Alapon

তাজকিয়ায়ে_নফস

অনেক সময় দেখা যায়, কোন কারণ ছাড়াই হুট করে আমাদের মন খারাপ হয়ে যায়, বুকের বাম পাশটা ভারী অনুভূত হয় এবং অন্তরটা হঠাৎ করে বিষণ্ণ হয়ে পড়ে । এই হঠাৎ করে বিষাদগ্রস্ত হয়ে যাওয়াকে সাইকোলজির ভাষায় বলে Melancholy । তো এই ধরনের সমস্যায় যারা পড়ে, তারা হুট করে মনমরা হয়ে যায় এবং হতাশ হয়ে পড়ে Without any reason ।
.
এই বিষয়টাকে আমি ইসলামিক পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে এক্সপ্লেইন করছি । এই হঠাৎ করে মন খারাপ হওয়া, অন্তরে শূন্যতা অনুভব করা এই জিনিসগুলো আমি বলি আত্মা বা রূহের চিৎকার । আপনার রূহ কোন কিছুর অভাবে কান্না করছে বা তার খাবার পাচ্ছে না বা আপনার রূহ দুর্বল হয়ে গেছে । এটা আসলে আমার পার্সোনাল পার্সপেক্টিভ । আপনি গুগলে সার্চ করলে হয়ত অন্য কোন পার্সপেক্টিভ পেতে পারেন ।
.
কারণ আমি কোরানের আয়াতগুলো পড়ে আমি যতটুকু বুঝেছি তাতে আমার মনে হয়েছে, মানুষের দুঃখের সাথে তার রুহের গভীর সম্পর্ক আছে । আপনার রূহ যখন শক্তিশালী হবে না, তখন আপনার মধ্যে এসব লক্ষণ দেখা দেয় যে, তখন হুট করে আপনার মন খারাপ হয়ে যায় । পরে দেখা যায় আপনি কোনো কারণ ছাড়াই হতাশায় ডুবে যান এবং হঠাৎ করেই আপনার অতীতের কোন ঘটনা মনে পড়ে ।
.
তবে এ ধরনের সমস্যায় পড়লে কেউ কেউ আবার গান শুনতে থাকে । গান শুনলে হয়তো আমাদের মনকে কিছু সময়ের জন্য হয়তো distract করা যায় । তবে এটা কোন পার্মানেন্ট সলিউশন না ।
.
এখন এটার সমাধান দুই ভাবে দেওয়া যায় । একটা হচ্ছে, যদি এটা সাইকোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার হয়, তাহলে সাইক্রিয়াটিস্ট এর কাছে যেতে পারেন । আর সাইক্রিয়াটিস্ট ডায়াগনোসিস করে দেখবেন যে, এটি সাইকোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার কিনা । তারপর সে অনুযায়ী সঠিক ট্রিটমেন্ট দিবেন ।
.
আর দ্বিতীয় সমাধানের ব্যাপারে আপনাকে প্রথমে বুঝতে হবে রুহের দুর্বলতা এবং শয়তানের ওয়াসওয়াসা । আল্লাহতায়ালা মানুষের রুহে তিন ধরনের নফস রেখেছেন । নফসে লাওয়ামা, নফসে আম্মারা ও নফসে মুতমাইন্না ।
.
নফসে লাউওয়ামা হলো অনুতপ্ত সত্তা; যে পাপ করে নফসের তাড়নায়, শয়তানের ধোঁকায় বা পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও পরিস্থিতির শিকার হয়ে এবং পরে লজ্জিত, অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে।
.
নফসে আম্মারা হলো পাপের প্রতি আকৃষ্ট নফস বা অবাধ্য সত্তা।
.
নফসে মুতমাইন্না মানে হলো প্রশান্ত নফস, যার পাপের প্রতি অনুরাগ থাকে না এবং নেকির প্রতি আকর্ষণ থাকে।
.
যখন নফসে লাউওয়ামা এবং নফসে মুতমাইন্না মানুষের মধ্যে গ্রো না করে তখন নফসে আম্মারা গ্রো করে এবং প্রভাব বিস্তার করে । যখনই বাকি দুই নফসের চেয়ে নফসে আম্মারার প্রভাব বেশি হবে, তখনই শয়তানের আক্রমণ করা সহজ হয়ে যায় ।
.
ইমাম ইবনুল কাইয়ুম এর ভাষ্যমতে একজন হতাশ ঈমানদারই শয়তানের সবচেয়ে প্রিয় পাত্র । যখন শয়তান আপনাকে হতাশ এবং গম্ভীর অবস্থায় পাবে, তখনই শয়তান আপনার থেকে সহজে ফায়দা তুলবে ।
.
তো এখন এই অবস্থা থেকে মুক্তির উপায় কি ?? এর থেকে মুক্তির উপায় হচ্ছে আপনার বাকি দুই নফস শক্তিশালী করতে হবে এবং আপনার রুহুকে মজবুত করতে হবে ।
.
এখন কিভাবে আমরা শক্তিশালী করবো ?? আমাদেরকে কোন না কোন পজেটিভ কাজে ব্যস্ত থাকতে হবে । তাই এমন কাজে ব্যস্ত রাখুন যাতে আমাদের রুহ খুশি থাকে । যেমন এটা হতে পারে বিভিন্ন চ্যারিটি ওয়ার্ক, সোশ্যাল ওয়ার্ক বা কমিউনিটি সার্ভিস, হাসপাতালে কাউকে দেখতে যাওয়া ইত্যাদি ।
.
আরেকটা হচ্ছে আপনি নিয়মিত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করুন । নিয়মিত জিকির-আজকার করুন । যেমন লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লাবিল্লাহ, সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, দুরুদ শরীফ এগুলো নিয়মিত পড়তে পারেন ।
.
আল্লাহতায়ালা কোরআনে বলেছেন, ‘যারা ঈমান গ্রহণ করেছে, আল্লাহর জিকির দ্বারা তাদের অন্তর শান্ত হয়। জেনে রাখ! আল্লাহর জিকিরের দ্বারাই তারা অন্তরে শান্তি লাভ করে।’ (সুরা রাদ : আয়াত ২৮)
.
ইসলাম আসলে পুরোপুরি একটা প্যাকেজ । ইসলাম যেমন শরীর, মনের কথা বলা হয়েছে তেমনি রুহ বা আত্মার কথাও বলা হয়েছে । পশ্চিমা সাইকোলজিস্ট বা ফিলোসোফারদের কাছে আপনি শুধু শরীর ও মনের পার্সপেক্টিভই পাবেন । সেখানে তারা মন নিয়ে কথাবার্তা বলেছে বেশি । ইসলামে জিকির-আজকার আছে, নামাজ আছে , ধৈর্যও ধরতে বলা হয়েছে এবং রুহের খাবারের কথাও বলা হয়েছে । যখন আমরা এসব গুলোর উপরে আমল করতে পারবো ইনশাআল্লাহ অবশ্যই আমরা এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে পারবো ।
.
তাই এই জিনিসগুলো আপনি যত তাড়াতাড়ি বুঝবে ততই আপনার জন্য ভালো, যদি না বুঝেন তাহলে এই অবস্থার মধ্যেই আপনি আটকে থাকবেন ।
.
কিছু পাওয়ার জন্য অবশ্যই আপনাকে কিছু কষ্ট স্বীকার করতে হবে এবং অ্যাকশন নিতে হবে । আমরা আশেপাশের সবাইকে বলি আমার এই এই সমস্যা, কিন্তু এর জন্য আমরা কোন অ্যাকশন নেই না । এভাবে আসলে সমস্যার সমাধান হয় না । অবশ্যই আমাদেরকে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে । আপনি দুই একবার অ্যাকশন নিয়ে দেখেন, আল্লাহতায়ালা অবশ্যই বরকত দিবেন । এর পাশাপাশি আল্লাহর কাছে দোয়াও করুন ।

পঠিত : ৫১৯ বার

মন্তব্য: ০