করবো। এখন যেমন কেউ কেউ ইমাম মাহদীর জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে, অথচ নিজের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট নয়, সেরকম।

ইহুদীরা ভেবেছে যেহেতু নবীরা বেশি এসেছেন বনী ইসরাঈলে। তাই তাদের মধ্য থেকেই কেউ হবে শেষ নবী। কিন্তু যখন শেষ নবী আসলেন মক্কার কুরাইশ থেকে তখন তারা নবীকে মেনে নেয়নি। অথচ নবী সা. এর সাথে তাদের জানা সকল বৈশিষ্ট্য মিলে গিয়েছে।

এই তিন ইহুদী গোত্র থেকে খুব কম অংশই ইসলাম গ্রহণ করেছে। অথচ তারা এই নবীর জন্যই বহু বছর ধরে অপেক্ষা করেছে। তারা শুধু মুহাম্মদ সা.-কে গ্রহণ না করেই ক্ষান্ত হয়নি। বরং বন্ধুত্বের মোড়কে থেকে পিঠে ছুরি মারার অপেক্ষায় ছিল। মদিনার তিন ইহুদী গোত্রই আল্লাহর রাসূল সা.-এর মদিনা সনদে চুক্তিবদ্ধ হয় এবং পরে বিশ্বাসঘাতকতা করে।

এর মধ্যে বনু কাইনুকা এক মুসলিম মহিলাকে নির্যাতন ও বিবস্ত্র করার সূত্র ধরে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং পরে তারা মদিনা থেকে বহিষ্কৃত হয়।

বনু নাজিরের প্রধান কা'ব বিন আশরাফকে মদিনা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কুরাইশদের তথ্য সরবরাহ, চিঠি পাঠানো, আবু সুফিয়ানের সাথে মুহাম্মদ সা.-কে হত্যার চুক্তি স্বাক্ষর ও মুসলিমদের ওপর গণহত্যা চালানোর পরিকল্পনার অপরাধে হত্যা করা হয়।

পরে বনু নাজির আল্লাহর রাসূল সা.-কে হত্যার ষড়যন্ত্রের অপরাধে তাদের ওপর অবরোধ আরোপ হয় এবং মদিনা থেকে বহিষ্কৃত হয়।

খন্দকের যুদ্ধের সময় কুরাইশরা আক্রমণ করলে মদিনায় থাকা বনু কুরাইজা পেছন দিক থেকে মুহাম্মদ সা.কে আক্রমণ করার পরিকল্পনা ও কুরাইশদের সাথে এই মর্মে চুক্তি করে। আল্লাহর রাসূল তাদের সাথে যুদ্ধ করেন ও তাদের সুপারিশকৃত বিচারকের রায়ে তাদের হত্যা করেন।

যাই হোক এই ইহুদীদের মধ্যে অল্পসংখ্যক ইসলাম গ্রহণ করে। তাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রা., আসাদ ইবনে উবাইদ রা. এবং সালাবা রা. ছিলেন উল্লেখযোগ্য। তাঁদের ইহুদী ধর্ম অনুসারে তারা উট খেত না এবং শনিবারকে পবিত্র জ্ঞান করতো।

যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে তাদের মধ্যে কেউ কেউ উট খাওয়া থেকে বিরত থাকতো এবং শনিবারে রোজা রাখতো ও নফল ইবাদত বেশি করতো। এটা তাদের পূর্বের ধর্মের অনুরাগ থেকেই করতো। তাদের এই আচরণ আল্লাহ পছন্দ করেন নি। তাদের উদ্দেশ্যে সূরা বাকার ২০৮ ও ২০৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,

//হে মুমিনগণ, তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের স্পষ্ট শত্রু। অতএব তোমরা যদি সুস্পষ্ট নিদর্শন আসার পরও পদস্থলিত হও তবে জেনে রাখো, আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান।//

আল্লাহ তায়ালা তাদের উট খেয়ে পরিপূর্ণভাবে মুসলিম হতে বলেছেন। তেমনিভাবে আমাদের এই অঞ্চলের মানুষ হিন্দু ও বৌদ্ধ থেকে মুসলিম হয়েছে। এই দুই বিকৃত ধর্মের গরু জবাই করা নিষিদ্ধ। হিন্দুরা গরুকে পবিত্র ও সম্মানিত জ্ঞান করে জবাই ও খাওয়া থেকে বিরত থাকে। আর বৌদ্ধরা যে কোনো জীবিত পশুকে জবাই করা নিষিদ্ধ মনে করতো।

আল্লাহ তায়ালা ইহুদীদের উট খেয়ে মুসলিম হতে বলেছেন। যারা ইহুদী তারা যদি মুসলিম হয় তবে তারা উট খেয়ে নিশ্চিত হতে হবে সত্য উপলব্ধি করার পর আগের ধর্মের প্রতি তাদের ভালোবাসা আর নেই। তেমনি এদেশে যারা মুশরিক থেকে মুসলিম হবে তারাও গরু খেয়ে নিশ্চিত হতে হবে তারা এখন আর গরুকে তাদের মা মনে করেন না।

তাই যারা আমাদের দেশে ইসলাম প্রচার করেছিল তারা এই দিকটা খেয়াল রেখেছেন। এদেশের মানুষকে বিশেষভাবে বাঙালিদের গরু খাওয়ার ব্যাপারে ব্যাপকভাবে উৎসাহ দিয়ে এসেছেন। বাংলায় ইসলাম জয়ী হয়ে রাষ্ট্রগঠনের পর এদেশে ব্যাপকভাবে গরুর গোশতের প্রচলন হয়।

এই নিয়ে বিভিন্ন হিন্দু জমিদারদের তরফ থেকে বহু নির্যাতনের শিকার হয় মুসলিমরা। তারপরও মুসলিমরা এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছেন। এই কারণেই এদেশে কুরবান ঈদে সবচেয়ে বেশি গরু কুরবানী হয়।

সুপ্রিম কোর্টসহ সারা দেশে গরুর গোশতের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে এর মূলে রয়েছে মুশরিকদের এজেন্ডা। তারা এদেশে গরু নিষিদ্ধ করতে চায়। ১৯৭১ সালে মুশরিকদের কাছে সার্বভৌমত্ব হারানোর পর থেকে আমাদের পদস্থলন শুরু হয়েছে। তখন ইসলামের ওপর সরাসরি অনেক আঘাত এসেছে।

আলহামদুলিল্লাহ! এদেশের তাওহীদবাদী লোকদের সাথে নিয়ে ইসলামপন্থীরা জানবাজি রেখে মুশরিক ও তাদের দালালদের রুখে আসার চেষ্টা করছে। মুশরিকদের বিরুদ্ধে শক্ত দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু গত ১২ বছর একটানা মুশরিকদের সমর্থনপুষ্ট জালিম সরকার ক্ষমতা দখল করে রাখায় এদেশে মুশরিকরা তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয় হয়েছে। আমাদেরকে তাদের প্রচেষ্টা রুখে দিতে হবে।

পঠিত : ২৪৫ বার

মন্তব্য: ০