Alapon

আওরঙ্গজেব কি ভিন্নধর্মাবলম্বী নিপীড়ক ছিলেন?




জানা যায়, সম্রাট আওরঙ্গজেব তার পিতা সম্রাট শাজাহানের তাজমহল নির্মাণের সিদ্ধান্তের সাথে একমত ছিলেন না। এই বিশাল স্থাপনা নির্মাণকে তিনি অর্থ ও সময়ের অপচয় এবং রাসূল (সাsmile এর চেতনা বিরোধী হিসেবেই গণ্য করতেন। তিনি গভীরভাবে অনুধাবন করেছিলেন যে,ভারতীয় মুসলিমদের ইসলামী আইনের ব্যাপারে ব্যাবহারিক ধারণা দেয়া প্রয়োজন। সে তাগিদ থেকেই তিনি ইসলামী আইন জানেন এমন অসংখ্য আলেমকে নিয়ে বেশ কিছু মৌলিক কাজে হাত দেন। এই প্রচেষ্টারই ঐতিহাসিক ফলাফল হলো ``ফতোয়ায়ে আলমগীরী``- যেখানে হানাফী মাযহাবের আলোকে ধর্মভিত্তিক আইন গুলোকে একসাথে সংকলিত করা হয়।
ফতোয়ায়ে আলমগীরীই পরবর্তী সময়ে মোগল সাম্রাজ্যের আইনবিধি হিসেবে প্রচলিত হয়ে যায়। মদিনায় প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রথম ইসলামী রাষ্ট্রের আদলে বাদশাহ আলমগীরও মোগল সাম্রাজ্যে ইসলামী শরিয়াহ বিধান চালু করেন। তার এই উদ্যোগ গোটা ভারতবর্ষেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।

তবে অন্য ধর্মের অনুসারিদের প্রতি বাদশাহ আওরঙ্গজেব খুব একটা সহানুভূতিশীল ছিলেন না বলেই ইতিহাস থেকে জানা যায়।তার সময়েই বেশ কিছু বিখ্যাত হিন্দু মন্দির ভেংগে গুড়িয়ে দেয়া হয়।বর্তমানের অনেক ইতিহাস লেখক তাকে ভিন্নমতাবলম্বী ও ভিন্নধর্মাবলম্বী মানুষদের জন্য নিপীড়ক শাসক হিসেবেই আখ্যায়িত করতে চান। কিন্তু বিষয়টাকে এত ঢালাওভাবে ব্যাখা করার সুযোগ নেই। কী কারণে তিনি হিন্দু মন্দিরগুলো ভেংগেছিলেন এটা বুঝতে হলে আমাদের আগে জানতে হবে যে,তিনি কোন ধরনের শাসক ছিলেন এবং মোগল সাম্রাজ্যের স্বাভাবিক ধরনটাই বা কেমন ছিল।

১৭ শতকে ভারতের হিন্দু মন্দির গুলো প্রার্থনার পাশাপাশি নানা ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের স্থান হিসেবেও ব্যবহৃত হতো । মন্দিরের শীর্ষ কর্মকর্তারা তাদের নিজেদের কর্মপরিধির আওতায় সব সময়ই মোগল সাম্রাজ্যকে সহযোগিতা করতেন। সাম্রাজ্যের অধিকর্তারা গোটা রাজ্য জুড়েই যাতে সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তা নিশ্চিত করার জন্য তারা রাজনৈতিক ভূমিকাও পালন করতেন। বেশ কিছু মন্দিরের কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্বভারের বাইরে গিয়ে মোগল শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করায় আওরঙ্গজেব সেই হিন্দু মন্দিরগুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেন। বিশেষ করে মারাঠী সম্প্রদায়গুলো জোট করে ১৬ শতকের শেষে যখন বিদ্রোহ করার চেষ্টা করে তখন অনেক গুলো হিন্দু মন্দিরের কর্মকর্তারা তাতে সমর্থন যোগান। তাই এই মন্দিরগুলোকে ধ্বংস করার বিষয়টিকে মোগল শাসকদের ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। মোগল সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই এটা করা জরুরি ছিল। যেটা অনেক ইতিহাসবিদ গোপন করে যান তা হলো, আওরঙ্গজেবের সময়ই বরং গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে অসংখ্য হিন্দু মন্দির নির্মাণ করা হয়। আওরঙ্গজেবের পরামর্শক প্যানেলের বড়ো একটি অংশই ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। ইতিহাসের বিকৃতি এবং ভাসা ভাসা আলাপ দিয়ে অতীত কীর্তিমানদের মূল্যায়ন করা যাবেনা। তাই আধুনিক সময়ের ইতিহাস পড়তে গেলে আমাদের সকলকেই সতর্ক থাকতে হবে।

রেফারেন্স: লস্ট ইসলানিক হিস্ট্রি, পৃষ্ঠা ২২৪

পঠিত : ৪৭৪ বার

মন্তব্য: ০