Alapon

উমর (রা:) –এর ঢাকা সফর



এটি মূলত একটি বইয়ের নাম। বইটির নাম শুনে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। আমার স্মৃতিতে উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) নিয়ে যতো ঘটনা মনে পড়ে সবগুলো মিলিয়ে দেখলাম। নাহ, মিলাতে পারছিলাম না। উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) তো কখনো ঢাকায় আসেননি। তাইলে?
বইটি পড়া শুরু করেছিলাম। মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়তে থাকলাম। সম্ভবত ২০১৮ সালের দিকে বইটি পড়েছিলাম।
বইটির কন্টেন্ট যদিও কিশোর-উপযোগী, কিন্তু আমি উপন্যাসটি যুবক বয়সে পড়েও মজা পেয়েছি। ঢাকাকে এক ভিন্ন এঙ্গেল থেকে দেখলাম। চিরচেনা শহরকে এক নতুন আঙ্গিকে দেখার সৌভাগ্য হলো বইটি পড়ে।
এর কয়েক মাস (২০১৮) আগে পড়েছিলাম মাওলানা হেমায়েত উদ্দিনের লেখা ‘চশমার আয়নায় যেমন’ বইটি। মাওলানার বইটির জনরা হলো ভ্রমণকাহিনী। একটি স্পটকে ভিন্ন-ভিন্ন চশমায় কিভাবে দেখা যায় এই নিয়ে। যেমন: তাজমহলকে একজন স্থপতির চোখে, একজন প্রেমিকের চোখে, একজন ইতিহাসবিদের চোখে, একজন শাসকের চোখে, একজন সূফীর চোখে, একজন সালাফী আলেমের চোখে কিভাবে দেখা যায় এই নিয়ে ছিলো বইয়ের সূচনা।
তারপর লেখক আস্তে আস্তে ঢাকা শহর ঘুরে দেখেন কিভাবে ভিন্ন ভিন্ন চোখে, ভিন্ন ভিন্ন চশমায় ঢাকা শহরকে দেখা যায়। ঢাকার জ্যামকে একজন তাবলীগের ভাইয়ের দৃষ্টিতে কিভাবে দেখা যায়, একজন মার্কসবাদীর দৃষ্টিতে কিভাবে দেখা যায়।
‘উমর ইবনুল খাত্তাব (রাsmile –এর ঢাকা সফর’ বইটি হলো ঐ একই ধারার ফিকশন। উমর (রাsmile –এর জীবনীর আলোকে, তাঁর ন্যায়পরায়ণতার চশমায় ঢাকা শহর।
একজন কিশোর-কিশোরীর মনে প্রভাব সৃষ্টিকারী উপন্যাসের নাম নিলে আমার কাছে সবার আগে এই বইটির নাম মনে পড়ে। বাংলায় সেক্যুলারদের আধিপত্য বিস্তারের অন্যতম মাধ্যম ছিলো এই ফিকশন। গল্পের মাধ্যমে তারা তাদের আইডিওলজি প্রচার করেছে। গল্পে ডুবে থেকে তরুণ-তরুণীর মনে ইসলাম সম্পর্কে এক ধরণের হীনমন্যতা জন্মেছে। আপনি এদেশের যেকোনো একজন সেক্যুলারের সাথে কথা বলে দেখুন, দেখবেন তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে এমনসব লেখকের উপন্যাস-গল্প পড়ে, যার ফলে তার মনে সুপ্ত ইসলাম বিদ্বেষ তৈরি হয়েছে।
টিনেজ মননে একটি ফিকশনের প্রভাব কেমন, সেটা খুব সহজে ঐ বয়সে ধরা যায় না। যৌবনকালে তার চিন্তার প্রকাশে কৈশোরের ছাপ পাওয়া যায়।
আমার খুব আফসোস হয়। আমি এমনসব সাহিত্যের সন্ধান যৌবনে এসে পেয়েছি, সেগুলো যদি শৈশব-কৈশোরে পেতাম! হিমু, মিসির আলী, মাসুদ রানা, দিপু নাম্বার টু, আমার বন্ধু রাশেদ পড়ার পাশাপাশি যদি সাইমুম, ঈমানদীপ্ত দাস্তান, নসীম হিজাজীকে পড়তে পারতাম!
ভার্সিটির সেকেন্ড ইয়ারে উঠে আমি সর্বপ্রথম ‘সাইমুম সিরিজ’ –এর নাম শুনি! ৩-৪ টি পড়লাম। ভালোই লেগেছিলো, কিন্তু এর বেশি পড়তে মন সায় দেয়নি। ঐ বয়সে কিশোর-উপন্যাস পড়াকে আমার কাছে ‘সময়ের অপচয়’ মনে হয়েছে আর আফসোস হয়েছে। যার ফলে, ‘মৌলিক সাহিত্য’ পড়ার দিকেই মন দিলাম।
কোনো ইতিহাসের বই পড়া শেষে মাঝেমধ্যে ঘরের মানুষের সাথে শেয়ার করি। আন্দালুসের ইতিহাস পড়ে নতুন কী পেলাম, সুদূর চীনে কিভাবে ইসলাম প্রচার হয়েছিলো, আফ্রিকায় কিভাবে ইসলাম প্রচার হয়েছিলো এসব বলতে গিয়ে শুনি শ্রোতা এসব জানে! কিভাবে? ‘সাইমুম’ পড়ে!
আমার পূর্বের আফসোস তখন অনেকগুণ বেড়ে যায়। এসব সাহিত্যের সন্ধান যদি আমি আরো আগে পেতাম!
একেকটি উপন্যাস একেকজন পাঠকের আত্মপরিচয়ের সন্ধান দিতে সক্ষম হয়। যখন শুনি যে কোনো মুসলিম তার আত্মপরিচয় নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগছে, তখন ধরেই নিই এই সমস্যার মূল কারণ তার ইতিহাস সম্পর্কে বুঝাপড়া অপূর্ণাঙ্গ। ইতিহাস সম্পর্কে বুঝাপড়া যার পরিষ্কার, সে সাধারণত তার আত্মপরিচয় নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগে না। সে জানে তার নবী কেমন ছিলেন, সাহাবী কেমন ছিলেন, তার সভ্যতা কেমন ছিলো।
মদীনার উমরকে (রাsmile ঢাকায় এনে এপ্লাই করা নিঃসন্দেহে কঠিন কাজ। লেখকের ইতিহাস ও বর্তমান নিয়ে বুঝাপড়া ক্লিয়ার না থাকলে, গল্প বলার মধ্যে মুন্সিয়ানা না থাকলে এটা সম্ভব না। যৌবনকালে যিনি কিশোর-উপন্যাসে আমাকে মুগ্ধ রাখতে পেরেছিলেন, তার মুন্সিয়ানা স্বীকার করতে হয়।

[বইয়ের ছবিটি এক ভাই ইনবক্সে দিয়েছেন]


~আরিফুল ইসলাম

পঠিত : ১৩৩৪ বার

মন্তব্য: ০