পরিবারে ইসলাম চর্চার প্রয়োজনীয়তা এবং কিছু কথা...
তারিখঃ ৬ জুন, ২০২১, ১০:৪২
যারা জেনারেল লাইনে পড়াশোনা করে আসছে (যারা ইসলাম খুব একটা মানে না, তাদের কথাই বলছি ), তাদের মধ্যে একটা জিনিস কমন, তাদের মধ্যে অধিকাংশই যুক্তি তর্ক দিয়ে বুঝতে চায় এবং দ্বীন ইসলামের তত টুকুই পালন করে, যতটুকু নিজের কাছে ভালো লাগে । চারপাশের সব ঘটনাই ( মহামারী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি ) বিজ্ঞান দিয়ে বিচার করে । মনে করে না, এখানে কোন স্রষ্টার হাত নাই । তারা মনে করে, নিজেদের ভালো মন্দ তারা নিজেরাই নিয়ন্ত্রন করে ।
আর এইটা জিনিস তৈরি হয়েছে পারিবারিকভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত না থাকার কারনে । অনেক আগে, এক ভাইয়ের ফেসবুক স্ট্যাটাস এ পড়েছিলাম , কোন ফ্যামিলিতে আল ওয়ালা ওয়াল বারা না থাকলে , দুই বা তিন জেনেরেশান পড়ে ওই ফ্যামিলিতে দ্বীন ইসলাম কায়েম থাকে না । আসলে এদের ক্ষেত্রে হয়েছেও তাই ।
আমার এক আরবী শিক্ষক একটা কথা প্রায়ই বলতেন, ভুঁইয়া বাড়ি, চৌধুরি বাড়িতে জন্ম নিলেই নামে পিছে ভুঁইয়া, চৌধুরি লাগানো যায় । কিন্তু বাবা মা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হলেই নামের সাথে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার লাগানো যায় না । তারা মনে করে মুসলিম পরিবারে জন্ম নিলেই সারা জীবন মুসলিম থাকা যায় । আর তারা মনে করে , মুসলিম ফ্যামিলিতে জন্ম গ্রহন করেছি , একদিন না একদিন ত জান্নাতে যাবই । আসলেই কি ব্যাপারটা তাই ?
এই সব লোকদের কেই দেখেবেন, জুমার সময় মসজীদে ভিড় করে, কিন্তু বাকি দিন গুলোর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের কোন খবর নাই । বাসার মা বোনেরা পর্দা করে না । জিহাদকে মনে করে জঙ্গিবাদ । সুদকে মনে করে মুনাফা ইত্যাদি, ইত্যাদি । নেসাব পরিমান সম্পদ থাকলেও যাকাত দেয় না । কতটুকুতে নেসাব পরিমান সম্পদ হয়, আমার মনে হয় সেটাও অনেকে জানে না । তাদের ক্ষেত্রে ইসলাম, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান ধর্মের মত শুধু একটা ধর্মই, কোন জীবন বিধান হয়ে উঠতে পারিনি।
এই শ্রেনির লোকেরাই হুজুরদের নিয়ে ট্রল করে , মিম শেয়ার দেয় । এমনকি ধর্মান্ধ , ধর্ম ব্যবসায়ী বলতে পিছু ছাড়ে না । এর কারনই হচ্ছে ছোট বেলায় এরা কোন দ্বীনী পরিবেশে বড় হয় নাই । হয়ত মক্তবে গিয়ে কোরান, নামাজের নিয়ম কানুন আর কিছু মাসলা মাসায়েল শিখেছে ।
ব্যাস এতটুকুই । আসলে এদের মা-বাবা ছোটবেলা থেকেই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংকার বানানোর একটা রেসে নামিয়ে দিয়েছে । আলেম ওলামারা এদের কাছে কখনো রোল মডেল হয়ে উঠতে পারেনি । ছোট বেলা থেকেই এদের মাথায় গেঁথে দেয়া হয়েছে, পড়াশোনা শিখে প্রতিষ্ঠিত না হতে পারলে পাড়া প্রতিবেশি , আত্মীয়-স্বজনরা কেউ পাত্তা দিবে না । সামাজিক স্ট্যাটাস থাকবে না। কিন্তু সেটাই কি প্রকৃত সফলতা ? বলছি না যে, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার, বিসিএস ক্যাডার হওয়া খারাপ কিছু, বাট প্রায়োরিটি দিতে গিয়ে ইসলাম শুধু ধর্মেই জায়গায় থেকে যায়, জীবন বিধান হয়ে উঠতে পারে না ।
এখন কথা হচ্ছে, দুনিয়াতে সফল হতে চাওয়া দোষের কিছু নয়, বাট সেটার জন্য আখিরাতকে বাদ দিয়ে নয় । একজন মুসলিম তার উপর ফরজ, ওয়াজিব বিধানগুলো পুরোপুরি মেনে চলবে । সেটাই তার কাছে আগে প্রাধান্য পাবে । এখনকার সময় দেখা যায়, মানুষ অজু ভঙ্গের কারন জানে, কিন্তু ঈমান ভঙ্গের কারন জানে না ।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরানে বলেনঃ
''তোমরা কি কুরআনের কিছু অংশ বিশ্বাস কর এবং অপর কিছু অংশ অবিশ্বাস কর? (জেনে রাখ) তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ আচরণ করবে; তাদের এ ছাড়া আর কি শাস্তি হতে পারে যে,
তারা ইহকালে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হতে থাকবে এবং পরকালে তাদেরকে কঠোরতম শাস্তির দিকে নিক্ষেপ করা হবে।'' (সূরা বাকারা, আয়াত নং- ৮৫)
এছাড়াও আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেনঃ
"তারা বলে আমরা কতককে বিশ্বাস করি আর কতকের সাথে কুফরী করি এবং তারা এর মাঝামাঝি একটি পথ গ্রহণ করতে চায়, তারাই প্রকৃত কাফের এবং আমি কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করেছি অপমানজনক আযাব।"
(সূরা নিসা-১৫১)
সুতরাং ইসলামে প্রবেশ করতে হলে পুরোপুরিভাবেই প্রবেশ করতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে ইসলামকে মানবে আর জীবনের বিশাল অংশে মানব রচিত আইন মেনে চলব । এমনটা হতে পারে না । জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে কোরানের হাদিসের নিয়ম মেনে চলাটাই একজন মুসলিমের আসল কর্তব্য । জান্নাতই হওয়া উচিত একজন মুসলিমের জীবনের আসল লক্ষ্য এবং সেটাই মানব জীবনের আসল সফলতা । এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
"প্রতিটি জীবন মৃত্যুর আস্বাদ গ্রহণ করবে এবং ক্বিয়ামাতের দিন তোমাদেরকে পূর্ণমাত্রায় বিনিময় দেয়া হবে। যে ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করা হল এবং জান্নাতে দাখিল করা হল, অবশ্যই সে ব্যক্তি সফলকাম হল, কেননা পার্থিব জীবন ছলনার বস্তু ছাড়া আর কিছুই নয়। " (সূরা আল ইমরান: ১৮৫).
মন্তব্য: ০